1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সয়াবিন তেলে দিনে কোটি টাকা লোপাট

৮ অক্টোবর ২০২২

৩ অক্টোবর সয়াবিন তেলের দাম কমিয়েছে সরকার৷ ৪ অক্টোবর থেকে তা কার্যকর হওয়ার কথা৷ কিন্তু কমিয়ে আনা দামে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না তেল৷

Bangladesch | Dhaka Karwan Market
ছবি: Samir Kumar Dey/DW

ব্যবসায়ীরা আগের দামেই বিক্রি করছেন সয়াবিন তেল৷ তাদের যুক্তি, আগে বেশি দামে আমদানি করেছেন, তাই আগের দামে বিক্রি করছেন তারা৷ এই অজুহাতে ভোক্তাদের পকেট থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা৷ 

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, বাজারে এখন প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল খুচরা বিক্রি হওয়ার কথা ১৭৮ টাকায়৷ আর খোলা তেল প্রতি লিটার ১৫৮ টাকায়৷ 

বাস্তবে এখন প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৯০ থেকে ২০০ টাকা আর খোলা প্রতি লিটার সর্বনিম্ন ১৭৫ টাকা৷  

ভোক্তা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিদিন সয়াবিন তেলের চাহিদা পাঁচ হাজার টন৷ সে হিসাবে, গত চার দিনে ২০ হাজার টন অর্থাৎ দুই কোটি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে৷ প্রতি লিটারে ১৪ টাকা করে বাড়তি আদায় করে ভোক্তাদের কাছ থেকে চার দিনে মোট ২৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ব্যবসায়ীরা৷ অর্থাৎ দিনে সাত কোটি করে অতিরিক্ত মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছে ব্যবসায়ীরা৷  

কৌশল করে ব্যবসায়ীরা এভাবে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে-এ বিষয়টি জানে ভোক্তা অধিদপ্তর৷ কিন্তু বাজারে ব্যবসায়ীদের শক্তিশালী অবস্থানের কাছে অসহায় সংস্থাটি৷ তবে দু-একদিনের মধ্যেই দাম ঠিক হযে যাবে এমন আশা অধিদপ্তরের৷ 

বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমে যাওয়ায় সরকার গত ৩ অক্টোবর দেশের বাজারে ভোজ্য তেলের দাম সমন্বয় করা উদ্যোগ নেয়৷ এরই অংশ হিসেবে বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটারে ১৪ টাকা এবং খোলা তেল লিটারে ১৭ টাকা কমানো হয়েছে৷ আর পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয় ৮৮০ টাকা৷ ৪ অক্টোবর থেকেই এই মূল্য কার্যকর হওয়ার কথা৷

ব্যবসায়ীরা জেনেশুনেই কৌশল করে এই লুটপাট চালাচ্ছে: এসএম নাজের হোসেন

This browser does not support the audio element.

এর আগে গত ২৩ আগস্ট প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৯২ এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করেছিল সরকার৷ আর ওই সময় পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৯৪৫ টাকা৷ 

নতুন দাম নির্ধারণের পর বাজারে এখনো ২৩ আগস্টের দামেই তেল বিক্রি হচ্ছে৷ 

শুধু তাই নয়, বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল আগের দামে বিক্রি হলেও কোনো কোনো জায়গায় খোলা তেল আগের চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে৷ 

রাজধানীর কলাবাগান এলাকার বাসিন্দা চাকরিজীবী স্বপন মিয়া৷ তিনি জানান, শনিবার এক লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকায় কিনেছেন তার বাসার পাশের দোকান থেকে৷ অথচ সরকারের নির্ধারিত দাম ১৫৮ টাকা৷
 
তিনি বলেন, ‘‘নির্ধারতি দামের কথা বললে দোকানদার বলেন, তেল নেই, অন্য জায়গা থেকে কিনেন৷’’

হাতিরপুল এলাকার বাসিন্দা আব্দুল জব্বার জানান, তিনি পাঁচ লিটারের এক বোতল সয়াবিন তেল আগের দাম ৯৪৫ টাকায়ই কিনেছেন৷ তার দাবি, কেউ নতুন দামে তেল দিচেছ না৷ কোথাও কোথাও এর চেয়ে বেশি দামেও বিক্রি হচ্ছে৷

বিক্রেতারা বলছেন, তাদের কাছে নতুন তেল আসেনি আর তাই আগের দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের৷ 

কলাবাগানের এফএএফ স্টোরের মিন্টু মিয়া বলেন, ‘‘আমাদের কিছু করার নাই৷ আমাদের কাছে নতুন তেল আসেনি৷ ফলে আমরা আগের দামেই বিক্রি করছি৷ নতুন তেল আসলে তখন আমরা কম দামে বিক্রি করব৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘বোতলের গায়ে যে দাম লেখা থাকে সেই আমাদের দামেই বিক্রির নির্দেশ আছে৷’’

তবে আমদানিকারকদের দাবি, তারা দাম কমানোর ঘোষণা দিলেও খুচরা পর্যায়ে কেন কমছে না সেটি জানে না৷    

ভোজ্যতেল আমদানিকারক সিটি গ্রুপের উপদেষ্টা অমিতাভ চক্রবর্তীর কাছে সয়াবিন তেলের দাম না কমার কারণ জানতে চাইলে তিলি বলেন, ‘‘খুচরা পর্যায়ে কেন কমছে না আমি তা জানিনা৷ আমরা তো কমানোর ঘোষণা দিয়ে দিয়েছি৷’’

ব্যবসায়ীদের এই কৌশল ঠেকাতে ভোক্তা অধিদপ্তর এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব)৷   

সংস্থাটির সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, ‘‘ব্যবসায়ীরা জেনেশুনেই কৌশল করে এই লুটপাট চালাচ্ছে৷ তেলের নতুন দাম ব্যবসায়ীরাই আলোচনা করে ঠিক করেছে৷ ৪ অক্টোবর থেকে কার্যকর করার কথা তারাই বলেছে, কিন্তু করছে না৷ তারা আগেই বেশি দামের সয়াবিন তেল ডিলারদের মাধ্যমে দিয়ে রেখেছে৷ সেই তেল তারা এখন বিক্রি করছে৷ নতুন তেল দিচ্ছে না৷ ওই তেল শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা দাম বাস্তবে কমাবে না৷’’

তিনি জানান, নিয়ম হলো তেলের দাম সমন্বয়ের সাথে সাথে বাজার থেকে তুলে নিয়ে নতুন দাম লিখে বাজারে ছাড়তে হবে৷ দাম কমলে সেটা তারা করে না৷ বাড়লে সাথে সাথেই করে ফেলে৷ বোতলের গায়ে নতুন দাম লেখার অপেক্ষাও করে না তারা৷

তার কথা, ‘‘এখন এই ব্যবসায়িদের বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিদপ্তর এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব৷ কিন্তু তারা নিচ্ছে না৷ কারণ এই সরকার ব্যবসায়ীদের স্বার্থে কাজ করে৷ সাধারণ মানুষের কথা তাদের মাথায় নেই৷’’

আগামী দু-একদিনের মধ্যে দাম কমবে: এ এইচ এম সফিকুজ্জামান

This browser does not support the audio element.

ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘‘আমরা চাইলে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি৷ কিন্তু ব্যবসায়ীদের সাপ্লাই চেইন অনেক বড়৷ তাই সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এখনই কিছু না করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি৷’’

তিনি স্বীকার করেন, ‘‘ব্যবসায়ীরা এখন অতিরিক্ত মুনাফা লুটছে৷ তাদের কাছে আগের দামে যে তেল আছে সেটা বিক্রি করছে আগের দামেই৷ তাদের কৌশল হলো সেটা শেষ করার পর তারা কম দামে বিক্রি করবে৷ কিন্তু আইনে এটা পারে না৷ তারাই ৪ অক্টোবর থেকে দাম কমানোর ঘোষণা দিয়ে এখন খুচরা বিক্রেতা, ডিলার এমনকি ফ্যাক্টরিতে থাকা তেল বেশি দামে বিক্রি করছে৷ কিন্তু দাম বাড়ালে তারা সাথে সাথেই বাড়িয়ে ফেলে৷ এটা ব্যবসায়িদের অসৎ মাননিসকতা৷ এর পরিবর্তন না হলে শুধু আইন দিয়ে কিছু হবে না৷’’

তিনি বলেন, ‘‘ব্যসায়ীয়া এখন শুধু বোতলজাত সয়াবিন তেলেই প্রতিদিন এক কোটি ৪০ লাখ টাকা বাড়তি নিচ্ছেন৷ আরো তো খোলা তেল আছে৷ তারা এটা অন্যায়ভাবে নিচ্ছে৷’’

তবে তিনি আশা করেন আগামী দুই-একদিনের মধ্যে দাম কমবে৷ নির্ধারিত নতুন দামেই তেল পাওয়া যাবে৷ সাপ্লাই শুরু হয়েছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ