ভবিষ্যতে অনেক যানবাহন স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলবে৷ এখনই আংশিক স্বয়ংক্রিয় গাড়ির প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হচ্ছে৷ কিন্তু সিস্টেম হ্যাক করে সেই প্রণালীকে বিভ্রান্ত করলে মারাত্মক বিপদ দেখা দিতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞানীরা সেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছেন৷ কম্পিউটারের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা স্বংয়ক্রিয় গাড়ি পরিচালনা করছে৷ এর মধ্যে অনেক গাড়ি ‘অপটিক্যাল ফ্লো' নামের এক পদ্ধতিতে চালানো হচ্ছে৷ এর আওতায় কম্পিউটার নির্দিষ্ট গাড়ি এবং সেটির আশেপাশের যানবাহন ও পথচারীর গতি মেপে সেই হিসেব অনুযায়ী কাজ করে৷ কিন্তু এই প্রণালী কি সত্যি নিরাপদ?
ট্যুবিঙেন শহরের তিন গবেষক আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তি পরিচালিত অপটিক্যাল ফ্লো প্রক্রিয়া পরীক্ষা করছেন৷ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হাতের নড়াচড়ার মতো মুভমেন্ট বা সঞ্চালন নির্দিষ্ট রংয়ের মাধ্যমে প্রকাশ করে৷ সঞ্চালনের দিক অনুযায়ী রং বদলে যায়৷ কম্পিউটার বিজ্ঞানী অনুরাগ রঞ্জন বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘গাড়ি ডান দিকে গেলে রংয়ের মানচিত্রে অপটিক্যাল ফ্লো সেই সঞ্চালনকে হলুদ হিসেবে তুলে ধরবে৷ গতি যত বাড়বে সেই হলুদ রং তত উজ্জ্বল হয়ে উঠবে৷ অর্থাৎ গাড়ি খুব দ্রুত গতিতে চললে সেটিকে উজ্জ্বল হলুদ বস্তুর মতো দেখাবে৷ ধীরে চললে সেটা বদলে যাবে৷ এ ক্ষেত্রে রংয়ের মাধ্যমে নানা রকম গতি ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে৷''
অনুরাগ রঞ্জন যখন বাম দিকে যান, কম্পিউটার তখন ‘অপটিক্যাল ফ্লো' অনুযায়ী তাঁকে হলুদ হিসেবে দেখে৷ ডান দিকে গেলে সেটা বেগুনি হয়ে যায়৷
অপটিক্যাল ফ্লো প্রক্রিয়ায় আরো অনেক কিছু ঘটে৷ কম্পিউটার আগেভাগেই বিভিন্ন বস্তুর মুভমেন্টের পূর্বাভাষ দিতে পারে৷ গাড়ি কি এখনই সামনের দিকে এগিয়ে যাবে, নাকি দাঁড়িয়ে থাকবে? ধাক্কা লাগার আশঙ্কা আছে কি? সেকেন্ডের ভগ্নাংশের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সেই হিসেব করতে পারে৷ কম্পিউটার বিজ্ঞানী হিসেবে মিশায়েল ব্লাক জানান, ‘‘কম্পিউটারে সব ছবি সঙ্গে সঙ্গে চলে আসছে৷ এ যেন জগতকে সেকেন্ডের তিরিশ গুণ গতিতে দেখার মতো অভিজ্ঞতা৷ অপটিক্যাল ফ্লো বিভিন্ন বস্তুকে সময়ের ভিত্তিতে যুক্ত করে এবং কম্পিউটারকে ঠিক আমাদের মতো জগতকে দেখা, বোধ করার ক্ষমতা দেয়৷''
গাড়ির কি আজকাল কোনো প্রয়োজন আছে?
শ’খানেক বছর ধরে বাস, ট্রেন আর গাড়ি ছাড়া বেঁচে থাকার কথা ভাবাই যেতো না৷ কিন্তু ই-মোবিলিটি আর স্বয়ংক্রিয় গাড়ির যুগে, যখন স্টিয়ারিংই উধাও হতে চলেছে, তখনও কি পেট্রোল আর ডিজেলের গাড়ি চলবে?
ছবি: PodRide
আগামীর পৃথিবী
২০০৮ সালের পর থেকে পৃথিবীতে গ্রামের চেয়ে শহরেই বেশি মানুষ বাস করছেন৷ গবেষকরা বলছেন, আগামীর শহরকে কার্বন-নিরপেক্ষ, জলবায়ু-সম্মত, ডিজিটাল ও স্বয়ংক্রিয় হতে হবে৷ নেটওয়ার্কিং আর শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে পরিবহণ আরো সাশ্রয়ী ও সুদক্ষ হয়ে উঠবে৷ যানবাহন ও যাতায়াত একটি পরিষেবায় পরিণত হবে৷ কারোর আর ব্যক্তিগতভাবে গাড়ি রাখার প্রয়োজন পড়বে না৷
‘স্মার্ট’ বা ‘ডিজিটাইজড’
ইন্টারনেটের মাধ্যমে নেটওয়ার্কিংয়ের ফলে শহরের পরিবহণ প্রণালীগুলির সমন্বয় করা সম্ভব হবে৷ এর অর্থ, গাড়ি চলাচল অনুযায়ী ট্র্যাফিক লাইট নিজে থেকেই বদলে যাবে৷ সেন্সর আর ট্রান্সমিটার থাকার ফলে গাড়িগুলো নিজেরাই ধাক্কা লাগা রোধ করতে পারবে৷ গাড়ির সার্ভিসিং, রক্ষণাবেক্ষণ, বীমা অথবা পার্কিং মিটারের আর কোনো প্রয়োজন পড়বে না৷
ছবি: SRF
স্বয়ংচালিত গাড়ি?
সত্যিই কি অ্যামাজোন, গুগল ইত্যাদি কোম্পানিগুলি ভবিষ্যতের গাড়ি নির্মাতায় পরিণত হবে আর ড্রাইভাররা পেছনের সীটে বসে থাকবেন? তবে যুক্তরাষ্ট্রে একটি স্বয়ংচালিত গাড়ি এক মহিলা সাইকেল আরোহীকে চাপা দেবার পর উবার স্বয়ংচালিত গাড়ি বন্ধ রেখেছে৷
ছবি: Reuters/A. Josefczyk
স্মার্টফোন থাকলেই হলো
অ্যাপের মাধ্যমে ট্যাক্সি ডাকুন৷ সরকারি পরিবহণও ক্রমেই আরো বেশি ইন্টারনেটনির্ভর হয়ে উঠছে৷ খবরাখবর তো বটেই, এমনকি স্মার্টফোনের মাধ্যমে বাসের টিকিট কিনতেও কোনো অসুবিধা নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W.Gang
পার্সেল আসবে ইলেকট্রিক ভ্যানে
ডয়চে পোস্ট (ডিএইচএল) সংস্থা আখেন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সঙ্গে মিলে কার্বনমুক্ত ‘স্ট্রিট স্কুটার’ চালু করেছে, যা কিনা নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে চলে৷ বিদ্যুৎচালিত গাড়ির বিদ্যুৎ কোথা থেকে আসে, ভবিষ্যতে সেটাও একটা প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াবে৷
ছবি: DW/A. Setiawan
দেখতে স্মার্ট কারের মতো হলেও, আসলে স্মার্ট বাইক
চার চাকার ই-বাইক, নাম পডরাইড৷ এক মিটার আশি সেন্টিমিটার লম্বা৷ গাড়ির মতোই ভেতরে আরামে বসা যায়৷ হিটিং আছে৷ উঁচু-নীচু কিংবা এবড়ো-থেবড়ো রাস্তায় চলতে পারে – অবশ্যই একটি ইলেকট্রিক মোটরের সাহায্যে৷
ছবি: PodRide
স্বয়ংচালিত উড়ন্ত গাড়ি?
ডজন খানেক কোম্পানি এ ধরনের গাড়ি তৈরি করতে ব্যস্ত, তাদের মধ্যে এয়ারবাসও রয়েছে, যাদের ‘ভাহানা’ নামের ফ্লাইং কারটিকে ছবিতে দেখা যাচ্ছে৷ এই বাহনে চড়ে নাকি যাত্রীবাহী জেটের মতোই প্রায় ন’হাজার মিটার উচ্চতায় ঘণ্টায় ৪৮০ কিলোমিটার গতিতে উড়ে যাওয়া যাবে – ভূপৃষ্ঠ থেকে পাঠানো সংকেতের মাধ্যমে৷ তবে মাঝেমধ্যে ব্যাটারি রিচার্জ করার জন্য মাটিতে নামতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ই-বিমান
জার্মানির বাওহাউস বিমানচালনা সমিতির ‘সিই’ বিমানটি চলবে দু’টি বৈদ্যুতিক ইঞ্জিনে৷ ভবিষ্যতের বিমানবন্দরে নাকি বার্লিন ও অপরাপর রেলওয়ে স্টেশনের মতো একাধিক লেভেলে প্লেন উঠবে-নামবে বা ব্যাটারি চার্জ করা হবে৷ ওঠা-নামা হবে স্বভাবতই সবচেয়ে ওপরের লেভেলে!
ছবি: Bauhaus-Luftfahrt e.V.
8 ছবি1 | 8
অপটিক্যাল ফ্লো পদ্ধতিতে কম্পিউটার কাজ করার সময় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বিঘ্ন ঘটানো যায় কিনা, বিজ্ঞানীরা তা পরীক্ষা করতে চেয়েছিলেন৷ সেই লক্ষ্যে তাঁরা কিছু রঙিন প্যাটার্ন বা নমুনা তৈরি করেছিলেন৷ মানুষের দৃষ্টিতে তার কোনো অর্থ না হলেও এআই সেটিকে গুরুত্ব দেয় বটে৷
বিজ্ঞানীরা একাধিক প্যাটার্ন পেয়েছেন৷ সেগুলি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে সবচেয়ে বেশি ধোঁকা দেয় ও বিঘ্ন ঘটায়৷ সেই প্যাটার্ন ঢেকে দিলে এআই নির্বিঘ্নে কাজ করে এবং কোনো ব্যক্তি, তার মুভমেন্ট ও চলার দিক শনাক্ত করে৷ কিন্তু প্যাটার্ন দৃশ্যমান হলে এআই অপটিক্যাল ফ্লো হিসেবের সময় বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে৷ রংগুলি এলোমেলো হয়ে যায়৷ সিস্টেম কিছুই চিনতে পারে না৷ কম্পিউটার বিজ্ঞানী জোয়েল জানাই বলেন, ‘‘আমরা এই সমস্যার মাত্রা দেখে অবাক হয়েছিলাম৷ এ ক্ষেত্রে গবেষণার সময় অন্যান্য সমস্যাও ধরা পড়েছে বলে আমরা এই ধোঁকা সম্পর্কে অবগত ছিলাম৷ তবে এত ছোট একটা অংশ যে বড় এলাকার উপর এতটা প্রভাব রাখতে পারে, সেটা সত্যি দুশ্চিন্তার বিষয়৷''
রংয়ের ছোট্ট একটা অংশ সিস্টেমের দৃষ্টির ক্ষেত্রে মাত্র এক শতাংশ জায়গা নিলেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দৃষ্টির প্রায় ৫০ শতাংশ পরিসর জুড়ে বিঘ্ন ঘটায়৷ অনুরাগ রঞ্জন বলেন, ‘‘বৃষ্টি, কুয়াশার মতো কঠিন পরিবেশে কম্পিউটারের অনেক কিছু শেখার আছে ঠিকই৷ কিন্তু রংয়ের নির্দিষ্ট প্যাটার্ন যেভাবে বিঘ্ন ঘটায়, সেটা এই নতুন নেটওয়ার্কের জন্য অনেক বেশি বিপজ্জনক৷''
স্বয়ংক্রিয় গাড়ির সিস্টেম হ্যাক করার পদ্ধতি আবিষ্কার করে গবেষকরা ভবিষ্যতে এমন প্রণালীর আরও উন্নতির আশা করছেন৷ ভবিষ্যতে কোনো এক সময়ে স্বয়ংক্রিয় গাড়ি মানুষে চালানো গাড়ির তুলনায় আরও নিরাপদে চলবে বলে তাঁরা নিশ্চিত৷
ইয়ান ক্যার্কহফ/এসবি
চালকের প্রয়োজন কমছে, গাড়িই হয়ে উঠছে কর্তা
জার্মানির ফ্রাংকফুর্ট শহরে আয়োজিত আন্তর্জাতিক গাড়ি প্রদর্শনী আইএএ প্রতি বছর গাড়ি-ভক্তদের জন্য অনেক নতুন চমক নিয়ে আসে৷ এবার স্বয়ংক্রিয় পার্কিং ও চালকবিহীন গাড়ির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Meyer
সৌন্দর্যের প্রতীক
ইটালির হাল ফ্যাশনের লাম্বোরগিনি হুরাকান মডেল শুধু চার চাকার যান নয়, রীতিমতো ফ্যাশনদূরস্ত ডিজাইনই হলো এই কোম্পানির গাড়ির মূলমন্ত্র৷ গাড়ির ভিতরে-বাইরে প্রতিটি কোণেই পাওয়া যায় আভিজাত্যের ছাপ৷ মানুষের ‘ইনস্টিংক্ট’ বা সহজাত প্রবৃত্তি অনুযায়ী এই মডেল ডিজাইন করা হয়েছে বলে দাবি করছে লাম্বোরগিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Meyer
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ম্যার্কেল
শরণার্থী সংকট থেকে শুরু করে নানা বিষয়ে ব্যস্ত জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল শুধু প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই উপস্থিত থাকেননি, প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে ঘুরে দেখেছেন৷ কিছু গাড়ির স্বয়ংক্রিয় পার্কিং-এর ক্ষমতা দেখে তিনি খুব খুশি৷ বলেছেন, একমাত্র নারীরাই স্বীকার করে যে, তাঁদের পার্কিং করতে অসুবিধা হয়৷ পুরুষরাও এই সুবিধা উপভোগ করে৷
ছবি: Reuters/K. Pfaffenbach
ডিজাইন মানেই চমক
পর্শে কোম্পানির ‘মিশন ই-কনসেপ্ট’ গাড়ি রূপে-গুণে চমকপ্রদ৷ সামনের ও পেছনের দরজা নিজস্ব ভঙ্গিতে খুলে যায়৷ ব্যাটারিচালিত এই গাড়ি চার্জ করতে নাকি মাত্র ১৫ মিনিট লাগে৷ ফলে অ্যামেরিকার ‘টেসলা’ কোম্পানির সঙ্গে সরাসরি প্রতিযোগিতা হবে এই মডেলের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Rumpenhorst
মঞ্চে অঘটন
বিএমডাব্লিউ কোম্পানির প্রধান হারাল্ড ক্র্যুগার সংবাদমাধ্যমের সামনে কথা বলতে বলতে হঠাৎ সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন৷ শীর্ষ কর্তাদের কতটা স্ট্রেস বা মানসিক চাপ সহ্য করতে হয়, এই ঘটনাকে তারই উদাহরণ হিসেবে দেখছেন অনেকে৷ শরীর খারাপ হওয়া সত্ত্বেও ক্র্যুগার তাঁর দায়িত্ব পালন করতে এগিয়ে এসেছিলেন৷
ছবি: Reuters/K. Pfaffenbach
চালকবিহীন গাড়ি
এবারের গাড়ি প্রদর্শনীতে চালকবিহীন গাড়ি বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে৷ জার্মানির ডাইমলার গ্রুপ এমনই একটি প্রোটোটাইপের মডেল পেশ করেছে৷ গুগল সহ বিভিন্ন কোম্পানি ভবিষ্যতে এমন গাড়ি বাজারে আনতে চায়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Probst
স্বচ্ছ ডিজাইন
মার্সিডিস কোম্পানির ভবিষ্যতের এই গাড়ির মডেলে বসে চালক ও সহযাত্রীরা কার্যত বিনা বাধায় উপর-নীচ ও আশেপাশের দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন৷ এখনো পর্যন্ত শুধু এর প্রোটোটাইপ তৈরি করা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/D. Roland
গাড়ি মানেই দূষণ?
পথে যত গাড়ি, ততই যানজট ও দূষণ৷ জার্মানির পরিবেশবাদী সংগঠন প্রদর্শনীর বাইরে তাই এই নেতিবাচক দিকগুলির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে প্রতিবাদ দেখিয়েছে৷ কার্বন নির্গমন কমাতে গাড়ি-নির্মাতাদের অনীহা তাদের রোষের কারণ৷ পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি থাকা সত্ত্বেও অটোমোবাইল ও পেট্রোলিয়াম কোম্পানির চাপে বিকল্প জ্বালানির গাড়ির বিকাশ থেমে রয়েছে বলে তাদের অভিযোগ৷