হংকংয়ের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেওয়ায় রোববার প্রথমবারের মত গুলি ছুড়েছে পুলিশ, আটক করা হয়েছে ৩৬ বিক্ষোভকারীকে৷
বিজ্ঞাপন
বিক্ষোভকারীরা লাঠি ও রড দিয়ে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ধাওয়া করলে বাধ্য হয়ে তিনি ফাঁকা গুলি ছোড়েন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে৷
পুলিশ বলছে, নগরীর কোওয়াই চুং স্টেডিয়ামে ভারী বৃষ্টির মধ্যেও কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করছিলেন৷ এরপর বিক্ষোভকারীদের একটি দল স্টেডিয়াম পাশের সুউইন ওয়ান জেলার একটি প্রধান সড়ক দখল করে এবং ফুটপাত থেকে ইট খুলে নেয়৷ এদের কেউ কেউ পুলিশকে লক্ষ্য করে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে৷
পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপের পাশাপাশি জলকামান ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের প্রতিহতের চেষ্টা করে৷ বিক্ষোভকারীদের সতর্ক করতে একটি বড় ব্যানারও প্রদর্শণ করেছিল তারা৷
পুলিশের ভাষ্য, গত জুন মাস থেকে এই বিক্ষোভ শুরু পর রোববার তা সহিংসতায় রূপ নয়৷ তবে বিক্ষোভ দমনে পুলিশ পদক্ষেপ নিলে পিছু হটে বিক্ষোভকারীরা৷ এ সময় ৩৬ জনকে আটক করা হয়৷
পুলিশ বলছে, একটি জায়গায় ৮ থেকে ১০ জন বিক্ষোভকারী লাঠি ও রড নিয়ে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে আক্রমণ করেন৷ এ সময় তিনি আত্মরক্ষার্থে ফাঁকা গুলি ছোড়েন৷ ছয়জন পুলিশ কর্মকর্তা অস্ত্র তাক করলেও তাদের মধ্যে একজনই ফাঁকা গুলি ছুড়েছেন৷
ডয়চে ভেলে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সংবাদদাদা শার্লট চেলসম-পিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ফুটেজ পোস্ট করে বলেছেন, আসলেই যে গুলি যে চালানো হয়েছে সেই মুহূর্ত দেখাতে তিনি সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন৷
এই সংঘাতের পর হংকং সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘‘বিক্ষোভকারীদের ক্রমবর্ধমান অবৈধ ও সহিংস কর্মকাণ্ড কেবল ভয়ানকই নয়, তারা হংকংকে একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে৷''
১৯৯৭ সালে ব্রিটিশদের থেকে চীনের কাছে হস্তান্তরের পর হংকংয়ের ইতিহাসে গত কয়েক মাস ধরে চলা এই প্রতিবাদকে সবচেয়ে বড় আন্দোলন বলা হচ্ছে৷
চীনের কাছে হস্তান্তরের সময় যুক্তরাজ্য শহরটির স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতা এবং স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা অটুট রাখার প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিয়েছিল৷ হংকংয়ের কারণেই চীনকে ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থাপনার' নীতিতে চলতে হচ্ছে৷
এসআই/ (এএফপি, এপি, ডিপিএ, রয়টার্স)
হংকং আন্দোলন: ধ্বস নেমেছে অর্থনীতিতে
এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক সংকেটর মুখোমুখি হংকং৷ ওয়াল্ট ডিজনি থেকে ম্যারিয়ট—আন্দোলনের উত্তাপ লাগছে বৈশ্বিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গায়ে৷ মঙ্গলবার বাতিল করা হয়েছে সব ফ্লাইট৷
ছবি: imago/Photoshot/Construction Photography
কার্যত অচল বিমানবন্দর
মঙ্গলবার বিক্ষোভকারীদের আন্দোলনের মুখে সব ফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে হংকং বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ৷ হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী কেরি লাম বলেছেন, আন্দোলনকারীদের কারণে এমন অবস্থা তৈরি হচ্ছে, ‘যেখান থেকে ফিরে আসা কঠিন হয়ে যাবে৷’ বিক্ষোভকারীরা পুরো শহর জুড়ে আতঙ্ক আর সহিংসতা ছড়িয়ে দিচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷ প্রত্যর্পণ বিল শুধু নয়, কেরি লামের পদত্যাগের দাবিতে ফুঁসছে হংকং৷
ছবি: picture-alliance/AP/V. Thian
ডিজনিল্যান্ডের পায়ে ফোঁড়া
হংকংয়ের ওয়াল্ট ডিজনির ডিজনিল্যান্ডে নেই মানুষের আনাগোণা৷ চলমান বিক্ষোভের কারণে এই বিনোদন কেন্দ্রের প্রতি আগ্রহ হারিয়েছে মানুষ৷ মার্কিন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী বব ইগার স্বীকার করলেন এই দুরবস্থার কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Jialiang
অশান্তিতে ক্যাথে প্যাসিফিক
হংকংয়ের ফ্ল্যাগশিপ উড়োযান প্রতিষ্ঠানটি বলছে, জুলাই থেকে পড়ে গেছে টিকিটের কাটতি৷ অল্পসংখ্যক মানুষ এসেছে শহরে৷ আগাম বুকিং যেগুলো ছিল, সেগুলোও বাতিল করছেন যাত্রীরা৷ ব্যবসায় না হয় খারাপ সময় এলো কিছুটা, কিন্তু সামনে এসেছে আরেক সংকট৷ এয়ারলাইন্সটিতে কর্মরতদের মধ্যে যাঁরা আন্দোলনে যোগ দিয়েছে তাঁদের নিষিদ্ধ করার কথা বলেছে বেইজিং৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. De La Rey
ধাক্কা লেগেছে হোটেল ব্যবসায়
ইন্টারকন্টিনেন্টালের ক্রাউন প্লাজা আর হলিডে ইন এ মাসের শুরু থেকে বলে আসছে, চাহিদা বলে কিছু নেই৷ পর্যটকরা যেমন আসছেন না, তেমনি এই অস্থিরতার মধ্যে নেই কর্পোরেটদেরও আনাগোনা৷ এই সংকটের বাইরে নেই ম্যারিয়ট হোটেলও৷
ছবি: picture-alliance/J. Hoelzl
বিপণি বিতানে বিষণ্ণতা
চলমান অস্থিরতায় কারটিয়ের কিংবা প্রাদার মতো জনপ্রিয় ব্র্যান্ডেও মন্দা লেগেছে৷ চীনের ধণাঢ্য ক্রেতাদের কাছে ব্র্যান্ডগুলো ছিল বেশ কাঙ্ক্ষিত৷ কারটিয়ের মালিক রিচেমন্ট জানিয়েছেন, দোকান বন্ধ রাখা আর পর্যটক ঘাটতি, বিশেষ করে চীনা পর্যটক না আসায় বেচা-বিক্রি নেই বললেই চলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Z. Junxiang
খুচরা দোকানেও নেই খুচরো পয়সা
খুচরা ব্যবসা ছিল শহরের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি৷ জুন মাসে দেখা গেছে বিক্রিবাট্টা কমে গেছে ৯৩ শতাংশ৷ আন্দোলনের প্রভাবে জুলাইতেও কোনো ব্যবসা হয়নি৷ আগস্টে এসে উত্তরণ হয়নি পরিস্থিতির৷ এই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়াটা বড় চ্যালেঞ্জ৷
ছবি: Getty Images/A. Kwan
অর্থনীতির কঠিন সময়
হংকংয়ের অর্থনীতি একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে৷ রোববার এ কথা জানিয়েছেন শহরটির অর্থ সচিব পল চান৷ তিনি বলেন, এ কারণে বাণিজ্য সংকটের মুখে পড়েছে, অর্থনীতির গতিটাও শ্লথ হয়ে গেছে৷ ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের জন্য নিরাপদ শহরের যে খ্যাতিটা ছিল, এই আন্দোলন সেই সুনামকেও আঘাত করেছে৷ অর্থনৈতিক মন্দার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন শহরটির প্রধান নির্বাহী কেরি লাম৷