বাংলাদেশে বহুল আলোচিত বিষয় সড়ক দুর্ঘটনা৷ অথচ চালকরা ভ্রুক্ষেপ করছেন না, এখনও তারা বেপরোয়া, কেন তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না? আইনে কি কোনো ফাঁক আছে? এ সব নিয়েই ডয়চে ভেলের মুখোমুখি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরশেদ৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার কেমন?
অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ: বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার বেশ কয়েক বছর ধরে অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে৷ অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার অনেক বেশি৷ সড়ক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অনেক দুর্বলতা আমাদের রয়েছে, যার কারণে দুর্ঘটনা বেশি হচ্ছে৷
সড়ক দুর্ঘটনায় মামলার হার কেমন?
সড়ক দুর্ঘটনায় মামলার সংখ্যা অত্যন্ত কম৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রে যাঁরা দুর্ঘটনার শিকার হন, তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হন না৷ খুবই কম সংখ্যক মামলা থানায় লিপিবদ্ধ হয়৷ আর চূড়ান্ত নিষ্পত্তি যা হয়,আমার মনে হয় তা ১০ ভাগেরও কম৷ এর কারণ হলো দীর্ঘ সময় ধরে আদালতে সাক্ষী দেয়া বা দুর্ঘটনা প্রমাণ করা কঠিন বলে৷ আদালতের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে অনেকেই এই প্রক্রিয়ায় যান না৷ তাছাড়া সাধারণ দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে যাঁরা গাড়ির চালক থাকেন বা মালিক থাকেন, তাঁরা মিটমাট করে নেন কিছু ক্ষতিপূরণ দিয়ে৷ এ কারণে মামলাগুলো চূড়ান্ত পর্যায় পর্যন্ত আসে না৷
‘দীর্ঘ সময় ধরে আদালতে সাক্ষী দেয়া বা দুর্ঘটনা প্রমাণ করা কঠিন’
সড়ক দুর্ঘটনা সংক্রান্ত আমাদের যে আইন, সেটা কত সালের? এটা কি পর্যাপ্ত?
মোটর ভেহিকেল অর্ডিন্যান্স আমাদের দেশে যেটা আছে, সেটা আশির দশকের আইন৷ এখানে সাজা ছিল তিন বছরের৷ আমরা রিট করেছিলাম৷ সেখানে আদালত সাজা বাড়িয়ে সাত বছর করে৷ তারপরও আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছে যে, এই সাজাটাও কম৷ আইন সংশোধন করতে বলেছে আদালত৷ সেই আইনে যে বিধান আছে, সেটা কার্যকর করা গেলেও সড়ক দুর্ঘটনা অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব৷ কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেই আইনের প্রয়োগ হয় না৷ মালিক, ড্রাইভার, পথচারী – কেউ সেটা মানতেও চান না৷ এ কারণে দুর্ঘটনা দিন দিন বাড়ছে৷
এই আইনটার দুর্বলতা কোথায়?
মূল দুর্বলতা হলো সাজার পরিমাণ কম৷ আর প্রাথমিক স্তরে এখানে যে জরিমানা, সেটা এতই কম যে যাঁরা জরিমানা দেন তাঁদের কাছে এটা সহনীয়৷ এ কারণে এটা খুব একটা কার্যকর হয় না৷ যেমন ধরুন রং ড্রাইভিং, রং পার্কিং বা ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া চালানো – এগুলো করলে বিদেশে অনেক টাকা জরিমানা হয়৷ ফলে সেখানকার মানুষ এ ধরনের অপরাধ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন৷ আমাদের দেশে এটা খুবই কম৷ ৫০০ টাকা বা এক হাজার টাকা জরিমানা করা হলে মালিক সেটা দিয়ে চলে যান৷ এবং পরবর্তীতে আবারো একই কাজ করতে দ্বিধা করেন না৷
বিদেশের সঙ্গে আমাদের আইনের পার্থক্য কী?
এই যে আমাদের সাজা কম৷ ক্যানাডায় ১০ বছরের সাজা৷ এমনকি অনেক দেশেই যাবজ্জীবন সাজা আছে৷ এছাড়া বিদেশে আরেকটা জিনিস আছে, যেটা আমাদের দেশে নেই৷ বহু দেশে সাজা বা জরিমানার সঙ্গে অপরাধের মাত্রা ধরে ড্রাইভিং লাইসেন্স থেকে পয়েন্ট কাটা হয়৷ যেমন কোনো অপরাধের জন্য এক পয়েন্ট বা দুই পয়েন্ট৷ এভাবে নির্দিষ্ট একটা পয়েন্ট কাটার পর ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল করা হয়৷ তার মানে সেই ব্যক্তি আর কোনোদিনই লাইসেন্স পাবেন না৷ এ কারণে তাঁরা সতর্ক থাকেন৷ এটা আমাদের এখানে করা যায় কিনা সে ব্যাপারে আমি বিআরটিএ-র একজন পরিচালকের সঙ্গে কথা বলেছি৷ তাঁরাও এটা নিয়ে ভাবছেন৷ আমাদের দেশে একটা দুর্ঘটনার পর জরিমানা দিলেন, মামলা হলো, কিন্তু লাইসেন্সের ওপর এর প্রভাব পড়লো না৷ ফলে কেউ-ই এটাকে খুব একটা গুরুত্ব দেন না৷
আলোচিত যত সড়ক দুর্ঘটনা
বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ২০-২২ জন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন৷ এর মধ্যে নানা কারণে শুধু অল্প কিছু ঘটনা সারা দেশের মানুষের আলোচনায় আসে৷
ছবি: DW/Samir Kumar Dey
তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীর
২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জের এক গ্রামে ছবির শুটিং স্পট দেখে ঢাকা ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন খ্যাতিমান চিত্র পরিচালক তারেক মাসুদ এবং শহিদ বুদ্ধিজীবী, নাট্যকার মুনীর চৌধুরীর ছেলে এটিএন নিউজের প্রধান নিবার্হী মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন৷ এ দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ ও শিল্পী ঢালী আল-মামুনসহ চারজন আহতও হয়েছিলেন৷
ছবি: DW/S. K. Dey
ক্ষতিপূরণ
দুর্ঘটনার প্রায় দেড় বছর পর ২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নিহতদের পরিবারের সদস্যরা বাস মালিক, চালক ও বিমা কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে দু'টি মামলা দায়ের করেন৷ সেই মামলার একটির চূড়ান্ত রায়ে গত ডিসেম্বরে তারেক মাসুদের মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর পরিবারকে ৪ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫২ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট৷ আগামী তিন মাসের মধ্যে এই টাকা পরিশোধ করার নির্দেশ দেয়া হলেও এখনও তা কার্যকর হয়নি৷
দৈনিক সংবাদের বার্তা সম্পাদক ছিলেন৷ ১৯৮৯ সালে মতিঝিলের আনন্দ কমিউনিটি সেন্টারের সামনে বাংলাদেশ বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজের গাড়ির ধাক্কায় নিহত হন তিনি৷ এরপর তাঁর স্ত্রী রওশন আরা ১৯৯১ সালে আর্থিক ক্ষতিপূরণ চেয়ে কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করেন৷ ২০১৪ সালের ২০ জুলাই সাংবাদিক মন্টুর পরিবারকে ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নিম্ন আদালতের রায় বহাল রেখে রায় দেন আপিল বিভাগ৷ তবে তা এখনও পাননি মন্টুর পরিবার৷
ছবি: Rawshan Aktar
জাহানারা কাঞ্চন
তিনি চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের স্ত্রী ছিলেন৷ ১৯৯৩ সালের ২২ অক্টোবর স্বামীর শ্যুটিং দেখতে যাওয়ার পথে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি৷ সে বছরই সড়ক দুর্ঘটনা রোধ এবং সড়ক চলাচল সম্পর্কে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্য ও দাবি নিয়ে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ (নিসচা) নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন ইলিয়াস কাঞ্চন৷ সমাজসেবায় ২০১৮ সালের একুশে পদক পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এই অভিনেতা৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/GettyImages
রাজীব হোসেন
৩ এপ্রিল ঢাকার কারওয়ান বাজারে বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের দুই বাসের রেষারেষিতে মধ্যে পড়ে প্রথমে হাত হারিয়েছিলেন তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হোসেন৷ মাথায়ও আঘাত পান তিনি৷ এরপর দুই সপ্তাহ চিকিৎসাধীন ছিলেন৷ তবে তাঁকে বাঁচানো যায়নি৷ পরে রাজীবের পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট৷ দুর্ঘটনার পর দুই বাসের মাঝে এক হাত ঝুলে থাকার ছবি প্রকাশিত হলে সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি আলোচিত হয়েছিল৷
ছবি: bdnews24.com
মানজারুল ইসলাম রানা
২০০৭ সালের ১৬ মার্চ খুলনায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন জাতীয় দলের এই ক্রিকেটার৷ ২৩ বছর বয়সি রানা জাতীয় দলের হয়ে ছয়টি টেস্ট ও ২৫টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন৷
ছবি: Tawhid Zaman
জগলুল আহমেদ চৌধুরী
২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা, বাসস-এর সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক জগলুল আহমেদ চৌধুরী কারওয়ানবাজার এলাকায় বাস থেকে নামতে গিয়ে সেই বাসের পেছনের চাকায় পিষ্ট হয়ে নিহত হন৷
ছবি: DW/M. Mamun
নাজিম উদ্দিন
ঢাকা ট্রিবিউনের বিজ্ঞাপন বিভাগের একজন সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ছিলেন৷ ১৭ মে শনির আখড়া থেকে মোটর সাইকেলে গুলিস্তানের দিকে যাচ্ছিলেন৷ এই সময় মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে দুই বাসের প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়ে একটি বাসের ধাক্কায় ছিটকে পড়েন তিনি৷ ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার পর তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়৷ নাজিম উদ্দিনের মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর পরিবারকে কেন কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে সম্প্রতি রুল জারি করেছে হাইকোর্ট৷
ছবি: Privat
8 ছবি1 | 8
আমরা কেন আইনে এটা আনতে পারছি না?
আমাদের এখানে যাঁরা সরকারি দায়িত্বে আছেন, এটা তাঁদের মাথা থেকে বের হতে হবে৷ তা না হলে আমরা যখন বলব, তখন কতটা তাঁরা নেবেন তা বলা মুশকিল৷ বিআরটিএ-র পরিচালকের সঙ্গে কথা বলেছি৷ তাঁরা বলেছেন যে তাঁরা এটা করবেন৷ আশা করি ভবিষ্যতে তাঁরা সত্যিই লাইসেন্স থেকে পয়েন্ট কাটার ব্যবস্থা করবেন৷ এটা করলে একজন ড্রাইভার যখন দেখবেন যে একটা, দু'টো বা চারটা অ্যাক্সিডেন্ট করলে আমার লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে, তখন অবশ্যই তাঁরা সতর্ক হবেন৷
আইন শক্ত করে কি সড়ক দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব?
আইন হলো একজনের মনে ভয়ভীতির সৃষ্টি করা, যাতে সে দ্বিতীয়বার এ কাজ না করে৷ এখানে শুধু আইনের প্রয়োগই না, আমরা যারা পথচারী তাদেরও অগ্রসর হতে হবে৷ কয়েকদিন আগে দেখলাম, চলন্ত বাসে একজন মাথা বাইরে বের করে রেখেছেন, হাত বের করে রেখেছেন৷ তাঁদের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে৷ জেব্রা ক্রসিং ছাড়াই আমরা হুট করে রাস্তা পার হচ্ছি৷ এতেও দুর্ঘটনা ঘটে৷ এ ধরনের দুর্ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে আমাদের অসতর্কতা বা নিবুর্দ্ধিতাও অনেক সময় দায়ী৷ এ সব বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে অনেক কাজ করতে হবে৷ এখানে গাড়ি, মালিক, চালক, পথচারী সবাইকে সচেতন হতে হবে৷ পাশাপাশি আইন প্রয়োগ করে সড়ক দুর্ঘটনা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব৷
আমাদের দেশে যত ড্রাইভার আছেন, তাঁদের সবার তো লাইসেন্সই নেই৷ তাই না?
এটা তো মৃত্যুর লাইসেন্স দেয়া৷ একজনের যদি লাইসেন্স না থাকে আর সে যদি গাড়ি চালায়, তাহলে সেই গাড়িতে দুর্ঘটনা হওয়াটাই তো স্বাভাবিক৷ পরীক্ষা না দিয়েই ৭-৮ হাজার মানুষকে সরকার লাইসেন্স দিতে চেয়েছিল৷ আমরা মামলা করে সেই লাইসেন্স দেয়া আটকিয়েছি৷ আপনি যদি নিয়ম-কানুন না জানেন, তাহলে গাড়ি চালালে আপনার হাতে শত শত মানুষের মৃত্যু হওয়াটাই তো স্বাভাবিক৷
রাস্তায় নৈরাজ্য, যেন আইন ভাঙার হিড়িক
১৬ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা৷ শুধু রাজধানীই নয়, দেশের আইন-শাসন-বিচার বিভাগ এখান থেকেই পরিচালিত হয়৷ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাণিজ্যসহ নানা কাজের কেন্দ্রও এটাই৷ অথচ কোনো সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নেই ঢাকায়৷
ছবি: bdnews24.com
উলটো পথে চলাচল
ঢাকা শহরে নানা ট্রাফিক অব্যবস্থপনার মধ্যে উলটো পথে চলা অন্যতম৷ বাইকার, সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ভিআইপি – অনেকেই নিজের তাড়াতাড়ি যাওয়া নিশ্চিত করতে উলটো পথে গাড়ি ছোটান৷ তাতে আরো বেশি বিড়ম্বনায় পড়েন রাস্তায় নামা সাধারণ মানুষ৷
ছবি: bdnews24.com
বেপরোয়া ড্রাইভিং
এমনিতে হয়ত যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় অনেক গাড়িকে৷ তবে রাস্তা ফাঁকা পেলে যেন দেরি সয় না অনেক চালকের৷ বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে দেন তাঁরা৷ এর ফলে অনেক সময়ই প্রাণ যায় মানুষের৷ প্রিয়জন হারানোর আহাজারিতে ভারী হয় আকাশ বাতাস৷ কেবল ঢাকার রাস্তাতেই প্রতি বছর কয়েক শত মানুষের প্রাণ যায়৷
ছবি: bdnews24.com
যত্রতত্র পার্কিং
ঢাকা মহানগরের সড়কগুলো আর যাই হোক, বিপুল পরিমাণ মানুষ আর যান বাহনের চাপ সামলানোর মতো নয় বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত৷ সরু সেই সব রাস্তার অবস্থা আরো করুণ হয়ে যায়, যখন যত্রতত্র পার্কিংয়ে এই রাস্তা আরো সরু হয়ে যায়৷
ছবি: bdnews24.com
অননুমোদিত ড্রাইভিং
গত মে মাসে এক স্কুলছাত্র এই গাড়িটি নিয়ে বের হয়ে পড়ে রাস্তায়৷ অননুমোদিত এই ড্রাইভিংয়ে আহত হয় আরেক শিশু৷ অবৈধ ড্রাইভিংয়ে কেবল শিশু নয়, বড়রা জড়িয়ে পড়েন৷ লাইসেন্স ছাড়াই অনেকে নেমে পড়েন রাস্তায়৷ লাইসেন্স থাকলেও মাদক গ্রহণের পর, শারিরীক বা মানসিকভাবে অনুপযুক্ত অবস্থায়ও গাড়ি চালানো আইনে নিষেধ৷ সড়কে বিপজ্জনকভাবে গাড়ি চালানো, রেসে অংশ নেয়াও নিষিদ্ধ৷ বীমার বাধ্যবাধকতাও অনেকে মানেন না৷
ছবি: bdnews24.com
উলটো পথে চললে চাকা ফুটো
উলটো পথে গাড়ির চলাচল বন্ধ করতে একটি যন্ত্র বসিয়েছিল ট্রাফিক পুলিশ৷ কথা ছিল গাড়ি উলটো পথে চললে তাতে চাকা ফুটো হয়ে যাবে৷ কিছুদিন পর এই যন্ত্রটি নষ্ট হয়ে যায়৷ ঢাকা শহরের গাড়িকে স্বয়ংক্রিয় সংকেত বাতির উপর নির্ভরশীল করে দিতে সর্বশেষ ২০১৫ সালে একটি উদ্যোগ নেয়া হয়৷ কিন্তু পুলিশের অসহযোগিতায় সেই উদ্যোগ ভেস্তে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে৷ এই শহরে ট্রাফিক আইন ভাঙা মামলাও হয় গতানুগতিকভাবে, হাতে লিখে৷
ছবি: bdnews24.com
যত্রতত্র পথচারীদের চলাচল
ঢাকার রাস্তায় আরেক যন্ত্রণা সৃষ্টি করে খোদ পথচারীরাই৷ নির্ধারিত জায়গার পরিবর্তে যেখানে সেখানে রাস্তা পার হয়ে যান তাঁরা৷ রাজধানীতে পথচারীদের আইন না মানার প্রবণতাও এখানকার দুর্ঘটনার একটা কারণ৷
ছবি: bdnews24.com
আইন প্রয়োগে ফাঁকি
ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ঠিক করতে নানা আইন থাকলেও, সেটা প্রয়োগে ফাঁকি রয়েছে৷ প্রায়ই খোদ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অনেক সদস্যকেই আইন ভাঙতে দেখা যায়৷ লেগুনা নামের এই ‘আনফিট’ গাড়ি ব্যবহার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী৷
ছবি: bdnews24.com
ব্যক্তিগত গাড়ির আধিক্য
রাজধানী ঢাকায় যে সব গাড়ি চলে তার অধিকাংশই ব্যক্তিগত৷ এ সব গাড়িকে যত্রযত্র যানজট সৃষ্টির জন্যও দায়ী করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গণপরিবহনে নৈরাজ্য
ঢাকার সমস্যা গণপরিবহন ব্যবস্থায় নৈরাজ্য৷ মানসম্মত গণপরিবহনের অভাব তো রয়েছেই৷ যে গাড়িগুলো রয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল৷ যেখানে সেখানে থামিয়ে যাত্রী তোলা যেন নগরীর নিত্যদিনের চিত্র৷
ছবি: bdnews24.com
9 ছবি1 | 9
সড়ক দুর্ঘটনার কী পরিমাণ মামলায় সাজা হচ্ছে?
সাজার পরিমাণ ১০ ভাগেরও কম৷ ইদানীং দু-চারটা মামলায় সাজা হয়েছে৷ মিশুক মনিরদের মামলায় হাইকোর্টে বিচার হওয়ায় সাজা হয়েছে৷ এর আগে একজন ট্রাক ড্রাইভার ইচ্ছাকৃতভাবে একজনকে হত্যা করেন৷ সেই মামলায় সাজা হয়েছে৷ এটা নিয়ে মালিক ও ড্রাইভাররা হরতাল ডেকেছিল, আদালতের বিরুদ্ধে৷ তখন আমরা একটা মামলা করেছিলাম৷ এরপর তারা হরতাল প্রত্যাহার করে নেয়৷ তবে সাজা বৃদ্ধি করাটা খুবই জরুরি৷
আরেকটা আলোচিত মামলা ছিল, সংবাদের সাবেক বার্তা সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন মন্টুর মৃত্যুর ঘটনা...
হ্যাঁ, এটা তো আপিল বিভাগের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়েছে৷ এখন তারা যদি টাকা না দেয় তাহলে আদালতের মাধ্যমে অবমাননার মামলা করে টাকাটা উদ্ধার করতে হবে৷ কিন্তু এটা করতেই তো ২৭ বছর লেগে গেছে৷ আমাদের অনেকেই এ ধরনের বিষয়গুলোতে নিয়মগুলো জানেন না৷ একটা তো ফৌজদারি মামলা হবে৷ তার পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ চেয়েও আপনি একটা মামলা করতে পারেন৷ তবে সেটা ছ'মাসের মধ্যে জেলা জজের কাছে করতে হয়৷ না জানার কারণে অনেকেই সাধারণত এই ধরনের আবেদন করেন না৷ এখানে কোনো দুর্ঘটনার পর ড্রাইভার গ্রেপ্তার হলেও তিনি জামিন পেয়ে যান৷ এটা অজামিনযোগ্য করা হলে হয়ত বিষয়টা কঠিন হতো৷ সরকারের কাছে সাজেশন থাকবে, তারা যেন একটা মহাপরিকল্পনা করে, জরুরি বিষয় বিবেচনা করে মামলাটা যেন রিশাফল করে৷ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সরকার এমন একটা কিছু যেন করে, যাতে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা যায়৷