1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সড়ক দুর্ঘটনাই বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় ‘মহামারি’

হারুন উর রশীদ স্বপন বাংলাদেশ
২২ অক্টোবর ২০২২

বাংলাদেশে গত ১০ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে ১৪ জন নিহত হয়েছেন৷ গত বছর নিহত হয়েছেন প্রতিদিন গড়ে ১৭ জন৷

Bangladesh riskante Überholmanöver Überholen Straße Riskant Flash-Galerie
ছবি: DW/Arafatul Islam

বাংলাদেশ ইনিশিয়েটিভ, সেবক ও ড্রাইভার্স ট্রেনিং সেন্টারের উদ্যোগে এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, নিহত এবং আহতের সংখ্যা বিবেচনায় সড়ক দুর্ঘটনাই এখন সবচেয়ে বড় মহামারি৷ কিন্তু দুর্ঘটনা রোধে সংশ্লিষ্টদের তেমন নজর নেই৷ চালকদের প্রশিক্ষণের অভাব, আর অব্যস্থাপনাই মূলত এমন পরিস্থিতির জন্য দায়ী বলে মনে করেন তারা৷ 

গবেষক কাজী আবুল আল আতাহিয়া জানান, ২০২১ সালে পাঁচ হাজার ৩৭১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ছয় হাজার ২৮৪ জন মারা যান৷ এসব দুর্ঘটনায় আহত হন সাত হাজার ৪৬৮ জন৷ তাদের মধ্যে ৮৪ শতাংশই পঙ্গুত্বের শিকার৷ গত বছর গড়ে প্রতিদিন ১৭ জন নিহত হয়েছেন৷

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে, ২০২০ সালে দেশে চার হাজার ৮৯১টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ছয় হাজার ৬৮৬জন এবং আহত হয়েছেন আট হাজার ৬০০ জন৷ ২০১৯ সালে পাঁচ হাজার ৫১৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় সাত হাজার ৮৫৫জন নিহত হয়েছেন৷ এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ১৩ হাজার ৩৩০জন৷ ২০১৮ সালে পাঁচ হাজার ৫১৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় সাত হাজার ২২১জনের মৃত্যু হয়েছে৷ আহত হয়েছেন ১৫ হাজার ৪৬৬জন৷ 

ওয়ার্ল্ড র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের ১৮ ধাপ অবনতি হয়েছে: অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান

This browser does not support the audio element.

কতটা ভয়াবহ?

গবেষক আবুল আল আতাহিয়া  বলেন, ‘‘২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা আসার পর আমরা এর বিরুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছি৷ ফলে সেটা মোকাবিলা করা গেছে৷ গত কয়েক মাস ধরে প্রতিদিন মৃত্যুর হার পাঁচ জনের বেশি হয়নি৷ কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে তার চেয়ে প্রতিদিন চারগুণেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হলেও এটা নিয়ে আমরা তেমন উদ্বিগ্ন নই৷ যদি আমাদের একই রকম সিরিয়াসনেস থাকত তাহলে এটা কমিয়ে আনা সম্ভব হতো৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমি করোনার সঙ্গে তুলনা করেছি সিরিয়াসনেসের বিষয়টি বিবেচনা করে৷ তবে আমার পর্যবেক্ষণ বলছে, একক কারণ হিসেবে সড়ক দুর্ঘটনায়ই বাংলাদেশে মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি৷ আমার বিচেনায় সড়ক দুর্ঘটনাই বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় মহামারি৷’’

আহতদের ভয়াবহ দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘আহতদের ৮৪ ভাগ পঙ্গু হয়ে যান৷ এর মানে হলো তারা আর সারা জীবন কোনো কাজ করতে পারেন না৷ তারা পরিবারের ওপর বোঝা হয়ে বেঁচে থাকেন৷ তাদের পরিবারেও নেমে আসে দুর্যোগ৷ একটি বিশাল জনগোষ্ঠী কর্মক্ষমতা হারালেও তাদের সহায়তার জন্য সরাকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই৷’’

দায় কার?

বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন,  ‘‘সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে গত এক বছরে ওয়ার্ল্ড র‌্যাংকিং-এ বাংলাদেশের ১৮ ধাপ অবনতি হয়েছে৷ সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে কারণ হলো এর ব্যবস্থাপনায় রাজনীতি আছে কিন্তু বিজ্ঞান নেই৷ ৯৫ ভাগ রাজনীতি থাকলে বিজ্ঞান আছে শতকরা পাঁচ ভাগ৷ গত এক বছরে সড়কে ৬০ হাজার নতুন আনফিট যানবাহন নেমেছে৷ এক যুগে ৫০-৬০ লাখ অবৈধ যানবাহনের জন্ম হয়েছে৷ তার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অবৈধ চালক৷’’

তিনি বলেন, ‘‘আমরা গবেষণায় দেখেছি যেসব চালকরা দুর্ঘটনায় পড়েন তাদের ২৫ ভাগ মাদকাসক্ত৷ চালকের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই৷ তাদের নির্দিষ্ট কোনো বেতন নেই৷ ফলে দক্ষ চালক আমরা পাচ্ছি না৷ তারা রেকলেস ড্রাইভিং করছেন৷ যা সড়কের মৃত্যু পরিস্থিতিকে আরো খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে৷’’

সিরিয়াসনেস থাকলে মৃত্যু কমিয়ে আনা সম্ভব হতো: আবুল আল আতাহিয়া

This browser does not support the audio element.

গবেষক আবুল আল আতাহিয়া  বলেন ‘‘সড়ক দুর্ঘটনার নানা কারণ আছে৷ কিন্তু আমার মনে হয়েছে, চালক ও হেলপারদের প্রশিক্ষিত করতে পারলে ও তাদের গুণগত মান বাড়াতে পারলে এটা উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে৷ তাদের দক্ষতা এবং দায়িত্বশীল আচরণ অনেক জীবন রক্ষা করতে পারে৷’’

বাংলাদেশ রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান মনে করেন, ‘‘সড়ক দুর্ঘটনার এখন প্রধান কারণ অদক্ষ চালক এবং ফিটনেসবিহীন যানবাহন৷ আগে সড়কও অন্যতম কারণ ছিল৷ কিন্তু এখন মহানড়কগুলো প্রশস্ত হয়েছে৷ গতি বড়েছে৷’’

তার কথা, ‘‘এখানে চালকদের প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই৷ তারা হেলপারি করতে করতে চালক হয়৷ আবার তাদের পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা না দেয়ায় তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে ফিট থাকেন না৷ তাদের নির্দিষ্ট বেতন না থাকায় অতিরিক্ত ট্রিপ দিতে হয়৷ ফলে মহাসড়কের গতির সঙ্গে তারা পারে না৷ দুর্ঘটনা ঘটে৷ আবার তাদের যে যানবাহন দেয়া হয় তার অধিকাংশেরই ফিটসেন নাই৷’’

তিনি বলেন, ‘‘সড়ক দুর্ঘটনার জন্য প্রত্যক্ষভাবে চালকদের সর্বাধিক দায়ী করা হলেও এর পিছনে কিন্তু চরম অব্যবস্থাপনা আছে৷ এরজন্য মালিক এবং বিআরটিএ দায়ী৷ কিন্তু এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তাদের কোনো উদ্যোগ বা ইচ্ছাও নেই৷ ফলে সড়কে মৃত্যু বাড়ছেই৷’’

আর যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘‘পরিবহণ খাত ও সড়ক একটি দুষ্ট চক্রের হাতে বন্দি৷ ফলে এখানে কোনো নিয়মনীতি, আইন কার্যকর করা যাচ্ছে না৷ এখানে অবৈধ সুবিধার জন্য কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়৷ এর সঙ্গে পুলিশ, প্রশাসন, পরিবহন মালিক, রাজনৈতিক নেতা সবাই জড়িত৷ ফলে যাত্রীরা প্রাণ হারাচ্ছে৷’’  

তার কথা, ‘‘এই অসাধু চক্রের কারণেই সড়কে আনফিট এবং অবৈধ যানবাহন ও অদক্ষ চালকদের এত দৌরাত্ম৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ