করোনা ভাইরাসের মোকাবিলা করতে এখনো ওষুধ বা টিকা না থাকলেও স্বাস্থ্যকর্মীরা হাত গুটিয়ে বসে নেই৷ তাঁরা সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন৷ তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জার্মানিতে এক অভিনব উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির পূর্বাঞ্চলে স্যোরবিশ শহরের মেয়র মাটিয়াস এগার্ট অনুদান হিসেবে দেড়শ’ লিটার স্যানিটাইজার গ্রহণ করতে স্বয়ং ফ্যারবিও কোম্পানির দপ্তরে এসেছেন৷ স্থানীয় বৃদ্ধাবাস ও হাসপাতালে স্যানিটাইজারের অভাবের কথা শুনে তিনি এই কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করেন৷ এগার্ট বলেন, ‘‘তাঁরা খুব খুশি৷ যা ছিল, তা দিয়ে বড়জোর আরও এক সপ্তাহ চলতো৷ বৃদ্ধাবাসসহ চিকিৎসা পরিষেবার সব প্রতিষ্ঠানই স্যানেটাইজার সরবরাহ নিয়ে সমস্যায় পড়ছে৷ তাই অভাব দেখা দেবার ঠিক আগে আমরা সেগুলি পৌঁছে দিচ্ছি৷’’
স্বাভাবিক অবস্থায় ফ্যারবিও কোম্পানি বায়োফুয়েল বা জৈব জ্বালানীর জন্য শস্য থেকে ইথানল উৎপাদন করে৷ কিন্তু করোনা সংকটের ফলে সেই ব্যবসায় লোকসান হচ্ছে৷ তাই ইথানল থেকে জীবাণুনাশক তৈরি করাও পরিস্থিতি সামাল দেবার অন্যতম উপায়৷
স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়তায় ইথানল প্রস্তুতকারক
02:24
কখনো দান হিসেবে, কখনো ওষুধের দোকান বা হাসপাতালকে স্যানিটাইজার বিক্রি করা হচ্ছে৷ তারা লিটার প্রতি ১৫ ইউরো দরে অ্যালকোহল বিক্রি করতে পারে৷ ফ্যারবিও কোম্পানির কাছে এখনই প্রায় ৫০০ অর্ডার এসে গেছে৷ কিন্তু উৎপাদন প্রক্রিয়া বদলানো মোটেই সহজ কাজ ছিল না৷ ফ্যারবিও কোম্পানির প্রধান ভল্ফরাম ক্লাইন বলেন, ‘‘পরিবহণের ক্ষেত্রে আমরা যে ধরনের চ্যালেঞ্জে অভ্যস্ত, এটা সেই তুলনায় একেবারই ভিন্ন৷ এখনো পর্যন্ত আমরা ট্রেনের সব ট্যাংকবাহী ওয়াগান ভরে ফেলতাম৷ একটি অর্ডারেই দেড় হাজার টন বা ১৮ লাখ লিটার সরবরাহ করি৷ আর এখন আমরা দশ বা বিশ লিটারের অর্ডার পাচ্ছি৷’’
মেয়র এগার্ট দান করা ইথানলের কিছু অংশ পার্শ্ববর্তী ক্যোটেন শহরের এক মেডিকাল ভোকেশনাল স্কুলে নিয়ে গেছেন৷ অ্যামবুলেন্স কর্মীরা ভ্রাম্যমাণ করোনা ভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছেন৷ সেই কাজের সময় তাঁদের নিজেদের সুরক্ষাও জরুরি৷ ক্যোটেন শহরের অ্যামবুলেন্স কর্মী রাইমন্ড শুলৎস মনে করেন, ‘‘জরুরি পরিস্থিতিতে এই অঞ্চলের কোম্পানিগুলির এমন প্রতিক্রিয়া বেশ স্বাভাবিক ঘটনা৷ উদ্যোগপতিদের এমনটা করতেই হয়৷ আসল বিষয় হলো, এ ক্ষেত্রে প্রাণ বাঁচানো হচ্ছে৷ ফ্যারবিও কোম্পানি সেই কাজে আমাদের সাহায্য করছে৷’’
তবে দান করা ইথানল দ্রুত শেষ হয়ে যাবে বলে প্যারামেডিক কর্মীরা আশঙ্কা করছেন৷ ফ্যারবিও উৎপাদন বাড়িয়ে চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করছে৷ সপ্তাহে চল্লিশ হাজারের বদলে আশি হাজার লিটার জীবাণুনাশক উৎপাদনের আশা করছে এই কোম্পানি৷
আলেক্সা মায়ার/এসবি
জার্মানিতে করোনার গুচ্ছ প্রাদুর্ভাব
জার্মানিতে সাধারণভাবে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমছে৷ কিন্তু প্রায়ই বিভিন্ন কমিউনিটিতে হুট করে প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে এবং ছড়িয়ে পড়ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Kahnert
সার্বিকভাবে কমেছে করোনা
গেল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের হিসেবে এ পর্যন্ত জার্মানিতে এক লাখ ৮৫ হাজারের কিছু বেশি কেস ধরা পড়েছে৷ এদের আট হাজার ৭৫৫ জন মারা গেছেন৷ প্রায় ছয় হাজার এখনো অসুস্থ৷ ১২২টি জেলায় আর কোন আক্রান্ত নেই
ছবি: imago images/Arnulf Hettrich
সংক্রমণ থেমে নেই
করোনার সংক্রমণের হার কমলেও থেমে যায়নি৷ গেল সপ্তাহে দেশটিতে গড়ে লাখে প্রায় তিনজন (২.৯ জন) আক্রান্ত হচ্ছেন৷ লাখে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত রাজ্যগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বাভেরিয়া (৩৬৪), বাডেন-ভ্যুটেমব্যের্গ (৩১৬), জারলান্ড (২৭৯) ও হামবুর্গ (২৭৮)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Murat
গুচ্ছভাবে ছড়াচ্ছে
নতুন আক্রান্তের সংখ্যা সম্প্রতি বেড়েছে এমন রাজ্যগুলোতে দেখা গেছে, তা কোনো ছোট কমিউনিটিকে কেন্দ্র করে বাড়তে শুরু করেছে৷ কোথাও শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীদের ক্যাম্প ও আবাস এলাকায়, কোথাও মাংস প্রক্রিয়াকরণ কারখানা কিংবা লজিস্টিক্স কোম্পানিতে, কোথাও মৌসুমী ফসল তোলার সময় কর্মীদের মাঝে এবং কোথাও ধর্মীয় উৎসব কিংবা পারিবারিক মিলনমেলায় ঘটনাগুলো ঘটছে৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
গ্যোটিঙ্গেন নিয়ে আলোচনা
লোয়ার সাক্সনি রাজ্যোর শহর গ্যোটিঙ্গেনে সর্বশেষ গুচ্ছ ঘটনাটি ঘটেছে৷ নগরকর্তৃপক্ষ বলছে, ইদুনা হাউজিং কমপ্লেক্সের এক ঈদ পুনর্মিলনী জমায়েত থেকেই নতুন করে শুরু হয় সংক্রমণ৷ এতে স্কুল ও ডে কেয়ার সেন্টারগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়৷ বিষয়টি নিয়ে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে৷ কর্তৃপক্ষ তা না করতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Pförtner
ব্রেমারহাফেনের চার্চ থেকেও
রাজ্যের ব্রেমারহাফেন শহরের একটি চার্চের সভা থেকেও করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটে৷ এছাড়া সেখানে একটি বড় পারিবারিক অনুষ্ঠানও হয়৷ এ থেকে শুধু ব্রেমারহাফেনই নয়, পার্শবর্তী কুক্সাভেন শহরেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে৷ আরো কয়েকটি রাজ্যে নানা ধর্মের মানুষের সমাবেশ থেকে করোনা ছড়িয়েছে৷
ছবি: Gemeinde der Christuskirche Bremerhaven
আইশাখ-ফ্রিডব্যের্গে কী ঘটল?
বাভেরিয়া রাজ্যের আইশাখ-ফ্রিডব্যের্গ এলাকায় ফসল তোলার সময় কর্মীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে করোনা৷ বিষয়টি ধরা পড়লে ফসল তোলা বন্ধ করে দেয়া হয় সঙ্গে সঙ্গে৷ ট্রেসিং ও টেস্টিং শুরু হয়৷ কোয়ারান্টিনে রাখা হয়েছে অনেককে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Skolimowska
জনারব্যের্গের নার্সিং হোম
থুরিঙ্গিয়া রাজ্যের জনারব্যের্গ শহরে বয়স্কদের জন্য একটি নার্সিং হোমেও সম্প্রতি সার্স-কোভ-২ ছড়িয়ে পড়ে৷ নার্সিং হোমের বাসিন্দা ও কর্মচারীদের অনেকেই আক্রান্ত হয়ে পড়েন৷ পার্শ্ববর্তী শহর কোবুর্গেও এমন ঘটনার কথা শোনা যায়৷ ডায়লাইসিস চিকিৎসার সঙ্গে এই ছড়িয়ে পড়ার সংযোগ খুঁজে পাওয়া যায়৷
ছবি: Imago Images/photothek/I. Kjer
কারখানায়, কোম্পানিতে
কয়েকটি রাজ্যে মাংস প্রক্রিয়াকরণ কারখানা থেকে করোনা সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে৷ পরে কারখানাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়৷ এছাড়া নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়া ও লোয়ার সাক্সনি রাজ্যের কয়েকটি বড় লজিস্টিক্স কোম্পানির কর্মীদের মাঝে নতুন করে করোনার সংক্রমণ দেখা গেছে৷