হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ে তিয়েনআনমেনের স্মৃতিতে তৈরি স্থাপত্য ঢেকে দিয়েছে প্রশাসন। মূর্তিটি সরিয়েও দেয়া হতে পারে।
বিজ্ঞাপন
বুধবার এক অভূতপূর্ব ঘটনার সাক্ষী থাকল হংকং বিশ্ববিদ্যালয. ১৯৮৯ সালে তিয়েনআনমেন স্কোয়্যারে ছাত্রদের উপর আক্রমণ চালিয়েছিল চীনের প্রশাসন। বহু ছাত্রের মৃত্যু হয়েছিল। তারই স্মৃতিতে হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিশাল স্তাপত্য তৈরি করেছিলেন ডেনমার্কের স্থপতি জেনস গালশিয়েট। বুধবার তা ঢেকে দেওয়া হয়।তিয়েনআনমেন স্কোয়্যারের স্মৃতি মুছতেই এ কাজ করা হয়েছে।
তিয়ানআনমেন চত্বরের স্মৃতি, ১৯৮৯
১৯৮৯ সালের জুন মাসে বেইজিং এর তিয়ানআনমেন চত্বরে সংঘটিত ঘটনাবলীর ছবি লুকাতে চেয়েছিল চীনা কর্তৃপক্ষ৷ তবে এপি আলোকচিত্রী জেফ ওয়াইডেনার এর মতো অল্প কিছু সাংবাদিক সেসব ঘটনার ঐতিহাসিক ছবি সংরক্ষণে সক্ষম হন৷
ছবি: Jeff Widener/AP
গণতন্ত্রের দেবী
সূর্যোদয়ের সময় তিয়ানআনমেন চত্বরে ৩৩ ফুট লম্বা ‘গণতন্ত্রের দেবী’র মূর্তি স্থাপন করেন আন্দোলনকারীরা৷ সেটি ছিল ফোম এবং কাগজের তৈরি৷ কিন্তু ৪ জুন সকালে সেনারা ট্যাংক এবং সাঁজোয়া যানের সহায়তায় অভিযান চালান চত্বরে, ভেঙে ফেলেন সেই মূর্তি৷
ছবি: Jeff Widener/AP
হাস্যোজ্বল নারী পুলিশ
অস্থির সেই দিনগুলোতে স্থানীয় মানুষের সঙ্গে পুলিশের সুসম্পর্কও দেখা গেছে৷ অনেকক্ষেত্রে সেনা এবং পুলিশদের উপহার সামগ্রী দিয়েছেন স্থানীয়রা৷ মাঝে মাঝে সেনারাও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মিলে মিশে দেশাত্মবোধক গান গেয়েছেন৷ ছবিতে এক নারী পুলিশ তিয়ানআনমেন চত্বরে গান গাইছেন৷ এর কয়েকদিন পরই সেখানে অভিযান চালায় সামরিক বাহিনী৷
ছবি: Jeff Widener/AP
সংগ্রাম
বিংশ শতাব্দীর অন্যতম রক্তক্ষয়ী দমন অভিযানের একদিন আগের ছবি এটি৷ ১৯৮৯ সালের ৩ জুন তোলা এই ছবিতে গণতন্ত্রকামী আন্দোলনকারী এবং পিপল’স লিবারেশন আর্মি সেনাদের মধ্যকার উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে৷ এই উত্তেজনার মাঝে আটকে যান এক নারী৷ সে রাতে সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বেসামরিক আন্দোলনকারীদের উপর গুলি চালায় এবং তিয়ানআনমেন চত্বর দখল করে নেয়৷
ছবি: Jeff Widener/AP
দখলে নেয়া অস্ত্র
দমন অভিযানের আগে তোলা ছবি৷ একটি বাসের উপর দখল করা অস্ত্র প্রদর্শন করা হচ্ছে, যেটি ঘিরে রেখেছে কয়েক হাজার আন্দোলনকারী৷
ছবি: Jeff Widener/AP
গণতন্ত্রের জন্য লড়াই
তিন জুন সন্ধ্যায় এই সাঁজোয়া যানটি গ্রেট হলের গেটের কাছে নিয়ে যায় আন্দোলনকারীরা৷ সেনাবাহিনীর আগমন ঠেকাতে আন্দোলনকারীদের তৈরি ব্যারিকেডের সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছিল এটি৷ এর কিছুক্ষণ পরই সেনারা তিয়ানআনমেন চত্বরে নির্বিচারে গুলি চালাতে শুরু করে৷
ছবি: Jeff Widener/AP
সাঁজোয়া যানে আগুন
তিয়ানআনমেন চত্বরের কাছে একটি সাঁজোয়া যানে আগুন ধরিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা৷ ৩ জুন সন্ধ্যা রাতে তোলা ছবি এটি৷ এই ছবি তোলার পর বিক্ষোভকারীদের ছোড়া ইটের আঘাতে আহত হন এপি আলোকচিত্রী জেফ ওয়াইডেনার৷
ছবি: Jeff Widener/AP
দমন অভিযান
আন্দোলনকারীদের উপর রক্তক্ষয়ী দমন অভিযানের পর চাং’আন অ্যাভিনিউতে এভাবে টহল দিচ্ছিল সেনারা৷ ৪ জুন বেইজিং হোটেলের লবিতে অবস্থানরত পর্যটকদের উপর এরকম একটি ট্রাক থেকে সেনারা গুলি চালায়৷
ছবি: Jeff Widener/AP
‘ট্যাংক ম্যান’
বাজারের ব্যাগ হাতে এক ব্যক্তি একাই এভাবে দাঁড়িয়েছিলেন সেনাদের ট্যাংকের সামনে৷ কিছুক্ষণের জন্য ট্যাংকগুলো থামিয়ে দিতে সক্ষম হন তিনি৷ তবে দুই দশক পেরিয়ে গেলেও এই লোকের ভাগ্যে কি ঘটেছিল তা জানা যায়নি৷ তবে ছবিটি পরবর্তীতে তিয়ানআনমেন চত্বরের প্রতীকে পরিণত হয় এবং এখন পর্যন্ত তোলা ছবিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রতীকী ছবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়৷
ছবি: Jeff Widener/AP
নিহত নায়করা
তিয়ানআনমেন চত্বরে চীনা সেনাবাহিনীর ৩৮তম ডিভিশনের চালানো দমন অভিযানে নিহত মানুষের ছবি দেখাচ্ছেন একদল মানুষ৷ স্থানীয় একটি মর্গে এভাবেই পড়েছিল মরদেহগুলো৷ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের হিসাব অনুযায়ী, সেই অভিযানে কমপক্ষে তিনশো বেসামরিক ব্যক্তি প্রাণ হারান৷
ছবি: Jeff Widener/AP
ঝাড়ুদার
সামরিক দমন অভিযানের পর চাং’আন অ্যাভিনিউতে থাকা একটি পোড়া বাসের চারপাশটা পরিষ্কার করছেন দুই ঝাড়ুদার৷ আন্দোলনের সময় বিক্ষোভকারীরা বেশ কয়েকটি বাস এবং সামরিক যান জ্বালিয়ে দেয়৷ এসব ঘটনায় অনেক সেনা নিহত এবং আহত হন৷
ছবি: Jeff Widener/AP
মাওকে পাহারা
দাঙ্গার কয়েকদিন পরেও এভাবে ফরবিডেন সিটির সামনে থাকা মাও সে তুং এর ছবি পাহারা দিয়েছেন সেনারা৷
ছবি: Jeff Widener/AP
‘ব্রাদার্স ইন আর্মস’
তিয়ানআনমেন চত্বরে সামরিক দমন অভিযানের কয়েকদিন আগে ফরবিডেন সিটির সামনে এভাবে ছবির জন্য পোজ দেন অ্যাসেসিয়েট প্রেসের আলোকচিত্রী জেফ ওয়াইডেনার এবং লিউ হুয়াং সিং৷
ছবি: Jeff Widener/AP
12 ছবি1 | 12
২৬ ফুট লম্বা দুই টনের মূর্তিটিতে ৫০ জন ছাত্রের মৃত্যুর সিম্বল ব্যবহার করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল চাতালে মূর্তিটি ছিল। চীনে গণতন্ত্রপন্থিদের এক অন্যতম স্মারক ওই স্থাপত্য।
বুধবার আচমকাই ক্রেন নিয়ে সেই মূর্তির সামনে উপস্থিত হয় প্রশাসন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, মূর্তিটিকে হলুদ টেপ দিয়ে প্রথমে ঘিরে দেওয়া হয়। যাতে কেউ সামনে আসতে না পারে। এরপর সাদা কাপড় দিয়ে ক্রেনের সাহায্যে মূর্তিটি ঢেকে দেওয়া হয়। এখানেই শেষ নয়, প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণা, ক্রেনের সাহায্যে মূর্তির উপরের অংশ ভেঙেও দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য,
প্রাথমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি। পরে তারা জানান, গত সপ্তাহে মূর্তিটি নিয়ে একটি বৈঠক হয়েছিল। সেখানে মূর্তিটি সরিয়ে দেয়ার প্রস্তাবের পক্ষে অধিকাংশ মানুষ ভোট দেন। স্বাভাবিকভাবেই ছাত্ররা এতে খুশি নয়। খুশি নন স্থপতিও। টুইটে তিনি লিখেছেন, মূর্তিটি তার তৈরি। স্থাপত্যের যদি কোনো ক্ষতি হয়, তাহলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। শুধু তাই নয়, তিনি লিখেছেন, ঘটনায় তিনি হতবাক। মূর্তিটি ফেরতও চেয়েছেন তিনি।
হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থিদের সঙ্গে তীব্র লড়াই চলছে চীনের প্রশাসনের। একের পর এক আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করছে চীন। সংবাদপত্রের কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে চীন এই নতুন পদক্ষেপ নিলো।