টাইফুন কোইনুর তাণ্ডবে তছনছ হংকং। হংকং থেকে চীনের গুয়াংডং অঞ্চলে প্রবেশ করেছে ঝড়টি।
বিজ্ঞাপন
সোমবার রাতে হংকংয়ে প্রায় ছয় ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালায় টাইফুন কোইনু। হংকং আবহাওয়া দপ্তর আগেই দেশজুড়ে তীব্র বৃষ্টির সতর্কতা জারি করে রেখেছিল। বাস্তবে ঘটেছেও তাই। ঝোড়ো হাওয়ার পাশাপাশি প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে গোটা হংকংজুড়ে। এমাসে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার বৃষ্টিরকালো সতর্কতা জারি করল হংকং। কালো সতর্কতাই হংকংয়ে বৃষ্টির সর্বোচ্চ সতর্কতা।
সোমবার সারাদিন ধরে প্রায় ১৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে গোটা হংকংজুড়ে। তবে কোনো কোনো জায়গায় সর্বোচ্চ ৩০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে স্থানীয় আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে।
ইতিহাসের সবচেয়ে বিধ্বংসী আটটি ঝড়
ছবিঘরে ইতিহাসের সবচেয়ে বিধ্বংসী আটটি ঝড়ের কথা উল্লেখ করা হলো, যেগুলো অ্যাটলান্টিকের হারিকেন, প্রশান্ত মহাসাগরের টাইফুন এবং ভারত মহাসাগরের সাইক্লোন নামে পরিচিত৷ সবচেয়ে বিধ্বংসী ঝড় আঘাত হেনেছে বাংলাদেশে৷
ছবি: Getty Images
২০০৮: নার্গিস (মিয়ানমার)
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে একটি হলো নার্গিস৷ ২০০৮ সালের মে মাসে যেটি মিয়ানমারে আঘাত হানে৷ এতে প্রাণ হারায় ১ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ৷ ৪ লাখ ৫০ হাজার ঘর-বাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়৷
ছবি: Hla Hla Htay/AFP/Getty Images
১৯৯১ সাল: বাংলাদেশ
বাংলাদেশের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিধ্বংসী ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়, যেটি ২৯শে এপ্রিল ঘণ্টায় ২৩৫ কিলোমিটার বেগে উপকূলে আঘাত হেনেছিল৷ সমুদ্রের পানির উচ্চতা পৌঁছে গিয়েছিল সাত মিটার উঁচুতে৷ এতে প্রাণ হারিয়েছিল উপকূলের অন্তত ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ৷
ছবি: AFP/Getty Images
১৮৭৬: দ্য গ্রেট বাকেরগঞ্জ সাইক্লোন, বাংলাদেশ
১৮৭৬ সালের অক্টোবরে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে বরিশালের বাকেরগঞ্জে৷ সে সময় ব্রিটিশ শাসনামল চলছিল৷ ভয়াবহ ঐ ঝড়ে প্রাণ হারিয়েছিল অন্তত ২ লাখ মানুষ৷
ছবি: Getty Images/AFP
১৯৭৫: নিনা টাইফুন, চীন
যদিও চীনে টাইফুন বা ঘূর্ণিঝড় খুবই স্বাভাবিক ঘটনা, তবুও ১৯৭৫ সালের ৩১ শে জুলাই চীনের হেনান প্রদেশে টাইফুন নিনার ভয়াবহতা সব ঝড়কে পেছনে ফেলে দেয়৷ ভয়াবহ ঐ ঝড়ে প্রাণ হারায় ২ লাখ ৩১ হাজার মানুষ৷ ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Zc
১৮৮১ সাল: হাইফোং, ভিয়েতনাম
১৮৮১ সালের অক্টোবর মাসে ভিয়েতনামের হাইফোং শহরে ভয়াবহ টাইফুন আঘাত হানে৷ এতে প্রাণ হারায় ৩ লাখ মানুষ৷
ছবি: Getty Images/J. Aznar
১৯৩৭ এবং ১৮৩৯ সাল: ভারত
১৭৩৭ সালের অক্টোবর মাসে বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে ধেয়ে এসে কলকাতায় আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড়৷ বেশিরভাগ ইউরোপীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছিল, ঐ ঝড়ে প্রাণ হারিয়েছিল প্রায় তিন লাখ মানুষ৷ কিন্তু সেসময় কলকাতায় মাত্র ১০ হাজার মানুষ বসবাস করত৷ তাই এই সংখ্যাটি নিয়ে অনেকের সংশয় রয়েছে৷ ১৮৩৯ সালের নভেম্বরে অন্ধ্রপ্রদেশের কোরিঙ্গা এলাকায় বিধ্বংসী ঝড়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন অন্তত তিন লাখ মানুষ৷ নষ্ট হয়েছিল ২৫ হাজার জাহাজ৷
ছবি: Reuters
১৯৭০ সাল: ভোলা সাইক্লোন, বাংলাদেশ
বিশ্ব ইতিহাসের ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে অন্যতম বলা হয় ভোলা সাইক্লোনকে৷ ১৯৭০ সালের ১৩ই নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের উপর দিয়ে ঘণ্টায় ২০৫ কিলোমিটার বেগে বয়ে যায় সাইক্লোন৷ ঐ ঝড়ে প্রাণ হারায় অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ, যাদের মধ্যে এক লাখই ছিলেন জেলে৷
ছবি: Getty Images
7 ছবি1 | 7
হংকং থেকে টাইফুনটি পশ্চিম এবং দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে এগোতে শুরু করেছে। আপাতত তা চীনের গুয়াংডং প্রদেশে প্রবেশ করেছে। তবে ঝড়টি তার শক্তি হারিয়েছে।
ঝড়ের প্রভাবে হংকংয়ের সমস্ত স্কুল-কলেজ, অফিস-কাছারি বন্ধ করে করে দিতে হয়। বহুক্ষণ বন্ধ থাকে বিমান পরিষেবা। ফলে বিমানবন্দরে বিপুল ভিড় চোখে পরে।
চীনের উপর দিয়ে এখন ১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে বইছে টাইফুনটি। সেখানেও বৃষ্টিপাত হচ্ছে। চীনের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সেখানে লেভেল থ্রি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ৩৫ হাজার জেলেকে সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে হংকংয়ে ঝড়ের প্রভাব যতটা ছিল, চীনে ততটা থাকবে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।