বাংলাদেশে সড়কে নৈরাজ্যের পিছনে প্রধানত পরিবহন মালিকরা দায়ী হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। ফিটনেসহীন যানবাহন তারাই সড়কে নামান। অদক্ষ চালক তারাই পছন্দ করে কম মজুরি দিতে। কিন্তু তাদের দায় নিতে হয় না।
বিজ্ঞাপন
মাদারীপুরের কুতুবপুরে পদ্মাসেতুর এক্সপ্রেসওয়ের রেলিং ভেঙে থেকে ছিটকেপড়া ইমাদ পরিবহণের বাসটির দুর্ঘটনার তিনটি কারণ এপর্যন্ত জানা গেছে। চালক চোখে ঘুম নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ৩০ ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে তিনি ক্লান্ত ছিলেন, গাড়িটি চলছিলো অস্বাভাবিক গতিতে। ওই সড়কে সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার হলেও বাসটি চালানো হচ্ছিল ১২০ কিলোমিটার গতিতে। বাসটির ফিটনেস এবং রুট পারমিট কোনেটিই ছিল না। তবে চালকের লাইসেন্স ঠিক আছে কী না তা এখনো নিশ্চিত নয়।
আর এই বাসটিই গত বছরের ১৭ নভেম্বরে গোপালগঞ্জে দুর্ঘটনায় পড়েছিলো। তখন মারা যান তিনজন। গত ১৮ জানুয়ারি বাসটির ফিটনেস ও রুট পারমিটের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।
এক বাসেই সব নৈরাজ্য:
ইমাদ পরিবহনের এই বাসটির দুর্ঘটনা থেকেই সড়ক পরিবহণের নৈরাজ্য স্পষ্ট। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বাসচালকদের কর্মঘন্টা বেধে দেয়ার নির্দেশ দিলেও তা মানা হচ্ছে না। ফিটনেস এবং রুট পারমিট নেই এমন যানবাহন সড়কে চলছে দেদারসে। আর মহাসড়কে গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে না। এখান থেকে আরেকটি নৈরাজ্য স্পষ্ট হয়। চালকসহ পরিবহণ শ্রমিকদের অধিকাংশেরই মাসিক বেতন নেই। তারা ট্রিপ ভিত্তিক মজুরি পান। ফলে তারা বিশ্রাম না দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাস চালান। অতিরিক্ত ট্রিপ দেয়ার চেষ্টা করেন। সড়কে এই দুর্ঘটনার জন্য প্রধানত এই কারণগুলাই দায়ী। আর একটি বাসেই প্রায় সবগুলো কারণই খুঁজে পাওয়া গেল। প্রাণ গেল ২০ জনের।
কোনো আইনই মানা হচ্ছে না:
বাংলাদেশ পরিবহণ শ্রমিক লীগের সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ খোকন বলেন, "বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনার জন্য ৮০ ভাগ ক্ষেত্রেই চালকদের দায়ী করা হয়। কিন্তু এর পেছনে কী কারণ আছে তা দেখা হয় না। চালক ও পরিবহন শ্রমিকদের জন্য মজুরি বোর্ড করা হয়েছে। তাদের নিয়োগপত্র দেয়ার আইন আছে। কিন্তু সেগুলো মানা হয় না। চালকদের কোনো নিয়োগপত্র নেই, নির্ধারিত বেতন নেই। তাদের ট্রিপ ভিত্তিক মজুরি দেয়া হয়। তাই তারা বিশ্রাম না নিয়ে ঘন্টার পর ঘণ্টা গাড়ি চালাতে বাধ্য হন। বেশি ট্রিপ পাওয়ার আশায় নির্ধারিত গতির চেয়ে বেশি গাতিতে গাড়ি চালান। এমনও হয় আট ঘণ্টার একটি ট্রিপ দিয়ে এক ঘণ্টা বা তার কম সময় বিশ্রাম নিয়ে তারা আরেকটি ট্রিপ শুরু করতে বাধ্য হন।”
তার কথা," একজন চালকের ২৪ ঘন্টায় এক নাগাড়ে পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাড়ি না চালানোর আইন আছে। দূর পাল্লার একটি ব বাসে তাই দুইজন ড্রাইভার রাখার নিয়ম। কিন্তু কোনো বাসেই দুইজন ড্রাইভার নাই।”
"পরিবহণ মালিকেরা পুলিশ ও বিআরটিএর সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে এই নৈরাজ্যকর অবস্থা বহাল রেখেছে। কিছু পরিবহন কোম্পানি আছে তারা কেন্দ্রীয়ভাবে সব কিছু ম্যানেজ করে। তাদের গাড়ির ফিটনেস, রুট পারমিট আছে কীনা তা কখনোই দেখা হয় না।”
কার দায় কত?
বাংলাদেশ রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন,"সাধারণভাবে চালকদের সড়ক দুর্ঘটনার জন্য প্রধানভাবে দায়ী করা হলেও আমরা গবেষণায় দেখেছি সড়ক দুর্ঘটনার জন্য চালকদের দায় চার নম্বরে। এক নম্বরে অব্যবস্থাপনা তারপরে আছে গাড়ির ফিটনেস। তার পরে সড়ক ব্যবস্থা। ঢাকা শহরে ৮০ ভাগ বাস-মিনিবাসের কোনো ফিটনেস নাই। আর দূর পাল্লার বড় বড় কয়েকটি পরিবহন কোম্পানি ছাড়া অন্যদের গাড়ির কোনো ফিটনেস ও রুট পারমিট নাই।”
তিনি বলেন,"আসলে এইসবের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যে লোক দেখানো অভিযান করা হলেও এগুলো চলে সমঝোতার ভিত্তিতে। মালিকপক্ষ এতই শক্তিশালী যে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া যায় না।”
শ্রমিকের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) ২০১৭ সালের এক গবেষণা বলছে, পরিবহন খাতের ৮৬ শতাংশ শ্রমিক দৈনিক ১৩ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন। এই খাতের ৯০ শতাংশ শ্রমিকের সাপ্তাহিক ছুটি নেই।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, বাংলাদেশে বাস-মিনিবাস রয়েছে ৮০ হাজার। সব ধরনের যন্ত্রিক যানবাহন মিলিয়ে এর সংখ্যা ৫৭ লাখ। সিটি সার্ভিসের বাস-মিনিবাসের ৬০ ভাগেরই কোনো ফিটনেস নাই। আর দূর পাল্লার বাসের ৩০ ভাগের ফিটনেস নাই। বাংলাদেশে বাস মিনিবাসের বৈধ লাইসেন্সধারী ড্রাইভার আছে ৪০ হাজার। তাই বাস মিনিবাসে ভুয়া বা লাইসেন্সবিহীন ড্রাইভারদের দৌরাত্ম।”
তার কথা,"এখানে মালিক পক্ষের দায় আছে। দায় আছে বিআরটিএর। তবে সমস্যা হলো পুরো গণপরিবহল খাতের শতকরা এক ভাগেরও কম সরকারের নিয়ন্ত্রণে। তাই বেসরকারি মালিকেরা এই খাত নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের মর্জির ওপর নির্ভর করে এই খাত।”
বিআরটিএ, পুলিশ দেখে না কেন?
তবে বাংলদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েতুল্ল্যাহ দাবি করেন, "আমরা মালিক সমিতি সব সময়ই রুট পারমিট ও ফিটনেসহীন গাড়ির বিপক্ষে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিআরটিএ ও ট্রাফিক পুলিশকে বলে আসছি। তারা ব্যবস্থা নেয় না কেন? আমরা কীভাবে জানব কোনো গাড়ির ফিটনেস আছে বা কোন গাড়ির নেই? কোন গাড়ির রুট পারমিট আছে কোন গাড়ির নেই? ইমাদ পরিবহনের দুর্ঘটনায় পতিত গাড়িটি আগেও দুর্ঘটনায় পড়েছে। ওই গাড়ি সড়কে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা ছিলো। তাহলে সেটা সড়কে নামলো কীভাবে?”
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, "বাংলাদেশে বাস-মিনিবাসহ সবধরনের যান্ত্রিক যানবাহন আছে ৬০ লাখের বেশি। চালক আছে ৪০ লাখ। ড্রাইভারই তো নেই। দক্ষ-অদক্ষ তো পরের কথা। আর ড্রাইভারেরাই মাসিক বেতন ও নিয়োগ পত্র নিতে চায়না। তারা চার দিন কাজ করে তিন দিন বাড়ি চলে যায়। অনেকের তো ঠিকানাই ঠিক নাই। কাকে নিয়োগপত্র দেব। শ্রমিক সমিতির তো ৪০টির মত পরিবহণ কোম্পানি আছে। তারা নিয়োগ পত্র দেয় না কেন?”
"আসলে আমাদের দক্ষ ড্রাইভার তৈরি করার জন্য বড় উদ্যোগ প্রয়োজন। সরকারি ও বেসরকারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট দরকার। ড্রাইভারের ঘাটতি পূরণের জন্য আরো অনেক ড্রাইভার তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে,” বলেন এই পরিবহণ মালিক নেতা।
এইসব বিষয়ে কথা বলার জন্য বিআরটিএ'র চেয়ারম্যানকে চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশে প্রতি বছরই সড়ক দুঘর্টনা ও মৃত্যু বাড়ছে। সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে গত এক বছরে বাংলাদেশের ১৮ ধাপ অবনতি হয়েছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে, গত বছর সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মোট নিহত হয়েছেন সাত হাজার সাতশ ১৩ জন৷
‘সড়ক দুর্ঘটনার পেছনের কারণ আছে দেখা হয় না’
অসচেতনতায় মৃত্যু
বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিচার্স ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হাদিউজ্জামানের মতে, নৌ ও সড়কপথে দুর্ঘটনার ৬০ ভাগই হয় যাত্রীসহ সবপক্ষের অসচেতনতা ও অবহেলার কারণে৷ ছবিঘরে দেখুন কিছু উদাহরণ৷
ছবি: bdnews24.com/M. Zaman Ovi
সড়ক ও নৌপথে মৃত্যুর সংখ্যা ও কারণ
বাংলাদেশে গত দশ বছরে নৌ দুর্ঘটনায় প্রায় দেড় হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ আর সড়কপথে দুর্ঘটনায় বছরে গড়ে ছয় হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়৷ বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিচার্স ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হাদিউজ্জামানের মতে, নৌ ও সড়কপথে দুর্ঘটনার ৬০ ভাগই হয় যাত্রীসহ সবপক্ষের অসচেতনতা ও অবহেলার কারণে৷
ছবি: bdnews24.com/M. Zaman Ovi
অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে ওঠার পরিণতি
২০০৩ সালের ৮ জুলাই অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামালের কারণে এমভি নাসরিন-১ লঞ্চের তলা ফেটে ডুবে যায়৷ এতে সরকারি হিসেবে ১১০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয় এবং ১৯৯ জনকে খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ তবে বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা অনেক বেশি (কারও মতে আটশর অধিক) বলে দাবি করা হয়৷ (ছবিটি প্রতীকী)
ছবি: AP Photo/picture alliance
নৌকা উলটে ৬৯ জনের মৃত্যু
পঞ্চগড়ের করতোয়া নদীতে গত রোববার নৌকাডুবে ৬৯ জন মারা যান৷ যাত্রীরা মহালয়া উপলক্ষে বোদা উপজেলার বরদেশ্বরী মন্দিরে যাচ্ছিলেন৷ নৌকায় সর্বোচ্চ ২০ জনের ধারণক্ষমতা থাকলেও উঠেছিলেন ১৫০ জনের বেশি৷ তখন সেখানে পুলিশ ছিল৷ ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ছিলেন৷ যারা তীরে ছিলেন তারাও সাবধান করছিলেন৷ পুলিশও দুই-একবার তাদের নিবৃত্ত করতে চেষ্টা করেছে৷ কিন্তু তবুও নৌকাটি ছেড়ে যায় এবং মাঝ নদীতে ডুবে যায়৷
ছবি: Firoz Al Sabah
পিনাক-৬ লঞ্চ দুর্ঘটনা
ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী বহনের কারণে ২০১৪ সালের ৪ আগস্ট মাদারীপুরের কাওড়াকান্দি থেকে মাওয়া ঘাটে যাওয়ার পথে এমএল পিনাক-৬ নামের একটি লঞ্চ ডুবে যায়৷ ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল৷ নিখোঁজ ৬৪ যাত্রীর সন্ধান মেলেনি৷ পরে লঞ্চটি তোলা সম্ভব হয়নি, এবং এর ধ্বংসাবশেষও খুঁজে পাওয়া যায়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এমভি কোকো লঞ্চ দুর্ঘটনা
২০০৯ সালের ২৬ নভেম্বর ভোলার লালমোহনের নাজিরপুরে এমভি কোকো-৪ লঞ্চ ডুবে ৮১ জন যাত্রী প্রাণ হারিয়েছিলেন৷ অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের কারণে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে৷
ছবি: STR/AFP/Getty Images
রেলক্রসিংয়ে মৃত্যু
গত আড়াই বছরে রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় ২১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে গত জুলাইতে জানায় ‘রোড সেফটি ফাউন্ডেশন৷’ দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে যানবাহনের চালক ও সড়ক ব্যবহারকারীদের মধ্যে অসচেতনতা ও অধৈর্য মানসিকতাকে দায়ী করেছে তারা৷ বাকি কারণগুলো হচ্ছে রেলক্রসিংয়ে গেটম্যান ও গেটবারের ব্যবস্থা না থাকা, গেটম্যানদের দায়িত্বে অবহেলা, লোকবলের সংকট ও দায়ীদের উপযুক্ত শাস্তি না হওয়া ইত্যাদি৷
ছবি: bdnews24
পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু
ইউনিসেফ বলছে বাংলাদেশে প্রতিবছর পানিতে ডুবে ১৪ হাজারের বেশি শিশু মারা যায়, যা ৫ বছরের কমবয়সি শিশুদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফ এক বিবৃতিতে বলেছে, তথ্যপ্রমাণ বলে, খুব সহজেই পানিতে ডুবে যাওয়া রোধ করা যায়৷ এজন্য কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছে তারা৷ এর মধ্যে একটি পরিবার ও কমিউনিটির মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা: বেপরোয়া গতি, হেলমেট না থাকা
প্রথম আলো বলছে, এবারের রোজার ঈদের ছুটির সময় সড়কে যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তাদের প্রায় ৪৮ শতাংশই মোটরসাইকেলের চালক ও আরোহী৷ এসব দুর্ঘটনার কারণ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই মোটরসাইকেলচালক ছিলেন বেপরোয়া৷ একটি মোটরসাইকেলে চালকের বাইরে সর্বোচ্চ একজন আরোহী তোলার নিয়ম থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি৷ চালক ও আরোহীদের বেশির ভাগেরই হেলমেট ছিল না৷
ছবি: MOHAMMAD PONIR HOSSAIN/REUTERS
8 ছবি1 | 8
আলোচিত যত সড়ক দুর্ঘটনা
বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ২০-২২ জন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন৷ এর মধ্যে নানা কারণে শুধু অল্প কিছু ঘটনা সারা দেশের মানুষের আলোচনায় আসে৷
ছবি: DW/Samir Kumar Dey
তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীর
২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জের এক গ্রামে ছবির শুটিং স্পট দেখে ঢাকা ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন খ্যাতিমান চিত্র পরিচালক তারেক মাসুদ এবং শহিদ বুদ্ধিজীবী, নাট্যকার মুনীর চৌধুরীর ছেলে এটিএন নিউজের প্রধান নিবার্হী মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন৷ এ দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ ও শিল্পী ঢালী আল-মামুনসহ চারজন আহতও হয়েছিলেন৷
ছবি: DW/S. K. Dey
ক্ষতিপূরণ
দুর্ঘটনার প্রায় দেড় বছর পর ২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নিহতদের পরিবারের সদস্যরা বাস মালিক, চালক ও বিমা কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে দু'টি মামলা দায়ের করেন৷ সেই মামলার একটির চূড়ান্ত রায়ে গত ডিসেম্বরে তারেক মাসুদের মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর পরিবারকে ৪ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫২ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট৷ আগামী তিন মাসের মধ্যে এই টাকা পরিশোধ করার নির্দেশ দেয়া হলেও এখনও তা কার্যকর হয়নি৷
দৈনিক সংবাদের বার্তা সম্পাদক ছিলেন৷ ১৯৮৯ সালে মতিঝিলের আনন্দ কমিউনিটি সেন্টারের সামনে বাংলাদেশ বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজের গাড়ির ধাক্কায় নিহত হন তিনি৷ এরপর তাঁর স্ত্রী রওশন আরা ১৯৯১ সালে আর্থিক ক্ষতিপূরণ চেয়ে কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করেন৷ ২০১৪ সালের ২০ জুলাই সাংবাদিক মন্টুর পরিবারকে ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নিম্ন আদালতের রায় বহাল রেখে রায় দেন আপিল বিভাগ৷ তবে তা এখনও পাননি মন্টুর পরিবার৷
ছবি: Rawshan Aktar
জাহানারা কাঞ্চন
তিনি চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের স্ত্রী ছিলেন৷ ১৯৯৩ সালের ২২ অক্টোবর স্বামীর শ্যুটিং দেখতে যাওয়ার পথে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি৷ সে বছরই সড়ক দুর্ঘটনা রোধ এবং সড়ক চলাচল সম্পর্কে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্য ও দাবি নিয়ে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ (নিসচা) নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন ইলিয়াস কাঞ্চন৷ সমাজসেবায় ২০১৮ সালের একুশে পদক পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এই অভিনেতা৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/GettyImages
রাজীব হোসেন
৩ এপ্রিল ঢাকার কারওয়ান বাজারে বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের দুই বাসের রেষারেষিতে মধ্যে পড়ে প্রথমে হাত হারিয়েছিলেন তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হোসেন৷ মাথায়ও আঘাত পান তিনি৷ এরপর দুই সপ্তাহ চিকিৎসাধীন ছিলেন৷ তবে তাঁকে বাঁচানো যায়নি৷ পরে রাজীবের পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট৷ দুর্ঘটনার পর দুই বাসের মাঝে এক হাত ঝুলে থাকার ছবি প্রকাশিত হলে সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি আলোচিত হয়েছিল৷
ছবি: bdnews24.com
মানজারুল ইসলাম রানা
২০০৭ সালের ১৬ মার্চ খুলনায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন জাতীয় দলের এই ক্রিকেটার৷ ২৩ বছর বয়সি রানা জাতীয় দলের হয়ে ছয়টি টেস্ট ও ২৫টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন৷
ছবি: Tawhid Zaman
জগলুল আহমেদ চৌধুরী
২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা, বাসস-এর সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক জগলুল আহমেদ চৌধুরী কারওয়ানবাজার এলাকায় বাস থেকে নামতে গিয়ে সেই বাসের পেছনের চাকায় পিষ্ট হয়ে নিহত হন৷
ছবি: DW/M. Mamun
নাজিম উদ্দিন
ঢাকা ট্রিবিউনের বিজ্ঞাপন বিভাগের একজন সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ছিলেন৷ ১৭ মে শনির আখড়া থেকে মোটর সাইকেলে গুলিস্তানের দিকে যাচ্ছিলেন৷ এই সময় মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে দুই বাসের প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়ে একটি বাসের ধাক্কায় ছিটকে পড়েন তিনি৷ ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার পর তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়৷ নাজিম উদ্দিনের মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর পরিবারকে কেন কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে সম্প্রতি রুল জারি করেছে হাইকোর্ট৷