ভার্চুয়াল রিয়ালিটি, অগমেন্টেড রিয়ালিটির মতো প্রযুক্তি আজ আর কল্পবিজ্ঞান নেই৷ মোবাইল ফোন আর উপযুক্ত চশমার সাহায্যেই বাস্তব ও ভার্চুয়াল জগতে উঁকি মারা যায়৷ তবে এই প্রযুক্তির বিপুল সম্ভাবনার এখনো সদ্ব্যবহার হচ্ছে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg
বিজ্ঞাপন
গুগল ভার্চুয়াল রিয়ালিটির বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে৷ একাধিক টিম এ নিয়ে কাজ করছে৷ ভার্চুয়াল রিয়ালটি হেডসেট ও তার সঙ্গে মানানসই কন্ট্রোলারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা বিখ্যাত ‘গুগল আর্থ' মানচিত্রের ভিন্ন স্বাদ পেতে পারেন৷ গোটা বিশ্বের থ্রিডি রূপ হাতের নাগালে এসে পড়ে৷
সুইজারল্যান্ডের ডোমিনিক ক্যেসার এই প্রকল্পের কর্ণধার৷ কম্পিউটার গ্রাফিক্স বিশেষজ্ঞ হিসেবে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় গুগল আর্থ ভিআর ডেভেলপর টিমের প্রধান৷ উচ্চতা সম্পর্কে ভীতি না থাকলে আপনি ভার্চুয়াল রিয়ালিটির জগতে নিউ ইয়র্কে ব্যাটম্যানের মতো উঁচু বাড়ি থেকে লাফ মারতে পারবেন, নীচে উঁকি মেরে পথঘাট দেখতে পারবেন৷
কিন্তু এ সব করার প্রয়োজন কী? ডোমিনিক ক্যেসার বলেন, ‘‘আমাদের ধারণা, ভিআর বিশাল মাত্রা নিতে চলেছে৷ আজ স্মার্টফোন, ল্যাপটপ ও কম্পিউটারের যত প্রভাব, ভবিষ্যতে ভিআর তেমনই হবে৷ এর ফলে যে সব সুযোগ-সম্ভাবনা খুলে যাচ্ছে, আমরা তা খতিয়ে দেখবো৷ গুগল গোটা বিশ্বের ব্যবহারকারীদের কাছে তথ্য ব্যবহারযোগ্য করে তোলার ব্রত নিয়েছে৷ এক্ষেত্রে ভিআর-এর বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে৷''
গেমসকম সব রেকর্ড ভাঙল!
গেমসকম ২০১৬-য় এবার ছিলেন ৮০০-র বেশি প্রদর্শক ও প্রায় পাঁচ লাখ দর্শক৷ উদ্যোক্তারা বলছেন, কোলোনের ভিডিও গেম এক্সপো এখন বিশ্বের বৃহত্তম৷
ছবি: Philip Kretschmer
আজব দর্শক!
সাজগোজে দর্শকরা কিছু কম যাননি, সংখ্যাতেও নয়৷ একা কোলোনের বাণিজ্যমেলা কেন্দ্রেই এসেছিলেন প্রায় সাড়ে তিন লাখ, বাকি নানা ছোটখাট ইভেন্টে মিলিয়ে আরো লাখ খানেক অথবা তার কিছু বেশি৷
ছবি: Philip Kretschmer
পোকেমন
কসপ্লেয়াররা প্রেরণা পান তাদের ভিডিও গেম হিরোদের কাছ থেকে৷ এই দলটি পোকেমন-এর অনুরাগী৷ ‘পোকেমন গো’ নামধারী অগমেন্টেড রিয়্যালিটি গেমটি মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে বাজারে বেরিয়েই দুনিয়া জয় করে ফেলেছে, যার ফলে নিন্টেন্ডোর শেয়ার আকাশে চড়েছে৷
ছবি: Philip Kretschmer
‘ওভারওয়াচ’ স্ট্যান্ড
৯৭টি দেশ থেকে হাজার হাজার দর্শক এসেছিলেন পাঁচ দিনের ইভেন্টটিতে৷ তাদের মধ্যে অনেকেই এ-বছরের হিট মাল্টিপ্লেয়ার গেম ‘ওভারওয়াচ’ খেলে দেখতে চান৷
ছবি: DW/N. Peters
স্মার্টফোনের দুনিয়া
জার্মানিতে এ-বছর প্রায় ৩৫ লাখ ইউরো মূল্যের ভিডিও গেমস বিক্রি হবে বলে বাজারে খবর৷ তার একটি বড় অংশ যাবে স্মার্টফোন আর ট্যাবলেটে খেলার উপযোগী গেমে৷ সাবেক কম্পিউটার বা কনসোলের জন্য ভিডিও গেমের চাহিদা কমেই চলেছে৷
ছবি: picture-alliance/Geisler-Fotopress/C. Hardt
নীলপরী
লিগ অফ লিজেন্ডস গেমের মর্গানা নামধারী চরিত্রটিকেও কোলোনে দেখা গেছে৷ গেমটিকে সংক্ষেপে ‘লল’ (এলওএল) বলা হয়ে থাকে৷ খুবই জনপ্রিয় গেম৷ কাজেই বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়রা মোটা নগদ পুরস্কার জেতার আশায় নিয়মিত প্রতিযোগিতায় নেমে থাকেন৷
ছবি: picture-alliance/Geisler-Fotopress/C. Hardt
ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি
গেমসকমে নতুন নতুন ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি ডিভাইস (অর্থাৎ যন্ত্রপাতি বা সাজসরঞ্জাম) পরখ করে দেখার সুযোগ পেয়েছেন গেমাররা৷ এই ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি নাকি গেমিং-এর ভবিষ্যৎ৷ অকুলাস রিফ্ট, এইচটিসি ভাইভ, স্যামসাং-এর গিয়ার ভিআর, এগুলো ধীরে ধীরে গেমারদের হাতে, নাকে, কানে উঠছে৷ ছবিতে এক গেমার সোনি-র ভিআর হেডসেটটি পরীক্ষা করে দেখছেন৷ সেটটি আগামী অক্টোবর বাজারে আসবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg
গেমার-এর চেয়ে গেমের বয়স বেশি!
যেমন সুপার মারিও ব্রস. বা ব্রাদার্স, যা চিরকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিও গেমসগুলির মধ্যে পড়ে৷ কিশোর গেমাররা নিন্টেন্ডোর ১৯৮৫ সালের এই ক্ল্যাসিক গেমটি খেলে দেখতে পারে, এটা বোঝার চেষ্টায় যে, বাবা-মা আজ অবধি সুপার মারিও খেলে এত মজা পান কেন...৷
ছবি: Philip Kretschmer
7 ছবি1 | 7
অতীতে ক্যেসার হলিউডে পিক্সার স্টুডিওতে কাজ করতেন৷ অভিজ্ঞতার মর্ম কী, তা তিনি জানেন৷ ডোমিনিক বলেন, ‘‘আগে যখন ক্যালিফোর্নিয়ায় চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য কাজ করতাম, তখন কাহিনি শোনাতে ও ভার্চুয়াল অভিজ্ঞতা সৃষ্টি করতে আলো, রং, শব্দ ও অ্যানিমেশন কাজে লাগাতাম৷ মানুষ তাতে ডুবে যেতে পারতো৷''
ফেসবুকও ভিআর-এর ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করছে৷ তারা ভিআর চশমা প্রস্তুতকারক কোম্পানি ওকুলাস কিনে নিয়েছে৷ ভিআর নতুন মাত্রা সৃষ্টি করছে এবং ভবিষ্যতে এটি কম্পিউটারের মনিটরের জায়গা দখল করতে পারে৷ ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক সাকারবার্গ এ ক্ষেত্রে বড় পরিকল্পনা করছেন৷ ১০০ কোটি ব্যবহারকারীর জন্য ভার্চুয়াল রিয়ালিটি৷
মানুষ ভার্চুয়াল জগতের এই প্রযুক্তি গ্রহণ করবে কিনা, ভবিষ্যৎ সংক্রান্ত গবেষক ও থিংক ট্যাংক ওয়্যার-এর প্রতিষ্ঠাতা স্টেফান সিগরিস্ট সে বিষয়ে নিশ্চিত নন৷ তবে প্রায় সব প্রধান কোম্পানি ভিআর নিতে মেতে ওঠায় কিছু পরিবর্তন হবে বলে তাঁর ধারণা৷ সিগরিস্ট বলেন, ‘‘এই সব কোম্পানি এই বাজারে বিপুল অঙ্কের অর্থ ঢালছে৷ পরবর্তী বড় উদ্ভাবন বাজারে আনতে তারা প্রবল চাপের মুখে রয়েছে৷ সবাই অপেক্ষা করে রয়েছে৷ স্মার্টফোন দিয়ে আর কোনো বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটছে না৷ ভিআর-কে ঘিরে বিশাল প্রত্যাশা রয়েছে৷ অনেক চাপ, অর্থ ও উদ্ভাবনী শক্তির ধাক্কায় এই প্রযুক্তি এগিয়ে যাবে, এ বিষয়ে নিশ্চিত থাকা যায়৷ কিন্তু এই প্রযুক্তি মানুষের কতটা কাজে লাগবে, তারা সেটা গ্রহণ করবে কিনা, শেষ পর্যন্ত সেটাই আসল প্রশ্ন৷ ব্যবহারকারীরা প্রয়োগ করলে তবেই সেটাকে উদ্ভাবন বলা চলে৷''
পোকেমন গো-র মতো গেমে কিছুকাল ধরে তথাকথিত ‘অগমেন্টেড রিয়ালিটি' প্রয়োগ করা হচ্ছে৷ অর্থাৎ মানুষ তার বাস্তব পরিবেশে থেকেই ভার্চুয়াল বস্তু নাড়াচাড়া করতে পারে৷ শুধু গেমসের ক্ষেত্রেই বিষয়টি আকর্ষণীয় নয়৷
সুইজারল্যান্ডের ব্যুলার কোম্পানি এর মধ্যেই ‘অগমেন্টেড রিয়ালিটি' নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছে৷ কোম্পানির কর্মী বুয়র্কহার্ড ব্যোন্ডেল তথাকথিত ‘হলোলেন্স' চশমা পরে আছেন৷ তার মাধ্যমে বাস্তব ও ভার্চুয়াল জগতের মেলবন্ধন ঘটানো সম্ভব৷
সাইবার অপরাধের বিভিন্ন ধরন
ইন্টারনেটের ব্যবহার যত বাড়ছে তত বাড়ছে সাইবার অপরাধের ঘটনা৷ ফলে আর্থিক ক্ষতি থেকে নানা রকমের হয়রানির শিকার হচ্ছেন অনলাইন ব্যবহারকারীরা৷ এমনই কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে এখানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পরিচয় চুরি
আজকাল অনলাইনে কেনাকাটা করছেন অনেকে৷ এরজন্য নাম, ঠিকানা, ই-মেল, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য ইত্যাদি দিতে হয়৷ সমস্যাটা সেখানেই৷ যেসব ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো নয়, সেখানে এই তথ্যগুলো দিলে তা অপরাধীর কাছে চলে যাবার সম্ভাবনা থাকে৷ সেক্ষেত্রে অপরাধী আপনার তথ্য ব্যবহার করে আপনার ক্রেডিট কার্ড শূন্য করে দিতে পারে৷ কারণ আপনার যে পরিচয় চুরি হয়ে গেছে!
ছবি: picture alliance/maxppp/S. Mortagne
স্প্যাম ও ফিশিং
একদিন ই-মেল খুলে দেখলেন আপনি অনেক টাকার লটারি জিতেছেন৷ সেটা পেতে আপনাকে কিছু তথ্য দিতে বলা হচ্ছে৷ হঠাৎ করে বড়লোক হওয়ার লোভে আপনি সেই তথ্যগুলো দিয়েও দিলেন৷ ব্যস, যা হবার হয়ে গেছে৷ পরে দেখলেন টাকা পাওয়ার বদলে আপনার কাছে যা আছে সেটাও চলে যাচ্ছে! অর্থাৎ আপনি ফিশিং-এর শিকার হয়েছেন৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/McPHOTOs
ব়্যানসমওয়্যার
উন্নত বিশ্বে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে৷ অপরাধীরা ম্যালওয়্যার ঢুকিয়ে অন্যের কম্পিউটারের ফাইলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়৷ তারপর ঐ কম্পিউটার ব্যবহারকারীকে বার্তা পাঠায় এই বলে যে, ফাইল ফেরত পেতে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/ZB/T. Eisenhuth
সাইবার মবিং বা সাইবারবুলিং
হয়ত মজা করার জন্য কিংবা ইচ্ছে করে একজনকে কষ্ট দিতে তার বন্ধুরা একজোট হয়ে হয়রানি করে থাকে৷ বাস্তবে স্কুল-কলেজে এমনটা হয়ে থাকে৷ আজকাল ইন্টারনেট সহজলভ্য হয়ে ওঠায় ভার্চুয়াল জগতে এমন ঘটনা ঘটছে৷ কিন্তু অনেক সময় বিষয়টি আর মজার পর্যায়ে না থেকে ভয়ানক হয়ে ওঠে৷ ফলে যাকে নিয়ে মজা করা হচ্ছে সে হয়ত এমন কিছু করে ফেলে যা কারও কাম্য থাকে না৷
ছবি: Sylvie Bouchard - Fotolia.com
ম্যালভার্টাইজিং
ধরুন আপনি কোনো ওয়েবসাইটে আছেন৷ সেখানে একটি বিজ্ঞাপন দেখে ক্লিক করলেন৷ ব্যস আপনার কম্পিউটারে একটি কোড ডাউনলোড হয়ে গেল৷ এটি কোনো নিরীহ কোড নয়৷ অপরাধীরা এর মাধ্যমে আপনাকে হয়রানির পরিকল্পনা করবে৷ সুতরাং...৷
ছবি: Getty Images
ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড স্কিমিং
রেস্টুরেন্ট, সুপারমার্কেটের বিল পরিশোধ, এটিএম থেকে টাকা তোলা, অর্থাৎ এমন কোথাও যেখানে আপনার ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডকে যন্ত্রের মধ্যে ঢোকাতে হয় সেখান থেকেও তথ্য চুরি হতে পারে৷ এটাই কার্ড স্কিমিং৷ স্কিমার যন্ত্রের মাধ্যমে এই তথ্য চুরি করা হয় বলে এর এমন নামকরণ হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Baltagiannis
ফোন ফ্রড
অচেনা কোনো নম্বর থেকে (বিশেষ করে বিদেশ থেকে) মিসড কল পেলে সঙ্গে সঙ্গে কলব্যাক না করাই ভালো৷ কারণ কে জানে হয়ত ফোন ফ্রড অপরাধীরা এই কলটি করেছিলেন৷ আর আপনি কলব্যাক করতে যে টাকা খরচ করলেন তার একটি অংশ পেয়ে গেল অপরাধীরা!
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
ব্যুলার কোম্পানি যে রোল মেশিন তৈরি করে, তার ভার্চুয়াল মডেল তৈরি করা সম্ভব৷ চোখের সামনে তার ত্রিমাত্রিক প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে৷ সেই মডেল প্রায় হাতেনাতে পরীক্ষা করা সম্ভব৷ এমনকি কনট্রোলার ও আঙুলের ইঙ্গিতে ভার্চুয়াল বস্তুটি চালানো যায়৷ ফলে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাচ্ছে৷ কোম্পানির প্রতিনিধি বুয়র্কহার্ড ব্যোন্ডেল বলেন, ‘‘যেমন প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা কাজে লাগানো যায়৷ বাস্তব ও ভার্চুয়াল জগতের সমন্বয়ে আমরা শিক্ষানবিসদের একেবারে অন্যভাবে প্রশিক্ষণ দিতে পারি৷ শিক্ষাক্রম একেবারে অন্যভাবে তুলে ধরতে পারি৷ সব যন্ত্র নিয়ে বাণিজ্যমেলায় যাবার প্রয়োজন থাকবে না৷ ভালো করে ভেবেচিন্তে স্থির করতে পারি, কোন বস্তুটা বাস্তবে, কোনটা ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে দেখাতে চাই৷ এই সম্ভাবনার সব দিক সবে বুঝতে শুরু করেছি৷''
এখনো সবকিছু পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে৷ ‘অগমেন্টেড রিয়ালিটি'-র মধ্যে বিপুল সম্ভাবনা লুকিয়ে রয়েছে৷ হালের মোবাইল ফোনের মধ্যে এআর-কিট আগে থেকেই প্রস্তুত রয়েছে, যা দিয়ে ভার্চুয়াল, ইন্টারঅ্যাক্টিভ জগতে প্রবেশ করা যায়৷