সালমান রুশদির স্যাটানিক ভার্সেস কি ভারতে আমদানি করা যাবে? দিল্লি হাইকোর্টের রায়ের পর উঠেছে এই প্রশ্ন।
বিজ্ঞাপন
রাজীব গান্ধীর নেতৃত্বে কগ্রেস সরকার ১৯৮৮ সালে সালমান রুশদির স্যাটানিক ভার্সেস বইটি ভারতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। বাইরে থেকে আমদানির উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়।
এই নিয়ে দিল্লি হাইকোর্টে ২০১৯ সালে একটি মামলা হয়। কিন্তু গত পাঁচ বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্তৃপক্ষ এই নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত মূল বিজ্ঞপ্তি আদালতকে দেখাতে পারেনি। তারপর বিচারপতি রেখা পাটিল ও বিচারপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞার মূল বিবৃতি ছাড়া এই মামলায় এগোনোর কোনো অর্থ নেই।
কী নিয়ে মামলা?
২০১৯ সালে সন্দীপন খান আদালতে আবেদন জানিয়ে বলেন, তিনি রুশদির এই বইটি বিদেশ থেকে আনাতে পারছেন না। বলা হচ্ছে, ১৯৮৮ সালের ৫ অক্টোবর সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস(সিবিআইসি) বইয়ের আমদানি বন্ধ করে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু তিনি কোনো সরকারি জায়গায় এই বিজ্ঞপ্তিটি দেখতে পাচ্ছেন না। তিনি এই বিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ করতে চান। কারণ, তিনি মনে করেন, এই নির্দেশ তার বই পড়ার অধিকার ভঙ্গ করছে।
আদালতের পর্যবেক্ষণ
শুনানির সময় আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, কেউই এই বিজ্ঞপ্তি দেখাতে পারছেন না। এমনকী এই বিজ্ঞপ্তি যিনি তৈরি করেছিলেন বলা হচ্ছে, তিনিও সেটা দেখাতে পারেননি।
নিষিদ্ধ বই সপ্তাহ: কয়েকটি বইয়ের কথা
অ্যামেরিকান লাইব্রেরি এসোসিয়েশন ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের উদ্যোগে ১৯৮২ সাল থেকে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে ‘নিষিদ্ধ বই সপ্তাহ’ পালিত হচ্ছে৷ নিষিদ্ধ হওয়া বইগুলো সম্পর্কে পাঠকদের জানাতে এই সপ্তাহ উদযাপন করা হয়৷
ছবি: Viking Press
দ্য স্যাটানিক ভার্সেস
ব্রিটিশ-ভারতীয় লেখক সালমান রুশদির এই বইটি ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হয়৷ বইটি লেখার সময় মহানবি (সাঃ) এর জীবন থেকেও অনুপ্রেরণা নিয়েছিলেন তিনি৷ কিন্তু বইটির বিভিন্ন অংশ অনেক মুসলমানের কাছে অবমাননাকর ঠেকেছে৷ ফলে বিভিন্ন দিক থেকে হুমকি পেয়েছিলেন রুশদি৷ ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ খামেনি তাকে হত্যার ফতোয়াও দিয়েছিলেন৷ গত ১২ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রে তাকে মারার চেষ্টা করা হয়েছিল৷
ছবি: Viking Press
অল কোয়াইট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন জার্মান সেনাদের শারীরিক ও মানসিক চাপ এবং যুদ্ধ শেষে বাড়ি ফিরে তাদের সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশতে না পারার বিষয় নিয়ে বইটি লিখেছেন এরিশ মারিয়া রেমার্ক৷ যুদ্ধবিরোধী বই হিসেবে এটি সমালোচকদের নজর কেড়েছিল৷ তবে নাৎসি আমলে বইটি নিষিদ্ধ ও পোড়ানো হয়েছিল৷
ছবি: Ballantine Books
লোলিতা
রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে জন্ম নেয়া ভ্লাদিমির নাবোকফের লেখা বইটি ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত হয়েছিল৷ মাঝবয়সি এক সাহিত্যের অধ্যাপকের ১২ বছরের লোলিতাকে ভালো লাগা এবং তার প্রতি আবেশ তৈরি হওয়া নিয়ে বইটি লেখা হয়েছে৷ ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, আর্জেন্টিনা ও নিউজিল্যান্ডে এটি বিভিন্ন সময় নিষিদ্ধ ছিল৷ তবে যুক্তরাষ্ট্রে এটি কখনও নিষিদ্ধ করা হয়নি৷
ছবি: Rowohlt Taschenbuch;
দ্য অ্যাডভেঞ্চার অফ হাকলবেরি ফিন
শ্বেতাঙ্গ কিশোর হাকলবেরি ফিন ও তার কৃষ্ণাঙ্গ বন্ধু জিমের (যে একসময় দাস ছিল) দুঃসাহসিক অভিযান নিয়ে বইটি লিখেছেন মার্কিন লেখক মার্ক টোয়েন৷ ১৮৮৪ সালে যুক্তরাজ্যে বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল৷ সেই সময় বইয়ে বর্ণবাদী ভাষা ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছিল৷ বিশেষ করে ‘নিগার’ শব্দটি বেশ কয়েকবার ব্যবহার করেছেন লেখক৷ যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গদের এই নামে ডাকা হতো৷ যুক্তরাষ্ট্রে মাঝেমধ্যেই বইটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে৷
ছবি: Gemeinfrei
হ্যারি পটার সিরিজ
দুনিয়ার পাঠক হ্যারি পটারের গল্পে মোহিত হলেও যুক্তরাষ্ট্রের অনেক খ্রিষ্টান পাঠকের কাছে এগুলো ছিল ‘শয়তান সম্বন্ধীয়’৷ এমনকি ‘পেন্টেকোস্টাল হার্ভেস্ট অ্যাসেম্বলি অফ গড চার্চ’-এর পিটসবার্গে হ্যারি পটার বইয়ের কপিও পুড়িয়েছেন৷ ভূত, কাল্ট এবং জাদুবিদ্যা বিষয় থাকার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে অনেক স্কুলের লাইব্রেরিতে বইটি রাখতে দেয়া হয়নি৷
ছবি: United Archives/Impress/picture alliance
অ্যান্ড ট্যাঙ্গো মেকস থ্রি
নিউইয়র্কের চিড়িয়াখানায় দুটি পুরুষ পেঙ্গুইনের একটি বাচ্চা পালনের সত্য ঘটনা নিয়ে ২০০৫ সালে বইটি প্রকাশিত হয়৷ তবে পরিবারপন্থি সংগঠনগুলো এই বইয়ের সমালোচনা করে একে সেন্সরের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছিল৷ সিঙ্গাপুরে (সেখানে সমকামিতা অবৈধ) প্রথমে লাইব্রেরি থেকে বইটি সরিয়ে নেয়া হয়েছিল৷ পরে অবশ্য প্রাপ্তবয়স্ক সেকশনে বইটি রাখা হয়৷
ছবি: Little Simon
স্টিক আউট ইওর টাঙ
চীনের তিব্বত দখল নিয়ে ছোটগল্পের সমগ্র এই বইটি লিখেছেন মা জিয়ান৷ ১৯৮৭ সালে এটি প্রকাশিত হয়৷ তবে চীনা সরকার বইটিকে ‘আধ্যাত্মিক দূষণ’ আখ্যায়িত করে চিরকালের জন্য নিষিদ্ধ করেছে৷ আর ২০১৩ সালে চীনের এক সন্তান নীতির প্রভাব নিয়ে লেখা বই ‘দ্য ডার্ক রোড’ প্রকাশিত হবার পর মা জিয়ানকে চীনে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়৷
ছবি: Picador
ইরান এওয়েকেনিং
শান্তিতে নোবেলজয়ী ইরানি লেখক শিরিন এবাদির লেখা বইটি ইরানে নিষিদ্ধ৷ এবাদি ইরানের অন্যতম প্রথম নারী বিচারক ছিলেন৷ ১৯৭৯ সালের রেভুলেশনের পর তাকে সরিয়ে দেয়া হয়৷ এরপর আইন পেশায় নিয়োজিত থেকে সরকারের দ্বারা নিপীড়িতদের রক্ষায় কাজ শুরু করেন তিনি৷
ছবি: Rider
8 ছবি1 | 8
এরপর বিচারপতিরা জানান, ''যেখানে বিজ্ঞপ্তিই নেই, সেখানে তার বৈধতা যাচাই করার কোনো ভিত্তি নেই। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সামনে এই ধারণা করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই যে, এই ধরনের কোনো বিজ্ঞপ্তির অস্তিত্বই নেই। আমরা তার বৈধতার বিচার করতে পারছি না। তাই আমরা এই রিট আবেদনকে নিস্ফল বলে মনে করছি।''
এবার কী হবে?
কংগ্রেস নেতা সন্দীপ দীক্ষিত টাইমস নাও-কে বলেছেন, ''ভারতে মতপ্রকাশের অধিকার আছে। আবার কোনো সম্প্রদায়ের বিশ্বাসে আঘাত করলে সেই বই সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। রুশদির বইটির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা নিয়ে মামলা হয়েছিল। এখন আদালত যা বলছে, সেটাই মানতে হবে।''
রুশদির বই দেশে আনা যাবে কি না, সে বিষয়ে সরকারিভাবে কিছুই বলা হয়নি।
সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে নানা ধরনের মতামত প্রকাশ করছেন নেটিজেনরা।