সড়ক বন্ধ, যানবাহন নেই, তাই যানজটও নেই!
২২ মার্চ ২০১৮ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ( ডিএমপি) আগেই ১১টি স্থানে যানবাহন চলাচল সীমিত রাখার ঘোষণা দেয়৷ বুধবারের ওই ঘোষণায় বলা হয়, ‘‘স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তোরণের যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ৷ এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সরকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন৷ এতে ৫৭টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং অধীন দপ্তরগুলো অংশ নেবে৷ তারা ব্যানার, ফেস্টুনসহ শোভাযাত্রা করে স্টেডিয়ামে আসবে৷ ৯টি স্থান থেকে শোভাযাত্রা করে স্টেডিয়ামে আসার কারণে বৃহস্পতিবার বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম এবং চারপাশের বিভিন্ন সড়কে যান চলাচলে সমস্যা হবে৷’’<iframe src="https://www.facebook.com/plugins/video.php?href=https%3A%2F%2Fwww.facebook.com%2Fdw.bengali%2Fvideos%2F10155308531190978%2F&show_text=0&width=560" width="560" height="315" style="border:none;overflow:hidden" scrolling="no" frameborder="0" allowTransparency="true" allowFullScreen="true"></iframe>
শোভাযাত্রাকে নির্বিঘ্ন করতে শাহবাগ, কাকরাইল মসজিদ, নাইটিঙ্গেল, ফকিরাপুল, শাপলা চত্বর, গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া, চানখাঁরপুল, বকশিবাজার, পলাশি ও নীলক্ষেত অঞ্চলে চলাচলকারীদের বিকল্প সড়ক ব্যবহার করার পরামর্শ দেয় ডিএমপি৷ শুধু তাই নয়, জনসাধারণকে নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে এসব পথে না যাওয়ার জন্যও বলা হয়৷ আর একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম এলাকার আশপাশে ব্যাকপ্যাক, হাতব্যাগ, ভ্যানিটি ব্যাগ ও সিগারেট লাইটার বহন নিষিদ্ধ করা হয়৷
দুপুর ২টা থেকেই ওইসব এলাকায় যানবাহন চলাচল সীমিত করা হয়, নয় তো বন্ধ করে দেয়া হয়৷ আর সকাল থেকে ঢাকার রাস্তায় যানবাহন চলাচল ছিল কম৷ দুপরের পর গণপরিবহন তেমন ছিল না৷ কিছু ব্যক্তিগত যানবাহন প্রাইভেটকার মোটরবাইক এবং অটোরিকশা দেখা গেছে৷ তা-ও অবশ্য নির্ধারিত এলকার বাইরে৷ লোকজনও ভোগান্তির কথা চিন্তা করে প্রয়োজন ছাড়া কমই বাইরে বের হয়েছেন৷ যাঁরা পেশাগত কাজে বাইরে বের হতে বাধ্য হয়েছেন, তাঁরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে৷ সেরকমই একজন এস এম আব্বাস৷ তিনি দুপুরের পর মোটরবাইকে সেগুন বাগিচা এলাকা থেকে কারওয়ান বাজার যাওয়ার চেষ্টা করেন৷ তাঁর অভিজ্ঞতা ছিল এমন, ‘‘আমি শিল্পকলা, কাকরাইল, মগবাজার বিভিন্ন দিকে আসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হই৷ এরপর মোটরবাইক ফুটপাথে তুলে ঠেলতে শুরু করি৷ তা-ও এগোতে পারছিলাম না৷ কারণ, ফুটপাথে তখন মানুষের ঢল৷’’
তিনি আরো জানান, ‘‘ওই সময়ে বাসসহ অনেক গণপরিবহণ বিভিন্ন পয়েন্টে আটকে দেয়া হয়৷ কোনোটি মিছিলের মাঝে আটকা পড়ে৷ ফলে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীসহ যাত্রীদের বাস থেকে নেমে যেতে হয়৷ তারা পায়ে হেঁটে গন্তব্যের দিকে রওনা হন৷’’
ফটো সাংবাদিক নাসিরুল ইসলাম পেশাগত কাজেই বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, পল্টন, দোয়েল চত্বর, শাহবাগ ও হাইকোর্ট এলাকায় ছিলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার চোখে কোনো যানজট এইসব এলকায় চোখে পড়েনি৷ আসলে তেমন কোনো যানবাহনই ছিল না, তাই যানজটও ছিল না৷ সকাল থেকেই যানবাহন ছিল কম৷ দুপুরের পর আরো কমে যায়৷ আর নির্দিষ্ট কয়েকটি এলকায় যানবাহিনই ছিল না৷ কিছু মাইক্রোবাস ও পিকআপ ভ্যান চোখে পড়েছে৷ আর সেগুলোতে যাঁরা মিছিলে অংশ নিয়েছেন, তাঁরাই ছিলেন৷’’
তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হয়ছে নগরবাসী অতীত অভিজ্ঞতার কারণে জরুরি কোনো প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হননি৷ যাঁরা বের হয়েছেন, তাঁদের পায়ে হেটেই চলতে হয়েছে৷ সন্ধ্যার পর ভোগান্তি আরো বাড়বে, কারণ, যাঁরা অফিসে গিয়েছেন, বাইরে কাজে গিয়েছেন, তাঁদের যানবাহন সংকটে পড়তে হবে৷’’
এদিকে পুলিশ বিকল্প যেসব সড়কের কথা বলেছে, সেখানে ছিল তীব্র যানজট৷ ডিএমপি এলাকায় সাধারণভাবে কোনো সমাবেশ করতে হলে পুলিশের অনুমতি প্রয়োজন৷ আর জনসাধারণের চলাচল ও যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত করে হয়, এমন কোনো কর্মসূচি পালনে নিষেধাজ্ঞা আছে৷ মেট্রোপলিটন পুলিশের ২৮ ও ২৯ ধারা অনুযায়ী, কোনো এলাকায় সভা সমাবেশ করতে হলে পুলিশের অনুমতি নিতে হয়৷ আর পুলিশ কমিশনার যদি মনে করেন, তাহলে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় কোনো সভা সমাবেশ বা মিছিল বা কোনো ধরনের অস্ত্র বহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারেন৷ আর এই আইনের কারণে বিএনপিকে প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে কোনো প্রতিবাদ বা প্রতিবাদ সমাবেশ করতে দেয় না পুলিশ৷ এমনকি তারা কয়েকমাস ধরে সমাবেশেরও অনুমতি পাচ্ছে না৷
এর আগে গত বছরের অক্টোবরে খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে দেশে ফিরলে বিমানবন্দরে তাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়৷ তখনো সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে বিমানযাত্রীরা বিপাকে পড়েন৷ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিয়ে ঢাকায় ফিরলে প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে সম্বর্ধনা দেয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা৷ এসব সংবর্ধনা ব্যাপক জনদুর্ভোগের সৃষ্টি করে৷ আর ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষনের দিন ঢাকায় সমাবেশের সময় সড়কে ব্যাপক জানজট হয়৷ সেই যানজটে কয়েকটি যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটার অভিযোগ আছে৷
ডিএমি'র উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘সবদিক বিবেচনা করেই আমরা কিছু সড়কে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করেছি৷ জনদুর্ভোগ এড়াতে আরো কিছু সড়কে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করেছি৷ পুরোপুরি বন্ধ করিনি৷ তবে আনন্দ র্যালিতে মানুষের ঢল নামায় এমনিতেই কিছু সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে৷ আমরা কোনো সড়ক পুরোপুরি বন্ধ করিনি।’’
তিরি বলেন, ‘‘অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে এবার আমরা নিরাপত্তার ওপর ব্যাপক জোর দিয়েছি। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সাদা পোশাকে পুলিশ ছাড়াও গোয়েন্দাদের তৎপর দেখা যায়৷ আর এ কারণেই কিছু কিছু জায়গায় আমরা ব্যাগ, লাইটারসহ কিছু জিনিস বহনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছি৷’’
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আজকের (বৃহস্পতিবার) আনন্দ র্যালিতে কোনো জনদুর্ভোগ, ভোগান্তি বা হয়রানির খবর আমরা পাইনি৷’’