হংকংয়ে আরো বেশি গণতন্ত্রের দাবিতে কয়েকমাস ধরে আন্দোলন চলছে৷ এর মধ্যে বৃহস্পতিবার হংকংয়ের জন্য একটি আইন তৈরির প্রস্তাব পাস করেছে চীন৷ জার্মানি এই উদ্যোগের সমালোচনা করেছে৷
বিজ্ঞাপন
আগামী বছরের শুরু থেকে হংকংয়ে এই আইন কার্যকর করতে চায় চীন৷ এই আইনে বিচ্ছিন্নতাবাদ, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নাশকতামূলক তৎপরতা চালানো, সন্ত্রাসবাদ ও হংকংয়ের জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে এমন কাজের জন্য শাস্তির বিধান রাখা হবে৷
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস এই আইন প্রণয়ন পরিকল্পনার সমালোচনা করেছেন৷ এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, হংকংয়ে ভবিষ্যতে ‘বাক ও একত্রে মিলিত হওয়ার স্বাধীনতা' এবং গণতান্ত্রিক বিতর্কচর্চার সুযোগের ‘নিশ্চিয়তা থাকতে হবে'৷ মাস বলেন, ‘‘হংকংয়ের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের ভিত্তি হচ্ছে ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা' নীতি ও আইনের শাসন৷ নিরাপত্তা আইন দিয়ে এসব মৌলিক অধিকারকে প্রশ্নের মুখে ফেলা যাবে না৷''
হংকং সীমান্তে কেন চীনা সেনা?
হংকং ও চীনের সীমান্তের কাছে শেনঝেনে সামরিক মহড়া চালাচ্ছে চীন৷ হংকং এ চলমান প্রতিবাদের আবহাওয়ায় কেন এই মহড়া?
ছবি: Reuters/T. Peter
প্রতিবাদের পরিবেশ
গত ১০ সপ্তাহ ধরে হংকং এ চলছে সরকারবিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ৷ ১৯৯৭ সালের পর থেকে হংকঙে গণতন্ত্রের প্রশ্নে সবচেয়ে বেশি নাড়া দিয়েছে বর্তমানের এই বিক্ষোভ৷ প্রথমে প্রত্যর্পণ চুক্তিতে বদলের দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু হলেও পরে তা হংকং এ সার্বিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে পরিণত হয়৷ গণতন্ত্রের দাবিতে পথে নামা জনতা ইতিমধ্যে স্তব্ধ করেছে হংকংগামী বিমান চলাচলও৷
ছবি: picture-alliance/AP/V. Thian
অপেক্ষায় ট্যাঙ্কার
চীনের ‘পিপলস আর্মড পুলিশ'এর শতাধিক আধাসামরিক ট্যাঙ্ক ও ট্রাকসহ কয়েকশ সামরিক সদস্য বর্তমানে সীমান্তবর্তী শহর শেনঝেনে রয়েছেন৷
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, এর সাথে রয়েছে দু'টি জলকামানও৷
ছবি: Reuters/T. Peter
সামরিক অভিযান?
বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে হংকঙে চীনের সামরিক অভিযানের আশঙ্কার কথা৷ কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতামত, এমনটা হবে না৷ গোটা বিষয়টা আসলেই স্রেফ মহড়া৷
ছবি: Getty Images/AFP/Str
কেন নয় সামরিক অভিযান?
গত চার দশক ধরে চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পেছনে বড় অবদান রয়েছে হংকঙের, বলছেন ডয়চে ভেলের বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ ক্লিফর্ড কুনান৷ তাঁর মতে, অর্থনৈতিক সংস্কারের কাজ চীনে কিছুটা হলেও ধুঁকছে৷ এঅবস্থায় হংকং থেকে প্রাপ্য আর্থিক স্বস্তিকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে চায়না চীন৷ তাই আপাতত সীমান্তেই অবস্থান করছে চীনা সেনাবাহিনী৷
ছবি: Reuters/T. Peter
আন্তর্জাতিক চাপ?
হংকং চীনের অভ্যন্তরেই নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও চীনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়৷ চীনা বাজারে লগ্নি করতে চাওয়া আন্তর্জাতিক সংস্থারা বেইজিং এর কঠোর হংকং-নীতির ফলে বেঁকে বসতে পারে বলে মতামত কুনানের৷
ছবি: Getty Images/AFP/Str
সামরিক মহড়ায় কী প্রাপ্তি?
বিক্ষোভ সংযত করতে বেইজিং জানিয়েছে যে, এই প্রতিবাদকে তারা দেখছে প্রায় সন্ত্রাসবাদের সমতুল্য হিসাবে৷ এমন পরিস্থিতিতে প্রতিবাদকারীদের চাপে রাখতে ও কিছুটা ভয় দেখাতেই এই মহড়ার আয়োজন, মনে করেন নানইয়াং ইন্সটিটিউট অফ টেকনলজির সামরিক বিশেষজ্ঞ জেমস চার৷
ছবি: Getty Images/AFP
6 ছবি1 | 6
হংকং ছাড়ার আগ্রহ
আন্দোলন চলার সময় গতবছরের শেষ দুই কোয়ার্টারে হংকংয়ের প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দা অন্য দেশে অভিবাসী হয়েছেন৷ এছাড়া গত ডিসেম্বরে প্রায় ২০ হাজার মানুষ ‘অপরাধের রেকর্ড নেই' এমন কাগজ পেতে পুলিশের কাছে আবেদন করেন৷ যারা অন্য দেশে অভিবাসী হতে চান তাদের এমন কাগজ প্রয়োজন হয়৷ আবেদনের এই সংখ্যা ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি বলে জানা গেছে৷
৩০ বছর বয়সি সাংবাদিক জোসেফিন হংকংয়ের আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন৷ এতদিন হংকং ছাড়ার পরিকল্পনা না করলেও এবার নিরাপত্তা আইনের প্রস্তাব পাস হওয়ায় তিনি অভিবাসনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন৷
চীনা ব্যাংকে কর্মরত চু'ও হংকংয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত৷আন্দোলনেরসময় থেকেই তিনি অভিবাসনের পরিকল্পনা করছিলেন বলে ডয়চে ভেলেকে জানান৷ তবে নিরাপত্তা আইনের প্রস্তাব পাসের পর এখন তিনি এ ব্যাপারে আরো নিশ্চিত হয়েছেন৷ চু বলেন, তিনি চান না তাঁর দুই বছর বয়সি ছেলে ভবিষ্যতে কোনো আন্দোলনে যোগ দেয়ার জন্য পুলিশের নিপীড়নের শিকার হোক৷ ১৯৮৯ সালে তিয়েনআনমেন চত্বরে শিক্ষার্থী ও গণতন্ত্রপন্থিদের উপর নিপীড়নের কথা তিনি ভুলে যাননি বলেও জানিয়েছেন৷
এদিকে, অভিবাসী হতে চেয়ে আবেদনের সংখ্যা গত কয়েকদিনে আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছে অভিবাসন নিয়ে কাজ করা হংকংয়ের দুটি সংস্থা৷
চিং-ইয়ান লি/জেডএইচ
গত বছরের ডিসেম্বরের ছবিঘরটি দেখুন...
২০১৯: বিক্ষোভের বছর
জাতিগত বৈষম্য, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোধের দাবি নিয়ে এবছর সারা বিশ্বের লাখো মানুষ বিক্ষোভ করেছেন৷ ভারত থেকে হংকং বা ইরাক থেকে সুদান, দাবি আদায়ে পুরো সাল জুড়েই রাস্তায় গণআন্দোলন চলেছে৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/S. Sen
ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
বছরের শেষ দিকে এসে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে পুরো ভারতে বিক্ষোভের আগুন জ্বলছে৷ ধর্মীয় বৈষম্যপূর্ণ ওই আইনের বিরুদ্ধে সব ধর্মের লোকজন একত্রিত হয়ে আন্দোলন করছেন, এক সপ্তাতেই ঝরেছে অন্তত ২৩ প্রাণ৷
ছবি: Reuters/D. Sissiqui
বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে রাজধানী দিল্লির জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন শুরু হলে পুলিশ পাল্টা আঘাত করে; ক্যাম্পাস পরিণত হয় রণক্ষেত্রে৷
ছবি: Reuters/A. Abidi
হংকংয়ের স্থিতিশীলতায় ধাক্কা
চীনের মূলভূখণ্ডে বন্দি প্রত্যর্পণ নিয়ে প্রস্তাবিত একটি বিল বাতিলের দাবিতে জুন থেকে হংকংয়ে যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল তা এখন স্বায়ত্তশাসিত এ অঞ্চলের স্বাধিকার আন্দোলনে পরিণত হয়েছে৷ গণদাবির মুখে সেপ্টেম্বরেই বিলটি বাতিল করা হলেও আন্দোলন থামেনি৷
ছবি: Reuters/T. Peter
নির্বাচনেও প্রভাব
হংকংয়ের স্বাধিকার আন্দোলনে লাখো মানুষ সড়কে নেমে বিক্ষোভ করছে৷ এ আন্দোলন সাধারণ মানুষের মধ্যে এতটাই সাড়া ফেলেছে যে নভেম্বরে এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ এই বাণিজ্য নগরীর স্থানীয় নির্বাচনে গণতন্ত্রপন্থিরা বিশাল জয় পেয়েছেন৷
ছবি: Reuters/T. Siu
আবারও উত্তপ্ত হচ্ছে ইরাক
সাবেক স্বৈরশাসক সাদ্দামের আমল থেকেও ‘খারাপ সময়ের’ মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন ইরাকিরা৷ দুর্নীতি, বেকারত্ব, সরকারের উপর ইরানের প্রভাব ইত্যাদি নানা অভিযোগ নিয়ে অক্টোবর থেকে সাধারণ মানুষ সড়কে নেমে বিক্ষোভ করছে৷ বিক্ষোভ দমনে সরকারের নৃংসতায় এরই মধ্যে ৪৬০ মানুষ নিহত এবং ২৫ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
বৈরুতে সংহতির মুষ্টি
জ্বালানি ও তামাক পণ্যের উপর বাড়তি করারোপ এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে অক্টোবরে যে আন্দোলন শুরু হয় তা থামাতে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান সাদ হারিরি৷ কিন্তু পদ থেকে সরে গেলেও হারিরি ক্ষমতার কেন্দ্রে থেকে যাওয়ায় বিক্ষোভ চলছে৷
ছবি: Reuters/A. M. Casares
ইরানে জ্বালানি তেল নিয়ে বিক্ষোভ
বিশ্বের বৃহৎ তেল উৎপাদনকারী দেশ ইরানের উপর যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার কারণে নভেম্বর থেকে দেশটিতে জ্বালানি তেলের উপর রেশনিং শুরু হয়, পেট্রোলের দাম প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে৷ যার বিরুদ্ধে ২১টি নগরীতে সহিংস বিক্ষোভ হয়৷ বিক্ষোভে হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের৷
ছবি: Getty Images/AFP
ক্ষমতার লড়াই
এপ্রিলে সুদানের ক্ষমতা থেকে ওমর আল-বশিরকে উৎখাতের পর থেকেই দেশটির সেনাবাহিনী ও গণতন্ত্রপন্থিদের মধ্যে ক্ষমতার কেন্দ্রে যাওয়ার লড়াই চলছে৷ যাতে কয়েক ডজন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP
রঙিন বিক্ষোভ
চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ এবং আরো উন্নত স্বাস্থ্যসেবা, অবসর ভাতা এবং শিক্ষা ব্যবস্থার দাবিতে দুই মাস আগে চিলিতে বিক্ষোভ শুরু হয়৷ তবে বিক্ষোভে এখনো নৃশংসতার খবর পাওয়া যায়নি৷
ছবি: Reuters/I. Alvarado
স্বাধীনতার লড়াই
স্পেনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল বার্সেলোনা বহুদিন ধরেই স্বাধীনতা চাইছে৷ স্বাধীনতা প্রশ্নে গণভোটের আয়োজন হলেও কেন্দ্র সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপে তা ভণ্ডুল হয়ে যায়৷ মাদ্রিদ সরকারের দমনের বিরুদ্ধে কাতালুনিয়ায় বিক্ষোভ তাই নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে৷