পরিভাষায় যার নাম ‘‘অটোনোমাস ভেহিকল’’ বা ‘‘স্বনিয়ন্ত্রিত যান’’৷ জাতিসংঘের একটি স্বল্পপরিচিত চুক্তির নাম ‘ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন অন রোড ট্রাফিক’৷ গত মাসে জার্মানি, ইটালি ও ফ্রান্সের চাপে সেটিকে বদল করা হয়৷
বিজ্ঞাপন
বড় বড় যাত্রীবাহী বিমান যদি অটো-পাইলটে চলতে পারে, তবে গাড়িই বা দোষ করল কোথায়? মার্কিন মুলুকে তো স্বয়ংচালিত গাড়ি নিয়ে বহুদিন ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলেছে৷ কিন্তু ড্রোন-এর মতোই, সেটা যে একদিন ছেলেখেলা না হয়ে বাস্তব সত্যে পরিণত হবে, তা কে ভাবতে পেরেছিল?
চালক হুইল ছেড়ে নিশ্চিন্ত মনে বসে রয়েছেন আর গাড়ি তার নিজের মতো পথ চলে ঠিক জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছে, সেন্সর আর মোবাইল প্রযুক্তির জগতে এ কল্পনার জন্য আর জুল ভার্নের মতো কোনো সায়েন্স ফিকশন মহাত্মার ডাক পড়ে না৷ মার্সিডিজ-বেঞ্জ, বিএমডাব্লিউ ছাড়া বশ এবং কন্টিনেন্টাল-এর মতো অটো পার্ট সাপ্লায়াররাও নাকি সেমি-অটোনোমাস কার-এর প্রযুক্তি নিয়ে ব্যস্ত৷
জেটপ্লেনের অটো-পাইলটের মতোই গাড়ি চালানোর কাজটা পুরোপুরি যন্ত্রের হাতে ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে না৷ জাতিসংঘের ‘ওয়ার্কিং পার্টি অন রোড ট্রাফিক সেফটি' গতমাসে যে সংশোধনটির ব্যাপারে একমত হয়, তা অনুযায়ী অটোনোমাস প্রণালীতে ড্রাইভারের ‘‘যে-কোনো সময় হস্তক্ষেপ করা কিংবা (প্রণালীটি) বন্ধ করে দেওয়ার'' ব্যবস্থা থাকা চাই৷
জাতিসংঘের চুক্তিটিতে এ যাবৎ স্বাক্ষর করেছে ৭২টি দেশ৷ কাজেই এ সব দেশকে তাদের নিজেদের আইন পাল্টাতে হবে৷ ইউরোপীয় দেশগুলি, মেক্সিকো, চিলি, ব্রাজিল ও রাশিয়া এই চুক্তির আওতায় পড়লেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান অথবা চীন এর বাইরে৷ সংশোধনের প্রস্তাব আসে জার্মানি, ইটালি, ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম ও অস্ট্রিয়ার তরফ থেকে: কাজেই এটাকে একটা ইউরোপীয় উদ্যোগ বলা চলে৷ দৃশ্যত এই নতুন প্রযুক্তিতে ইউরোপের বিশেষ আগ্রহ আছে – হয়ত ইউরোপ এক্ষেত্রে কিছুটা এগিয়েও রয়েছে৷
বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের দারুণ উদ্ভাবন!
গাড়ি চালানোর সময় চালক ঠিক অবস্থায় আছেন কিনা সেটা জানিয়ে দেবে একটি ডিভাইস৷ সেই পদ্ধতিই উদ্ভাবন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের নেতৃত্বাধীন একদল হবু বিজ্ঞানী৷
ছবি: Abdur Razzaque
সড়ক দুর্ঘটনা কমানো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকের তত্ত্বাবধানে ঐ বিভাগের চার শিক্ষার্থী একটি ডিভাইস উদ্ভাবন করেছেন৷ পরামর্শক হিসেবে ছিলেন ফলিত পদার্থবিজ্ঞান, তড়িৎ ও যোগাযোগ প্রকৌশল বিভাগের লেকচারার মো. এনামুল হক চৌধুরী৷ এর মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব বলে আশা করছেন ড. রাজ্জাক৷
ছবি: Abdur Razzaque
ডিভাইসটি যা করবে
গাড়ি চালানোর সময় চালক মোবাইলে কথা বললে, এসএমএস করায় ব্যস্ত হলে কিংবা চা, কফি খেলে তাকে সতর্ক করে দেবে৷ এছাড়া চালক সামনের রাস্তার দিকে না তাকিয়ে পাশের বিলবোর্ডের দিকে নজর দিচ্ছে কিনা সেটাও খেয়াল রাখবে এই ডিভাইস৷
ছবি: Abdur Razzaque
তাপমাত্রা, রক্তচাপ পরিমাপ
মদ্যপ অবস্থায় আছে কিনা, তার ঘুম ঘুম ভাব হচ্ছে কিনা, শরীরে তাপমাত্রা, হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ ঠিক আছে কিনা, অর্থাৎ চালক সুস্থ আছে কিনা, সে বিষয়গুলোও খেয়াল রাখা যাবে এই ডিভাইসের মাধ্যমে৷
ছবি: Abdur Razzaque
কয়েকটি সেন্সর
প্রতিটি বিষয় খেয়াল রাখার জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা সেন্সর৷ তবে সব কাজ যেন একটা মাত্র ডিভাইস দিয়ে করা যায় সে চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান ড. রাজ্জাক৷
ছবি: Abdur Razzaque
দাম ২৫-৩০ হাজার টাকা
বর্তমানে পরিপূর্ণ ডিভাইসটি ব্যবহার করতে চাইলে খরচ পড়বে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার মতো৷ তবে আরও গবেষণার মাধ্যমে এর মূল্যটা কমানো সম্ভব৷
ছবি: FARJANA K. GODHULY/AFP/Getty Images
সেমিনারে উপস্থাপন
ড. রাজ্জাক জানান, ইতিমধ্যে সরকার, বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন পরিবহণ মালিকদের সামনে ডিভাইসটি তুলে ধরা হয়েছে৷ আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সচিব এটার প্রতি আগ্রহী হয়ে একে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন৷ এছাড়া বেসরকারি সোহাগ পরিবহণের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডিভাইসটি বাস্তবে কতটা কার্যকর হচ্ছে তা পরীক্ষা করে দেখতে এবং পরীক্ষামূলকভাবে এটা চালু করার জন্য যে আর্থিক সহায়তা লাগবে সেটা দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন৷
ছবি: Abdur Razzaque
যেভাবে পরিকল্পনার শুরু
ড. রাজ্জাক বলেন, তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীর, ক্রিকেটার মানজার রানার মতো ব্যক্তিত্বদের সড়ক দুর্ঘটনায় হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তাঁকে ভাবিয়ে তুলেছিল৷ নিজের কাজের ক্ষেত্র থেকে এ ব্যাপারে কিছু করা যায় কিনা তা নিয়ে ভাবতে গিয়েই তাঁর মাথায় এই ডিভাইসের পরিকল্পনা আসে বলে জানান তিনি৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/GettyImages
সহায়তা
এই ডিভাইস তৈরি প্রকল্প এগিয়ে নিতে অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক ‘ইনফরমেশন সোসাইটি ইনোভেশন ফান্ড’-এর কাছ থেকে ৩০ হাজার ডলার অস্ট্রেলীয় ডলার পেয়েছিলেন ড. রাজ্জাক ও তাঁর দল৷
ছবি: Abdur Razzaque
8 ছবি1 | 8
মার্সিডিজের হাতে একটি নতুন প্রযুক্তি আছে, যা অনুযায়ী গাড়িতে বসানো ক্যামেরা ও রাডার দিয়ে গাড়ির সামনে ও পিছনে নজর রাখা চলে৷ গাড়ি এভাবে নিজের থেকেই কোনো বড় লরি বা ট্রাককে ওভারটেক করতে পারে৷ মার্সিডিজ এখন আরো নানা ধরনের স্বয়ংক্রিয় যান্ত্রিক প্রণালী বসাতে চায়: অটোমেটেড পার্কিং, অটোমেটিক স্টপ-অ্যান্ড-গো ড্রাইভিং, মোটরওয়ে-তে গাড়ি চালানো, ইত্যাদি৷ লক্ষ্য হলো, শেষমেষ ঠিক আইফোনের মতোই এই স্বয়ংচালিত প্রযুক্তি সহজেই আপডেট করার ব্যবস্থা রাখা৷
ড্রাইভার ছাড়া গাড়ি চালানোয় বিশ্বে প্রথম হল গুগল – সেটা ঘটে ২০১২ সালে৷ কিন্তু ইউরোপের লাক্সারি কার নির্মাতারা এত সহজে গাড়ির ক্ষেত্রে তাদের সহজাত নেতৃত্ব ছেড়ে দিতে রাজি নয়৷ ২০১৩ সালেই মার্সিডিজ-বেঞ্জের একটি এস-ক্লাস লিমুজিন মানহাইম থেকে ফরৎসহাইম ১০৩ কিলোমিটার পথ বিনা চালকে অতিক্রম করে৷ বিশ্বের প্রথম মোটরগাড়ি, বেঞ্জ কোম্পানির ‘বার্থা' ঠিক এই পথেই চলেছিল কিনা!