কার্যত সব বিরোধী নেতাকে জেলে ভরে দিয়েছে হংকংয়ে চীনের প্রশাসন। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অপরাধে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
পঞ্চাশ জনেরও বেশি গণতন্ত্রপন্থিকে গ্রেপ্তার করা হলো হংকংয়ে। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতারা ফেসবুক পেজে লিখেছেন, সেপ্টেম্বরের অ্যাসেম্বলি নির্বাচনের আগে বিরোধীরা যে প্রাইমারি ভোটের আয়োজন করেছিল, তারই পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার এই গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে। হংকংয়ে চীন যে জাতীয় নিরাপত্তা আইন চালু করেছে, তারই জেরে এই গ্রেপ্তার সম্ভব হয়েছে বলে তাঁদের দাবি।
একসঙ্গে এত মানুষকে এর আগে কখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি হংকংয়ে। বিক্ষোভ মিছিলে এর চেয়ে অনেক বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে। কিন্তু এভাবে গ্রেপ্তার করা হয়নি। গণতন্ত্রপন্থি বিরোধীপক্ষের বহু নেতাকে জেলে ঢুকিয়ে দিয়েছে হংকংয়ে চীনের প্রশাসন। তবে চীনের প্রশাসন এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি।
হংকং সীমান্তে কেন চীনা সেনা?
হংকং ও চীনের সীমান্তের কাছে শেনঝেনে সামরিক মহড়া চালাচ্ছে চীন৷ হংকং এ চলমান প্রতিবাদের আবহাওয়ায় কেন এই মহড়া?
ছবি: Reuters/T. Peter
প্রতিবাদের পরিবেশ
গত ১০ সপ্তাহ ধরে হংকং এ চলছে সরকারবিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ৷ ১৯৯৭ সালের পর থেকে হংকঙে গণতন্ত্রের প্রশ্নে সবচেয়ে বেশি নাড়া দিয়েছে বর্তমানের এই বিক্ষোভ৷ প্রথমে প্রত্যর্পণ চুক্তিতে বদলের দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু হলেও পরে তা হংকং এ সার্বিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে পরিণত হয়৷ গণতন্ত্রের দাবিতে পথে নামা জনতা ইতিমধ্যে স্তব্ধ করেছে হংকংগামী বিমান চলাচলও৷
ছবি: picture-alliance/AP/V. Thian
অপেক্ষায় ট্যাঙ্কার
চীনের ‘পিপলস আর্মড পুলিশ'এর শতাধিক আধাসামরিক ট্যাঙ্ক ও ট্রাকসহ কয়েকশ সামরিক সদস্য বর্তমানে সীমান্তবর্তী শহর শেনঝেনে রয়েছেন৷
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, এর সাথে রয়েছে দু'টি জলকামানও৷
ছবি: Reuters/T. Peter
সামরিক অভিযান?
বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে হংকঙে চীনের সামরিক অভিযানের আশঙ্কার কথা৷ কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতামত, এমনটা হবে না৷ গোটা বিষয়টা আসলেই স্রেফ মহড়া৷
ছবি: Getty Images/AFP/Str
কেন নয় সামরিক অভিযান?
গত চার দশক ধরে চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পেছনে বড় অবদান রয়েছে হংকঙের, বলছেন ডয়চে ভেলের বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ ক্লিফর্ড কুনান৷ তাঁর মতে, অর্থনৈতিক সংস্কারের কাজ চীনে কিছুটা হলেও ধুঁকছে৷ এঅবস্থায় হংকং থেকে প্রাপ্য আর্থিক স্বস্তিকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে চায়না চীন৷ তাই আপাতত সীমান্তেই অবস্থান করছে চীনা সেনাবাহিনী৷
ছবি: Reuters/T. Peter
আন্তর্জাতিক চাপ?
হংকং চীনের অভ্যন্তরেই নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও চীনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়৷ চীনা বাজারে লগ্নি করতে চাওয়া আন্তর্জাতিক সংস্থারা বেইজিং এর কঠোর হংকং-নীতির ফলে বেঁকে বসতে পারে বলে মতামত কুনানের৷
ছবি: Getty Images/AFP/Str
সামরিক মহড়ায় কী প্রাপ্তি?
বিক্ষোভ সংযত করতে বেইজিং জানিয়েছে যে, এই প্রতিবাদকে তারা দেখছে প্রায় সন্ত্রাসবাদের সমতুল্য হিসাবে৷ এমন পরিস্থিতিতে প্রতিবাদকারীদের চাপে রাখতে ও কিছুটা ভয় দেখাতেই এই মহড়ার আয়োজন, মনে করেন নানইয়াং ইন্সটিটিউট অফ টেকনলজির সামরিক বিশেষজ্ঞ জেমস চার৷
ছবি: Getty Images/AFP
6 ছবি1 | 6
গণতন্ত্রপন্থিদের বক্তব্য, সেপ্টেম্বর হংকংয়ে অ্যাসেম্বলি নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। তার আগে বিরোধীদের শক্তি বোঝার জন্য তাঁরা একটি প্রাইমারি ভোটের ব্যবস্থা করেছিলেন। ওই ভোটের সঙ্গে প্রশাসনের কোনো সম্পর্ক নেই। বিরোধীরা বেসরকারি ভাবে ওই ভোটের আয়োজন করেছিল। প্রাইমারি নির্বাচন হলেও অ্যাসেম্বলি নির্বাচন হয়নি। প্রশাসন প্যানডেমিকের দোহাই দিয়ে নির্বাচন স্থগিত রেখেছে। বিরোধীদের দাবি, নির্বাচন হলে বিরোধীরা অনেক বেশি আসন পেয়ে যাবে এবং হংকংয়ে চীনের প্রতিপত্তির উপর বাধা সৃষ্টি করবে, এই ভয়ে নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়েছে।
চীনের প্রশাসন দাবি করেছিল, বেআইনি ভাবে প্রাইমারি নির্বাচনের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই কারণেই মঙ্গলবার এতজন বিরোধী নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিতর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা আইনের সাহায্যে এই গ্রেপ্তার সম্ভব হয়েছে। বস্তুত, গ্রেপ্তারের পর গোটা হংকং জুড়ে ফের অস্থিরতা শুরু হয়েছে। বিরোধীরা বড় আন্দোলনের পরিকল্পনা শুরু করেছে।