এক কালে যাতায়াতে গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়িই সম্বল ছিল, তারও আগে একমাত্র ভরসা ছিল দুই পা৷ প্রযুক্তি কত কী দিয়েছে! কত রকমের গাড়ি দিয়েছে, বলুন! সেই সঙ্গে দুর্ঘটনা আর মৃত্যুও দিয়েছে অনেক, তাই না?
বিজ্ঞাপন
দোষটা কী বিজ্ঞান, প্রযুক্তি বা গাড়ির? মোটেই না৷ তাহলে...?
সে কথায় পরে আসি৷ আগে বরং কেন হঠাৎ দুর্ঘটনা নিয়ে কথা বলতে হচ্ছে সেটাই বলি৷ যুক্তরাষ্ট্রে এক বিমান দুর্ঘটনায় দু'জন মানুষ মারা গেছেন৷ অনেকে হয়ত বলবেন, ‘‘বাংলাদেশে তো প্রতিদিন দুর্ঘটনা ছাড়াই, পেট্রোল বোমায় পুড়ে কত মানুষ মারা যায় – ভাবতে হলে তা নিয়ে ভাবুন এবং লিখুন৷'' ‘অন্যপক্ষ' আরো জোর গলায় দাবি তুলবেন, ‘‘পেট্রোল বোমা, আন্দোলনের নামে মায়ের কোলে শিশুকে পুড়িয়ে মারা – এ সব নিয়ে না লিখে ক্রসফায়ার নিয়ে লিখুন৷ ক্রসফায়ারে মানবতা ভূ-লুণ্ঠিত হচ্ছে৷''!
শিশুর ক্যামেরায় নিজের জগত
দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনের কাইয়েলিচা এলাকার শিশুরা তাদের কাছে যা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় সেসবের ছবি তোলে৷ ক্যামেরা হাতে আশেপাশের ছবি তুলে বেড়ায় ওরা৷ কাইয়েলিচায় প্রায় ১২ লাখ মানুষের বাস, তাঁদের প্রায় সবাই খুব গরিব৷
ছবি: Elethu/Karin Banduhn
একদিনের রিপোর্টার
‘‘জীবনে সত্যি যা ভালোবাসো তা দেখাও’’ – ঠিক এই কথাটাই বলে দেয়া হয়েছে স্থানীয় একটি স্কুলের ছয় বছর বয়সি এই শিশুদের৷ এই প্রথম ক্যামেরা হাতে নিয়েছে ওরা৷ কয়েক ঘণ্টা ক্যামেরা চালানো শেখার পর নেমে পড়েছে সেরা ছবি তোলার কাজে৷
ছবি: Karin Banduhn
‘নতুন বাড়ি’
কোসা ভাষায় কাইয়েলিচা মানে ‘নতুন বাড়ি’৷ সরকার চায় এলাকায় নতুন ঘর-বাড়ি হোক৷ কিন্তু লিখতার পরিবারের মতো অনেকেরই কাঠের বাড়ি ছেড়ে নতুন বাড়িতে ওঠার সাধ্য নেই৷
ছবি: Liktha/Karin Banduhn
ভরপুর বাড়ি
সিফোকাজির পরিবারে এক ছাদের নীচে বাস করে তিন প্রজন্ম৷ কাইয়েলিচার বেশির ভাগ পরিবারের মতো এ পরিবারেরও মূল উপার্জনকারী বাবা, পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে অন্য বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে মা৷ মা-বাবা যখন কাজে ব্যস্ত, তখন বাচ্চাদের দেখাশোনা করেন দাদা-দাদি৷
ছবি: Siphokazi/Karin Banduhn
অমূল্য সম্পদ
খেলনা খুব প্রিয় মাহলের৷ বেশিরভাগ খেলনাই তার স্কুলে আসে জার্মানির হামবুর্গ শহরের শুলকাম্প প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে৷ কাইয়েলিচা সংস্থা ওদের স্কুলের পাশে আছে সবসময়৷
ছবি: Mahle/Karin Banduhn
ছেলেদের খেলনা
মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের পাশাপাশি একটা গাড়ি থাকলে কার না ভালো লাগে! জায়গা নেই বলে কাইয়েলিচার বাচ্চারা বাড়িতে খুব একটা খেলতে পারে না৷ খুদে ফটোগ্রাফার ইভিভসে তাই খালি ক্যান দিয়েই বানিয়ে নিয়েছে রেস ট্র্যাক৷
ছবি: Ivivse/Karin Banduhn
ক্ষুধা নিবারণ
লুলুথো স্কুল থেকে ফেরে ভীষণ ক্ষুধা নিয়ে৷ ঘরে সবসময় খাওয়ার মতো কিছু না কিছু থাকে বলে রক্ষা৷ কাইয়েলিচার অধিকাংশ পরিবার খাবারের পেছনে প্রতিদিন খরচ করে ২২ রান্ড, অর্থাৎ ১.৭০ ইউরোর মতো৷
ছবি: Lulutho/Karin Banduhn
ঐতিহ্য আর দৈনন্দিন জীবন
স্থানীয়দের অধিকাংশই কোসা জনগোষ্ঠীর৷ নেলসন ম্যান্ডেলা আর তাঁদের ভাষা এক৷ তাঁদের কাছে ঐতিহ্য খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ সাধারণত মেয়েরা রান্না করে আর ছেলেরা কাজ করতে যায় বাইরে৷
ছবি: Yandise/Karin Banduhn
কাইয়েলিচার শিশুরা
ফটোসাংবাদিক এলেথুর জন্য বন্ধুরা খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ এখানে শিশুরা আত্মবিশ্বাসী এবং সুখি মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠতে পারে৷ এটা দরকারও, কেননা শিশুদের হাতেই তো দেশের ভবিষ্যৎ!
ছবি: Elethu/Karin Banduhn
8 ছবি1 | 8
তাঁদের কারো কথাই আজ শুনবো না৷ হত্যা মানেই মানবতার অপমান৷ ‘গোপন রাজনৈতিক বিশ্বাস' থেকে যদি কেউ কোনো হত্যাকে ‘ছোট' করে দেখিয়ে অন্যগুলোকে বড় করে দেখাতে চান, তাদের কথা শুনতে বয়েই গেছে!
যুক্তরাষ্ট্রে অমৃত পাল সিং এবং তাঁর এক সঙ্গীর মৃত্যু মোটেই হত্যাকাণ্ড নয়৷ তবে মৃত্যুর জন্য যদি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করা হতো তাহলে বিমানের পাইলট অমৃত পালই হতেন প্রধান আসামী৷ তদন্তে দেখা গেছে বিমানের ককপিটে বসে স্মার্টফোনে ‘সেল্ফি' তুলতে গিয়েই অমৃত নিজে মরেছেন, বিমানের এক যাত্রীকেও মেরেছেন৷ আবহাওয়া স্বাভাবিক ছিল, বিমানে কোনো যান্ত্রিক ত্রুটির প্রমান মেলেনি, কোনো জঙ্গি হামলার গন্ধও নেই৷ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী পাইলট স্বয়ং এবং তাঁর স্মার্টফোন৷
বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিরও পরোক্ষ দোষ আছে৷ বিজ্ঞান মানুষকে নতুন নতুন জ্ঞান দিচ্ছে, অভিজ্ঞতা দিচ্ছে, দিন দিন আরো ‘স্মার্ট' বানাচ্ছে৷ একসময় মানুষের গাড়ি ছাড়াও দিব্যি চলতো৷ এখন একদম চলে না৷ গরু গাড়ি-ঘোড়া গাড়ি, পালকি – ওসব আজ বিলুপ্তপ্রায়৷ যে কয়টা আছে সেগুলো সাইকেল, মোটর সাইকেল, গাড়ি, রেলগাড়ি, হেলিকপ্টার, বিমান – এ সবের দাপটে অসহায়৷ কিন্তু কিছু মানুষ সদা বেপরোয়া৷ হেঁটে, গাড়িতে, রেলগাড়িতে যেভাবে যেখানেই যায়, খুব তাড়াতাড়ি যেতে চাই৷ রাস্তা খারাপ হলে কী, ভালো হলেই কী! সবাই ছুটছে৷ দুর্ঘটনাও বাড়ছে৷!
হালে মোবাইল ফোনের কারণেও দুর্ঘটনা বাড়ছে৷ প্রায়ই খবর আসে, মোবাইলে কথা বলতে বলতে হাঁটতে গিয়ে কেউ গাড়িচাপা পড়েছেন, আবার কখনো কোনো চালক গাড়ি চালানোর সময় মোবাইলে কথা বলতে গিয়ে গাড়ি ফেলেছেন খাদে৷ যুক্তরাষ্ট্রের বিমান দুর্ঘটনাটি অবশ্য কল্পনাকেও হার মানিয়েছে৷ একজন বৈমানিক চলন্ত বিমানের ককপিটে বসে নিজের ছবি তুলছিলেন, ভাবা যায়৷
আজ যাযাবরকে একটু ভুল মনে হচ্ছে৷ দৃষ্টিপাতে তিনি লিখেছেন, ‘‘আধুনিক বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বেগ, কিন্তু কেড়ে নিয়েছে আবেগ৷'' স্মার্টফোন তো দেখছি কোনো কোনো মানুষকে আবেগে ভাসিয়ে নেয়! একটা ছবি, একটু কথার জন্য নিজের এবং অন্যের জীবনের নিরাপত্তার কথাও ভুলে যায় তাঁরা!
স্মার্টফোনকে একটি ‘স্মার্ট' পরামর্শ
মানুষের প্রাণ বাঁচানোর জন্য স্মার্টফোন নতুন একটা বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারে৷ বিজ্ঞাপনে তারা সবাইকে বলুক, ‘‘সবাই স্মার্টফোন ব্যবহার করুন, কিন্তু স্মার্টফোনের চেয়েও স্মার্ট হবেন না৷'' স্মার্টফোনে কথা বলা এবং সেল্ফি তুলতে যাওয়ার কারণে মৃত্যুহার তাহলে নিশ্চয়ই কমবে৷
গাড়ি চালানোর সময় যে ৭টি কাজ করবেন না
চালকের ভুলেই অধিকাংশ সময় গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটে৷ উদ্বেগের কথা হচ্ছে, গাড়ি চালানোর সময় অন্য কাজের প্রবণতা চালকদের মধ্যে বাড়ছে৷ এই ছবিঘরে থাকছে সাতটি কাজের কথা, যা গাড়ি চালানোর সময় করা উচিত নয়৷
ছবি: Fotolia/Africa Studio
সবচেয়ে বড় বিপত্তি
গাড়ি চালানোর সময় কোন কাজ সবচেয়ে বড় বিপত্তি সৃষ্টি করতে পারে, সেটা একটু ভাবলে আপনি নিজেই বুঝবেন৷ হ্যাঁ, মুঠোফোন৷ স্ট্যাটিসটা-র জরিপে অংশ নেয়া চালকদের মধ্যে প্রতি চারজনের একজন স্বীকার করেছেন, গাড়ি চালানোর সময় অন্তত একবার হলেও ফোনে কথা বলেন তারা৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২১ শতাংশ গাড়ি দুর্ঘটনার কারণ হচ্ছে ফোনে কথা বলা৷
ছবি: Fotolia/Markus Mainka
গাড়ি চালানোর সময় বার্তা পাঠানো
গাড়ি চালানোর সময়ই অন্তত ৪৫ শতাংশ চালক মুঠোফোনে খুদেবার্তা বা এসএমএস পড়েন৷ ৩৭ শতাংশ আবার বার্তা লেখেনও৷ অবস্থা এমন হয়েছে, যে নিউ ইয়র্কের রাস্তায় ২৯৮ রকমের রোড সাইন যোগ করা হয়েছে এই চর্চা বন্ধে৷
ছবি: public domain
ট্যাবলেটে সময় অপচয়
যানজটে আটকে থাকাটা বিরক্তিকর বটে৷ আর বিরক্তি কাটাতে অনেকে তাই সেই সময়টায় ট্যাবলেটে কিছু দেখেন৷ সমস্যা হচ্ছে, ১২ শতাংশ চালক গাড়ি চালানোর সময়ও এই কাজটা করেন, জানিয়েছে স্ট্যাটিসটা৷
ছবি: Matt Cardy/Getty Images
গাড়িতে রূপচর্চা
অফিসের যাওয়ার তাড়ার কারণে অনেক নারী বাড়িতে রূপচর্চার কাজটা শেষ করতে পারেন না৷ তাই গাড়ি চালাতে চালাতেই চোখের উপরে ‘মাসকারা’ কিংবা ঠৌঁটে ‘লিপ গ্লস’ লাগাতে দেখা যায় অনেক চালককে৷ স্ট্যাটিসটার হিসেবে, ২৭ শতাংশ নারী চালকের এই প্রবণতা রয়েছে৷ এমনকি কোন কোন পুরুষ নাকি গাড়ি চালাতে চালাতে শেভও করেন!
ছবি: Fotolia/evgenyatamanenko
চালকের টুইট
গাড়ি চালাতে চালাতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু পোস্ট করাটাও ক্রমশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে৷ স্ট্যাটিসটা-র হিসেবে ২৪ শতাংশ চালক গাড়ি চালানোর সময় অন্তত একবার সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন৷ এদের মধ্যে ১১ শতাংশ নিয়মিতই সেটা করেন৷ বড় উদ্বেগের কথা৷
ছবি: Reuters
সেল্ফি তোলা
গাড়িতে তোলা সেল্ফি মাঝেমাঝেই দেখা যায় ফেসবুক, টুইটারে৷ ফোর্ড মোটর কোম্পানির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ব্রিটেনে সবচেয়ে বেশি চালক গাড়ি চালানোর সময় সেল্ফি তোলেন৷ সেদেশের ৩৩ শতাংশ চালকের এই অভ্যাস রয়েছে৷ জার্মানি এবং ফ্রান্সের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ২৮ শতাংশ৷ ইংরেজিতে #ড্রাইভিংসেল্ফি হ্যাশট্যাগটিও বেশ জনপ্রিয়৷
ছবি: Fotolia/nenetus
গাড়িতে বই পড়া
স্ট্যাটিসটা-র জরিপে অংশ নেয়া চালকদের প্রতি পাঁচজনের একজনের গাড়ি চালানোর সময় বই পড়ার অভ্যাস রয়েছে৷ তবে এসময় ভিডিও দেখার হার অনেক কম৷ বলাবাহুল্য, জরিপের এসব ফলাফল উদ্বেগজনক৷ কেননা গাড়ি চালানোর সময় এসব কাজ বড় দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে৷ তাই সতর্ক হোন৷