কখনো হাজার চেষ্টা করেও কারো নাম মনে পড়ে না৷ কখনো নাছোড়বান্দা গান মন থেকে দূর হয় না৷ স্মৃতিভাণ্ডারের নানা বৈশিষ্ট্য জানা থাকলে এমন অবস্থার সঙ্গত কারণগুলি জানা যেতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
আমাদের স্মৃতিভাণ্ডার আসলে বিশাল এক মহাফেজখানা৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যন্ত্রের মতো নিখুঁতভাবে কাজ করে এই প্রণালী৷ কখনো কখনো অবশ্য গোলযোগ দেখা যায়৷ তখন জরুরি প্রয়োজন হলেও স্মৃতির নাগাল পাওয়া যায় না৷
কখনো আবার ইচ্ছা না হলেও আমাদের মনে কিছু স্মৃতি জেগে ওঠে৷ কিছু স্মৃতি আবার আমাদের তাড়িয়ে বেড়ায়৷ স্মৃতিভাণ্ডারের এমন খেলার তিনটি দৃষ্টান্তের দিকে নজর দেওয়া যাক৷
প্রথমত, জিবের ডগায় এসেও স্মৃতি পিছলে যায়৷ আমাদের সবারই এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে৷
আরে, কী যেন নাম ওই অভিনেতার? জানি তো, কিন্তু মনে পড়েও যেন পড়ছে না! মস্তিষ্কে তখন একটি ক্রিয়া চলে৷ কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে স্মৃতি মস্তিষ্কের বিভিন্ন জায়গায় জমা থাকে৷
স্মৃতিভ্রম এড়াতে যা করবেন
আপনি কিংবা আপনার প্রিয় কারো কি মাঝে মাঝে স্মৃতিভ্রম হচ্ছে? অর্থাৎ হঠাৎ করে কারো নাম, কোথায় থাকেন বা এমন অন্যকিছু মনে পড়ছে না? এ সব কি ডিমেনশিয়া বা আলৎসহাইমারের লক্ষণ? এ সব এড়াতে যা করবেন জেনে নিন৷
ছবি: Colourbox
দায়িত্বপূর্ণ কাজের মূল্য
যে ব্যক্তি কর্মক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে কাজ করে এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাখে, অর্থাৎ বিভিন্ন কাজের পরিকল্পনা বা কৌশল নির্ধারণ ইত্যাদি করে, তাদের বুড়ো বয়সে আলৎসহাইমার বা স্মৃতিভ্রম হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে৷ এই তথ্য জানা গেছে জার্মানির লাইপসিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের করা এক গবেষণা থেকে৷
ছবি: Creativa/Fotolia.com
কলা খান, আলৎসহাইমাকে দূরে রাখুন
কলায় যে উপাদান রয়েছে তা কোষের ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা করে৷ এই তথ্যটি উঠে এসেছে দক্ষিণ কোরিয়ার গিয়ংসাং ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণার থেকে৷ জানা গেছে, কলা আলৎসহাইমারের মতো যে কোনো স্নায়ুর রোগকে প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে৷ তবে কলা খেতে হবে একদম তাজা অবস্থায়, নরম কলা নয় কিন্তু!
ছবি: Colourbox
নিয়মিত ব্যায়াম করে রোগকে দূরে রাখুন
ক্যানাডায় করা এক গবেষণা থেকে জানা গেছে ব্যায়াম শুধু শরীর নয়, মস্তিষ্ককেও সুস্থ ও সচল রাখে৷ যারা কোনোদিন ব্যায়াম করেননি তাদের তুলনায়, যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেছেন বা করেন তাদের শরীরের রক্তসঞ্চালন এবং মস্তিষ্ক অনেক বেশি সচল থাকে৷ শুধু তাই নয়, খেলাধুলা করা বাচ্চরাও পরীক্ষায় ফলাফল ভালো করে৷ তাই নিয়মিত শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করলে আলৎসহাইমারের মতো রোগ কম হয়৷
ছবি: Colourbox
সংগীত মস্তিষ্ককে সচল রাখে
গান বা সংগীত যে মানুষের মস্তিষ্ককে তরুণ রাখে, সেকথা বিভিন্ন গবেষণার ফল থেকে আমরা আগেও জেনেছি৷ তবে আলৎসহাইমার রোগে যারা ভুগছেন, তারা নিয়মিত ‘মিউজিকের’ সাথে সম্পৃক্ত হলে তাদের সুস্থ হওয়াও কিছুটা সহজ হয়৷ হ্যাঁ, আলৎসহাইমার রোগ নিয়ে ফিনল্যান্ডের হেলসিংকি বিশ্ববিদ্যালয়ের করা এক গবেষণা থেকে জানা গেছে এই তথ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Szenes
সচেতনতার কিছু উপায়
মানুষের মস্তিষ্কই যদি সুস্থ না থাকে, তাহলে আর সুস্থ থাকার মূল্য কী? বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, তথ্য-প্রযুক্তির যুগ হলেও মাঝে মাঝে হাতে লিখুন৷ কড়া ওষুধপত্র সেবন থেকে দূরে থাকুন৷ কেমব্রিজের গবেষকরা এমন বিভিন্ন অনুশীলনের মাধ্যমে স্মৃতিশক্তি বাড়ানো বা ধরে রাখা সম্ভব বলে জানিয়েছেন৷ তাছাড়া সুস্থ মস্তিষ্কের জন্য আখরোট, সামুদ্রিক মাছ, গ্রিন টি, টমেটো ইত্যাদি খাওয়া-দাওয়ার ভূমিকা তো রয়েছেই৷
ছবি: Colourbox
5 ছবি1 | 5
দৃষ্টি সংক্রান্ত ‘ভিশন সেন্টার’ বা দৃষ্টিকেন্দ্রে মানুষটির চেহারা সংরক্ষিত থাকে৷ কণ্ঠস্বর ‘হিয়ারিং সেন্টার’ বা শ্রবণকেন্দ্রে জমা থাকে৷ পদবির শব্দাংশের দৈর্ঘ্য ‘ল্যাংগুয়েজ সেন্টার’ বা ভাষাকেন্দ্রে স্থান পায়৷ নাম মনে করতে হলে মস্তিষ্ককে এই সব টুকরোগুলিকে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করতে হয়৷ সেই প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটা বেশ সহজ৷ যেমন একই ধরনের নাম মনে পড়লে আসল নাম আড়ালে চলে যায়৷
তাহলে কী করা যায়? চেষ্টা বন্ধ করে একেবারে অন্য ধরনের চিন্তা করা উচিত৷ তখন মস্তিষ্কে বাধা উঠে যায়৷ আচমকা নাম মনে পড়ে যায়৷ আরে! সেটা তো ছিল জঁ ক্লোদ ফান ডামের ছবি!
দ্বিতীয়ত গন্ধ সংক্রান্ত স্মৃতি৷ কখনো কখনো না চাইতেই স্মৃতি আমাদের আচ্ছন্ন করে দেয়৷ মনে হয়, এই গন্ধ যেন কোথায় পেয়েছিলাম? তখন না চাইলেও কোনো এক স্মৃতি ভেসে ওঠে৷ কিন্তু কেন এমনটা হয়?
এর উত্তর খুব সহজ৷ একমাত্র গন্ধ শোঁকার অনুভূতিই ‘এমিগডালা’, অর্থাৎ মস্তিষ্কের আবেগ কেন্দ্র এবং তার পাশেই হিপোক্যাম্পাস, অর্থাৎ মস্তিষ্কের যে অংশে স্মৃতি সৃষ্টি হয়, তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত৷ গন্ধ এবং গন্ধের সঙ্গে যুক্ত স্মৃতি সে কারণেই স্মৃতিভাণ্ডারে পাকা জায়গা করে নেয়৷
তৃতীয়ত আকর্ষণীয় কোনো সুর৷ কখনো নির্দিষ্ট কোনো স্মৃতি মন থেকে দূর করতে না পারলে চরম অস্বস্তি হয়৷ যেমন কোনো এক গানের কলি৷ কোনো রুটিন কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকলেই সাধারণত এমন কোনো সুর মনে গেঁথে যায়৷ কারণ তখন ‘ওয়ার্কিং মেমরি' ততটা ব্যস্ত থাকে না৷ ক্লান্তি প্রতিরোধ করতে মস্তিষ্ক স্মৃতিভাণ্ডার হাতড়ে কখনো আমাদের বিশেষ পছন্দ, অথবা একেবারেই অপছন্দের গান তুলে আনে৷
রেকর্ড প্লেয়ারের মতো ‘হিয়ারিং সেন্টার’ স্মৃতিভাণ্ডারে সেই গান চালাতেই থাকে৷ মনের মধ্যে আমরা সেই সংগীত শুনতে পাই৷ তখন মনে মনে সেই সুরে সুর মিলিয়ে গাওয়ার তাগিদ জন্মায়৷ তখন অবিরাম সেই গান চলতে থাকে৷ কারণ মনে মনে গান গাইলে মনে মনে সেটা শুনতেও হয়৷ তখন আবার গাইতে ইচ্ছা করে৷ কীভাবে সেটা থামানো সম্ভব?
গবেষকদের পরামর্শ, দাঁতে দাঁত চেপে সেই গান একেবারে শেষ পর্যন্ত শুনুন৷ তারপর স্মৃতিভাণ্ডারের একেবারে গভীরে সেই গান পুঁতে দিন৷ তখন আপদ বিদায় হবে৷
ক্রিস্টিয়ান্স/ভাগনার/এসবি
মস্তিষ্কের জন্য উপকারী ৭টি খাবার
প্রতিদিন হাজার চিন্তার সঠিক কাজটা করতে হয় মস্তিষ্ককে৷ তাই তার জন্য চাই প্রকৃত খাবার৷ কীভাবে আপনি আপনার মস্তিষ্ককে সুস্থ ও সক্রিয় রাখবেন – এখানে থাকছে তেমনি কিছু খাবারের তালিকা৷
ছবি: Fotolia/gaai
ডার্ক চকোলেট
প্রতিদিন এক টুকরো ডার্ক চকোলেট খেলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ে৷ অল্প পরিমাণে ডার্ক চকোলেট খাওয়ার অভ্যাস স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে, বলছেন বিজ্ঞানীরা৷
ছবি: picture alliance/dpa
আখরোট
আখরোটে অন্যান্য বাদামের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে৷ এটি মস্তিষ্ককে যে কোনো রোগ থেকে রক্ষা করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
টমেটো
টমেটো – সহজলভ্য এই সবজিটি মস্তিষ্কের শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, কারণ এতে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা মস্তিষ্কের কোষগুলোর ক্ষতি হওয়া থেকে বাঁচায়৷ এছাড়া স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে টমেটো৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/McPHOTOs
স্যামন ও সামুদ্রিক মাছ
মানুষের মস্তিষ্কের ৬০ শতাংশ চর্বি দিয়ে তৈরি৷ তাই এটিকে সক্রিয় রাখতে প্রয়োজন ফ্যাটি অ্যাসিড৷ সামুদ্রিক মাছ যেমন – স্যামন, টুনা ও অন্য সামুদ্রিক মাছ মস্তিষ্কের খাবার হিসেবে বেশ উপকারী৷ কারণ এই খাবারগুলোতে আছে ফ্যাটি অ্যাসিড, যা আলজইমার রোগের হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে৷
ছবি: picture-alliance/chromorange
গ্রিন টি
গবেষকরা বলছেন, গ্রিন টি মস্তিষ্কের সংযোগ ক্ষমতা বাড়ায়, সেই সাথে পারকিনসন্স ও স্মৃতিভ্রংশের হাত থেকে রক্ষা করে৷ চিনি ছাড়া দিনে তিন কাপ সবুজ চা আপনার মস্তিষ্কের জন্য ভীষণ উপকারী৷
ছবি: Fotolia/gaai
ব্লু বেরি
বুদ্ধির তীক্ষ্ণতা বাড়াতে ব্লু বেরির জুড়ি নেই৷ এতে আছে ফ্ল্যাভোনয়েডস৷ এছাড়া এটি স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে৷ মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার হাত থেকেও রক্ষা করে এটি৷ পারকিনসনস আর আলজাইমার থেকেও রক্ষা করে ব্লু বেরি৷
পালংশাক
পালংশাকে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে, যা মস্তিষ্কের সংযোগ শক্তি বৃদ্ধি করে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ায়৷ এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্টও রয়েছে, আছে ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন ই ও ভিটামিন কে, যা ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ হওয়ার হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করে৷