সদ্য জাতীয় সংসদে পেশ করা হয়েছে ভারতে পথ দুর্ঘটনার খতিয়ান৷ সেই দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানির তালিকার শীর্ষে পশ্চিমবঙ্গ!
বিজ্ঞাপন
২০১৮ সালে সারা ভারতে ২২,৬৫৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে৷ তার মধ্যে ২০১৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে সড়কপথে গর্ত থাকার কারণে৷ ভারতীয় সংসদে দেশের পরিবহণ ও জাতীয় সড়ক মন্ত্রকের সদ্য পেশ করা এই তথ্য থেকে আরো জানা যাচ্ছে যে, প্রতি বছরই সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে৷ ২০১৬ সালে ১৫,৭৪৬ জন সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন, ২০১৭ সালে সেটা বেড়ে হয় ২০,৪৫৭ এবং পরের বছর আরো ২২০০ বেশি৷ জাতীয় এবং রাজ্য সরকারের তরফ থেকে প্রতি বছর ঢাকঢোল পিটিয়ে পথ-নিরাপত্তা সপ্তাহ পালন এবং প্রচারের পরও এই বেহাল ছবি৷ এবং তার যে রাজ্যওয়াড়ি হিসেব, সেখানে সবার ওপরে পশ্চিমবঙ্গ৷ ২০১৮ সালে এই রাজ্যে ২৬১৮ জন পথ দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন৷
কলকাতায় হোক বা পশ্চিমবঙ্গে, লেন ড্রাইভিং নেই: প্রিয়ঙ্কর
কেন দুর্ঘটনায় এত মৃত্যু? নিয়মিত শহরে এবং শহরের বাইরে, হাইওয়েতে গাড়ি চালান তথ্য-প্রযুক্তি পেশাদার প্রিয়ঙ্কর মুখার্জি৷ গাড়ি নিয়ে তিনি প্রায়শই রাজ্যের বাইরে যান৷ তাঁর অভিজ্ঞতা বলছে, শহরের থেকে বেশি দুর্ঘটনা হয় হাইওয়েতে৷ শহরে দুর্ঘটনা হলেও প্রাণহানির হার কম থাকে৷ হাইওয়েতে প্রায় প্রতি ক্ষেত্রেই কেউ না কেউ মারা যান, বা মারাত্মকভাবে আহত হন৷ তার প্রধানতম কারণ, হাইওয়েতে উল্টো মুখে গাড়ি চালানোর প্রবণতা৷ একমুখী রাস্তায় যে ধরনের বেপরোয়া কাজ যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে৷ শহর থেকে দূরের রাস্তায় হঠাৎ রাস্তার ওপর গরু-ছাগল এসে পড়াটাও অনেকসময়ই দুর্ঘটনার কারণ হয় বলে প্রিয়ঙ্করের অভিজ্ঞতা৷ এছাড়া বিশেষ করে শীতকালে কুয়াশার মধ্যে ঠেলা, রিকশা, সাইকেলের মতো ধীরগতির যান হঠাৎ সামনে চলে এলেও বিপত্তি হয়৷ আর ‘‘কলকাতায় হোক বা পশ্চিমবঙ্গে, লেন ড্রাইভিং নেই৷ লেন কেউ মানে না,’’ বললেন প্রিয়ঙ্কর৷
পশ্চিমবঙ্গে আমরা কেউ কাউকে মানি না: বিমল গুহ
শহর এলাকায় যে যানটি সবথেকে বেশি ট্রাফিক আইন ভাঙে বলে দুর্নাম, সেটি হলো ট্যাক্সি৷ বেপরোয়া ট্যাক্সিও কি দুর্ঘটনার কারণ হয় না? বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের বিমল গুহ যদিও বলছেন, রাস্তায় এত গাড়িই এত দুর্ঘটনার কারণ৷ তাঁরা প্রস্তাব দিয়েছিলেন, বড় শহরে ব্যক্তিগত গাড়ি চলতে দেওয়ার ক্ষেত্রে জোড়-বিজোড় নিয়ম চালু হোক, যে নিয়ম পরে রাজধানী দিল্লিতে চালু করে সুফল পাওয়া গেছে৷ কিন্তু কলকাতায় বা পশ্চিমবঙ্গে সেই পরামর্শে কান দেওয়া হয়নি৷ ‘‘সরকারেরও দোষ আছে!’’ বলছেন বিমলবাবু৷ ড্রাইভাররা যে নিয়ম মেনে চালাচ্ছেন না, সেটা মেনে নিয়েও তিনি সমালোচনা করেছেন পুলিশ-প্রশাসনের, যারা গাড়ির চালককে ‘কেস দিতে’ অথবা তার বদলে ঘুষ খেতেই ব্যস্ত থাকে! তবে সবার ওপরে রয়েছে আইনের পরোয়া না করার প্রবণতা৷ পশ্চিমবঙ্গে কেন দুর্ঘটনার হার বেড়েই চলেছে, এই প্রশ্নে বিমল গুহর জবাব, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে আমরা কেউ কাউকে মানি না!’’
বিশ্বের ভয়াবহ যত রেল দুর্ঘটনা
ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনার উদাহরণ বিশ্বে নতুন নয়৷ ছবি ঘরে দেখুন বিশ্বের এমটি কয়েকটি রেল দুর্ঘটনার খবর৷
ছবি: picture-alliance/Construction/I. Masterton
আল আয়াত দুর্ঘটনা: মিশর
২০ ফেব্রুয়ারি ২০০২ সালের ঘটনা৷ মিশরের কায়রো থেকে লুক্সরগামী ট্রেনের একটি বগিতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে৷ মুহূর্তের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে ট্রেনের অন্যান্য বগিতে৷ এ ঘটনায় ট্রেনটির সাতটি বগি পুড়ে যায় আর নিহত হয় ৪০০ মানুষ৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua/A. Gomaa
আওয়াশ রেল দুর্ঘটনা: ইথিওপিয়া
আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়ার আওয়াশ শহরের নিকটে ১৪ জানুয়ারি ১৯৮৫ সালের ট্রেন দুর্ঘটনাটি আফ্রিকার ভয়াবহতম দুর্ঘটনা হিসেবেই পরিচিত৷ আওয়াশ গিরিখাতের পাশ দিয়ে ছুটে যাওয়া ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়ে খাদে পড়ে গেলে ৪২৮ জন নিহত হয় বলে জানা গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpaMarthe van der Wolf
টরে ডেল বিয়েরজু রেল দুর্ঘটনা: স্পেন
৩ জানুয়ারি ১৯৪৪ সালের ঘটনা৷ স্পেনের টরে ডেল বিয়েরজু গ্রামে অবস্থিত ২০ নাম্বার টানেলে একটি মেইল ট্রেইন প্রবেশ করে৷ এসময় বিপরীত দিক থেকে কয়লাবাহী আরেকটি ট্রেনের সাথে মুখোমুখি ধাক্কা লাগে দুটো ট্রেনের৷ ট্রেন দুটিতে বেশ কিছু যাত্রী থাকলেও তারা টিকেট ছাড়াই ভ্রমণ করছিল৷ যে করণে হতাহতের সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি৷ তবে সংঘর্ষের ফলে ট্রেন দুটিতে সৃষ্ট আগুন টানা দুদিন ধরে জ্বলছিল
ছবি: picture-alliance/AP/P. White
গোয়াদালাজারা রেল দুর্ঘটনা: মেক্সিকো
১৯১৫ সালের এ দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ছিল ৬০০৷ মেক্সিকো বিপ্লব তখন বেশ তুঙ্গে৷ যাত্রীসমেত একটি ট্রেন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে গেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে৷
ছবি: Getty Images/J.Moore
বিহার রেল দুর্ঘটনা: ভারত
১৯৮১ সালের ঘটনা এটি৷ প্রায় এক হাজারের যাত্রী নিয়ে বিহারের বাঘমতি নদীতে পড়ে যায় একটি ট্রেন৷ টেনটি যখন সেতুর কাছে এসেছিল ঠিক সে মুহূর্তে একটি গরু ট্রেনলাইন পার হচ্ছিল৷ গরুটিকে বাচানোর চেষ্টা করতে গেলে রেলের নিয়ন্ত্রণ হারায় চালক৷ পাঁচশর অধিক যাত্রী নিহত হয়েছিল এ দুর্ঘটনায়৷
ছবি: Strdel/Afp/Getty Images
সিউরেয়া রেল দুর্ঘটনা: রোমানিয়া
১৯১৭ সালের ঘটনা৷ রোমানিয়ার সিউরেয়া স্টেশনের নিকটবর্তী এলাকায় একটি ট্রেনে আগুন ধরে গেলে অন্তত ছয়শ’ যাত্রী নিহত হন, কোনো কোনো হিসেবে সংখ্যাটি
ছবি: DW / Cristian Stefanescu
সেইন্ট মিশেল-ডে-মাউরিএনে রেল দুর্ঘটনা: ফ্রান্স
১৯১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর৷ প্রচণ্ড গতির কারণে আল্পস পর্বতের পাশ দিয়ে যাওয়া ফ্রান্সের সৈন্যবাহী একটি ট্রেনের ব্রেকে আগুন ধরে যায়৷ ধারণা করা হয় এ দুর্ঘটনায় যাত্রীদের সবাই নিহত হয়৷
ছবি: Reuters/C. Platiau
সুনামি রেল দুর্ঘটনা: শ্রীলংকা
২০০৪ সালের সুনামির দিনে প্রায় ১৫শ’ যাত্রী নিয়ে সমুদ্র থেকে মাত্র ২১৭ গজ দুরে অবস্থান করছিল একটি ট্রেন৷ সুনামির প্রথম ঢেউটি আসার সময়ে স্টেশনের আরো অনেক যাত্রী টেনটিকে নিরাপদ ভেবে আশ্রয় নেয়৷ সতেরশর অধিক মানুষ এ ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত হয়৷