কুর্দিদের বিরুদ্ধে তুরস্কের সেনা অভিযানের প্রভাব পড়েছে ফুটবল মাঠেও৷ তুর্কি ফুটবলাররা প্রতিপক্ষের জালে বল জড়ানোর পর সামরিক কায়দায় যে স্যালুট দেন তার কঠোর সমালোচনা শুরু হয়েছে৷ বড় বিপাকে আছেন জার্মান-তুর্কি ফুটবলাররাও৷
বিজ্ঞাপন
রোববার সন্ধ্যায় ফ্রান্সের বিরুদ্ধে তুরস্কের খেলায় সমতাসূচক গোলটি করার পরও সতীর্থদের কাছ থেকে একটু দূরে সরে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন কায়ান আয়হান৷ গোলের আনন্দে তখন মাঠে দাঁড়িয়ে সামরিক কায়দায় স্যালুট দিচ্ছেলেন তাঁর তুর্কী সতীর্থরা৷ শুধু আয়হান এবং জার্মান ক্লাব ফরচুনা ড্যুসেলডর্ফে তাঁর সতীর্থ কেনান কারামান স্যালুট দেয়া থেকে বিরত ছিলেন৷
সিরিয়ায় কে, কার বিরুদ্ধে লড়ছে?
২০১১ সাল থেকে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছে৷ মাঝে আইএস-এর কারণে সেই যুদ্ধে বিদেশি শক্তিও ঢুকে পড়েছে৷ কে আসলে কার বিরুদ্ধে লড়ছে?
ছবি: picture alliance/abaca/A. Al-Bushy
যুদ্ধ যেন শেষই হচ্ছে না
২০১১ সালে আরব বসন্তের ঢেউ লেগে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছিল৷ সেই সময় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ বেশ কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কাছে দেশের একটি বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ হারান৷ এরপর সেই যুদ্ধে একসময় বিদেশি শক্তিও ঢুকে পড়ে৷
ছবি: picture alliance/abaca/A. Al-Bushy
আসাদের সমর্থক
সিরিয়ার সেনাবাহিনী ‘সিরিয়ান আরব আর্মি’ বা এসএএ পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণ আসাদের কাছে ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে৷ এছাড়াও ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্স’সহ আসাদের সমর্থক কয়েকটি বাহিনী এবং রাশিয়া ও ইরান আসাদকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Syrian Presidency
তুরস্কের ভূমিকা
ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী দেশ ছিল তুরস্ক৷ এছাড়া আসাদবিরোধী বিদ্রোহীদেরও সমর্থন দিয়ে আসছে দেশটি৷ তবে কুর্দিদের সহায়তা করা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-তুরস্ক সম্পর্কে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, কারণ সিরিয়ার কুর্দিদের সঙ্গে তুরস্কের ‘কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি’ পিকেকে-র সম্পর্ক রয়েছে বলে তুরস্কের অভিযোগ৷ ১৯৮৪ সাল থেকে তুর্কি সরকারের সঙ্গে সশস্ত্র সংঘাতে জড়িয়ে আছে পিকেক৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L. Pitarakis
রাশিয়ার ভূমিকা
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সিরিয়ার যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে রাশিয়া৷ অবশ্য তারও আগে থেকে সিরিয়ার সেনাবাহিনীকে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে আসছিল দেশটি৷ রাশিয়ার আকাশ হামলায় সিরিয়ার বহু সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অভিযোগ রয়েছে৷ রাশিয়ার কারণে যুদ্ধের ঢেউ এখন আসাদের অনুকূলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Tass/M. Metzel
আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ
২০১৪ সালের শেষ দিকে আইএস-সব অন্যান্য সন্ত্রাসী সংগঠনকে লক্ষ্য করে আকাশ হামলা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট৷ জার্মানিসহ প্রায় ৫০টি দেশ রয়েছে সেই জোটে৷ আইএসবিরোধী এই জোটের কারণে সিরিয়ায় আইএস-এর পরাজয় হয়েছে৷ জোটকে সহায়তা করেছে কুর্দি ও আরব মিলিশিয়াদের সমন্বয়ে গঠিত ‘সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস’ এসডিএফ৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/A.Brandon
বিদ্রোহীদের কথা
‘ফ্রি সিরিয়ান আর্মি’র মতো নন-জিহাদি গোষ্ঠীগুলো আসাদের পদত্যাগ চাইছে৷ এরপর একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনেরও দাবি আছে তাদের৷ তবে বেশ কয়েকটি পরাজয়ের পর এই সংগঠনের অনেক সদস্য কট্টরপন্থি জঙ্গি সংগঠনগুলোতে যোগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে৷
ছবি: Reuters
ইরানের সমর্থন
গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে দামেস্ককে কৌশলগত ও সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে ইরান৷ ইরানের সমর্থনপ্রাপ্ত লেবাননের শিয়া গোষ্ঠী হেজবোল্লাহও আসাদ সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে৷
ছবি: Atta Kenare/AFP/Getty Images
7 ছবি1 | 7
এমনকি স্যালুট না দেয়ায় তাঁর এক সতীর্থ খেলোয়াড় তাঁকে কিছুটা ভর্ৎসনাও করেছেন মনে হয়েছে৷
গত সপ্তাহে আরেক খেলায় অবশ্য আলবেনিয়ার বিরুদ্ধে ১-০ গোলে জয়ের পর স্যালুটে অংশ নিয়েছিলেন আয়হান এবং কারামান৷ কিন্তু সেকারণে জার্মানির গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার শিকার হন তারা৷ খেলোয়াড়দের এই আচরণকে সিরিয়ায় কুর্দিদের বিরুদ্ধে তুর্কিদের সেনা অভিযানের প্রতি সমর্থন হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে৷ জার্মানিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অধিকাংশ দেশ এই সেনা অভিযান সমর্থন করে না৷
শুধু যে তারাই এমন বিপাকে পড়েছেন তা নয়৷ জার্মান জাতীয় দলের দুই খেলোয়াড় ইলকাই গ্যুনড্যুয়ান এবং এমরেই কানও সম্প্রতি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন৷ তুরস্কের সেনা অভিযানসংক্রান্ত এক ইন্সটাগ্রাম পোস্টে লাইক দিয়েছিলেন তারা৷ আর সেটাকে সেনা অভিযানের প্রতি সমর্থন হিসেবে বিবেচনা করে নিন্দা করা হয়৷
এসব খেলোয়াড়ের পক্ষে তাদের সতীর্থরা দাঁড়ালেও চ্যাংক শাহিনের ক্ষেত্রে বিষয়টি অনেক জটিল হয়ে গেছে৷ তুর্কি সেনাবাহিনীর পক্ষে ইন্সটাগ্রামে এক পোস্ট দেয়ায় জার্মান ক্লাব সেন্ট পাওলি তাঁকে দল থেকে বের করে দিয়েছে৷ শাহিনের এমন আচরণ ক্লাবটির নীতির সঙ্গে মানানসই নয় বলেই নাকি এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷ শাহিন অবশ্য সেই ঘটনার পর তুরস্কে গিয়ে একটি ফুটবল ক্লাবে যোগ দিয়েছেন যেটি তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ানের কাছ থেকে অর্থ সহায়তা পায়৷
সিরিয়ার নিহত যোদ্ধাদের বিদায়
01:43
ইউরোপের ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা উয়েফা খেলার মাঠে কোনরকম রাজনৈতিক বিবৃতি প্রদানকে সমর্থন করে না৷ সিরিয়ায় তুরস্কের সামরিক অভিযানের কারণে তাই তুর্কি বংশোদ্ভূত জার্মান খেলোয়াড়দের রাজনীতি থেকে দূরে থাকা উচিত বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞেরা৷