যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিমদের এটাই সবচেয়ে বড় ভয় – এমনকি টিভি-তে যখন হত্যাকাণ্ডের প্রথম সব ছবি দেখানো হচ্ছে, তখন থেকেই৷ প্রেসিডেন্সিয়াল রেস-ও ইসলাম বিরূপতায় ইন্ধন যোগাচ্ছে৷
ছবি: Reuters
বিজ্ঞাপন
বুধবার ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান ব্যার্নার্ডিনো কাউন্টির সরকারি কর্মচারীদের একটি হলিডে পার্টিতে ঢুকে যে আততায়ীরা ১৪ জন মানুষকে গুলি করে মারে – এবং পরে পুলিশের সঙ্গে গুলিযুদ্ধে নিজেরাও নিহত হয় – তারা ছিল ২৮ বছর বয়সি সঈদ রিজওয়ান ফারুক ও তার স্ত্রী অথবা বাগদত্তা, ২৭ বছর বয়সি তশফিন মালিক৷
ফারুকের জন্ম ইলিনয় রাজ্যে; পাকিস্তানি অভিবাসীদের সন্তান৷ মালিক-এর জন্ম পাকিস্তানে; ফারুক-এর সঙ্গে দেখা হওয়া অবধি তার বাস ছিল সৌদি আরবে৷ দম্পতির বাড়ি থেকে বহু পাইপ-বোমা আর হাজার হাজার রাউন্ড গুলি খুঁজে পেয়েছে পুলিশ৷ হত্যাকাণ্ডের মোটিভ বা উদ্দেশ্য কি হয়ে থাকতে পারে, সে বিষয়ে তদন্ত চালাচ্ছে এফবিআই৷
‘প্লিজ গুলি কোরো না’
সাদা পুলিশের হাতে নিরস্ত্র এক কৃষ্ণাঙ্গ তরুণের মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় যুক্তরাষ্ট্রের মিসুরি রাজ্যের শহর ফার্গুসন৷ মাত্র ২১ হাজার অধিবাসীর এই শহরের প্রতিবাদের খবর এখন বিশ্ব মিডিয়ায়৷
ছবি: DW/M. Soric
ঘটনার সূত্রপাত
৯ আগস্ট রাত, নিরস্ত্র মাইকেল ব্রাউন নিহত হন পুলিশের গুলিতে৷ পুলিশ শ্বেতাঙ্গ আর ১৮ বছরের মাইকেল কৃষ্ণাঙ্গ৷ ব্রাউন বর্ণবাদের বলি হয়েছেন, এ অভিযোগ এনে এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে আসছেন কৃষ্ণাঙ্গ-অধ্যুষিত ওই এলাকার বাসিন্দারা৷
ছবি: Getty Images
‘হ্যান্ডস আপ, ডোনট শ্যুট’
বিক্ষোভের সময় প্রতিটি বিক্ষোভকারী হাত উপরে তুলে ‘হ্যান্ডস আপ, ডোনট শ্যুট’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন৷ স্লোগানটি এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছে যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই ভিডিও বা ছবির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ‘হ্যান্ডস আপ, ডোনট শ্যুট’ বলে৷
ছবি: Reuters
কিছুটা স্তিমিত
৯ আগস্ট থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত নিয়মিত বিক্ষোভ হয়েছে ফার্গুসনে৷ তবে ২০ তারিখ বিচার বিভাগের প্রধান অ্যাটর্নি জেনারেল এরিক হোল্ডার ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্তের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ কিছুটা স্তিমিত হয়৷ যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে প্রথম আফ্রো-অ্যামেরিকান হোল্ডার৷
ছবি: Reuters
ন্যাশনাল গার্ডের সদস্য
গত ১১ দিনে বিক্ষোভ এমন পর্যায়ে দাঁড়ায় যে পরিস্থিতি সামলাতে কেন্দ্রীয় সরকার সেখানে জাতীয় নিরাপত্তা সদস্যদের পাঠান৷
ছবি: Getty Images
প্রতিবাদ রূপ নেয় সহিংসতায়
বিক্ষোভ কখনো কখনো সহিংসতায় রূপ নিয়েছিল৷ মনে হচ্ছিল ফার্গুসন যে রণক্ষেত্র৷ বুধবারও ছয় বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ৷ এর আগে ৪৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ গভীর রাতের দিকে কেউ কেউ পুলিশকে লক্ষ্য করে পানি ও প্রস্রাব ভর্তি প্লাস্টিকের বোতল ছুড়ে মারলে কিছুটা উত্তেজনা ছড়ায়৷
ছবি: Reuters
বর্ণ বৈষম্যের অভিযোগ
ফার্গুসনের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে৷ ফার্গুসনের জনসংখ্যা প্রায় ২১ হাজার৷ এর মধ্যে বেশিরভাগই আফ্রিকান-অ্যামেরিকান৷ কিন্তু নিরাপত্তা, প্রশাসন, রাজনীতিসহ সব বিভাগেই শ্বেতাঙ্গ মানুষের পদচারণা৷
ছবি: Reuters
আর এক কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যু
১৯ আগস্ট দুই পুলিশের গুলিতে ২৩ বছর বয়সের আরেক কৃষ্ণাঙ্গ যুবক সেন্ট লুইস এলাকায় নিহত হন৷ সে অঞ্চলের পুলিশ প্রধান স্যাম ডস্টন দাবি করেন, ঐ যুবক পুলিশদের দিকে ধেয়ে আসেন এবং হাতে থাকা ছুরি বের করে বলতে থাকেন, ‘‘আমাকে গুলি করো, মেরে ফেলো আমাকে’’৷ যুবকটি তাঁদের দিকে ধেয়ে এলে গুলি করতে বাধ্য হন তাঁরা৷
ছবি: Reuters
ঘটনার তদন্তে শুনানি
এরিক হোল্ডার বুধবার ব্রাউনের মৃত্যুর তদন্তকারীদের সঙ্গে দেখা করেছেন৷ বুধবারই ঘটনার তদন্তে শুনানি শুরু হয়েছে বলে খবর৷ তবে ড্যারেন উইলসন নামের পুলিশ কর্মকর্তা, যাঁর গুলিতে ব্রাউনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হবে কিনা – সে বিষয়ে এখনও ‘ফাইনাল’ সিদ্ধান্ত জানা যায়নি৷
ছবি: DW/M. Soric
8 ছবি1 | 8
মার্কিন মুলুক জুড়ে মুসলিম অ্যামেরিকানরা স্যান ব্যার্নার্ডিনো হত্যাকাণ্ডে বিমূঢ়তা ও ঘৃণা প্রকাশ করেছেন৷ গুলিচালনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কাউন্সিল অন অ্যামেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্স লস এঞ্জেলেস এলাকার মুসলিম নেতৃবর্গ ও তশফিন মালিক-এর ভাইকে নিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে৷
সেই সম্মেলনে পরিষদের কার্যনির্বাহী পরিচালক হুসাম আইলুশ বলেন, ‘‘মুসলিম সম্প্রদায় তাদের মার্কিনি বন্ধুদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সেই বিকৃত মনোবৃত্তিকে প্রত্যাখ্যান করছে, যা এই ধরনের জঘন্য সহিংস কার্যকলাপকে বৈধ বলে ঘোষণা করার চেষ্টা করে৷'' কিন্তু ক্ষতি যা হবার, ততক্ষণে তা হয়ে গেছে৷
‘আমি প্রথম যে প্রশ্ন করেছিলাম, সেটা ছিল, লোকটার নাম কি মহম্মদ?' লস এঞ্জেলেসের হালের এক রাজনীতিক নাকি বলেছেন৷ অপরদিকে ডেট্রয়েটের কাছে বাস এমন এক মুসলিম, আদম হাশেম রয়টার্স সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, ‘‘গুলি যখন চলেছে, তখন আমি জিম-এ গিয়েছিলাম৷ সব টিভি-তে তার ফুটেজ দেখাচ্ছে আর আমি শুধু ভাবছি, ‘ঈশ্বর করুন, যেন ওরা (আততায়ীরা) প্রাচ্য বংশোদ্ভূত না হয়, শুধু মধ্যপ্রাচ্যই নয়, মুসলিমদের সঙ্গে যুক্ত কোনো কিছু না হয়'৷'' প্রতিক্রিয়ার ভীতি এমনই৷
কিছু মার্কিন মুসলিমের মতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আক্রোশ আর গোঁড়ামির একটা শিরা খুলে দিয়েছে, বিশেষ করে মুসলিমরা যার শিকার হচ্ছেন৷ যেমন রিপাবলিকান প্রার্থী টেড ক্রুজ বৃহস্পতিবার ইহুদি রিপাবিকান সমর্থকদের একটি সমাবেশে বলেছেন যে, স্যান ব্যার্নার্ডিনোর হত্যাকাণ্ড অ্যামেরিকায় ‘‘ইসলামি সন্ত্রাসের'' আরো একটি নিদর্শন হতে পারে, বলে তাঁর আশঙ্কা৷
কিন্তু সন্ত্রাস ছাড়াও রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে আগ্নেয়াস্ত্র আইন সংশোধনের প্রশ্ন৷ সেক্ষেত্রে জেসন কার্শ টুইট করেছেন, ‘‘বুধবার: আমরা শুধু নিহতদের কথা স্মরণ আর তাদের জন্য প্রার্থনা করব না...৷ বহস্পতিবার: না, না, ঠাট্টা করছিলাম৷ এবার দেখো, আমরা আগ্নেয়াস্ত্র আইন সংশোধনের কি দশা করি!'' টুইট-টা অবশ্যই রিপাবলিকানদের ঠাট্টা করে৷
সমস্যাটা আরো স্পষ্ট করে বলেছেন জেড হ্যানসন, তাঁর টুইটে: ‘‘যুক্তরাষ্ট্রে এ বছর বিভিন্ন স্কুলে ৬২টি গুলিচালনার ঘটনা ঘটেছে৷ আগ্নেয়াস্ত্র যে সহিংসতা নিয়ে আমাদের সমস্যার একটা অঙ্গ, তা-তে কোনো সন্দেহ নেই৷''
‘দ্য জ্যানিটর' সকলকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন তাঁর টুইটে: ‘‘ক্রিসমাসের আগে আর তো কয়েকটা মাত্র গুলিগোলার ঘটনা!''
এসি/ডিজি (রয়টার্স, এপি)
গির্জায় শ্বেতাঙ্গের গুলিতে ৯ কৃষ্ণাঙ্গ নিহত
যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ক্যারোলাইনা রাজ্যের চার্লসটনের একটি আফ্রিকান-আমেরিকান গির্জায় গুলি করে নয়জনকে হত্যা করেছে এক শ্বেতাঙ্গ বন্দুকধারী৷ ছবিঘরে থাকছে বিস্তারিত৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Goldman
ঐতিহাসিক গির্জা
এটি যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ক্যারোলাইনার ইমানুয়েল গির্জা৷ বুধবার রাতে এখানেই এক শ্বেতাঙ্গ তরুণ গুলি করে নয়জন কৃষ্ণাঙ্গকে হত্যা করে বলে অভিযোগ৷ নিহতদের মধ্যে তিনজন নারী ও ছয়জন পুরুষ৷ ১৮৯১ সালে নির্মিত আফ্রিকান-অ্যামেরিকান এই গির্জাকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/landov
এই সেই অভিযুক্ত তরুণ
সিসিটিভি ফুটেজ থেকে নেয়া ছবিতে ২১ বছর বয়সি বন্দুকধারী ডিলান রুফকে গির্জায় প্রবেশ করতে দেখা যাচ্ছে৷ রুফকে পুলিশ আটক করেছে৷
ছবি: Reuters/Charleston Police Department
উন্নত দেশে এমন হয়না
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন বিশ্বের আর কোনো উন্নত দেশে এ ধরণের হত্যাকাণ্ড ঘটে না৷ এর ফলে অস্ত্রের মালিকানা বিতর্ক আবার সামনে চলে এসেছে বলে মনে করেন তিনি৷
ছবি: Reuters/J. Ernst
নিহতদের স্মরণে প্রার্থনা
গির্জা হত্যাকাণ্ডে নিহতদের স্মরণে আয়োজিত প্রার্থনায় শোকাহত এক নারী৷
ছবি: Reuters/G. Beahm
‘বর্ণবাদী অপরাধ’
বুধবার রাতের এ ঘটনাকে ‘বর্ণবাদী ঘৃণাজনিত অপরাধ’ বলে বর্ণনা করেছেন চার্লসটনের পুলিশ প্রধান গ্রেগরি মুলেন৷