মহাকাশে ব্যস্ততা বাড়ছে৷ নিত্যনতুন স্যাটেলাইট বিভিন্ন কক্ষপথে কাজ শুরু করছে৷ ভবিষ্যতে আরো কম খরচে, আরো নির্ভরযোগ্যভাবে, আরো বেশি স্যাটেলাইট পাঠাতে নতুন ধরনের এক রকেটের ইঞ্জিন তৈরি করা হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
ইউরোপের নতুন রকেট ‘আরিয়ান ৬' ৬০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতা ছুঁতে পারবে৷ এর জন্য প্রযুক্তিবিদ ও ইঞ্জিনিয়ারদের উদ্ভাবনী উৎপাদন প্রক্রিয়া কাজে লাগাতে হয়েছে৷ এই ট্যাংকগুলি তথাকথিত ‘ফ্রিকশন স্টার ওয়েল্ডিং' পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়েছে৷ এভাবে প্রবল চাপের মধ্যে ঘর্ষণের মাধ্যমে অত্যন্ত মসৃণ ও টেকসইভাবে সবকিছু জোড়া দেওয়া যায়৷
৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছুঁলেই এই প্রক্রিয়া কাজে লাগানো যায়৷ এতকাল ‘আর্ক ওয়েল্ডিং' পদ্ধতিতে যে তাপমাত্রার প্রয়োজন হতো, এটি সে তুলনায় এক চতুর্থাংশ কম৷ এমটি এয়ারোস্পেসের রাল্ফ শ্লাইট বলেন, ‘‘আমরা এখানে যে নতুন উপাদান ব্যবহার করছি, তার মধ্যে লিথিয়ামের মাত্রা খুব বেশি৷ অথচ ‘আর্ক ওয়েল্ডিং' পদ্ধতিতে লিথিয়াম জোড়া দেওয়া সম্ভব নয়৷ কারণ, অনেক কম তাপমাত্রায় লিথিয়াম গলে যায় এবং অত্যন্ত দ্রুত বাষ্প হয়ে ওঠে৷''
রকেটের যে ইঞ্জিনে আগুন ধরবে না
04:37
ট্যাংকগুলি ইঞ্জিনের অংশ, যেটি রকেটের উপরের স্তরে বসানো থাকে৷ বহুগুণসম্পন্ন গবেষক ও ডিজাইনার লিওনার্দো দা ভিঞ্চির সম্মানে সেটির নাম রাখা হয়েছে ভিঞ্চি৷ বিস্ময়ের কারণ হলো এই যে এমন ইঞ্জিনে কখনো আগুন ধরা সম্ভব নয়৷ ফলে বিভিন্ন উচ্চতায় স্যাটেলাইট কক্ষপথে ছাড়া যায়৷ বিভিন্ন মিশনে নতুন এই রকেট ব্যবহার করা হবে৷
অদূর ভবিষ্যতে স্যাটেলাইটগুলির মধ্যে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে৷ এভাবে গোটা পৃথিবী জুড়ে ইন্টারনেট পরিষেবা নিশ্চিত করা যাবে৷ পুনর্ব্যবহারযোগ্য ভিঞ্চি ইঞ্জিনের দৌলতে ঝাঁকের মধ্যে সঠিক অবস্থানে স্যাটেলাইট ছাড়া যাবে৷ তার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এখনই তৈরি করা হচ্ছে৷ যেমন এক অ্যাডাপ্টার৷ এই কাঠামো এক ডজনেরও বেশি ছোট আকারের স্যাটেলাইট ধারণ করে মহাকাশে নির্দিষ্ট অবস্থানে ছেড়ে দিতে পারবে৷ আরিয়ান রকেট উৎক্ষেপণের সময় অক্সিলারি রকেট প্রয়োজনীয় ধাক্কা নিশ্চিত করে৷
মহাকাশে ভারতের কয়েকটি সাফল্য
৭ সেপ্টেম্বর ভারতের চন্দ্রযান-২ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে বিচ্ছিন্ন হয় পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ৷ ফলে চতুর্থ দেশ হিসেবে চাঁদ স্পর্শ করার সফলতার জন্য ভারতের অপেক্ষা বাড়লো৷
ছবি: Reuters/Indian Space Research Organisation
চন্দ্রমিশন
ভারতের প্রথম চন্দ্রমিশন চন্দ্রযান-১৷ চাঁদে নামার উদ্দেশ্য এর ছিল না৷ এটি শুধু অর্বিটে ঘুরেছে৷ ২০০৮ সালের ২২ অক্টোবর রওয়ানা হয়েছিল এটি৷ দশ মাস তার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল৷ এরপর ২০০৯ সালের ২৮ আগস্ট হঠাৎ করে চন্দ্রযান-১ এর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়৷ তবে এই সময়ের মধ্যে অভিযানের মূল উদ্দেশ্যের ৯৫ ভাগ কাজ সম্পাদিত হওয়ায় একে সফল অভিযান হিসেবে দেখা হচ্ছে৷ চাঁদে পানির উপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছিল চন্দ্রযান-১৷
ছবি: Dibyangshu Sarkar/AFP/Getty Images
চন্দ্রযান-২
২০১৯ সালের ২২ জুলাই চাঁদের দক্ষিণ মেরুর উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছিল চন্দ্রযান-২৷ ৭ সেপ্টেম্বর তার চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ৷ ফলে চতুর্থ দেশ হিসেবে চাঁদ স্পর্শ করার সফলতার জন্য ভারতের অপেক্ষা বেড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
রকেট
স্যাটেলাইট প্রেরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যরা স্পেসএক্স-এর মতো বাণিজ্যিক কোম্পানির রকেটের উপর নির্ভরশীল৷ তবে ভারতের রয়েছে নিজস্ব রকেট, নাম জিওসিনক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল মার্ক- থ্রি (জিএসএলভি এমকে-থ্রি)৷ এতে করেই চন্দ্রযান-২ পাঠানো হয়েছে৷
ছবি: Reuters/Indian Space Research Organisation
জিপিএস-এর পরিবর্তে নাভিক
‘গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম’ বা জিপিএস ছাড়া জীবন যাপন আজকাল কঠিন৷ তবে যুক্তরাষ্ট্র যদি তাদের এই সিস্টেম কোনো দিন কোনো কারণে বন্ধ করে দেয় তাহলে কী হবে? এই অবস্থায় যেন সমস্যায় পড়তে না হয় তাই ভারত নিজেই একটি সিস্টেম গড়ে নিয়েছে, যার নাম ‘নাভিক’ (ন্যাভিগেশন উইথ ইন্ডিয়ান কনসটেলেশন)৷ এটি ভারত ও তার সীমান্তের আশেপাশে প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত কাজ করতে পারে বলে দাবি করা হয়৷
ছবি: Reuters/U.S. Marine Corps
মঙ্গলযান
পোশাকি নাম ‘মার্স অর্বিটার মিশন’ বা এমওএম৷ ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর যাত্রা শুরু করে ২০১৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশ করে ভারতের মঙ্গলযান৷ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে মঙ্গলের কক্ষপথে যেতে সক্ষম হয় ভারত৷ এছাড়া বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে প্রথম প্রচেষ্টাতেই কক্ষপথে ঢুকতে সফল হয় মঙ্গলযান৷ ভারতের আগে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ মঙ্গলের কক্ষপথে গিয়েছিল৷ মঙ্গলযান এখনও কক্ষপথে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Indian Space Research Organisation
স্যাটেলাইট
১৯৮৮ সালে ভারত প্রথম মহাকাশে রিমোট সেন্সিং স্যাটেলাইট পাঠায়৷ এরপর একে একে বেশ কয়েকটি স্যাটেলাইট পাঠানো হয়েছে৷ এগুলোর মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ থেকে শুরু করে টেলিভিশন সম্প্রচার, আবহাওয়ার পূর্বাভাস পাওয়া, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কাজ করা হচ্ছে৷ বর্তমানে ভারতের ১৫টি রিমোট সেন্সিং স্যাটেলাইট রয়েছে৷
ছবি: ISRO
6 ছবি1 | 6
এর আগে কখনো এমন প্লান্ট দেখা যায় নি৷ সেখানে হালকা কার্বন ফাইবার উপাদান দিয়ে অক্সিলারি রকেট তৈরি করা হচ্ছে৷ বর্তমান রকেটের মধ্যে সেই অংশ ধাতু দিয়ে তৈরি৷ এই উপাদানগুলিকে প্রচণ্ড মাত্রার চাপ সহ্য করতে হয়৷ তার মধ্যে কঠিন জ্বালানি ভরা হয়৷ সেটি জ্বালানো হলে ভিতরে অভাবনীয় মাত্রার উত্তাপ ও চাপ সৃষ্টি হয়৷
নতুন রকেট এখনো উৎক্ষেপণ করা হয় নি৷ তা সত্ত্বেও ইঞ্জিনিয়াররা সেটির আরও উন্নতির কাজ করছেন৷ ‘আরিয়ান ৬' আরও হালকা হওয়া সহজে উৎক্ষেপণ করা যাবে৷ সেই লক্ষ্যে ইঞ্জিনিয়াররা ২০২৫ সাল পর্যন্ত নতুন এক আপার স্টেজ তৈরি করতে চান৷ আরিয়ানস্পেস সংস্থাক কর্ণধার স্টেফান ইসরায়েল বলেন, ‘‘আমরা সেটিকে ‘ব্ল্যাক আপার স্টেজ' নাম দিয়েছি, কারণ সেটি কার্বন ফাইবার দিয়ে তৈরি হবে৷ সেটি ধাতুর তুলনায় অনেক হালকা৷ ফলে আমরা দুই টন পর্যন্ত বাড়তি ভার মহাকাশে পাঠাতে পারবো৷''
এমন ইঞ্জিন তৈরি করতে দেড় বছর সময় লাগে৷ থ্রিডি প্রিন্টিং-এর সাহায্যে সেই সময় মাত্র কয়েক সপ্তাহে কমিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে৷ সেইসঙ্গে ব্যয়ভারও এক-দশমাংশ কমে যাবে৷ ২০১৮ সালে জার্মান এয়ারোস্পেস সেন্টারে প্রিন্ট করা ইঞ্জিনের প্রোটোটাইপ পরীক্ষা করা হয়েছে৷ ভবিষ্যতের ইঞ্জিন উড়ালের পর আবার পৃথিবীতে ফিরে আসবে এবং পরে সেটি আবার ব্যবহার করা যাবে৷ মোট পাঁচ বার সেই রকেট কাজে লাগানো যাবে৷
সূর্যকে ছুঁতে চায় ওরা
সম্প্রতি ঐতিহাসিক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ঘটনা ঘটিয়েছে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা৷ এবার তারা সূর্যের দিকে স্যাটেলাইট ছুঁড়েছে৷ সফলভাবে উৎক্ষেপিত হওয়া স্যাটেলাইটটি যাবে সৌরমণ্ডলে৷ ছবিঘরে দেখুন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Raoux
মানবসভ্যতার প্রথম
মানবসভ্যতা মহাকাশে পৌঁছেছে অনেক আগে৷ চাঁদে পা রেখেছে৷ কিন্তু অতি উষ্ণ সূর্যকেও একদিন ছুঁতে পারবে তা কি কেউ কল্পনা করেছে? নাসার বিজ্ঞানিরা তা কল্পনাই শুধু করেননি, তার বাস্তবতার মুখও দেখিয়েছেন৷
ছবি: Getty Images/NASA
বিগ সানডে
১২ আগস্ট, ২০১৮৷ রোববার৷ দিনটি ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে৷ নাসার পার্কার সোলার প্রোবের প্রথম উপগ্রহটি এদিন উড়েছে আকাশে, ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল এয়ার ফোর্স স্টেশনের ৩৭ নম্বর উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে৷ ইস্টার্ন ডে লাইট সময় ভোর ৩ টা ৩১ মিনিটে শুরু হয় উৎক্ষেপণ৷ দু’ঘন্টা পর অপারেটররা জানান যে, সঠিকভাবেই উড়ছে পার্কার সোলার প্রোব৷
ছবি: Official Stream of NASA TV
উদ্দেশ্য ‘করোনা’
সৌরমণ্ডলের একটি অংশের নাম করোনা৷ সেখানেই পৌঁছাবে পার্কার সোলার প্রোব মিশনের প্রথম স্যাটেলাইটটি৷
ছবি: Reuters/M. Brown
ইউজিন পার্কার
এই প্রথম কোনো জীবিত গবেষকের নামে স্যাটেলাইটের নামকরণ করলো নাসা৷ যার নামে নামকরণ করা হয়েছে তিনি হলেন, ১৯৫৮ সালে তাত্ত্বিকভাবে সৌরবায়ুমণ্ডলের আবিষ্কারক বিখ্যাত পদার্থবিদ ইউজিন পার্কার৷ উৎক্ষেপণের সময় গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখছিলেন ইতিহাসকে৷
ছবি: picture-alliance/AP/NASA/G. Benson
কী করবে এই স্যাটেলাইট?
এই স্যাটেলাইট মহাকাশের আবহাওয়ার পূর্বাভাস আরো সঠিকভাবে নির্ণয় করতে সহায়তা করবে৷ এতে মহাকাশে উড্ডয়মান অন্য স্যাটেলাইট বা মহাকাশচারীদের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঠেকানো, রেডিও কমিউনিকেশন কিংবা বিদ্যুৎ প্রবাহ নষ্ট হতে পারে এমন কোনো পরিস্থিতি আগে থেকেই জানা যাবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Raoux
প্রথমে বুধ, তারপর সূর্য
দু’মাস এই স্যাটেলাইট উড়ে অক্টোবরে পৌঁছাবে বুধের পরিবেশে৷ বুধের গ্র্যাভিটি ব্যবহার করে পরে তা উড়ে যাবে সৌরমণ্ডল করোনায়৷ সেখানে পৌঁছাবে নভেম্বরে৷ সূর্য থেকে দেড় কোটি মাইল দূরে এই করোনা৷ সূর্যের এত কাছে আগে কখনোই যেতে পারেনি কেউ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Raoux
আরো কাছে
সাত বছরের পার্কার সোলার প্রোব মিশনে আরো ছয়বার স্যাটেলাইট উড়বে সূর্যের দিকে৷ মোট ২৪টি ফ্লাইবি উড়বে সূর্যের কাছে৷ ধীরে ধীরে সূর্যের সবচেয়ে কাছে যে ফ্লাইবিটি পৌঁছাবে তা থেকে সূর্যের দূরত্ব হবে মাত্র ৩৮ লাখ মাইল৷