প্রতি সপ্তাহান্তেই হংকং বিক্ষোভমুখর হয়ে উঠছে৷ চার মাসের বেশি সময় ধরে একই চিত্র দেখা যাচ্ছে৷ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েও বিক্ষোভ থামাতে পারছে না চীন৷ পারবে কীভাবে? তরুণ বিক্ষোভকারীদের মনইতো পড়তে পারছে না চীন৷
বিজ্ঞাপন
বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল জুন মাসে৷ হংকংয়ের কোনো বাসিন্দা চীনে অপরাধ করলে বিচারের জন্য তাকে চীনে পাঠানো যাবে, এমন এক বিলের বিরুদ্ধে প্রথম বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল৷ সম্প্রতি এই বিল প্রত্যাহারে ঘোষণা দেন হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যারি ল্যাম৷
কিন্তু তাতেও বিক্ষোভ থামেনি৷ হংকংয়ের জন্য আরও গণতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলন চলছে৷
১৯৯৭ সালে ব্রিটেন চীনের কাছে হংকং হস্তান্তর করেছিল৷ কথা ছিল, ২০৪৭ সাল পর্যন্ত ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা' নীতিতে হংকং পরিচালিত হবে৷ অর্থাৎ চীনের মূল ভূখণ্ডের চেয়ে হংকংয়ের বাসিন্দাদের বেশি স্বাধীনতা ভোগ করার কথা৷ কিন্তু আন্দোলনকারীদের দাবি, সেটা হচ্ছে না৷
এই অবস্থার পরিবর্তন চান বিক্ষোভকারীরা৷ তাই প্রতি সপ্তাহান্তে বিক্ষোভ চলছে৷ যদিও দিন দিন বিক্ষোভকারীর সংখ্যা কমছে৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, এর কারণ একটি হতে পারে যে, বিক্ষোভকারীদের প্রতিহত করতে নিয়ম করে শহরের ট্রাম চলাচল ব্যবস্থা ব্যাহত করা হচ্ছে৷ তবে অনেকদিন ধরে বিক্ষোভ চলায় অনেক আন্দোলনকারীর উৎসাহে ভাটাও পড়ে থাকতে পারে৷
এদিকে, বিশ্ববাসীকে চীন দেখাতে চাইছে যে, বিক্ষোভের কারণে হংকংয়ের বাসিন্দাদের দৈনন্দিন জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ এই লক্ষ্যে সম্প্রতি তারা হংকংয়ের একজন বিলিওনেয়ার নারীকে জাতিসংঘে পাঠিয়েছিলেন৷ সেখানে গিয়ে তিনি বিশ্ববাসীকে জানান যে, বিক্ষোভের কারণে তিনি নিজেকে ‘অবরুদ্ধ' মনে করছেন৷
চীনের এই পদক্ষেপ এটিই প্রমাণ করছে যে, তারা হংকংয়ের তরুণদের মন পড়তে ব্যর্থ হচ্ছেন৷ কারণ তরুণরা মনে করছেন বিলিওনেয়ার ঐ নারী সাধারণ হংকংবাসীর প্রতিনিধিত্ব করেন না৷ চীনের এই পদক্ষেপ তরুণ বিক্ষোভকারীদের উলটো আরও বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে৷
তবে সামনে পয়লা অক্টোবর আসছে৷ সেদিন গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ৭০ তম বার্ষিকী পালিত হবে৷ তার আগে সবকিছু শান্ত দেখাতে চীন বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে আরও বেশি কঠোর হয়ে উঠতে পারে৷ এই অবস্থায় বিক্ষোভকারীরা কতটুকু টিকে থাকতে পারে সেটিই এখন দেখার বিষয়৷
হংকং সীমান্তে কেন চীনা সেনা?
হংকং ও চীনের সীমান্তের কাছে শেনঝেনে সামরিক মহড়া চালাচ্ছে চীন৷ হংকং এ চলমান প্রতিবাদের আবহাওয়ায় কেন এই মহড়া?
ছবি: Reuters/T. Peter
প্রতিবাদের পরিবেশ
গত ১০ সপ্তাহ ধরে হংকং এ চলছে সরকারবিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ৷ ১৯৯৭ সালের পর থেকে হংকঙে গণতন্ত্রের প্রশ্নে সবচেয়ে বেশি নাড়া দিয়েছে বর্তমানের এই বিক্ষোভ৷ প্রথমে প্রত্যর্পণ চুক্তিতে বদলের দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু হলেও পরে তা হংকং এ সার্বিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে পরিণত হয়৷ গণতন্ত্রের দাবিতে পথে নামা জনতা ইতিমধ্যে স্তব্ধ করেছে হংকংগামী বিমান চলাচলও৷
ছবি: picture-alliance/AP/V. Thian
অপেক্ষায় ট্যাঙ্কার
চীনের ‘পিপলস আর্মড পুলিশ'এর শতাধিক আধাসামরিক ট্যাঙ্ক ও ট্রাকসহ কয়েকশ সামরিক সদস্য বর্তমানে সীমান্তবর্তী শহর শেনঝেনে রয়েছেন৷
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, এর সাথে রয়েছে দু'টি জলকামানও৷
ছবি: Reuters/T. Peter
সামরিক অভিযান?
বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে হংকঙে চীনের সামরিক অভিযানের আশঙ্কার কথা৷ কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতামত, এমনটা হবে না৷ গোটা বিষয়টা আসলেই স্রেফ মহড়া৷
ছবি: Getty Images/AFP/Str
কেন নয় সামরিক অভিযান?
গত চার দশক ধরে চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পেছনে বড় অবদান রয়েছে হংকঙের, বলছেন ডয়চে ভেলের বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ ক্লিফর্ড কুনান৷ তাঁর মতে, অর্থনৈতিক সংস্কারের কাজ চীনে কিছুটা হলেও ধুঁকছে৷ এঅবস্থায় হংকং থেকে প্রাপ্য আর্থিক স্বস্তিকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে চায়না চীন৷ তাই আপাতত সীমান্তেই অবস্থান করছে চীনা সেনাবাহিনী৷
ছবি: Reuters/T. Peter
আন্তর্জাতিক চাপ?
হংকং চীনের অভ্যন্তরেই নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও চীনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়৷ চীনা বাজারে লগ্নি করতে চাওয়া আন্তর্জাতিক সংস্থারা বেইজিং এর কঠোর হংকং-নীতির ফলে বেঁকে বসতে পারে বলে মতামত কুনানের৷
ছবি: Getty Images/AFP/Str
সামরিক মহড়ায় কী প্রাপ্তি?
বিক্ষোভ সংযত করতে বেইজিং জানিয়েছে যে, এই প্রতিবাদকে তারা দেখছে প্রায় সন্ত্রাসবাদের সমতুল্য হিসাবে৷ এমন পরিস্থিতিতে প্রতিবাদকারীদের চাপে রাখতে ও কিছুটা ভয় দেখাতেই এই মহড়ার আয়োজন, মনে করেন নানইয়াং ইন্সটিটিউট অফ টেকনলজির সামরিক বিশেষজ্ঞ জেমস চার৷