বার্লিন বেড়াতে যাচ্ছেন? কী দেখবেন, কীভাবে যাবেন, কোথায় খাবেন – জানেন না? কোনো সমস্যা নেই৷ কারণ জার্মানির রাজধানীতে আপনি কি কি করতে পারেন – তার সব কিছু বলে দেবে আপনার স্মার্টফোন অ্যাপটি৷
বিজ্ঞাপন
পৃথিবীর প্রায় সব বড় শহরের ম্যাপ আর তথ্য নিয়ে পর্যটকদের জন্য রয়েছে এ রকম অসংখ্য অ্যাপ৷ কেবল জার্মানির রাজধানী বার্লিনের জন্যই অন্তত ১৩০টি অ্যাপ রয়েছে৷ আর এই সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে৷
ট্যুর এজেন্সি ভিজিট বার্লিন-এর কর্মকর্তা ক্যাথারিনা ড্রেগার জানান, এ সব অ্যাপে বেশ কয়েকটি ভাষায় পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ সংক্রান্ত বিভিন্ন পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা দেয়া থাকে৷ পর্যটকদের মধ্যে এ ধরনের স্মার্টফোন অ্যাপের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে৷
‘পাখির চোখ’এ বার্লিন
‘পাখির চোখ’এ দেখুন জার্মানির রাজধানী বার্লিন৷
ছবি: DW/T. Eastley
আকাশ থেকে বার্লিন
বার্লিনের বিখ্যাত টিভি টাওয়ার৷ ছবিটি পাশের পার্ক ইন হোটেল থেকে তোলা৷ ৩৬৮ মিটার উঁচু এই টিভি টাওয়ারের নীচের দিকটা লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন ব্যস্ত মহানগরীর ছবি৷ এই টাওয়ারের ২০৮ মিটার উচ্চতায় রয়েছে একটি ‘ঘুরন্ত রেস্তোরাঁ’৷
ছবি: DW/T. Eastley
এক জায়গা থেকে সব
পার্ক ইন হোটেল থেকে বার্লিনের বেশ কয়েকটি আকর্ষণীয় স্থান দেখা যায়৷ যেমন এই ছবিতে ডানপাশে দেখা যাচ্ছে বার্লিন ক্যাথিড্রাল, বামে সেন্ট হেডভিশ ক্যাথিড্রাল৷
ছবি: DW/T. Eastley
রূপান্তর
সময় পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বার্লিনে পুরনো ভবনের পাশে গড়ে উঠেছে নতুন ভবন, ইটের বদলে এসেছে কাচের দালান, বাদামি ও ধূসর রঙ এর বদলে এসেছে রঙিনের সমাহার৷
ছবি: DW/T. Eastley
বার্লিনের টাউনহল
ছবিতে লাল রংয়ের যে ভবনটা দেখা যাচ্ছে সেটা বার্লিনের বিখ্যাত টাউন হল৷ ১৮৬১ থেকে ১৮৬৯ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া এই ভবনের পাশেই দেখতে পাচ্ছেন হাল আমলের সব বিল্ডিং৷
ছবি: DW/T. Eastley
লাল এর সমাহার
বার্লিনের নয়ক্যোলন এলাকায় অনেক অভিবাসীর বাস৷ লাল ছাদের এই ভবনগুলোতে তারা থাকেন৷ দূরে দেখা যাচ্ছে নীল রং এর ‘ওটু আরেনা’৷ আইস হকি, বাস্কেটবল, হ্যান্ডবল আয়োজনের পাশাপাশি সেখানে কনসার্ট হয়ে থাকে৷
ছবি: DW/T. Eastley
হারিয়ে গেলে সমস্যা নেই
বার্লিনে ঘুরতে ঘুরতে আপনি যদি হারিয়ে যান চিন্তা নেই৷ যে কোনো স্থান থেকে দেখা পাবেন উঁচু টিভি টাওয়ারের৷ সেটা ধরে এগিয়ে যেতে পারেন সামনে৷
ছবি: DW/T. Eastley
6 ছবি1 | 6
কিছু অ্যাপে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বার্লিনের ঘটনাবহুল ইতিহাসকে৷ বার্লিন প্রাচীরের মতো ঐতিহাসিক স্থাপনা, নাৎসি আমলের বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে কীভাবে যাওয়া যাবে – সে বিষয়ে গাইড পাওয়া যাবে এ সব অ্যাপে৷
আবার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, অনুষ্ঠান, কেনাকাটা, রেস্তোরাঁ, এমনকি বার্লিনের সমকামীদের জীবন নিয়েও রয়েছে অ্যাপ৷ বার্লিনের প্রাণকেন্দ্র ও এর আশেপাশের এলাকা ঘুরে দেখার জন্য রয়েছে ‘৩৬০ ডিগ্রিস বার্লিন', ‘নয়ক্যোলন কিৎসএক্সপ্লোরার' কিংবা ‘পটসডামার প্লাৎস'-এর মতো অ্যাপ৷
আরো আছে ‘পার্কভিউ' অ্যাপ, যার সাহায্য নিয়ে ট্যুরিস্টরা বার্লিনের বিভিন্ন পার্ক, উদ্যান, চত্বর ও স্মারকগুলো ঘুরে দেখতে পারেন৷ ‘বুকসঅ্যারাউন্ড' অ্যাপ তাঁদের জানিয়ে দেবে, বার্লিনের বিখ্যাত সব লেখকরা কোথায় থাকতেন, কোন জায়গার প্রেক্ষাপটে, কোন উপন্যাসটি তাঁরা লিখেছিলেন৷
বার্লিন শহরের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে থাকা গ্রাফিতি আর স্ট্রিট আর্টগুলো খুঁজে বের করার জন্য রয়েছে ‘অ্যাডিডাস আর্বান আর্ট গাইড'৷ আর যাঁরা বাইক ভালবাসেন, তাঁদের প্রয়োজন হবে ‘কমুট বাইক বার্লিন' অথবা ‘বাইক সিটি গাইড বার্লিন'-এর মতো অ্যাপ৷
বার্লিনের মসজিদগুলো...
জার্মানির রাজধানী বার্লিনে ৮০টিরও বেশি মসজিদ রয়েছে৷ ক্লাসিক বা আধুনিক যে ধরনেরই হোক না কেন, এই মসজিদগুলো বার্লিনের নানা অঞ্চলের এবং নানান সময়ের চিহ্ন বহন করে৷
ছবি: Max Zander
ভারতীয় মডেলে তৈরি
জার্মানির সবচেয়ে পুরনো মসজিদটি হচ্ছে বার্লিনের শহরে কেন্দ্রে অবস্থিত আবাসিক এলাকা ভিলমার্সডর্ফ-এ৷ এই আহমেদিয়া মসজিদটি জার্মান স্থপতি কার্ল আগুস্ট হ্যার্মানের পরিকল্পনায় এবং ভারতের বিখ্যাত ‘তাজমহল’-এর মডেলে তৈরি করা হয়৷ মসজিদটির উদ্বোধন করা হয় ১৯২৮ সালে৷
ছবি: Max Zander
বিতর্কিত মসজিদ
এই মসজিদটি উদ্বোধন করার সময় প্রতিবাদের ঝড় উঠলেও পরে তা মেনে নেওয়া হয়৷ মেনে নেওয়ার উদ্যোগের পেছনে ছিল হাইনার্সডর্ফের সংগঠন ‘‘হাইনার্সডর্ফ তোমার দরজা খোলো’’ এবং প্রথম ইমাম আবদুল বাসিত তারিকের মোটো ছিল, ‘‘কারো জন্য ঘৃণা নয়, সবার জন্য ভালোবাসা’’ – এই নীতিবাক্য৷
ছবি: Max Zander
ছিমছাম মসজিদ
নারী স্থপতি মুবাশরা ইলিয়াস বেশ সাদামাটাভাবেই এই মসজিদের কাজ করেছেন৷ এখানে ২৫০ জন মুসল্লির নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে৷ মসজিদের প্রধান ঘরটির ঠিক ওপরেই মহিলাদের জন্যও রয়েছে আলাদা ঘর৷
ছবি: Max Zander
সবচেয়ে বড় মসজিদ
বার্লিনের নয়ক্যোলন এলাকার এই মসজিদটিকে মুলমানদের সাংস্কতিক মিলনকেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার করা হয়৷ বার্লিনের সবচেয়ে বড় এই মসজিদে ১,৫০০ জন মানুষ একসাথে নামাজ আদায় করতে পারেন৷ মসজিদটিতে বিশেষ আয়োজনের জন্য আলাদা জায়গাও রয়েছে৷ ২০১২ সালে জার্মান প্রেসিডেন্ট ইওয়াখিম গাউক তাঁর দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই মসজিদটি পরিদর্শন করেন৷
ছবি: Max Zander
মুসলমানদের কবরস্থান
মুসলমানের জন্য যে কবরস্থান রয়েছে, ঠিক তার পাশেই ১৯৮০ সালে এই মসজিদ তৈরি করা হয়৷ পরে অবশ্য এটা আরো বড় করা হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে এটির পরিধি৷
ছবি: Max Zander
বিভিন্ন ধর্মের সংস্কৃতি বিনিময়
জার্মানির তুর্কি সম্প্রদায় মানুষরা অন্যান্য ধর্মের মানুষদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করার চেষ্টা করে৷ এখানে ইসলাম ধর্ম এবং অন্যান্য ধর্মের নানা আচার-অনুষ্ঠান নিয়ে আলোচনা হয়৷ যাঁরা এখানে আসেন, তাঁদের পুরো মসজিদটা ঘুরে দেখানো এবং ইসলাম সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়৷
ছবি: Max Zander
ইসলাম ধর্মের সেন্টার
প্রথম দেখে বোঝাই যায় না যে এটা একটা মসজিদ৷ উমর আল-ইবনে খাতাব মসজিদটি বার্লিনের আবাসিক এলাকা ক্রয়েৎসব্যার্গের মধ্যমণি৷ বলা বাহল্য, এই এলাকা তুর্কি অধ্যুষিত৷ মসজিদের ভেতরে নামাজের ঘরগুলোর আশেপাশে ছোটখাটো দোকান, কফি শপ, ট্রাভেল এজেন্সি ইত্যাদি রয়েছে৷ ২০০৮ সালে শুরু হওয়া এই মসজিদটিতে একটি মাদ্রাসাও রয়েছে৷
ছবি: Max Zander
ওজু ঘর
মাসহারি সেন্টারের মসজিদের বেজমেন্ট, অর্থাৎ মাটির নীচের একটি ঘরে তৈরি করা হয়েছে এই সুন্দর ওজু ঘরটি৷ এখানে পুরুষ এবং নারীরা আলাদাভাবে ওজু করতে পারেন, অর্থাৎ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে শারীরিক ও মানসিকভাবে নিজেকে বিশুদ্ধ করার ব্যবস্থা রয়েছে এই মসজিদে৷
ছবি: Max Zander
আন্তর্জাতিক কমিউনিটি
ঝাড়বাতির নীচে নামাজের এই ঘরটিতে একসাথে ১,০০০ জন মুসলমান নামাজ পড়তে পারেন৷ তুর্কি বংশোদ্ভূত মানুষ ছাড়াও মসজিদে নামাজ পড়তে আসেন আরব, আফ্রিকান, বসনীয় ও অন্যান্য দেশের মুসলমানরা৷ প্রতি শুক্রবার ঐতিহ্যগতভাবে জুম্মার নামাজ হয় আরবি ভাষায়৷ তবে সকলের সুবিধার্থে দেয়ালে লাগানো মনিটরে আরবি এবং তুর্কি ভাষাতেও পড়ে নেয়া যায় অনুবাদ করা আয়াতগুলি৷
ছবি: Max Zander
9 ছবি1 | 9
বার্লিনের বাস, ট্রাম, এস-বান ও ইউ-বান ট্রেন কখন কোন গন্তব্যে ছেড়ে যায়, তা জানতে স্মার্টফোনে থাকতে হবে আইফারইনফো অথবা বিভিজি ফারইনফো প্লাস৷
‘ব্লুস্পট বার্লিন' অ্যাপ শহরের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের খোঁজ দেয়ার পাশাপাশি ট্যাক্সি বা বাইক ভাড়া করার সুবিধা দিচ্ছে৷ একজন স্মার্টফোনধারী পর্যটকের অবস্থান জিপিএসে জেনে নিয়ে ‘ট্যাক্সি বার্লিন' অ্যাপ বলে দেবে, সেখান থেকে গন্তব্য পৌঁছাতে কত টাকা ও কতটা সময় লাগবে৷ এই অ্যাপের সাহায্যে সরাসরি ট্যাক্স কন্ট্রোল রুমের সঙ্গেও যোগাযোগ করা যাবে৷
শারীরিক প্রতিবন্ধী পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণে সহযোগিতা দিতে রয়েছে ‘হুইলম্যাপ' অ্যাপ৷ ‘বার্লিন মিউজিয়াম গাইড' অ্যাপে রয়েছে প্রায় ২০০ জাদুঘর এবং কোথায় কোন প্রদর্শনী হচ্ছে তার তালিকা৷ আর ‘হোয়াটওয়াজহিয়ার' অ্যাপ দিচ্ছে ইন্টারঅ্যাকটিভ হিস্ট্রি ট্যুরের সুবিধা৷
কেবল বার্লিন প্রাচীর নিয়েই রয়েছে বেশ কিছু অ্যাপ৷ এর মধ্যে ‘জিডিআর ডিক্টেটরশিপ ইন বার্লিন' অ্যাপটি কমিউনিস্ট শাসনামলের পূর্ব জার্মানির ঐতিহাসিক স্থানগুলো পর্যটকদের চিনিয়ে দেবে৷