১০ বছর ধরে চলেছে গবেষণা৷ আর তার ফলাফলে মার্কিন বিজ্ঞানীরা জানালেন, কম্পিউটারাইজ ব্রেইন ট্রেইনিং প্রোগ্রামে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী মানুষের স্মৃতি শক্তি হারানোর ঝুঁকি ৪৮ ভাগ কমে যায়৷
বিজ্ঞাপন
টরন্টোর আলজাইমারস অ্যাসোসিয়েশন ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে গত সপ্তাহে প্রাথমিক গবেষণা ফলাফল তুলে ধরা হয়৷ মস্তিষ্কে যে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ ডিমেনসিয়া বা স্মৃতিশক্তি লোপের মাত্রা কমায় এমনটাই বলা হয়েছে গবেষণার ফলাফলে৷
এর আগ পর্যন্ত কগনিটিভ মনোবিজ্ঞানী এবং স্নায়ুবিজ্ঞানীরা এ ধরনের ফলাফলকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, কম্পিউটারভিত্তিক চিন্তাযুক্ত প্রশিক্ষণ সফটওয়্যার বা ব্রেইন গেমস মানব আচরণে কোনো প্রভাব ফেলে না৷
গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সমাজ বিজ্ঞান গবেষক ডক্টর জন কিং৷ ঐ গবেষণায় ২৭৮৫ জন স্বাস্থ্যবান বয়স্ক ব্যক্তিকে তিনটি দলে ভাগ করা হয়েছিল৷ একদলকে স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল, অন্য দলকে যুক্তি দিয়ে বোঝানো এবং তৃতীয় দলকে কম্পিউটারের মাধ্যমে দ্রুত মনে রাখার প্রক্রিয়া শেখানো হয়েছিল৷
এই স্পিড ট্রেইনিং, যেখানে আসলে মনিটরে কিছু ছবি দেখিয়ে সেগুলোকে কিসের ছবি তা বলতে বলা হয়েছিল৷ তবে, এসময় মনিটরে দ্রুত ছবিগুলো আসা-যাওয়া করছিল৷ সঠিক উত্তর দিলে আরও কঠিন হতো পরের ধাপ৷ ৫ সপ্তাহে এক ঘণ্টার ১০টি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল দল তিনটিকে৷ এই ট্রেইনিং-এর এক বছর পরে কয়েকজনকে চারটি অতিরিক্ত সেশন করানো হয়েছিল৷ আর দু'বছর পরে আরো চারটি৷
বিজ্ঞানীরা এটা পরীক্ষা করে দেখছিলেন এ ধরনের প্রশিক্ষণের ফলে তাদের চিন্তাভাবনা এবং প্রতিদিনের অন্যান্য কাজে কোনো পরিবর্তন আসে কিনা৷ ৬টা ধাপে এগুলো দেখা হয়েছে৷ প্রশিক্ষণ দেয়ার সাথে সাথে, এক বছর পর, দু'বছর পর, তিন বছর পর, পাঁচ বছর পর এবং ১০ বছর পর৷
২০১৪ সালে গবেষণার ফলাফলে দেখা যায় যৌক্তিক এবং স্পিড প্রসেসিং গ্রুপে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি৷ এরপর এই গবেষণার তথ্য প্রমাণ সাউথ ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক কিনে নেন৷ সেখানকার গবেষক ড. জেরি এডওয়ার্ডস তথ্যগুলো দ্বিতীয়বারের মত বিশ্লেষণ করেন৷ তিনি দেখেন, স্পিড ট্রেনিং এর প্রশিক্ষণ যারা নিয়েছে তাদের ডিমেনশিয়া হওয়ার ঝুঁকি ৩৩ ভাগ কম, অন্য দল দু'টোর তুলনায়৷ আর যারা ১১ বা তার বেশি ট্রেনিং নিয়েছে, তাদের ঝুঁকি ৪৮ ভাগ কম৷
স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর ১২ উপায়
আপনি কি কাজের চাপে প্রায়ই এটা-সেটা ভুলে যাচ্ছেন বা আপনার স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ছে? এর পরিণাম কিন্তু হতে পারে ভয়ংকর৷ তাই বিভিন্ন গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জেনে নিন সতর্কতা এবং স্মৃতিশক্তিকে মজবুত করার কিছু উপায়৷
ছবি: jorgophotography - Fotolia.com
পর্যাপ্ত ঘুম
রাতে ৬ ঘণ্টার কম ঘুম হলে তা বার্ধক্য প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে মস্তিষ্কে বাঁধার সৃষ্টি করে, জানান রচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. মাইকেন নেডেরগার্ড৷ তিনি জানান, এর জন্য জরুরি হচ্ছে গভীর ঘুম৷ এটা না হলে মস্তিষ্ক প্রায় সাত বছর বেশি বুড়িয়ে যেতে পারে৷
ছবি: Colourbox
মস্তিষ্কের জন্য ঠান্ডা ঘরই ভালো
গরমের চেয়ে ঠান্ডায় স্মৃতিশক্তি এবং মনোযোগ তিনগুণ বেশি থাকে৷ এ কথা জানান নিউ সাউথ ওয়েল্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্ট্রেলিয়ান মনোবিজ্ঞানী প্রফেসার ইয়োসেফ ফোরগাস৷ এছাড়া ঠান্ডা ঘর মাথাকেও ঠান্ডা রাখে, তাই ঘরের তাপমাত্রা কখনো ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি রাখা ঠিক নয়, জানান তিনি৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
গল্প শেষ থেকে শুরু করুন
একটি গল্প পড়ে পুরো গল্পটা মনে রাখুন৷ এবার শুরু থেকে না বলে শেষ বা পেছন থেকে গল্পটা মনে করতে থাকুন৷ এই পন্থা মস্তিষ্কের কোষগুলোকে সচল তো রাখবেই, করবে আরো শক্তিশালী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Endig
সঠিক জুতো পরে বেরিয়ে পড়ুন
নিয়মিত হাঁটাচলা বা জগিং শরীরকে ভালো রাখে – এ কথা কম-বেশি আমরা সকলেই জানি৷ সেন্ট লুইস বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী মার্ক ম্যাকডানিয়েল জানান, শুধু শরীর নয় হাঁটাচলা এবং জগিং ব্রেনকেও ফিট রাখে৷ তবে সবচেয়ে ভালো হয় সপ্তাহে দুই থেকে তিনদিন অন্তত ২০ মিনিট করে হাঁটলে বা জগিং করলে৷
ছবি: Fotolia/ruigsantos
বিপরীত হাত ব্যবহারের অভ্যাস
যাঁরা ডান হাতে সব কিছু করেন, তাঁরা বাঁ হাতে আর যাঁরা বাঁ হাতে সব কিছু করেন, তাঁরা ডান হাতে সপ্তাহে অন্তত একবার সব কাজ করার চেষ্টা করুন৷ অর্থাৎ উল্টো হাতে খাওয়া-দাওয়া, দাঁতব্রাশ করা বা অন্যান্য টুকটাক ঘরের কাজ করার অভ্যাস করতে পারেন৷ এতেও ব্রেন সচল থাকে৷
ছবি: Fotolia/Photo_Ma
বন্ধুত্ব লালন করুন
মানুষের সাথে কথাবার্তা বলা বা টেলিফোনে যোগাযোগ মস্তিষ্ককে তরুণ রাখে৷ এই তথ্যটি জানিয়েছেন এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজিস্ট ড. স্টুয়ার্ট রিচি৷ তিনি বলেন, দিনে মাত্র ১০ মিনিটের যোগাযোগই নাকি মানুষের স্মৃতিশক্তিকে বেশ জোড়ালোভাবে জাগিয়ে তুলতে সহায়তা করে৷
ছবি: Fotolia/szeyuen
প্রতিদিনের নিয়ম থেকে বেরিয়ে আসুন
ব্রেনকে সব সময় নতুন কিছু শিখতে হয়৷ তা না হলে মস্তিষ্ক নির্জীব হয়ে যায়৷ তাই প্রতিদিনের রুটিন ভেঙে অন্যকিছু করুন৷ মাঝে মাঝে অন্য রাস্তা দিয়ে কর্মস্থলে বা কলেজে যান৷ নতুন কোনো ভাষা বা যন্ত্র বাজানো শিখুন৷ এতে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি শতকরা ৭৫ ভাগ কমে যায়৷ নিউ ইয়র্কের আলবার্ট আইনস্টাইন মেডিকেল কলেজের করা এক সমীক্ষা থেকে জানা গেছে এ তথ্য৷
ছবি: Fotolia/Peter Atkins
পায়ের আঙুলের ম্যাসাজ
প্রতিদিন পাঁচ মিনিট করে পায়ের আঙুল ম্যাসাজ করুন৷ প্রথমে আঙুলের ওপর থেকে শুরু করে আস্তে আস্তে টিপে টিপে নীচের দিকে যান৷ এই ম্যাসাজ মস্তিষ্কের কোষের সাথে যোগাযোগ স্থাপনে সহায়তা করে৷
ছবি: Elenathewise - Fotolia.com
শপিং লিস্ট
বাজারে বা দোকানে যাওয়ার আগে কী কী কিনবেন তার একটি লিস্ট তৈরি করে নিন এবং ইচ্ছে করেই সেটা বাড়িতে রেখে শপিংয়ে চলে যান৷ ফিরে এসে দেখুন ক’টা ভুলে গেছেন আর ক’টা মনে রাখতে পেরেছেন৷ এই নিয়ম যত বেশি করা হবে, ব্রেন তত দীর্ঘ সময় মস্তিষ্কে ‘সেভ’ করে রাখতে পারবে তথ্যগুলো৷
ছবি: imago/blickwinkel
দুই কাপ কফিই যথেষ্ট
দিনে দুই কাপ কফি পান করলে আলৎসহাইমার ঝুঁকি কমে শতকরা ২০ ভাগ৷ একটি সমীক্ষার ফলাফল থেকে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছেন ডিমেনশিয়ার পর্তুগিজ গবেষক ড. কাটারিনা সান্তোস৷ কারণ কফি পান তিরিশের বেশি বয়সিদের মস্তিষ্ককে ধীরে ধীরে বুড়িয়ে যাওয়া থেকে অনেকটাই রোধ করে, বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে৷
ছবি: Fotolia/Kim Schneider
রুটিন চেকআপ
হৃদপিণ্ডের নানারকম অসুখের ঝুঁকির কারণেও মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমে যেতে পারে৷ তাই বছরে একবার রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং কোলেস্টোরলের মাত্রা পরীক্ষা করানো উচিত৷
ছবি: Fotolia/Andrei Tsalko
মস্তিষ্কের খাবার
আখরোটের ‘পলিফেনল’ ব্রেনের স্মৃতি শক্তি বাড়িয়ে দেয়৷ তাছাড়াও সামুদ্রিক মাছের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, পালং শাক, ডার্ক চকলেট, গ্রিন টি, অলিভ অয়েল, শাক-সবজি ইত্যাদি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষায় খুবই জরুরি৷