স্বয়ংক্রিয় যানে অনেক সুবিধার আশা
২৯ নভেম্বর ২০২১গাড়ি চালাতে চালাতে অন্য কিছু করতে ইচ্ছা করে? ২০২২ সালেই জার্মানিতে হয়তো হাত ব্যবহার না করেই গাড়ি চালানো সম্ভব হবে৷ প্রথমদিকে শুধু নির্দিষ্ট কিছু রুটে ট্যাক্সি ও শাটলের ক্ষেত্রে এমন কর্মসূচি কার্যকর হবে৷ তবে খাঁটি সেল্ফ ড্রাইভিং ভেহিকল ব্যবহার করা হবে না৷
কোনো যানের স্বয়ংক্রিয়তার মোট পাঁচটি পর্যায় বেঁধে দেওয়া হয়েছে৷ আদৌ কোনো অটোমেশন না থাকলে শূন্য এবং সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় হলে পাঁচ নম্বর দেওয়া হয়৷ আজকের যাত্রীবাহী যানগুলিতে বড়জোর আংশিক অটোমেশনের ব্যবস্থা রয়েছে, যার মাপকাঠি দুই৷ সে ক্ষেত্রে যান কিছু সময়ের জন্য অথবা নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতিতে স্টিয়ারিং, অ্যাক্সিলারেশন ও ব্রেক নিয়ন্ত্রণ করে৷ যেমন পার্কিং অথবা হাইওয়ের উপর চলার সময় এই বৈশিষ্ট্য কাজে লাগানো হয়৷ তবে ড্রাইভারকে সব সময়ে সেই প্রক্রিয়ার উপর নজর রাখতে হয়৷
টেসলা কোম্পানির স্বঘোষিত ‘ফুল সেল্ফ-ড্রাইভিং মোড'-ও আসলে লেভেল টু-তেই সীমাবদ্ধ৷ যদিও সেই গাড়ি সম্প্রতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সান ফ্রানসিস্কো থেকে লস অ্যাঞ্জেলেস পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল৷ অ্যামাজন কোম্পানির অধীনে জুক্স সংস্থার পরীক্ষামূলক যানের ডিজাইন লেভেল ফোর অটোনমি অনুযায়ী করা হয়েছে৷ গুগল কোম্পানির ওয়েমো এরই মধ্যে পরীক্ষামূলক ভ্রমণ শুরু করেছে৷ চালকের আসন খালি থাকলেও কেউ না কেউ দূর থেকে চলার সময় নজর রাখে৷
জার্মানিতে ‘মোবিল আই' নামের কোম্পানি সেল্ফ ড্রাইভিং ট্যাক্সি চালু করার পরিকল্পনা করছে৷ এই কোম্পানি ড্রাইভার অ্যাসিস্ট সফ্টওয়্যার সিস্টেমের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে৷ অত্যন্ত জটিল এই প্রযুক্তি সামলাতে এমন জ্ঞান অত্যন্ত জরুরি৷
পথে নেমে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হলে সিস্টেমকে চারিপাশের পরিবেশ ভালো করে বুঝতে হবে৷ তাই অটোনমাস প্রযুক্তির আওতায় ক্যামেরা, রাডার, লাইডার ও আলট্রাসাউন্ড সেন্সর কাজে লাগানো হয়৷ সেই সব যন্ত্র গাড়ির অবস্থান ও আশেপাশে কী রয়েছে, গাড়িকে তা জানিয়ে দেয়৷ ফলক্সভাগেন অটোমেটেড ড্রাইভিং বিভাগের আড্রিয়ান স্লকি বলেন, ‘‘এই লোগোর পেছনে রাডার ব্যবস্থা বসানো রয়েছে৷ দৃশ্যমান না হলেও সেন্সর লোগোর মধ্য দিয়েও দেখতে পায়৷ নীচে এক লেজার-ভিত্তিক স্ক্যানার রয়েছে৷ এক লাইডার সেন্সর গাড়ির সামনে ১৮০ ডিগ্রি এলাকা স্ক্যান করে চলে৷ আরেকটি সেন্সর ২০০ মিটার পর্যন্ত এলাকার উপর নজর রাখে৷ গাড়ির মধ্যে কয়েকটি শর্ট রেঞ্জ সেন্সরও লুকানো রয়েছে৷ তার উপর একটি ডুয়াল ক্যামেরা সিস্টেম রোড মার্কিং, পথচারী ও অন্যান্য ব্যবহারকারী শনাক্ত করে৷''
কিন্তু এমন সব সেন্সরের কিছু দুর্বলতা রয়েছে৷ আবহাওয়া পুরোপুরি ভালো থাকলে তবেই সেগুলি ঠিকমতো কাজ করে৷ আড্রিয়ান স্লকি বলেন, ‘‘ক্যামেরা ও লাইডার সেন্সর আসলে অপটকাল সিস্টেম৷ প্রবল বৃষ্টিপাতের সময় পানির বড় বিন্দু সেগুলির আলোর প্রতিফলন ঘটাতে পারে৷ কুয়াশার সময় মানুষের চোখের মতো ক্যামেরার ক্ষমতাও কমে যায়৷ সে কারণে আমাদের সেন্সর, ক্যামেরা, রাডার ও লাইডারের সম্মিলিত ক্ষমতার প্রয়োজন হয়৷''
গাড়িগুলিতে অত্যন্ত নিখুঁত ডিজিটাল মানচিত্রও ভরা রয়েছে৷ বিভিন্ন স্তরে ন্যাভিগেশন সংক্রান্ত তথ্য, রোড মার্কিং ও ট্রাফিক লাইট রেকর্ড বা ধারণ করা হয়৷ বাড়িঘর ও গাছপালার উপরেও নজর রাখা হয়৷ সেই মানচিত্র আপ টু ডেট এবং নিখুঁত রাখাও জরুরি৷
অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে সেই তথ্য বিশ্লেষণ করতে হয়৷ এমন কম্পিউটিং ক্ষমতার জন্য জ্বালানির প্রয়োজন হয়৷ তাছাড়া দ্রুত গতির মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কও থাকতে হবে৷ তবে জার্মানিসহ অন্যান্য দেশে স্বয়ংক্রিয় যানের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার লক্ষ্য আলাদা৷
স্বয়ংক্রিয় শাটল ব্যবস্থা চালু হলে ব্যক্তিগত গাড়ি উদ্বৃত্ত হয়ে পড়বে৷ একই সঙ্গে গ্রামাঞ্চলেও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে৷ শহরেও অনেক জায়গা খালি হয়ে যাবে৷
ইনা রটার/এসবি