৩ অক্টোবর সয়াবিন তেলের দাম কমিয়েছে সরকার৷ ৪ অক্টোবর থেকে তা কার্যকর হওয়ার কথা৷ কিন্তু কমিয়ে আনা দামে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না তেল৷
বিজ্ঞাপন
ব্যবসায়ীরা আগের দামেই বিক্রি করছেন সয়াবিন তেল৷ তাদের যুক্তি, আগে বেশি দামে আমদানি করেছেন, তাই আগের দামে বিক্রি করছেন তারা৷ এই অজুহাতে ভোক্তাদের পকেট থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা৷
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, বাজারে এখন প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল খুচরা বিক্রি হওয়ার কথা ১৭৮ টাকায়৷ আর খোলা তেল প্রতি লিটার ১৫৮ টাকায়৷
বাস্তবে এখন প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৯০ থেকে ২০০ টাকা আর খোলা প্রতি লিটার সর্বনিম্ন ১৭৫ টাকা৷
ভোক্তা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিদিন সয়াবিন তেলের চাহিদা পাঁচ হাজার টন৷ সে হিসাবে, গত চার দিনে ২০ হাজার টন অর্থাৎ দুই কোটি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে৷ প্রতি লিটারে ১৪ টাকা করে বাড়তি আদায় করে ভোক্তাদের কাছ থেকে চার দিনে মোট ২৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ব্যবসায়ীরা৷ অর্থাৎ দিনে সাত কোটি করে অতিরিক্ত মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছে ব্যবসায়ীরা৷
কৌশল করে ব্যবসায়ীরা এভাবে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে-এ বিষয়টি জানে ভোক্তা অধিদপ্তর৷ কিন্তু বাজারে ব্যবসায়ীদের শক্তিশালী অবস্থানের কাছে অসহায় সংস্থাটি৷ তবে দু-একদিনের মধ্যেই দাম ঠিক হযে যাবে এমন আশা অধিদপ্তরের৷
বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমে যাওয়ায় সরকার গত ৩ অক্টোবর দেশের বাজারে ভোজ্য তেলের দাম সমন্বয় করা উদ্যোগ নেয়৷ এরই অংশ হিসেবে বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটারে ১৪ টাকা এবং খোলা তেল লিটারে ১৭ টাকা কমানো হয়েছে৷ আর পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয় ৮৮০ টাকা৷ ৪ অক্টোবর থেকেই এই মূল্য কার্যকর হওয়ার কথা৷
ব্যবসায়ীরা জেনেশুনেই কৌশল করে এই লুটপাট চালাচ্ছে: এসএম নাজের হোসেন
এর আগে গত ২৩ আগস্ট প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৯২ এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করেছিল সরকার৷ আর ওই সময় পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৯৪৫ টাকা৷
নতুন দাম নির্ধারণের পর বাজারে এখনো ২৩ আগস্টের দামেই তেল বিক্রি হচ্ছে৷
শুধু তাই নয়, বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল আগের দামে বিক্রি হলেও কোনো কোনো জায়গায় খোলা তেল আগের চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে৷
রাজধানীর কলাবাগান এলাকার বাসিন্দা চাকরিজীবী স্বপন মিয়া৷ তিনি জানান, শনিবার এক লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকায় কিনেছেন তার বাসার পাশের দোকান থেকে৷ অথচ সরকারের নির্ধারিত দাম ১৫৮ টাকা৷
তিনি বলেন, ‘‘নির্ধারতি দামের কথা বললে দোকানদার বলেন, তেল নেই, অন্য জায়গা থেকে কিনেন৷’’
হাতিরপুল এলাকার বাসিন্দা আব্দুল জব্বার জানান, তিনি পাঁচ লিটারের এক বোতল সয়াবিন তেল আগের দাম ৯৪৫ টাকায়ই কিনেছেন৷ তার দাবি, কেউ নতুন দামে তেল দিচেছ না৷ কোথাও কোথাও এর চেয়ে বেশি দামেও বিক্রি হচ্ছে৷
বিক্রেতারা বলছেন, তাদের কাছে নতুন তেল আসেনি আর তাই আগের দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের৷
কলাবাগানের এফএএফ স্টোরের মিন্টু মিয়া বলেন, ‘‘আমাদের কিছু করার নাই৷ আমাদের কাছে নতুন তেল আসেনি৷ ফলে আমরা আগের দামেই বিক্রি করছি৷ নতুন তেল আসলে তখন আমরা কম দামে বিক্রি করব৷’’
দ্রব্যমূল্যের তুলনা: ২০০৯ বনাম ২০২১
কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি বিপণন অধিদপ্তর প্রতিদিন ওয়েবসাইটে বিভিন্ন জেলার বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম প্রকাশ করে৷ ছবিঘরে ঢাকার একটি বাজারে ২০০৯ ও ২০২১ সালের ১০ নভেম্বর নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের দাম উল্লেখ করা হয়েছে৷
চাল
কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি বিপণন অধিদপ্তর প্রতিদিন ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম প্রকাশ করে৷ এতে দেখা যাচ্ছে ২০০৯ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকার এক বাজারে এক কেজি সরু বোরো চালের দাম ছিল ৩৪-৩৬ টাকা৷ ২০২১ সালের ১০ নভেম্বর একই বাজারে ঐ চালের দাম ছিল ৫৭-৭০ টাকা৷ মোটা বোরো চালের দাম ২০০৯ সালে ছিল ২১-২৩ টাকা৷ ২০২১ সালে ছিল ৪৪-৪৭ টাকা৷
ছবি: DW
ডাল
২০০৯ সালে এক কেজি দেশি মসুর ডালের দাম ছিল ১০৮-১১০ টাকা৷ ২০২১ সালে ১০০-১১০ টাকা৷ আমদানিকৃত মসুর ডালের দাম ২০০৯ সালে ছিল ১১২-১১৫ টাকা৷২০২১ সালে সেটা কমে হয় ৮৫-৯০ টাকা৷ মুগ ডালের দাম ২০০৯ সালে ছিল ৮৫-১০০ টাকা৷ ২০২১ সালে সেটা বেড়ে হয় ১২০-১২৫ টাকা৷
ছবি: bdnews24.com/T. Ahammed
পেঁয়াজ
এক কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ২০০৯ সালের ১০ নভেম্বর ছিল ৪০-৪৪ টাকা৷ ২০২১ সালে সেটা বেড়ে হয় ৫৫-৬০ টাকা৷ আর আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম ২০০৯ সালে ছিল ২৮-৩৪ টাকা৷ ২০২১ সালে ৪৫-৫০ টাকা৷
ছবি: Harun Ur Rashid Swapan
রসুন
২০০৯ সালে এক কেজি দেশি রসুনের দাম ছিল ৯০-১০৫ টাকা৷ ২০২১ সালে সেটা কম ছিল, ৫০-৭০ টাকা৷ আমদানিকৃত রসুনের এক কেজির দাম ২০০৯ সালে ছিল ৮০-৮৫ টাকা৷ ২০২১ সালে সেটা বেড়ে হয় ১১০-১২০ টাকা৷
ছবি: bdnews24.com/A. Mannan
কাঁচা মরিচ
২০০৯ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকার এক বাজারে এক কেজি কাঁচা মরিচের দাম ছিল ৩০-৪০ টাকা৷ ঐ একই বাজারে ২০২১ সালের ১০ নভেম্বর কাঁচা মরিচের দাম ছিল ১২০-১৩০ টাকা৷
ছবি: DW/H.U.R. Swapan
সয়াবিন তেল
২০০৯ সালে এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৭০-৭৩ টাকা৷ ২০২১ সালে সেটা বিক্রি হয়েছে ১৩৮-১৪২ টাকায়৷
ছবি: Gustavo Cuevas/dpa/picture-alliance
চিনি
২০০৯ সালে আমদানিকৃত এক কেজি চিনির দাম ছিল ৫২-৫৪ টাকা৷ ২০২১ সালে ৭৫-৭৭ টাকা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J.Kalaene
ডিম
২০০৯ সালে দেশি মুরগির ডিম ছিল ৩২-৩৪ টাকা হালি৷ ২০২১ সালে সেটা বিক্রি হয়েছে ৫৫-৬০ টাকায়৷ ফার্মের মুরগির ডিমের (লাল) দাম ২০০৯ সালে ছিল ২৫-২৬ টাকা৷ ২০২১ সালে ৩৬-৪০ টাকা৷
ছবি: Reuters/W. Kurniawan
গরুর মাংস
গরুর মাংসের কেজিপ্রতি দাম ২০০৯ সালে ছিল ২২০-২৩০ টাকা৷ ২০২১ সালে সেটা বিক্রি হয়েছে ৫৮০-৬০০ টাকায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/N. Bachmann
খামারের মুরগী
২০০৯ সালে কেজিপ্রতি দাম ছিল ১০০-১১০ টাকা৷ ২০২১ সালে ১৫০-১৬০ টাকা৷
ছবি: Getty Images/AFP/H. Dinh Nam
দেশি রুই
২০০৯ সালে ছিল ১৪০-১৬০ টাকা৷ ২০২১ সালে ২০০-৩০০ টাকা৷ বিস্তারিত জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Mortuza Rashed
পানির দাম
গত ১২ বছরে ১৪ বার পানির দাম বাড়িয়েছে ঢাকা ওয়াসা৷ ২০০৯ সালে আবাসিক গ্রাহকদের জন্য প্রতি ইউনিট (১ হাজার লিটার) পানির দাম ছিল ৫ টাকা ৭৫ পয়সা৷ গত জুলাই থেকে ১৫ টাকা ১৮ পয়সা দরে দাম দিতে হচ্ছে৷ অর্থাৎ গত ১২ বছরে ইউনিটপ্রতি পানির দাম প্রায় ১০ টাকা বেড়েছে৷ সম্প্রতি চট্টগ্রাম ওয়াসাও আগামী মাস থেকে পানির দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে৷
ছবি: AP
বিদ্যুৎ
এ বছরের ২১ জুন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ক্যাব) ও ভোক্তাকণ্ঠ আয়োজিত এক ওয়েবিনারের মূল নিবন্ধে বলা হয়, গত ১১ বছরে বিদ্যুতের দাম ১০ বার বেড়েছে৷ পাইকারি বিদ্যুতের দাম ১১৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে৷ আর খুচরা পর্যায়ে দাম বেড়েছে প্রায় ৯০ শতাংশ৷
ছবি: DW
জ্বালানির দাম বৃদ্ধি
৩ নভেম্বর বুধবার রাতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়৷ ডিজেলের মোট চাহিদার ৬৩ শতাংশ ব্যবহৃত হয় পরিবহন খাতে৷ আর সেচকাজে ব্যবহৃত হয় ১৬ শতাংশ৷ ৪ নভেম্বর ফার্নেস অয়েলের দাম লিটারপ্রতি তিন টাকা বাড়িয়ে ৬২ টাকা করা হয়৷ আরও বেড়েছে বেসরকারি খাতের তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম৷ ১২ কেজির সিলিন্ডারে বেড়েছে ৫৪ টাকা৷
ছবি: Getty Images/P. Walter
মুনাফা সত্ত্বেও বৃদ্ধি
জ্বালানি বিভাগের একটি সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, সবশেষ ২০১৩ সালে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল৷ মাঝে ২০১৬ সালে দাম কিছুটা কমানোও হয়েছিল৷ তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্ববাজারে দাম যখন কম ছিল তখন তেলের দাম ততটা না কমানোয় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন সাত বছরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছিল৷ আর এবার টানা পাঁচ মাস ক্ষতি হওয়ার পর দাম বাড়ানো হলো৷
ছবি: Alastair Grant/AP/picture alliance
ঢাকায় বাসা ভাড়া দ্বিগুন হয়েছে
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) বলছে ঢাকায় ২০১০ সালে দুই কক্ষের পাকা বাসার গড় ভাড়া ছিল ১১ হাজার ৩০০ টাকা৷ ২০১৯ সালে তা বেড়ে হয় ২৪ হাজার ৫৯০ টাকা৷ আধাপাকা (টিন শেড) বাড়ির দুই কক্ষের ভাড়া ২০১০ সালে ছিল ৬ হাজার ৮০০ টাকা৷ ২০১৯ সেটা বেড়ে হয় ১৩ হাজার ২০০ টাকা৷ ২০১০ সালে দুই কক্ষের মেসের গড় ভাড়া ছিল ১১ হাজার ৫০০ টাকা৷ ২০১৯ সালে তা বেড়ে হয় ২৩ হাজার ২০০ টাকা৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. uz Zaman
জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে
এ বছরের জুনে ক্যাব জানায় ২০২০ সালে ঢাকায় জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ৬.৮৮ শতাংশ এবং সেবা-সার্ভিসের দাম বেড়েছে ৬.৩১ শতাংশ৷ ২০১৯ সালে এটি ছিল যথাক্রমে ৬.৫০ শতাংশ ও ৬.০৮ শতাংশ৷ ২০১৮ সালে তা ছিল ৬ শতাংশ ও ৫.১৯ শতাংশ৷ ঢাকার ১৫টি খুচরা বাজার ও বিভিন্ন সেবা-সার্ভিসের মধ্য থেকে ১১৪টি খাদ্যপণ্য ও ২২টি নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী এবং ১৪টি সেবা-সার্ভিসের সংগৃহীত মূল্য বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে ক্যাব৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
মাথাপিছু আয় বেড়েছে
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবে ২০০৯-২০১০ সালে মাথাপিছু আয় ছিল ৮৪৩ মার্কিন ডলার৷ আর সবশেষ হিসাব বলছে, মাথাপিছু আয় এখন ২,৫৫৪ ডলার৷ তবে এই আয়ের সুষম বণ্টন হচ্ছে বলে মনে করেন না অনেক অর্থনীতিবিদ৷ কারণ একদিকে যেমন একদল মানুষ দ্রুত ধনী হচ্ছেন, আবার গরিবের সংখ্যাও বাড়ছে৷ করোনার সময়ে প্রায় সোয়া তিন কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র্য হয়েছেন বলে সম্প্রতি এক জরিপে জানা গেছে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
18 ছবি1 | 18
তিনি আরো বলেন, ‘‘বোতলের গায়ে যে দাম লেখা থাকে সেই আমাদের দামেই বিক্রির নির্দেশ আছে৷’’
তবে আমদানিকারকদের দাবি, তারা দাম কমানোর ঘোষণা দিলেও খুচরা পর্যায়ে কেন কমছে না সেটি জানে না৷
ভোজ্যতেল আমদানিকারক সিটি গ্রুপের উপদেষ্টা অমিতাভ চক্রবর্তীর কাছে সয়াবিন তেলের দাম না কমার কারণ জানতে চাইলে তিলি বলেন, ‘‘খুচরা পর্যায়ে কেন কমছে না আমি তা জানিনা৷ আমরা তো কমানোর ঘোষণা দিয়ে দিয়েছি৷’’
ব্যবসায়ীদের এই কৌশল ঠেকাতে ভোক্তা অধিদপ্তর এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব)৷
সংস্থাটির সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, ‘‘ব্যবসায়ীরা জেনেশুনেই কৌশল করে এই লুটপাট চালাচ্ছে৷ তেলের নতুন দাম ব্যবসায়ীরাই আলোচনা করে ঠিক করেছে৷ ৪ অক্টোবর থেকে কার্যকর করার কথা তারাই বলেছে, কিন্তু করছে না৷ তারা আগেই বেশি দামের সয়াবিন তেল ডিলারদের মাধ্যমে দিয়ে রেখেছে৷ সেই তেল তারা এখন বিক্রি করছে৷ নতুন তেল দিচ্ছে না৷ ওই তেল শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা দাম বাস্তবে কমাবে না৷’’
তিনি জানান, নিয়ম হলো তেলের দাম সমন্বয়ের সাথে সাথে বাজার থেকে তুলে নিয়ে নতুন দাম লিখে বাজারে ছাড়তে হবে৷ দাম কমলে সেটা তারা করে না৷ বাড়লে সাথে সাথেই করে ফেলে৷ বোতলের গায়ে নতুন দাম লেখার অপেক্ষাও করে না তারা৷
তার কথা, ‘‘এখন এই ব্যবসায়িদের বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিদপ্তর এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব৷ কিন্তু তারা নিচ্ছে না৷ কারণ এই সরকার ব্যবসায়ীদের স্বার্থে কাজ করে৷ সাধারণ মানুষের কথা তাদের মাথায় নেই৷’’
আগামী দু-একদিনের মধ্যে দাম কমবে: এ এইচ এম সফিকুজ্জামান
ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘‘আমরা চাইলে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি৷ কিন্তু ব্যবসায়ীদের সাপ্লাই চেইন অনেক বড়৷ তাই সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এখনই কিছু না করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি৷’’
তিনি স্বীকার করেন, ‘‘ব্যবসায়ীরা এখন অতিরিক্ত মুনাফা লুটছে৷ তাদের কাছে আগের দামে যে তেল আছে সেটা বিক্রি করছে আগের দামেই৷ তাদের কৌশল হলো সেটা শেষ করার পর তারা কম দামে বিক্রি করবে৷ কিন্তু আইনে এটা পারে না৷ তারাই ৪ অক্টোবর থেকে দাম কমানোর ঘোষণা দিয়ে এখন খুচরা বিক্রেতা, ডিলার এমনকি ফ্যাক্টরিতে থাকা তেল বেশি দামে বিক্রি করছে৷ কিন্তু দাম বাড়ালে তারা সাথে সাথেই বাড়িয়ে ফেলে৷ এটা ব্যবসায়িদের অসৎ মাননিসকতা৷ এর পরিবর্তন না হলে শুধু আইন দিয়ে কিছু হবে না৷’’
তিনি বলেন, ‘‘ব্যসায়ীয়া এখন শুধু বোতলজাত সয়াবিন তেলেই প্রতিদিন এক কোটি ৪০ লাখ টাকা বাড়তি নিচ্ছেন৷ আরো তো খোলা তেল আছে৷ তারা এটা অন্যায়ভাবে নিচ্ছে৷’’
তবে তিনি আশা করেন আগামী দুই-একদিনের মধ্যে দাম কমবে৷ নির্ধারিত নতুন দামেই তেল পাওয়া যাবে৷ সাপ্লাই শুরু হয়েছে৷