হংকং-এ বিতর্কিত নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হলো মিডিয়া টাইকুন জিমি লাই-কে। পুলিশের অভিযোগ, তিনি বিদেশি শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
হংকং-এ চীন যে নতুন ও অতি বিতর্কিত নিরাপত্তা আইন চালু করেছে, সেখানে বলা হয়েছে, বিদেশি শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে ষড়যন্ত্র, বিক্ষোভ দেখিয়ে জাতীয় স্বার্থ বিরোধী কাজ করলেই গ্রেফতার করা হবে। তখনই অধিকাররক্ষা কর্মীরা জানিয়েছিলেন, চীনের নতুন আইন গণতন্ত্রবিরোধী এবং তা হংকং-এর লোকেদের প্রতিবাদের অধিকার কেড়ে নেবে। তাঁদের আশঙ্কা সত্যি হলো। এর আগে এই আইন প্রয়োগ করে বিক্ষোভকারী ছাত্রদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এ বার করা হলো মিডিয়া টাইকুনকে।
জিমি লাই-কে সোমবার গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর এক সহযোগী মার্ক সাইমন জানিয়েছেন, বিদেশী শক্তির সঙ্গে হাত মেলানোর অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ সূত্র উদ্ধৃত করে এএফপি জানিয়েছে, জিমি লাইয়ের বিরুদ্ধে দুইটি অভিযোগ। বিদেশি শক্তির সঙ্গে হাত মেলানো এবং জালিয়াতি করা।
জাতীয় নিরাপত্তা আইনে এখনো পর্যন্ত যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তার মধ্যে লাই হলেন সব চেয়ে হাই প্রোফাইল। পুলিশ জানিয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তা আইনে সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর বাইরে আর কোনো তথ্য পুলিশ দেয়নি।
২০১৯: বিক্ষোভের বছর
জাতিগত বৈষম্য, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোধের দাবি নিয়ে এবছর সারা বিশ্বের লাখো মানুষ বিক্ষোভ করেছেন৷ ভারত থেকে হংকং বা ইরাক থেকে সুদান, দাবি আদায়ে পুরো সাল জুড়েই রাস্তায় গণআন্দোলন চলেছে৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/S. Sen
ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
বছরের শেষ দিকে এসে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে পুরো ভারতে বিক্ষোভের আগুন জ্বলছে৷ ধর্মীয় বৈষম্যপূর্ণ ওই আইনের বিরুদ্ধে সব ধর্মের লোকজন একত্রিত হয়ে আন্দোলন করছেন, এক সপ্তাতেই ঝরেছে অন্তত ২৩ প্রাণ৷
ছবি: Reuters/D. Sissiqui
বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে রাজধানী দিল্লির জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন শুরু হলে পুলিশ পাল্টা আঘাত করে; ক্যাম্পাস পরিণত হয় রণক্ষেত্রে৷
ছবি: Reuters/A. Abidi
হংকংয়ের স্থিতিশীলতায় ধাক্কা
চীনের মূলভূখণ্ডে বন্দি প্রত্যর্পণ নিয়ে প্রস্তাবিত একটি বিল বাতিলের দাবিতে জুন থেকে হংকংয়ে যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল তা এখন স্বায়ত্তশাসিত এ অঞ্চলের স্বাধিকার আন্দোলনে পরিণত হয়েছে৷ গণদাবির মুখে সেপ্টেম্বরেই বিলটি বাতিল করা হলেও আন্দোলন থামেনি৷
ছবি: Reuters/T. Peter
নির্বাচনেও প্রভাব
হংকংয়ের স্বাধিকার আন্দোলনে লাখো মানুষ সড়কে নেমে বিক্ষোভ করছে৷ এ আন্দোলন সাধারণ মানুষের মধ্যে এতটাই সাড়া ফেলেছে যে নভেম্বরে এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ এই বাণিজ্য নগরীর স্থানীয় নির্বাচনে গণতন্ত্রপন্থিরা বিশাল জয় পেয়েছেন৷
ছবি: Reuters/T. Siu
আবারও উত্তপ্ত হচ্ছে ইরাক
সাবেক স্বৈরশাসক সাদ্দামের আমল থেকেও ‘খারাপ সময়ের’ মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন ইরাকিরা৷ দুর্নীতি, বেকারত্ব, সরকারের উপর ইরানের প্রভাব ইত্যাদি নানা অভিযোগ নিয়ে অক্টোবর থেকে সাধারণ মানুষ সড়কে নেমে বিক্ষোভ করছে৷ বিক্ষোভ দমনে সরকারের নৃংসতায় এরই মধ্যে ৪৬০ মানুষ নিহত এবং ২৫ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
বৈরুতে সংহতির মুষ্টি
জ্বালানি ও তামাক পণ্যের উপর বাড়তি করারোপ এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে অক্টোবরে যে আন্দোলন শুরু হয় তা থামাতে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান সাদ হারিরি৷ কিন্তু পদ থেকে সরে গেলেও হারিরি ক্ষমতার কেন্দ্রে থেকে যাওয়ায় বিক্ষোভ চলছে৷
ছবি: Reuters/A. M. Casares
ইরানে জ্বালানি তেল নিয়ে বিক্ষোভ
বিশ্বের বৃহৎ তেল উৎপাদনকারী দেশ ইরানের উপর যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার কারণে নভেম্বর থেকে দেশটিতে জ্বালানি তেলের উপর রেশনিং শুরু হয়, পেট্রোলের দাম প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে৷ যার বিরুদ্ধে ২১টি নগরীতে সহিংস বিক্ষোভ হয়৷ বিক্ষোভে হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের৷
ছবি: Getty Images/AFP
ক্ষমতার লড়াই
এপ্রিলে সুদানের ক্ষমতা থেকে ওমর আল-বশিরকে উৎখাতের পর থেকেই দেশটির সেনাবাহিনী ও গণতন্ত্রপন্থিদের মধ্যে ক্ষমতার কেন্দ্রে যাওয়ার লড়াই চলছে৷ যাতে কয়েক ডজন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP
রঙিন বিক্ষোভ
চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ এবং আরো উন্নত স্বাস্থ্যসেবা, অবসর ভাতা এবং শিক্ষা ব্যবস্থার দাবিতে দুই মাস আগে চিলিতে বিক্ষোভ শুরু হয়৷ তবে বিক্ষোভে এখনো নৃশংসতার খবর পাওয়া যায়নি৷
ছবি: Reuters/I. Alvarado
স্বাধীনতার লড়াই
স্পেনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল বার্সেলোনা বহুদিন ধরেই স্বাধীনতা চাইছে৷ স্বাধীনতা প্রশ্নে গণভোটের আয়োজন হলেও কেন্দ্র সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপে তা ভণ্ডুল হয়ে যায়৷ মাদ্রিদ সরকারের দমনের বিরুদ্ধে কাতালুনিয়ায় বিক্ষোভ তাই নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে৷
ছবি: REUTERS/J. Nazca
10 ছবি1 | 10
১৯৮৯ সালে বেজিং-এ গণতন্ত্রপন্থীদের যে ভাবে চীন মোকাবিলা করেছিল, লাই তার খোলাখুলি নিন্দা করেছিলেন। তিনি বরাবর গণতন্ত্রপন্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। চীনের সরকারি মিডিয়ার অভিযোগ ছিল, লাই বিদেশি শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে চীনের সর্বনাশ করতে চাইছেন। গত বছর হংকং-এ সরকার বিরোধী প্রচুর বিক্ষোভ হয়েছে। সেই বিক্ষোভের সূত্র ধরে লাই সহ ১৪ জন গণতন্ত্রপন্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। মিডিয়া গ্রুপগুলি আগেই এই নতুন আইন নিয়ে সাবধানবাণী শুনিয়েছিল।
কয়েক মাস ধরে বিক্ষোভ চলতে থাকার পর গত জুনে চীন এই নতুন আইন চালু করে। এই আইনে রাষ্ট্রদ্রোহ, বিধ্বংসী ও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ অথবা বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পুলিশের কাছে ঢালাও ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়া তারা তল্লাশি করতে পারবে, সামাজিক মাধ্যম থেকে যে কোনো মেসেজ ডিলিট করতে পারবে এবং গ্রেফতার করতে পারবে।
নতুন আইনে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, সরকারের বিরুদ্ধে কোনোরকম উস্কানি দেওয়া যাবে না। তারা যে হংকং মিডিয়াকে শাসন করতে চায়, এ নিয়ে চীনও কোনো লুকোছাপা করেনি। আর তারা স্থানীয় ও বিদেশি এই দুই ধরনের মিডিয়াকেই শাসন করতে চায়। হংকং-এর রিপোর্টারদের মধ্যমেই মূল চীনের খবর এতদিন বাইরের দুনিয়ায় এসেছে। কিন্তু এখন সাংবাদিকদের আশঙ্কা, তাঁদের এই ধরনের রিপোর্টিং বিপদ ডেকে আনবে। লাই-এর গ্রেফতার তারই ইঙ্গিত।