হংকং সরকার এক সময় খুব তাড়াতাড়িই পেতে চেয়েছিল চীনের সিনোভ্যাক ভ্যাকসিন৷ এখন চায় কিছুটা দেরিতে৷ এদিকে এক সমীক্ষা বলছে, হংকংয়ের অধিকাংশ মানুষের সিনোভ্যাকে কোনো আস্থা নেই৷
বিজ্ঞাপন
হংকংয়ের এক হাজার মানুষের কাছে কোভিড-১৯-এর কোন ভ্যাকসিনে বেশি আস্থা জানতে চেয়েছিল হংকং বিশ্ববিদ্যালয়৷ জবাবে মাত্র ২৯ দশমিক মানুষ বলেছেন চীনের সিনোভ্যাকের কথা৷ হংকংবাসীর মাঝে যে জার্মানি এবং যুক্তরাজ্যের ভ্যাকসিনের প্রতি আকর্ষণ বা আস্থা প্রবল তা খুবই স্পষ্ট৷ সমীক্ষায় অংশ নেয়া ৫৬ ভাগ মানুষ বলেছেন ভ্যাকসিন নিলে জার্মানির বায়োনটেক ভ্যাকসিনই নিতে চান আর ৩৫ ভাগ জানিয়েছেন তারা চান অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকা পিএলসির তৈরি ভ্যাকসিন৷
অবশ্য হংকংয়ের বেশির ভাগ মানুষ ভ্যাকসিনই চান না৷ মাত্র ৪৬ ভাগ মানুষ মনে করেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভ্যাকসিন নেয়া জরুরি৷
ভ্যাকসিন আসার পর ৭৫ লাখ সিনোভ্যাক ভ্যাকসিনের অর্ডার দিয়েছিল সরকার৷ এই জানুয়ারিতেই তা চীন থেকে চলে আসার কথা৷ এখনো না আসার মূল কারণ হংকংয়ের সতর্কতা অবলম্বন৷ এখন সিনোভ্যাকের কার্যকারিতা সম্পর্কে আরো নিশ্চিন্ত হয়ে তা আনতে চায় সরকার৷
এ পর্যন্ত দুই কোটি ২৫ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়া নিশ্চিত করেছে হংকং সরকার৷ সিনোভ্যাক, ফোসুন ফার্মা-বায়োনটেক এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকা মিলিয়েই দুই কোটি ২৫ লাখ৷ এর মধ্যে ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে ফোসুন-বায়োনটেকের টিকা পৌঁছে যাওয়ার কথা৷ জার্মানির বায়োনটেকের ব্যবসায়িক অংশীদার ফোসুন ফার্মা৷
এসিবি/কেএম (রয়টার্স)
করোনার টিকা কার্যক্রম শুরু
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে টিকা প্রদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন৷ কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে প্রথমদিন মোট ২৭ জনকে টিকা দেয়া হয়েছে৷
ছবি: facebook.com/ATNNews
প্রথম টিকা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে টিকা প্রদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন৷ তার উপস্থিতিতে পাঁচজনকে টিকা দেয়া হয়৷ প্রথম টিকা নেন কুর্মিটোলা হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু বেরোনিকা কস্তা৷ এরপর টিকা নেন মেডিসিন কনসালটেন্ট ডা. আহমেদ লুৎফর মবিন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপিকা নাসিমা সুলতানা, ট্রাফিক পুলিশ মো: দিদারুল ইসলাম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম ইমরান হামিদ৷
ছবি: facebook.com/ATNNews
সাহস দেন প্রধানমন্ত্রী
প্রথম টিকা নেয়া রুনুকে প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি ভয় পাচ্ছো না তো?’ তখন রুন মাথা নেড়ে জানিয়ে দেন, তিনি ভয় পাচ্ছেননা৷ এরপর প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেন, ‘তুমি সাহসি মেয়ে’৷ টিকা দেয়া শেষে প্রধানমন্ত্রী হাততালি দিয়ে তার সুস্থতা কামনা করেন৷ এভাবে বাকি চারজনের সঙ্গে কথা বলে তাদের ‘রিলাক্স’ করার চেষ্টা করেন প্রধানমন্ত্রী৷ এছাড়া যারা টিকা প্রয়োগের কাজে ছিলেন তাদেরকে তিনি ‘মাসল লুজ’ করারও পরামর্শ দেন৷
ছবি: facebook.com/ATNNews
‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’
টিকা নেয়া শেষে কেউ হাত তুলে, কেউ সালাম দিয়ে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ ও ‘জয় বাংলা’ বলেন৷
ছবি: facebook.com/ATNNews
মোট ২৭ জন
প্রথমদিন মোট ২৭ জনকে টিকা দেয়া হয়৷ আগামীকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার পাঁচ হাসপাতালের ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে টিকা দেওয়া হবে৷ ছবিতে তেজগাঁও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধীনে সাব-সেন্টারে কাজ করা ডাঃ দেওয়ান মোঃ হেমায়েত হোসেইনকে টিকা নিতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
সারা দেশে শুরু ৭ ফেব্রুয়ারি
বাংলাদেশে যেহেতু করোনা টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়নি তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী প্রথমে টিকা পাওয়া ব্যক্তিদের পর্যবেক্ষণ করা হবে৷ সব ঠিক থাকলে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
অবজারভেশন রুম
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে টিকা নেয়া ব্যক্তিদের পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য একটি আলাদা কক্ষ ঠিক করা হয়েছে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
নিবন্ধন প্রক্রিয়া
যারা টিকা নিতে চান, তাদের সবাইকে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে৷ ‘সুরক্ষা’ (www.surokkha.gov.bd) প্ল্যাটফর্মের মোবাইল অ্যাপ ও ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে নিবন্ধন করতে হবে৷ নিবন্ধনের জন্য অন্যান্য তথ্যের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর লাগবে৷ যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই তারা আপাতত করোনার টিকা পাবেন না৷
ছবি: surokkha.gov.bd
সরকারের পরিকল্পনা
আগামী ছয় মাসে তিন কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার৷ প্রতি মাসে ২৫ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে৷ জনপ্রতি দুটি করে মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকার প্রয়োজন হবে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
প্রস্তুত পাঁচ হাসপাতাল
টিকা দিতে আপাতত ঢাকার পাঁচটি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে৷ এগুলো হলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল৷
ছবি: Mortuza Rashed
অগ্রাধিকার পাবেন যারা
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এক কোটি ৬৯ লাখ ৩৭ হাজার ৯৭৩ জনকে করোনার টিকা দেয়ার জন্য পরিকল্পনা সাজিয়েছে সরকার৷ এদের মধ্যে আছেন কোভিড-১৯ স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত চার লাখ ৫২ হাজার ২৭ জন স্বাস্থ্যকর্মী, অনুমোদিত ছয় লাখ বেসরকারি ও প্রাইভেট স্বাস্থ্যকর্মী, দুই লাখ ১০ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাঁচ লাখ ৪৬ হাজার ৬২০ জন সদস্য, সামরিক ও বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর তিন লাখ ৬০ হাজার ৯১৩ জন সদস্য৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
অগ্রাধিকার তালিকায় সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক
রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য ৫০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী, ৫০ হাজার গণমাধ্যম কর্মী, এক লাখ ৭৮ হাজার ২৯৮ জন জনপ্রতিনিধি, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার দেড় লাখ কর্মচারী, পাঁচ লাখ ৪১ হাজার ধর্মীয় প্রতিনিধি, মৃতদেহ সৎকারে নিয়োজিত ৭৫ হাজার ব্যক্তি, জরুরি সেবার চার লাখ কর্মী, স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরের দেড় লাখ কর্মী, এক লাখ ২০ হাজার প্রবাসী অদক্ষ শ্রমিকও আছেন অগ্রাধিকারের তালিকায়৷
ছবি: bdnews24.com
আছেন জাতীয় দলের খেলোয়াড়রাও
জেলা উপজেলায় কর্মরত চার লাখ জরুরি সেবার সরকারি কর্মচারী, এক লাখ ৯৭ হাজার ৬২১ জন ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্বল্প রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার (যক্ষ্মা, এইডস, ক্যানসার) ছয় লাখ ২৫ হাজার জনগোষ্ঠী, ৬৪ থেকে ৭৯ বছর বয়সী এক কোটি তিন লাখ ২৬ হাজার ৬৫৮ জন্য ব্যক্তি, ৮০ বছর ও তদূর্ধ্ব ১৩ লাখ ১২ হাজার ৯৭৩ জন জনগোষ্ঠী, জাতীয় দলের খেলোয়াড় ২১ হাজার ৮৬৩ জনও আগে টিকা পাবেন৷