মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের কিছুটা অগ্রগতি হলেও, তালিকায় হেরফের হয়নি৷ এরপরও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘‘আমরা যতটা উন্নতি করেছি, ততটা স্বীকৃতি আজও মেলেনি৷ তবে বসে থাকলে চলবে না, কাজ করে যেতে হবে৷''
বিজ্ঞাপন
[No title]
বিশ্বের ১৮৭টি দেশের সর্বশেষ তথ্য নিয়ে এ বছরের মানব উন্নয়ন সূচকের তালিকাটি করেছে ইউএনডিপি৷ রবিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে ইউএনডিপি-র এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়৷ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ রয়েছে ১৪২তম অবস্থানে৷ ২০১৩ সালেও বাংলাদেশ ১৪২তম অবস্থানে ছিল৷ অর্থাৎ আগের অবস্থানেই আছে বাংলাদেশ৷
২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে সূচকের পরিবর্তন হলেও, গড়ে বাংলাদেশের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি৷ ৫ বছরের গড় হিসেবে পাশ্ববর্তীদেশ ভারত এগিয়েছে ৬ ধাপ (১৩০তম), শ্রীলংকা ৫ ধাপ (৭৩তম), মিয়ানমার ১ ধাপ (১৪৮তম), নেপাল ৩ ধাপ (১৪৫তম), পাকিস্তান অপরিবর্তীত (১৪৭তম), ভিয়েতনাম ১ ধাপ (১১৬তম), ইন্দোনেশিয়া ৩ ধাপ (১১০তম) এবং চান ১৩ ধাপ (৯০তম)৷ এবারের প্রতিবেদনের শিরোনাম দেয়া হয়, ‘মানব উন্নয়নের জন্য কর্ম'৷ যার অর্থ, প্রতিবেদনে কর্মসংস্থানের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে৷
বাংলাদেশি পোশাক শ্রমিকদের পাশে জার্মানি
রানা প্লাজা বিপর্যয়ের দেড় বছর পর জার্মানি যে ‘টেক্সটাইলস পার্টনারশিপ’ চালু করেছে, সে উপলক্ষ্যে ফেডারাল অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন মন্ত্রী গ্যার্ড ম্যুলার বাংলাদেশ যান৷ নিজের চোখে দেখেন সেখানকার মানুষ ও তাঁদের উন্নয়নকে৷
ছবি: DW/S. Burman
‘মেড ইন বাংলাদেশ’
রানা প্লাজা বিপর্যয় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গার্মেন্টস রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে৷ চালু হয়েছে ‘‘অ্যাকর্ড’’, ‘‘অ্যালায়েন্স’’ এবং ‘‘টেক্সটাইলস পার্টনারশিপ’’ মতো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, যার উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের গার্মেন্টস ওয়ার্কারদের কাজের পরিবেশ ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা৷
ছবি: DW/S. Burman
একযোগে
জার্মান উদ্যোগের লক্ষ্য হলো, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে এক করা৷ গাজিপুরের ডিবিএল গ্রুপ ‘‘টেক্সটাইলস পার্টনারশিপ’’-এ যোগ দিয়েছে ও ইতিমধ্যেই একাধিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করেছে৷ জার্মান উন্নয়নমন্ত্রী গ্যার্ড ম্যুলার তাদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন এবং এই আশা প্রকাশ করেন যে, অন্যান্য সংস্থাও এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করবে৷
ছবি: DW/S. Burman
মোটরসাইকেলে
প্রায় দেড়’শ নতুন লেবার ইনস্পেক্টরদের ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে, কারখানাগুলোর পরিস্থিতির উপর নজর রাখার জন্য৷ কোনো সংকট ঘটলে যানজট এড়িয়ে চটজলদি অকুস্থলে পৌঁছানোর জন্য তাদের মোটরসাইকেল দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: DW/S. Burman
লুডো খেলাও সচেতনতা বাড়ায়
গার্মেন্টস শিল্পের শ্রমিকরা প্রধানত মহিলা, নিজেদের আইনি দাবিদাওয়া সম্পর্কে তাঁদের বিশেষ ‘জানকারি’ নেই৷ কাজেই কারখানায় ‘‘মহিলাদের কাফে’’ সৃষ্টি করে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, সেই সঙ্গে বিনোদনের জন্য লুডো খেলা৷
ছবি: DW/S. Burman
কাজের জায়গায়
পরিস্থিতি কিছুটা অন্যরকম৷ দিনে দশ থেকে চোদ্দ ঘণ্টা কাজ৷ ‘‘টেক্সটাইলস পার্টনারশিপ’’ এই অনলস কর্মীদের কাজের পরিবেশের উন্নতি ঘটাতে চায়৷
ছবি: DW/S. Burman
রাজনীতিও শামিল
বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ গাজিপুরের ডিবিএল গ্রুপের ফ্যাক্ট্রিতে জার্মান উন্নয়নমন্ত্রী গ্যার্ড ম্যুলারের সঙ্গে যোগ দেন এবং সহযোগিতা সম্পর্কে আলোচনা করেন৷ গার্মেন্টস শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতি ঘটানোর জন্য সরকারের উদ্যোগ বিশেষভাবে প্রয়োজন৷
ছবি: DW/S. Burman
মিনি ফায়ার ব্রিগেড
গ্যার্ড ম্যুলার গাজিপুরে ডিবিএল গ্রুপের কারখানার নতুন ‘খুদে দমকল বাহিনীর’ উদ্বোধন করেন৷ এই ফায়ার ব্রিগেড এক কিলোমিটার ব্যাসের এলাকার মধ্যে অগ্নি নির্বাপণে সক্ষম৷ ম্যুলারের সঙ্গে ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ৷
ছবি: DW/S. Burman
চাইল্ড কেয়ার
শ্রমিক কল্যাণ উদ্যোগের অংশ হিসেবে কারখানা প্রাঙ্গণে ডে-কেয়ার সেন্টার সৃষ্টি করে মহিলা শ্রমিকদের শিশুসন্তানদের দেখাশোনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷
ছবি: DW/S. Burman
সবে মিলে করি কাজ
জার্মান সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরা, মালিকপক্ষ, বিদেশি ক্রেতা এবং অপরাপর সংশ্লিষ্টরা সকলে একত্রিত হয়ে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানোর চেষ্টা করছেন৷
ছবি: DW/S. Burman
লক্ষ্য
বাংলাদেশ বর্তমানে ২৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের গার্মেন্টস রপ্তানি করে থাকে৷ সরকার সেটাকে ২০২১ সাল – অর্থাৎ দেশের পঞ্চাশতম বার্ষিকীর মধ্যে ৫০ বিলিয়নে দাঁড় করাতে চান৷ জার্মান উন্নয়ন মন্ত্রী গ্যার্ড ম্যুলার গত ৭ই অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন৷
ছবি: DW/S. Burman
10 ছবি1 | 10
রবিবারের ঐ অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মাথাপিছু আয় বাদে অনেক সূচকে ভারতের থেকেও বাংলাদেশ ভালো করেছে৷''
অমর্ত্য সেনের উদ্বৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘মানব উন্নয়ন সূচকে অমর্ত্য সেন আয় বৃদ্ধি এবং সামাজিক খাতে ব্যয়ের কথা বলেছেন৷ কিন্তু বাংলাদেশ আরো একটি দিকের মাধ্যমে উন্নতি করেছে৷ আর সেটা হলো স্বল্প ব্যয়ের প্রযুক্তির ব্যবহার৷'' উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, স্বল্প ব্যয়ে খাবার স্যালাইন ও স্বল্প ব্যয়ে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা তৈরিতে বাংলাদেশ অসাধারণ সফল৷ স্বল্প ব্যয়ের প্রযুক্তি ব্যবহারে বাংলাদেশ যে সাফল্য দেখিয়েছে, তা উন্নয়নশীল দেশেগুলোর জন্য রোল মডেল হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি৷
তিনি বলেন, ‘‘নব্বইয়ের দশক থেকে আমরা ভালো করছি৷ কিন্তু এর মধ্যে আরো অনেকেই উন্নতি করেছে৷ ফলে আমাদের উন্নতিটা ওভাবে নজরে আসছে না৷''
তাঁর কথায়, ‘‘প্রতিবেদন অনুযায়ী আমরা মধ্যম সারিতে রয়েছি৷ শুধু তাই নয়, ইতিমধ্যে আমরা মধ্য আয়ের দেশেও উন্নীত হয়েছি৷ এভাবে কাজ করে যেতে পারলে সামনে অনেক এগোনোর সুযোগ রয়েছে আমাদের৷ তাই এখনই কেন উন্নতি হলো না – এ সব ভেবে হতাশ হয়ে পড়লে আমাদেরই ক্ষতি৷''
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অর্জন শূন্য দশমিক ৫৭০ পয়েন্ট৷ এক বছর আগে এই অর্জন ছিল শূন্য দশমিক ৫৬৭ পয়েন্ট৷ তালিকার শীর্ষে থাকা নরওয়ের রয়েছে শূন্য দশমিক ৯৪৪ পয়েন্ট৷ প্রসঙ্গত, যে দেশ ১ পয়েন্টের যত কাছাকাছি অর্জন করবে, সে দেশের মানব উন্নয়ন পরিস্থিতি তত উন্নত৷ প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করার সময় ইউএনডিপি-র মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন অফিসের পরিচালক সেলিম জাহান জানান, বাংলাদেশের মানব উন্নয়ন পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে, সূচকও বাড়ছে৷ তবে এটিও ঠিক যে, এখনও অসমতা রয়েছে, রয়েছে বঞ্চনা৷
সেলিম জাহান বলেন, সরা বিশ্বে ৭৯ কোটি ৫০ লাখ মানুষ এখনও ক্ষুধাপিড়িত৷ প্রতি ৫ মিনিটে পাঁচ বছরের কম বয়সি ১১টি শিশুর মৃত্যু হচ্ছে৷ প্রতি ঘণটায় ৩৩ জন প্রসূতি মা মারা যাচ্ছেন৷ প্রায় ৩ কোটি ৭০ লাখ মানুষ এইচআইভি-তে আক্রান্ত৷ এর বাইরে ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত৷ ৬৬ কোটি মানুষের খাবার পানির উৎস অনুন্নত৷ ২৪০ কোটি মানুষ অনুন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ব্যবহার করছেন৷ আর খোলা জায়গায় মলত্যাগ করছেন আজও প্রায় ১০০ কোটি মানুষ৷
বন্ধুরা, গত কয়েক বছরে আপনার জীবনযাপনে কি কিছু উন্নতি লক্ষ্য করছেন? জানান নীচের মন্তব্যের ঘরে৷
মাত্র কয়েক টাকার জন্য
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও-র হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় ১৬ কোটি ৮০ লাখ শিশু-কিশোরকে খনি, কারখানা ও কৃষিখাতের বিভিন্ন চরম প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
শিশুশ্রম নিষিদ্ধ
১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও-র সদস্য রাষ্ট্রগুলো একটি কনভেনশনে স্বাক্ষর করে৷ সেখানে ১৮ বছরের কমবয়সি শিশু-কিশোরদের শ্রমিক কিংবা যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করানোর বিষয়টি নিষিদ্ধ করা হয়৷
ছবি: imago/Michael Westermann
তোয়ালে ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’
ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যে তোয়ালে তৈরির কারখানায় কাজ করে এই শিশুটি৷ আইএলও-র হিসাবে এশিয়ায় প্রায় সাত কোটি ৮০ লাখ শিশু কাজ করছে৷ অর্থাৎ ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সি শিশু-কিশোরের প্রায় ১০ শতাংশ কাজেকর্মে নিয়োজিত৷
ছবি: imago/imagebroker
দিনে ৬৫ টাকা
লেখাপড়ার পরিবর্তে এই শিশুটি ইট তৈরি করছে৷ চরিম দরিদ্রতার কারণে ভারতের অনেক পরিবার তাদের শিশুদের কাজে পাঠিয়ে থাকে৷ দিন প্রতি মাত্র ৮০ সেন্ট, অর্থাৎ প্রায় ৬৫ বাংলাদেশি টাকা পায় তারা৷ এ জন্য তাদের কমপক্ষে ১০ ঘণ্টা কাজ করতে হয়৷
ছবি: imago/Eastnews
সস্তা শ্রম
ভারতের সবশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী, দেশটিতে প্রায় এক কোটি ২৬ লাখ শিশু-কিশোর শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে৷ তারা পণ্য বিক্রি থেকে শুরু করে রান্না করা, রেস্টুরেন্ট পরিষ্কার করা – সব কাজই করে৷ এমনকি ইট কাটা, মাঠে তুলা তোলা ইত্যাদি কাজও করে থাকে শিশুরা৷
ছবি: imago/imagebroker
অমানবিক অবস্থা
২০১৩ সালে প্রকাশিত আইএলও-র একটি প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের শিশু শ্রমিকদের প্রায় অর্ধেক বিপজ্জনক পরিবেশে কাজ করে৷ তাদের অধিকাংশকেই কোনোরকম চুক্তিপত্র ও চাকরির অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই কাজ করতে হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
‘মেড ইন বাংলাদেশ’
জাতিসংঘের শিশু কল্যাণ সংস্থা ইউনিসেফ-এর হিসাবে, বাংলাদেশের প্রায় ৫০ লক্ষ শিশু-কিশোর তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করে৷
ছবি: imago/Michael Westermann
কম্বোডিয়ার পরিস্থিতি
কম্বোডিয়ায় স্কুল পড়ুয়া শিশু-কিশোরের সংখ্যা অনেক কম৷ বেশিরভাগই তাদের মা-বাবার সঙ্গে কাজ করে৷ এছাড়া হাজার হাজার শিশু রাস্তায় বাস করে কম্বোডিয়ায়৷ এই যেমন এই শিশুটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি
২০০০ সালের পর বিশ্বব্যাপী শিশু শ্রমিকের সংখ্যা কমলেও এশিয়ার অনেক দেশ যেমন বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, নেপাল, কম্বোডিয়া ও মিয়ানমারে পরিস্থিতির এখনও ততটা উন্নতি হয়নি৷