যেসব কিশোর-কিশোরী স্মার্টফোন বা ইন্টারনেটে বেশি সময় কাটায় তাদের মস্তিষ্কে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে, যা দেখে বোঝা যায় তাদের এ বিষয়ে আসক্তি রয়েছে এবং এর ফলে তাদের মধ্যে হতাশা ও উদ্বেগ সৃষ্টি হচ্ছে৷
১৫ থেকে ১৬ বছরের ফোন বা ইন্টারনেটে আসক্ত ১৯ জন কিশোরের উপর পরীক্ষাটি করেছেন সউলের কোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা৷ তাদের প্রশ্ন করা হয়েছিল, তারা যে স্মার্টফোন বা ইন্টারনেট ব্যবহার করে, তা তাদের দৈনন্দিন জীবনে কী প্রভাব ফেলে?
তরুণদের আলস্য থেকে বেরিয়ে আসার ৭ উপায়
প্রায় সারা বিশ্বেই আজকের তরুণরা দিনের বেশিরভাগ সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় খরচ করে অলস ও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে৷ তরুণদের এ সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার কিছু উপায় পাবেন ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মোবাইল বা আইপ্যাড ছাড়া শিশু-কিশোররা ভালো ঘুমায়
স্মার্টফোন, আইপ্যাড ছাড়া যেন শিশু-কিশোরদের চলেই না৷ মোট ১২৫,০০০ শিশু-কিশোরকে নিয়ে ২০টি সমীক্ষা করা হয় ব্রিটেনের কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ ঘুমের আগে পিসি বা ফোনের ডিসপ্লের আলো ঘুমের হরমোনকে ছড়িয়ে দিতে বাধা সৃষ্টি করে৷ তাই বাবা মা’দের প্রতি গবেষক প্রধানের পরামর্শ, ‘ঘুমের আগে যেন তাদের সন্তানদের প্রযুক্তির সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখা হয়৷ কারণ শিশুদের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য ভালো ঘুমের বিকল্প নেই৷’
ছবি: privat
ডিজিটাল ডায়েট
শিশু-কিশোরদের নিয়ে জার্মানির টেশনিকার স্বাস্থ্যবিমা কোম্পানির করা এক সমীক্ষা থেকে জানা গেছে যে শতকরা ১৭ জনই স্বীকার করেছে, দিনে কয়েক ঘণ্টা অনলাইন থেকে দূরে থাকলে ওদের কিছু একটা হারিয়ে যাওয়ার মতো ভয় হয়, যে অনুভূতি দিন দিন বাড়ছে৷ সমাজের এই চাপ থেকে বেরিয়ে আসতে তরুণদের প্রতি জার্মানির মোটিভেশন ট্রেনার গাব্রিয়েলে ভিনকে-র পরামর্শ ‘ডিজিটাল ডায়েট’, অর্থাৎ সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার কিছুটা কমিয়ে দিতে হবে৷
ছবি: Fotolia/somenski
শরীরচর্চা
সোশ্যাল মিডিয়ার দিকে ধীরে ধীরে তরুণরা যেভাবে আকৃষ্ট হয়েছে ঠিক সেভাবেই আস্তে আস্তে কমাতে হবে৷ একেবারে বাদ দেওয়ার কথা কিন্তু এখানে কেউ বলছেন না, কাজেই ভয় নেই! আর এর প্রথম পদক্ষেপ বা লক্ষ্য হবে খেলাধুলা বা শরীরচর্চা করা৷ কাজেই আর দেরি নয়, উপযুক্ত জুতো পরে নিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Giles
মাত্র ১০ মিনিট
দিনের অনেকটা সময় কম্পিউটার বা স্মার্টফোনে কাটানোর ফলে শরীর কেমন ম্যাজম্যাজ করে কিংবা অনেকদিন শরীরচর্চা না করায় কেমন এক অলসতা পেয়ে বসেছে৷ তাই প্রথমদিন বেরিয়ে মাত্র ১০ মিনিট হাঁটুন বা দৌড়াদৌড়ি করুন৷ ভালো লাগলে সময়সীমা বাড়িয়ে দিন৷
ছবি: dapd
সময়সূচি তৈরি করে নিন
দরকারী কাজের তালিকা করে ফেলুন৷ তারপর দুপুরে বন্ধুদের সাথে ফোনে কথা বলা বা আড্ডায় যাওয়ার সময়ের তালিকায় শরীরচর্চা লিখে ফেলুন৷ শুধু তাই নয়, বন্ধুরা – যারা কাছাকাছি থাকে তাদের সাথে ফেসবুক চ্যাট না করে ওদের সাথে নিয়ে যান৷ কিংবা বা একেকবার একেক বন্ধুকে নিয়ে মুক্ত হাওয়ায় খেলাধুলা বা হাঁটাহাঁটি করতে পারেন, অবশ্যই আনন্দ হবে৷
ছবি: Colourbox
ধৈর্য!
বৃষ্টি, আবহাওয়া খারাপ, যেতে ইচ্ছে করছেনা বা সময় নেই-এর মতো কোনো অজুহাত চলবে না কিন্তু! লম্বা দিনের মাত্র কয়েকটা মিনিট বা ঘন্টাখানেক সময় নিজের শরীরে জন্য খরচ করুন৷ মাসখানেক পর দেখবেন ধীরে ধীরে আনন্দ পাচ্ছেন৷ এভাবেই একসময় সোশ্যাল মিডিয়ার আগ্রহ খানিকটা কমে যাবে এবং ক্ষতিকারক দিকগুলো থেকে স্বাভাবিক নিয়মেই নিজে বেরিয়ে এসেছেন৷ তখন টেরই পাবেন না যে অলসতা কোথায় পালিয়ে গেছে !
ছবি: picture-alliance/Zumapress/J. Gritchen
নিজেকে পুরস্কার দিন
মোটিভেশন ট্রেনার গাব্রিয়েলে ভিনকে জানান, কিছুদিন এভাবে চলার পর দেখবেন শারীরিক ফিটনেস ফিরে আসার পাশাপাশি আত্মবিশ্বাসও ফিরে এসেছে৷ এবার নিজের সাফল্যের জন্য নিজেকেই পুরস্কৃত করতে পারেন৷ খুব আনন্দ করে এক গ্লাস গরম চকলেট ড্রিঙ্ক পান করে কিংবা বিশাল একটি হ্যামবার্গার অথবা চারটে পছন্দের রসগোল্লা বা মিষ্টি খেয়ে৷
ছবি: ISM
7 ছবি1 | 7
নিয়ন্ত্রিত দলে আরও ১৯ কিশোরের উপর পরীক্ষা করা হয়েছিল, যারা একেবারেই দরকার না হলে ফোন বা ইন্টারনেট ব্যবহার করে না৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই কিশোরদের তুলনায় আসক্তরা হতাশা, অবসাদ, উদ্বেগ, অনিদ্রা, অস্থিরতার অভিযোগ বেশি করেছিল৷
চিকিৎসকরা অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কের ত্রিমাত্রিক বা থ্রিডি ছবি তুলেছিলেন, যার মাধ্যমে মস্তিষ্কের রাসায়নিক পরিবর্তন স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে৷ বিজ্ঞানীরা, বিশেষ করে গামা অ্যামিনোবাটাইরিক অ্যাসিড বা জিএবিএবিএ'র পরিবর্তন লক্ষ্য করতে চেয়েছিলেন৷ জিএবিএ মস্তিষ্কের এক ধরনের নিউরোট্রান্সমিটার, যেটি মস্তিষ্কের বার্তাগুলোর গতিকে ধীর করে দেয়৷ এছাড়া জিএবিএ'র দৃষ্টিশক্তি, আচরণ, মস্তিষ্কের আরও অনেক কাজ যেমন নিদ্রা, উদ্বেগ এগুলোর উপর প্রভাব রয়েছে৷ পরীক্ষায় দেখা গেছে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটেআসক্ত কিশোরদের মস্তিষ্কে উচ্চ মাত্রায় জিএবিএ আছে৷
তবে ভালো খবর হলো, আসক্তদের মধ্যে যে ১২ জন ৯ মাসের একটি থেরাপি নিয়েছিল, তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পেরেছে৷
গত মাসের ৩০ তারিখে শিকাগোর রেডিওলজি সোসাইটি অফ নর্দার্ন অ্যামেরিকা আরএসএনএ-এর বৈঠকে এই গবেষণা উপস্থাপন হয়৷
প্রযুক্তি ব্যবহারের মন্দ দিক
ইন্টারনেট, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, আইফোন ইত্যাদি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কত সুবিধাই না আমরা আজকাল ভোগ করছি৷ তবে অন্য সব কিছুর মতো এ সবেরও মন্দ দিক আছে বৈকি! গবেষকদের জানানো সেরকমই কিছু তথ্য পাবেন ছবিঘরে৷
ছবি: Cover/Getty Images
ইয়ারফোনে গান শোনা দুর্ঘটনার কারণ
প্রায়ই দেখা যায় আজকালকার তরুণরা কানে ইয়ারফোন লাগিয়েগান শুনতে শুনতে রাস্তায় চলাফেরা করছে৷ কানে ইয়ারফোন থাকায় অনেক সময় রাস্তার সতর্ক সংকেত বা গাড়ি, সাইকেলের শব্দ শুনতে পায় না তারা৷ ফলে ঘটে অ্যাক্সিডেন্ট৷ এ কথা জানান জার্মান হাসপাতালগুলোর জরুরি বা ‘এমারজেন্সি’ বিভাগের ‘ট্রমা সার্জারি’-র প্রফেসার রাইনহার্ড হফমান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Ossinger
ছবি তোলাতেই যেন বেশি আনন্দ!
যে কোনো ধরনের স্মৃতিকেই মানুষ ক্যামেরাবন্দি করে রাখতে চায়৷ বিশেষ করে, দেশ-বিদেশে ঘুরতে বা বেড়াতে গেলে তো কথাই নেই! কিন্তু ছবির প্রতি সমস্ত মনোযোগ দিতে গিয়ে পর্যটকরা এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে, ভ্রমণ থেকে ফিরে আসার পর ছবি তোলার জায়গাগুলোর কথা আর সেভাবে মনে করতে পারেন না৷ সাইকোলজিক্যাল সায়েন্স ম্যাগাজিন থেকে এই তথ্য জানা গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ডিসপ্লে থেকে জীবাণু যায় শরীরে
স্মার্টফোন, ট্যাবলেট কিংবা আইফোন ছাড়া যেন আজকাল কারুর চলেই না৷ যদিও এ সবে অসংখ্য জীবাণু, ছত্রাক আর ব্যাকটেরিয়া লুকিয়ে থাকে৷ এই জীবাণু থেকেো কিন্তু আপনি অসুস্থ হতে পারেন৷ বিশেষ করে যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাদের জন্য এই ঝুঁকি আরো বেশি৷ তাই এগুলো নিয়মিত পরিস্কার রাখা জরুরি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Pedersen
ইন্টারেনেটে বই পড়া
বই হাতে নিয়ে পড়াটা যেন আজকাল উঠেই যাচ্ছে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে৷ আসলে আজকাল যে ইন্টারনেটে মুহূর্তের মধ্যেই সব রকম তথ্য পাওয়া যায়৷ অবশ্য আরাম করে বই হাতে নিয়ে পড়ার থেকে ইন্টারনেটে পড়লে যে বেশি ক্লান্ত বোধ হয়, তা অনেকেই হয়ত স্বীকার করবেন৷ আর এ কথাটিই প্রমাণ করেছেন জার্মানির ট্যুবিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা৷
ছবি: AndreyPS - Fotolia.com
কফি মেশিনে জীবাণু!
আজকাল নানা ধরনের কফি মেশিন পাওয়া যায় আর খুব সহজেই নানা স্বাদের কফি তৈরি করা যায়৷ একেক মেশিনের একেকটি বোতামে টিপ দিলে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের কফি বেরিয়ে আসে৷ দেখলেই অবাক লাগে, তাই না? কিন্তু সেই মেশিনই নিয়মিত পরিষ্কার না রাখলে রয়েছে জীবাণুর ভয়৷ তাই সাবধান!