অগণতান্ত্রিক ভাবে চারজন সদস্যকে বহিষ্কার করা হয়েছে, এই অভিযোগে হংকংয়ে ১৫ জন গণতন্ত্রপন্থী সদস্য আইনসভা থেকে পদত্যাগ করলেন।
বিজ্ঞাপন
হংকংয়ের আইনসভা থেকে পদত্যাগ করলেন সমস্ত গণতন্ত্রপন্থী সদস্যরা। অভিযোগ, বিনা নোটিসে, আদালতে বিচার ছাড়াই হংকংয়ের সিটি কাউন্সিল চারজন গণতন্ত্রপন্থী সদস্যকে বহিষ্কার করেছিল। তারই প্রতিবাদে বাকি ১৫ জন গণতন্ত্রপন্থী সদস্যও পদত্যাগ করেছেন। এর ফলে হংকংয়ের আইনসভায় আর কোনো বিরোধীপক্ষ থাকল না। পদত্যাগকারীদের বক্তব্য, এর পর আন্দোলন আরো শক্তিশালী হবে।
সম্প্রতি বেজিং হংকংয়ের জন্য একটি নতুন আইন প্রণয়ন করেছে। যে আইনের বলে হংকংয়ের সিটি কাউন্সিল কোনোরকম বিচার ছাড়াই আইনসভার সদস্যদের বহিষ্কার করতে পারে। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ওই আইন প্রণয়ন করা হয়েছে বলে চীনের দাবি। বুধবার সেই আইনের বলেই চারজন গণতন্ত্রপন্থী সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়। তাঁদের আদালতে যাওয়ারও সুযোগ দেওয়া হয়নি। এরই প্রতিবাদে গণতন্ত্রপন্থী আরো ১৫ জন আইনসভার সদস্য দ্রুত পদত্যাগ করেন। তাঁদেরই একজন হু চি ওয়াই। গণতন্ত্রপন্থী সদস্যদের কনভেনার তিনি। সংবাদমাধ্যমকে হু চি ওয়াই জানিয়েছেন, ''বৃহস্পতিবার প্রশাসনের হাতে পদত্যাগপত্র ধরিয়ে দেওয়া হবে। এর পর আন্দোলন আরো জোরদার হবে।''
হংকং আন্দোলন: ধ্বস নেমেছে অর্থনীতিতে
এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক সংকেটর মুখোমুখি হংকং৷ ওয়াল্ট ডিজনি থেকে ম্যারিয়ট—আন্দোলনের উত্তাপ লাগছে বৈশ্বিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গায়ে৷ মঙ্গলবার বাতিল করা হয়েছে সব ফ্লাইট৷
ছবি: imago/Photoshot/Construction Photography
কার্যত অচল বিমানবন্দর
মঙ্গলবার বিক্ষোভকারীদের আন্দোলনের মুখে সব ফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে হংকং বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ৷ হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী কেরি লাম বলেছেন, আন্দোলনকারীদের কারণে এমন অবস্থা তৈরি হচ্ছে, ‘যেখান থেকে ফিরে আসা কঠিন হয়ে যাবে৷’ বিক্ষোভকারীরা পুরো শহর জুড়ে আতঙ্ক আর সহিংসতা ছড়িয়ে দিচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷ প্রত্যর্পণ বিল শুধু নয়, কেরি লামের পদত্যাগের দাবিতে ফুঁসছে হংকং৷
ছবি: picture-alliance/AP/V. Thian
ডিজনিল্যান্ডের পায়ে ফোঁড়া
হংকংয়ের ওয়াল্ট ডিজনির ডিজনিল্যান্ডে নেই মানুষের আনাগোণা৷ চলমান বিক্ষোভের কারণে এই বিনোদন কেন্দ্রের প্রতি আগ্রহ হারিয়েছে মানুষ৷ মার্কিন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী বব ইগার স্বীকার করলেন এই দুরবস্থার কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Jialiang
অশান্তিতে ক্যাথে প্যাসিফিক
হংকংয়ের ফ্ল্যাগশিপ উড়োযান প্রতিষ্ঠানটি বলছে, জুলাই থেকে পড়ে গেছে টিকিটের কাটতি৷ অল্পসংখ্যক মানুষ এসেছে শহরে৷ আগাম বুকিং যেগুলো ছিল, সেগুলোও বাতিল করছেন যাত্রীরা৷ ব্যবসায় না হয় খারাপ সময় এলো কিছুটা, কিন্তু সামনে এসেছে আরেক সংকট৷ এয়ারলাইন্সটিতে কর্মরতদের মধ্যে যাঁরা আন্দোলনে যোগ দিয়েছে তাঁদের নিষিদ্ধ করার কথা বলেছে বেইজিং৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. De La Rey
ধাক্কা লেগেছে হোটেল ব্যবসায়
ইন্টারকন্টিনেন্টালের ক্রাউন প্লাজা আর হলিডে ইন এ মাসের শুরু থেকে বলে আসছে, চাহিদা বলে কিছু নেই৷ পর্যটকরা যেমন আসছেন না, তেমনি এই অস্থিরতার মধ্যে নেই কর্পোরেটদেরও আনাগোনা৷ এই সংকটের বাইরে নেই ম্যারিয়ট হোটেলও৷
ছবি: picture-alliance/J. Hoelzl
বিপণি বিতানে বিষণ্ণতা
চলমান অস্থিরতায় কারটিয়ের কিংবা প্রাদার মতো জনপ্রিয় ব্র্যান্ডেও মন্দা লেগেছে৷ চীনের ধণাঢ্য ক্রেতাদের কাছে ব্র্যান্ডগুলো ছিল বেশ কাঙ্ক্ষিত৷ কারটিয়ের মালিক রিচেমন্ট জানিয়েছেন, দোকান বন্ধ রাখা আর পর্যটক ঘাটতি, বিশেষ করে চীনা পর্যটক না আসায় বেচা-বিক্রি নেই বললেই চলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Z. Junxiang
খুচরা দোকানেও নেই খুচরো পয়সা
খুচরা ব্যবসা ছিল শহরের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি৷ জুন মাসে দেখা গেছে বিক্রিবাট্টা কমে গেছে ৯৩ শতাংশ৷ আন্দোলনের প্রভাবে জুলাইতেও কোনো ব্যবসা হয়নি৷ আগস্টে এসে উত্তরণ হয়নি পরিস্থিতির৷ এই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়াটা বড় চ্যালেঞ্জ৷
ছবি: Getty Images/A. Kwan
অর্থনীতির কঠিন সময়
হংকংয়ের অর্থনীতি একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে৷ রোববার এ কথা জানিয়েছেন শহরটির অর্থ সচিব পল চান৷ তিনি বলেন, এ কারণে বাণিজ্য সংকটের মুখে পড়েছে, অর্থনীতির গতিটাও শ্লথ হয়ে গেছে৷ ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের জন্য নিরাপদ শহরের যে খ্যাতিটা ছিল, এই আন্দোলন সেই সুনামকেও আঘাত করেছে৷ অর্থনৈতিক মন্দার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন শহরটির প্রধান নির্বাহী কেরি লাম৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Yeh
7 ছবি1 | 7
বিশেষ নিরাপত্তা আইন জারি হওয়ার পর থেকেই হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থীদের একের পর এক গ্রেফতার করছে পুলিশ। রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ আন্দোলনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গণতন্ত্র নিয়ে মুখ খুললেই পুলিশ তুলে নিয়ে যাচ্ছে। যে চারজন সদস্যকে বুধবার বরখাস্ত করা হয়, তাঁদের বিরুদ্ধেও জাতীয় নিরাপত্তার মামলা হয়েছে। গণতন্ত্রপন্থীদের বক্তব্য, একই দেশে দুই আইন চালানোর চেষ্টা করছে বেজিং। হংকংয়ের মানুষদের উপর অত্যাচার চালানোর জন্য একের পর এক অগণতান্ত্রিক আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে।
আইনসভা বিরোধীশূন্য হলে মানুষের উপর নির্যাতন আরো বাড়বে না? পদত্যাগকারী সদস্যদের এমনই প্রশ্ন করেছিল সংবাদমাধ্যম। উত্তরে তাঁরা জানিয়েছেন, আইনসভায় গণতন্ত্রপন্থীদের কণ্ঠরোধ করে রাখা হয়েছিল। সে কারণেই তাঁরা পদত্যাগ করেছেন। আইনসভার বাইরে থেকেই এ বার আরো কঠিন এবং দৃঢ় আন্দোলন করা হবে।