ফের অশান্ত হংকং। চীনের বিশেষ আইন লঙ্ঘন করে রোববার বহু মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখান। নির্বাচন বাতিল করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তাঁরা আন্দোলনে নামেন। প্রায় ৩০০ বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। হংকংয়ের পুলিশ বিভাগ নিজেরাই টুইট করে এ খবর জানিয়েছে। তবে সেখানে বলা হয়েছে, গ্রেফতার নয়, প্রতিবাদীদের আটক করা হয়েছে।
এ মাসেই হংকংয়ের লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। এই অ্যাসেম্বলিতে ৫০ শতাংশ প্রতিনিধি জনগণের ভোটের দ্বারা নির্বাচিত হন। বাকি ৫০ শতাংশ মনোনীত। মনোনীত প্রার্থীরা অধিকাংশই চীনের কমিউনিস্ট শাসকদের অনুগত। তবে গণতন্ত্রপন্থীদের ধারণা ছিল, ভোট হলে বাকি ৫০ শতাংশ আসনের অধিকাংশই তাঁদের দখলে আসত। বস্তুত, ভোট হলে ক্ষমতা যে গণতন্ত্রপন্থীদের দিকে চলে যাবে, তা বুঝতে পারছিলেন বর্তমান শাসকরাও। বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, সে কারণেই ভোট আগামী বছর পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়। বলা হয়, করোনার জন্যই এ কাজ কাজ করা হয়েছে।
হংকং আন্দোলন: ধ্বস নেমেছে অর্থনীতিতে
এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক সংকেটর মুখোমুখি হংকং৷ ওয়াল্ট ডিজনি থেকে ম্যারিয়ট—আন্দোলনের উত্তাপ লাগছে বৈশ্বিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গায়ে৷ মঙ্গলবার বাতিল করা হয়েছে সব ফ্লাইট৷
ছবি: imago/Photoshot/Construction Photography
কার্যত অচল বিমানবন্দর
মঙ্গলবার বিক্ষোভকারীদের আন্দোলনের মুখে সব ফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে হংকং বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ৷ হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী কেরি লাম বলেছেন, আন্দোলনকারীদের কারণে এমন অবস্থা তৈরি হচ্ছে, ‘যেখান থেকে ফিরে আসা কঠিন হয়ে যাবে৷’ বিক্ষোভকারীরা পুরো শহর জুড়ে আতঙ্ক আর সহিংসতা ছড়িয়ে দিচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷ প্রত্যর্পণ বিল শুধু নয়, কেরি লামের পদত্যাগের দাবিতে ফুঁসছে হংকং৷
ছবি: picture-alliance/AP/V. Thian
ডিজনিল্যান্ডের পায়ে ফোঁড়া
হংকংয়ের ওয়াল্ট ডিজনির ডিজনিল্যান্ডে নেই মানুষের আনাগোণা৷ চলমান বিক্ষোভের কারণে এই বিনোদন কেন্দ্রের প্রতি আগ্রহ হারিয়েছে মানুষ৷ মার্কিন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী বব ইগার স্বীকার করলেন এই দুরবস্থার কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Jialiang
অশান্তিতে ক্যাথে প্যাসিফিক
হংকংয়ের ফ্ল্যাগশিপ উড়োযান প্রতিষ্ঠানটি বলছে, জুলাই থেকে পড়ে গেছে টিকিটের কাটতি৷ অল্পসংখ্যক মানুষ এসেছে শহরে৷ আগাম বুকিং যেগুলো ছিল, সেগুলোও বাতিল করছেন যাত্রীরা৷ ব্যবসায় না হয় খারাপ সময় এলো কিছুটা, কিন্তু সামনে এসেছে আরেক সংকট৷ এয়ারলাইন্সটিতে কর্মরতদের মধ্যে যাঁরা আন্দোলনে যোগ দিয়েছে তাঁদের নিষিদ্ধ করার কথা বলেছে বেইজিং৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. De La Rey
ধাক্কা লেগেছে হোটেল ব্যবসায়
ইন্টারকন্টিনেন্টালের ক্রাউন প্লাজা আর হলিডে ইন এ মাসের শুরু থেকে বলে আসছে, চাহিদা বলে কিছু নেই৷ পর্যটকরা যেমন আসছেন না, তেমনি এই অস্থিরতার মধ্যে নেই কর্পোরেটদেরও আনাগোনা৷ এই সংকটের বাইরে নেই ম্যারিয়ট হোটেলও৷
ছবি: picture-alliance/J. Hoelzl
বিপণি বিতানে বিষণ্ণতা
চলমান অস্থিরতায় কারটিয়ের কিংবা প্রাদার মতো জনপ্রিয় ব্র্যান্ডেও মন্দা লেগেছে৷ চীনের ধণাঢ্য ক্রেতাদের কাছে ব্র্যান্ডগুলো ছিল বেশ কাঙ্ক্ষিত৷ কারটিয়ের মালিক রিচেমন্ট জানিয়েছেন, দোকান বন্ধ রাখা আর পর্যটক ঘাটতি, বিশেষ করে চীনা পর্যটক না আসায় বেচা-বিক্রি নেই বললেই চলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Z. Junxiang
খুচরা দোকানেও নেই খুচরো পয়সা
খুচরা ব্যবসা ছিল শহরের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি৷ জুন মাসে দেখা গেছে বিক্রিবাট্টা কমে গেছে ৯৩ শতাংশ৷ আন্দোলনের প্রভাবে জুলাইতেও কোনো ব্যবসা হয়নি৷ আগস্টে এসে উত্তরণ হয়নি পরিস্থিতির৷ এই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়াটা বড় চ্যালেঞ্জ৷
ছবি: Getty Images/A. Kwan
অর্থনীতির কঠিন সময়
হংকংয়ের অর্থনীতি একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে৷ রোববার এ কথা জানিয়েছেন শহরটির অর্থ সচিব পল চান৷ তিনি বলেন, এ কারণে বাণিজ্য সংকটের মুখে পড়েছে, অর্থনীতির গতিটাও শ্লথ হয়ে গেছে৷ ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের জন্য নিরাপদ শহরের যে খ্যাতিটা ছিল, এই আন্দোলন সেই সুনামকেও আঘাত করেছে৷ অর্থনৈতিক মন্দার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন শহরটির প্রধান নির্বাহী কেরি লাম৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Yeh
7 ছবি1 | 7
গণতন্ত্রপন্থীদের বক্তব্য, জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হংকংয়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৬০০। অন্য দেশের তুলনায় যা কোনও সংখ্যাই নয়। এই পরিস্থিতিতে করোনার জন্য ভোট পিছিয়ে দেওয়া কোনও যুক্তি হতে পারে না। সে কারণেই রোববার বিশাল অংশের মানুষ বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে রাস্তায় নামেন। কিছু দিন আগেই হংকংয়ে চীন বিশেষ আইন চালু করেছে। যে আইনের বলে সমস্ত বিক্ষোভ আন্দোলন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একের পর এক প্রতিবাদীকে গ্রেফতার করছে পুলিশ। রোববারেও আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার করা হয়। অভিযোগ, কোনও কোনও জায়গায় আন্দোলনকারীদের হঠাতে গোলমরিচের বল ছোড়া হয়। বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ গণতন্ত্রপন্থী নেতা রোববার গ্রেফতার হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
২০১৯ সাল থেকে চীনের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন করছে হংকং। তাদের বক্তব্য, ১৯৮৪ সালের চুক্তি লঙ্ঘন করছে চীন। যুক্তরাজ্যের থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পরে হংকংয়ের দায়িত্ব নেয় চীন। কিন্তু হংকংকে বিশেষ অধিকার দেওয়া হয়। বাণিজ্য এবং গণতন্ত্রের বিষয়ে চীনের চেয়ে অনেকটাই আলাদা হংকং। পশ্চিমের সঙ্গে তাদের মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি ছিল। কিন্তু ২০১৯ সাল থেকে গণতন্ত্রে আঘাত হানছে চীন, এই অভিযোগে আন্দোলন শুরু করে হংকং। আন্দোলন এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে দমনমূলক নীতি গ্রহণ করে চীন। কিছুদিন আগে তারই জেরে নতুন আইন বলবৎ হয়েছে। কিন্তু কোনও আইনই হংকংয়ে বিক্ষোভ আন্দোলন বন্ধ করতে পারছে না। বরং, দিন যত যাচ্ছে, আন্দোলনের শক্তি তত বাড়ছে।