আজ প্রায় সবার হাতে৷ ইন্টারনেট সংযোগের গতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার ব্যবহারও বেড়ে চলেছে৷ চলচ্চিত্র নির্মাতারাও এই প্রবণতা উপেক্ষা করতে পারছেন না৷ ছোট ছোট ভিডিওর মাধ্যমে তাঁরাও মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন৷
বিজ্ঞাপন
শুধু একটা স্মার্টফোন আর ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স৷ ছবি তুলতে সেবাস্টিয়ান লিন্ডা-র আর কিছু লাগে না৷ এমনকি স্মার্টফোনেই ভিডিও এডিটিং-এর কাজ সেরে ফেলেন তিনি৷ সামান্য কিছু রদবদল ও বাড়তি এফেক্ট জুড়তে হয়৷ তারপর ড্রেসডেন শহরের এই চলচ্চিত্র নির্মাতা ছোট ভিডিও-গুলি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করেন৷ এভাবে তিনি তাঁর অনুরাগীদের পরবর্তী প্রকল্পের আভাস দেন৷ সেবাস্টিয়ান লিন্ডা বলেন, ‘‘এটা অবশ্যই এক দারুণ সুযোগ৷ তবে একই সঙ্গে আমি বড় আকারের কাজও করে যাবো৷ ছোট ভিডিও ভাইরাল হয়ে উঠতে পারে, লাখ লাখ ভিউ পেতে পারে৷ প্রত্যেকটি ক্লিপের মাধ্যমে গল্প বলতে, সেই কাজে আরও সময় দিতে আমার আরও ভালো লাগে৷ তার রেষ থেকে গেলেই হলো৷''
ইনস্টাগ্রাম লেন্সের চোখে বার্লিন
বার্লিনে ফেব্রুয়ারি মাস মানেই ধূসর, বরফে ঢাকা, বৃষ্টি-ভেজা পরিবেশ৷ কিন্তু ইনস্টাগ্রামের ফটোগ্রাফারদের জন্য এর আলাদা আকর্ষণ রয়েছে৷ কী দেখেন তাঁরা নিজেদের লেন্সের চোখে? বার্লিনে ইনস্টাগ্রামের জগতেই বা কী চলছে?
ছবি: Instagram/Tobias Koch
কুৎসিত, অথচ আকর্ষণীয়
বার্লিন শহর নোংরা, ধূসর, কুৎসিত৷ যুদ্ধের ক্ষতচিহ্নের অভাব নেই৷ অনেক বাড়িঘর কিছুটা তৈরি হয়ে পড়ে আছে, অথবা ভেঙে দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু সেটাই তো চোখে পড়ার মতো! বার্লিন প্রাচীর পতনের পর থেকে মুক্তি ও সৃজনশীলতার তাগিদ অনুভব করা যায় বলে মনে করেন মিশায়েল শুলৎস৷ তিনিই ইনস্টাগ্রামে বার্লিনের সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাকাউন্ট @berlinstagram-এর স্রষ্টা৷
ছবি: Instagram/Michael Schulz
মোবাইল নয়, আসল ক্যামেরার কারসাজি
‘আমার ফোন কখনো কাদায় পড়ে যায়নি’ – গর্ব করে এ কথা বলতে পারেন ক’জন? মোবাইল ফোনের ক্যামেরার অনেক উন্নতি সত্ত্বেও লিন্ডা ব্যার্গ (@lindaberlin) কিন্তু তাঁর পেশাদারী ডিএসএলআর ক্যামেরার উপরই নির্ভর করেন৷ সেই ক্যামেরার অনেক কারসাজি দিয়ে অভিনব প্রেক্ষাপটে শহরের স্থাপত্য তুলে ধরেন তিনি৷
ছবি: Instagram/Linda Berg
বাড়ির উঠানেই জীবনের কাহিনি
ডকুমেন্টরি ফটোগ্রাফার কারোলিন ভাইনকফ (@careauxphotography) বার্লিনের সদা পরিবর্তনশীল দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ছবি তোলেন৷ ইনস্টাগ্রাম যেন তাঁর ভার্চুয়াল ডায়রি৷ ধৈর্য ধরে সব সময়ে ‘মোটিফ’-এর সন্ধান করে বেড়ান তিনি৷ আচমকা অসাধারণ মুহূর্ত উঠে আসে চোখের সামনে৷ প্রস্তুত না থাকলেই সেটি চিরকালের জন্য হাতছাড়া হয়ে যায়৷
ছবি: Instagram/Carolin Weinkopf
লেন্সের সামনে খাদ্যের সমাহার
মুখে জল আনা খাবার-দাবার ক্যামেরাবন্দি করার চেষ্টা করেন এৎসগি পোলাট (@ezgipolat)৷ তবে ফিল্টার নয়, স্বাভাবিক আলোতেই ছবি তুলতে ভালেবাসেন তিনি৷ স্থানীয় বাজার থেকে তাজা ফলমূল, তরিতরকারি এনে সুন্দরভাবে সাজিয়ে দেন তিনি৷ হাটেও আনাগোনা রয়েছে তাঁর৷ শহরের কোন পাড়ায় কবে কোন হাট বসে, সে খবর তাঁর ঝুলিতে রয়েছে৷
ছবি: Instagram/Ezgi Polat
অন্যদের সঙ্গে আদান-প্রদান
খুঁটিনাটি নিয়ে মাথা ঘামানো বৃথা বলে মনে করেন মিশায়েল শুলৎস৷ আনাড়ি ফটোগ্রাফারদের জন্য তাঁর পরামর্শ – নিখুঁত ছবির বদলে নিজস্ব আগ্রহের মোটিফ ও গল্প বলার ভঙ্গি গড়ে তোলাই মূল কাজ৷ স্থানীয় ফটোগ্রাফারদের কাজ দেখতে, চলতি প্রবণতা বুঝতে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা উচিত (যেমন #igersberlin, #berlin, #kreuzberg)৷ ছবির ‘জিওট্যাগিং’ করাও জরুরি৷
ছবি: Instagram/Michael Schulz
মোটিফ সর্বত্র, প্রস্তুত থাকা চাই
ফটোগ্রাফার হিসেবে টোবিয়াস কখ (@tokography) আরও ব়্যাডিকাল হতে পিছপা হন না৷ তিনি ব্যস্ত রাজপথের মাঝখানে গিয়ে সবার ভ্রূকুটি অগ্রাহ্য করে ছবি তোলেন৷ ফোনের ক্যামেরাই তাঁর সঙ্গী৷ সেটি কখনো হাত ফসকে কাদায় পড়েনি৷ বিষয় বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোনো ছুতমার্গ নেই তাঁর৷ রাস্তার গর্ত থেকে শুরু করে দোকানের জানালা – যে কোনো জায়গায় আকর্ষণীয় মোটিফ খুঁজে পাওয়া যেতে পারে৷
ছবি: Instagram/Tobias Koch
6 ছবি1 | 6
‘দ্য জার্নি অফ বিস্টস' নামের আধ ঘণ্টার এক তথ্যচিত্রে সেবাস্টিয়ান লিন্ডা ১০ জন পেশাদারি স্কেটার-এর ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণের সঙ্গী হয়েছেন৷ এর জন্য তিনি ২০১৫ সালে ‘সেরা ক্যামেরা' বিভাগে জার্মান ওয়েব ভিডিও পুরস্কার পেয়েছেন৷ সেবাস্টিয়ান তাঁর ভিডিওটি ‘ভিমিও' ওয়েবসাইটে আপলোড করেন, যা চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক প্ল্যাটফর্ম৷ কারণ এর ব্যবহারকারীরা তাঁদের খুশিমতো ভিডিও দেখতে পারেন৷ এমনকি দ্রুত ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে উন্নত মানের হাই ডেফিনিশন ফিল্মও দেখা যায়৷
ইন্টারনেটে ভিডিও দেখার সুযোগ বেড়েই চলেছে৷ অ্যামাজন প্রাইম ইনস্ট্যান্ট ভিডিও অথবা নেটফ্লিক্স-এর মতো পরিষেবায় নির্দিষ্ট মাশুলের বিনিময়ে চলচ্চিত্র ও টিভি সিরিজ দেখা যায়৷ ব্যবহারকারীদের চাহিদা মেটাতে ইউটিউব-ও নড়েচড়ে বসেছে৷ কোম্পানির কনটেন্ট ম্যানেজার বেন ম্যাকওয়েন উইলসন-এর সূত্র অনুযায়ী তাঁরাও আরও দীর্ঘ ভিডিও-কে গুরুত্ব দিচ্ছেন৷ ইউটিউব-এর বেন ম্যাকওয়েন উইলসন বলেন, ‘‘ইউটিউব আত্মপ্রকাশ করার সময়ে অনেকে ভেবেছিলেন, তাতে শুধু ছোট ভিডিও দেখা যাবে৷ মানুষ কিন্তু ভাইস-এর মতো অনুষ্ঠান দেখতে পছন্দ করেন৷ অর্থাৎ ৩০ বা ৪৫ মিনিট দীর্ঘ উচ্চ মানের ভিডিও অনেক মানুষকে আকৃষ্ট করে৷''
ভবিষ্যতে ব্যবহারকারীরা মূলত মোবাইল ফোনেই ভিডিও দেখবেন এবং তৈরিও করবেন৷ ইন্টেরনেট বিশেষজ্ঞ রিশার্ড গুটইয়ার এর কারণ ব্যাখ্যা করলেন৷ ইন্টেরনেট বিশেষজ্ঞ রিশার্ড গুটইয়ার বলেন, ‘‘এতকাল মোবাইল নেটওয়ার্ক ভিডিও আদানপ্রদানের জন্য বড় দুর্বল ছিল৷ তখন পর্দায় ধীরে ধীরে অগ্রগতি দেখা যেত৷ পরবর্তী প্রজন্মের প্রযুক্তি ‘জি-ফাইভ' মোবাইল ফোনে প্রচলিত যে কোনো অপটিকাল ফাইবার কেবেল-এর থেকেও দ্রুতগতির ইন্টেরনেট সংযোগ আনতে চলেছে৷''
হাতের মুঠোয় স্বপ্নের মায়াজাল
কল্পবিজ্ঞান নয়, উইন্ডোস চশমা পরে হাত নাড়িয়ে ত্রিমাত্রিক জগতে প্রবেশ করা যাবে কিছুদিন পরেই৷ হাতের ঘড়িই হয়ে উঠছে স্মার্টফোনের সম্প্রসারিত সংস্করণ৷ প্রযুক্তির জগতে এসে চলেছে এমন একের পর এক চমক৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Elaine Thompson
মাইক্রোসফট-এর হলো-লেন্স
কম্পিউটার, ট্যাবলেট বা স্মার্টফোনের পর্দা নয়, চারিপাশের বাস্তব জগতের মধ্যেই থ্রিডি ভারচুয়াল কম্পিউটিং এনে দেবে মাইক্রোসফট-এর হলো-লেন্স৷ হলো-লেন্স প্রযুক্তিতে চশমা পরে শুধু আঙুলের ইশারায় আপনার পছন্দমতো ফুটে উঠবে সব কিছু৷ চাইলে এমনকি মঙ্গলগ্রহের বুকেও হেঁটে বেড়াতে পারবেন৷ উপরে ডানদিকে + চিহ্নে ক্লিক করে এখনই তার স্বাদ পেতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Elaine Thompson
সিস্টেম এক, ডিভাইস অনেক
এতকাল কম্পিউটার, ট্যাবলেট ও স্মার্টফোন ছিল পরস্পরের থেকে আলাদা৷ কিছু ক্ষেত্রে শুধু ‘সিনক্রোনাইজ’ করা যেত৷ ‘উইন্ডোস টেন’ এই সব ডিভাইসকেই একই সূত্রে বেঁধে ফেলতে চলেছে৷ ফলে স্মার্টফোনে কাজ শুরু করে ট্যাবলেট বা ল্যাপটপে সেটি শেষ করতে আর অসুবিধা হবে না৷
ছবি: Joe Raedle/Getty Images
স্মার্টফোনই হবে কম্পিউটারের প্রতিফলন
‘উইন্ডোস টেন’ এমনকি স্মার্টফোনের মধ্যেও কম্পিউটারের কাজ সেরে ফেলতে পারবে৷ মাইক্রোসফট অফিস তো থাকবেই, এছাড়াও পেশাগত অনেক কাজ সেরে ফেলা যাবে ফোনের মধ্যে৷ তবে স্মার্টফোনের বাজার দখলের ক্ষেত্রে এতকাল অ্যান্ড্রয়েড ও অ্যাপেল-এর তুলনায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে মাইক্রোসফট৷ নতুন অপারেটিং সিস্টেম সেই প্রবণতা বদলাতে পারে কিনা, সেটাই দেখার জন্য অপেক্ষা করছে প্রযুক্তি জগত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অ্যাপল-এর সাফল্য
ব্র্যান্ড হিসেবে অ্যাপল কোম্পানি এই মুহূর্তে তার সাফল্যের তুঙ্গে৷ বিশ্বের অন্য কোনো কোম্পানি একটি মাত্র কোয়ার্টারে ১৮ বিলিয়ন ডলার মুনাফা করতে পারেনি, যেমনটা অ্যাপল সম্প্রতি করে দেখালো৷ নতুন আইফোন বিক্রির ফলেই এই অভাবনীয় আর্থিক সাফল্য এসেছে৷
ছবি: Getty Images/J. Sullivan
আইফোন
হার্ডওয়্যার ও অপারেটিং সিস্টেম – দুটোই নিজে তৈরি করে আসছে অ্যাপেল৷ বিশেষ করে আইফোন-এর ক্ষেত্রে ব্যবসার এই মডেল সার্থক প্রমাণিত হয়েছে৷ শুধু অসাধারণ ফিচার্সের কারণে নয়, অনেকের কাছে হালের আইফোন থাকাটা ‘স্ট্যাটাস সিম্বল’-ও৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ঘড়ির মধ্যেই জগত
আইফোন-এর সাফল্য আইওয়াচ-এর ক্ষেত্রেও ঘটবে বলে আশা করছে অ্যাপল কোম্পানি৷ একদিকে আইফোন-এর যোগ্য সঙ্গী হবে এই ঘড়ি, অন্যদিকে কবজিতে থাকার ফলে রক্তচাপ সহ শরীরের অন্যান্য অনেক ক্রিয়াও নিয়মিত মাপতে পারবে এই ডিভাইস৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Davey
সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যান্ড্রয়েড
সংখ্যার বিচারে অ্যাপল-এর তুলনায় অনেক এগিয়ে রয়েছে গুগল কোম্পানির অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম৷ বিশ্বে স্মার্টফোনের বাজারে তাদের আধিপত্য নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ আইফোনের তুলনায় অনেক সস্তায় বিক্রি হয় একাধিক কোম্পানির অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন৷
ছবি: Getty Images
চীন থেকে নতুন চ্যালেঞ্জ
অ্যাপল, গুগল বা মাইক্রোসফট-এর মতো অ্যামেরিকান কোম্পানির আধিপত্যে ভাগ বসাতে চায় চীনের ‘শিয়াওমি’ কোম্পানি৷ স্মার্টফোন সহ অন্যান্য ডিভাইস নিয়ে বিশ্বের বাজারে বড় আকারে প্রবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা৷ তাদের হালের ‘মি নোট’ স্মার্টফোন নাকি ‘আইফোন সিক্স’-কে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা রাখে৷
ছবি: AFP/Getty Images
8 ছবি1 | 8
প্রায় পাঁচ বছর পর এই নতুন মোবাইল প্রযুক্তি চালু হবার কথা৷ সেকেন্ডে ৬ গিগাবাইট গতিতে হাই ডেফিনিশন ভিডিও ডাউনলোড করতে মাত্র কয়েক সেকেন্ড সময় লাগবে৷ মোবাইল ফোনের বেড়ে চলা ব্যবহারের কারণে নতুন ধরনের সৃজনশীল পদ্ধতিও চালু হচ্ছে৷ যেমন ‘ভাইন' নামের অ্যাপ ৬ সেকেন্ডের লুপ-এর মতো নানা কৌশল হাতে এনে দিচ্ছে৷ ‘স্ন্যাপচ্যাট' মেসেঞ্জার ভার্টিকাল ভিডিও-র সুবিধা দিচ্ছে৷ সেবাস্টিয়ান লিন্ডা এই প্ল্যাটফর্ম-এর বৈচিত্র পছন্দ করেন৷ সেবাস্টিয়ান লিন্ডা বলেন, ‘‘বেশি সংখ্যক মানুষ ইন্টেরনেটে বিচরণ করায় তার প্রাসঙ্গিকতাও বেড়ে যাচ্ছে৷ সবারই কম্পিউটার আছে, স্মার্টফোন আছে, যা দিয়ে ভিডিও স্ট্রিম করা যায়৷ অ্যাপ-গুলির ক্ষমতাও বাড়ছে৷ ধারাবাহিক উন্নতি ঘটে চলেছে৷''
সেবাস্টিয়ান লিন্ডা ইনস্টাগ্রাম-এর জন্য নিজের ভিডিও প্রস্তুত করছেন এবং দীর্ঘ ভিডিও নিয়েও ব্যস্ত রয়েছেন৷ আগামী প্রিমিয়ার অনুষ্ঠানও অনলাইন জগতে হবে৷