বেইজিংয়ের আরোপ করা জাতীয় নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে হংকং মুখর হয়েছিল গণতন্ত্রপন্থিদের প্রতিবাদে৷ সেই আন্দোলনে অংশ নেয়া ১৪জন আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
বাকি দুই অভিযুক্ত নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন৷ বৃহস্পতিবার হংকঙের উচ্চ আদালত ১৪জনকে ‘নাশকতার' মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে৷
দোষী সাব্যস্ত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য লিয়ুং কুয়োক-হুং, লাম চিউক-টিং, হেলেনা উয়োং ও রেমন্ড চান৷ দুজন সাবেক জেলা কাউন্সিলর লি ইয়ুয়ে-শুন ও লরেন্স লাউ নির্দোষ প্রমাণিত হন৷
২০২১ সালে, ‘হংকং ৪৭' নামে পরিচিত এমন ৪৭জন বিক্ষোভকারী ও অ্যাক্টিভিস্টকে জাতীয় নিরাপত্তা আইনের আওতায় ‘বিদ্রোহের চক্রান্ত' বিষয়ক ধারায় অভিযুক্ত করা হয়৷
এর মধ্যে ১৬জন গোটা মামলা চলাকালীন নিজেদের নির্দোষ দাবি করে আসছিলেন৷ বাকি ৩১জন তুলনামূলকভাবে হালকা শাস্তির আশায় দোষ স্বীকার করে নেন৷
দোষী সাব্যস্ত হলেন যারা, তাদের তিন বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও হতে পারে৷ এ বছরের শেষে সাজা শোনানো হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
চীন ও হংকংয়ের নির্যাতিত শিল্পীরা
চীনের মূল ভূখণ্ডের শিল্পীদের মতোই হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থি শিল্পীরাও নিজেদের সৃজনশীলতায় লাগাম টানতে বাধ্য হচ্ছেন৷ নীচের ছবিঘরে থাকছে শিল্পের কারণে বেইজিংয়ের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়া কিছু শিল্পীর কথা৷
ছবি: Richard Shotwell/Invision/AP/picture alliance
লুই জিয়াওবো
কারাভোগ করা অবস্থায় ‘চীনে মৌলিক মানবাধিকারের জন্য দীর্ঘ অহিংস আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার স্বীকৃতিস্বরূপ’ ২০১০ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান লুই জিয়াওবো৷ চীনা এই লেখক, সমালোচক, দার্শনিক ও মানবাধিকারকর্মী একধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন৷ চীনা কমিউনিস্ট শাসকদের সবচেয়ে বড় সমালোচক ও সবচেয়ে বিখ্যাত রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাকে৷ ২০১৭ সালে ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করেন তিনি৷
ছবি: picture alliance / dpa
কেসি ওয়ং
সম্প্রতি হংকং ছেড়ে তাইওয়ানে পাড়ি জমিয়েছেন কেসি উওং৷ শৈল্পিক অনুভূতি প্রকাশে বাধাকে কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন তিনি৷ রাজনৈতিক পারফরম্যান্স আর্টের জন্য খ্যাত এই শিল্পী তিয়েন আনমেন হত্যাকাণ্ড এবং চীনা সেন্সরশিপের মতো বিষয় নিয়ে পারফর্ম করেছেন৷ ছবিটি ২০০৮ সালে ‘দ্য প্যাট্রিয়ট’ নামের একটি পারফরম্যান্সের৷ এই পারফর্ম্যান্স চলাকালে তিনি লাল রঙের খাঁচায় বন্দি অবস্থায় চীনের জাতীয় সঙ্গীত বাজান৷
ছবি: ANTHONY WALLACE/AFP
অ্যান্থনি উওং
অ্যান্থনি উওং (বামে) হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনের একজন সমর্থক৷ ২০১৮ সালে এক উপনির্বাচনে ‘আ ফরবিডেন ফ্রুট পার ডে’ (প্রতিদিন একটি করে নিষিদ্ধ ফল) শিরোনামের গান গেয়ে ব্যাপক আক্রোশের শিকার হন৷ হংকংয়ের দুরিনীতি বিরোধী সংস্থা ইনডিপেনডেন্ট কমিশন অ্যাগেনস্ট করাপশন তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের করেছে৷
ছবি: Alvin Chan/SOPA/Zuma/picture alliance
ডেনিসে হো
২০১৪ সালে হংকংয়ে আমব্রেলা মুভমেন্টে যোগ দেয়ার জন্য ক্যান্টোপপ গায়িকা, অভিনেত্রী এবং গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকারী ডেনিসে হোকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে৷ ২০১৯ সালে একটি টেড টকে তিনি বলেন, স্বৈরাচার সৃষ্টিশীলতাকে টেক্কা দিতে পারে না৷
ছবি: Asanka Ratnayake/Getty Images
আই ওয়েইওয়েই
সমসাময়িক শিল্পী এবং রাজনৈতিক সমালোচক আই ওয়েইওয়েইকে ২০১১ সালে কর ফাঁকির মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়৷ ৮১ দিন কারাভোগের পর মুক্তি পেয়ে কারাভ্যন্তরের ভয়াবহতার বর্ণনা দেন তিনি৷ ওয়েইওয়েই বলেন, ‘‘আমার শিল্পের যদি কোনো অর্থ থেকে থাকে, সেটা হচ্ছে স্বাধীনতার জন্য৷ যদি দেখি কর্তৃত্ববাদের কবলে কেউ হয়রানি হচ্ছে, আমি তার স্বাধীনতা রক্ষার সৈনিক হতে চাই৷
ছবি: Federico Gambarini/dpa/picture alliance
ঝো চিং
‘নিষিদ্ধ’ বিষয়ে লেখালেখি করে চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং লেখক ঝো চিংকে বেশ বিপদেই পড়তে হয়েছে৷ ২০১১ সালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘চীনে সত্য জানতে চাওয়ার মানুষদের জীবনে অশেষ দুর্দশা নেমে এসেছে৷ সত্য জানা একজন সাধারণ মানুষও যদি তা প্রকাশ্য়ে বলে, তাকে তার চাকরি বা পরিবারকে হারাতে হতে পারে৷ সত্য বলা লেখকের নিত্যসঙ্গী কারাদণ্ডের হুমকি৷ একজন সত্য বলা কর্মকর্তা তার জীবন হারাতে পারেন৷’’
ছবি: Ai Weiwei/Zhou Qing
বাদিউচাও
এটি অবশ্য চীনের বিখ্যাত রাজনৈতিক কার্টুনিস্ট, শিল্পী ও অধিকারকর্মীর আসল নাম নয়৷ ২০০৯ সালে তিনি সাংহাই ছেড়ে অস্ট্রেলিয়ায় বাস করতে শুরু করেন৷ কিন্তু তারপরও নিজের পরিচয় গোপন রাখার স্বার্থে বাদিউচাও নামকেই বেছে নিয়েছেন৷ স্যাটায়ার ও পপ সংস্কৃতির মিশ্রণ ঘটিয়ে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রোপাগান্ডার সমালোচনা করেন তিনি৷ তার সমালোচনার অন্যতম লক্ষ্য প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং৷
ছবি: Libor Sojka/Ctk/dpa/picture alliance
ক্লোয়ে ঝাও
২০২১ সালে সেরা পরিচালক হিসেবে গোল্ডেন গ্লোব জেতার পর চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বেইজিংয়ে জন্ম নেয়া ক্লোয়ে ঝাওকে ‘চীনের গর্ব’ বলে উল্লেখ করেছিল৷ কিন্তু এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার নামের উল্লেখ করা হলে সেগুলোও মুছে ফেলা হতে থাকে৷ ধারণা করা হয় ২০১৩ সালে ফিল্মমেকার ম্যাগাজিনকে দেয়া সাক্ষাৎকারই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘চীনে সবখানেই মিথ্যের ছড়াছড়ি’৷
ছবি: Richard Shotwell/Invision/AP/picture alliance
8 ছবি1 | 8
যাবললেনবিচারক
বিচারক অ্যান্ড্রু চ্যান, অ্যালেক্স লি ও জনি চ্যান এক বিবৃতিতে নিজেদের রায়ের সারমর্ম তুলে ধরেন৷ সেখানে বলা হয়, ‘‘১৪জন অভিযুক্তের লক্ষ্য ছিল ‘একই সাথে মুখ্য আধিকারিক ও সরকারের ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের পতন'', যা তাদের মতে, ‘‘হংকঙে একটি সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি করতে পারতো৷’’
হংকঙেগণতন্ত্রেরআন্দোলনওচীনেরভূমিকা
২০১৯ সালে বেইজিং জাতীয় নিরাপত্তা আইন চালু করার চেষ্টা করলে হংকঙে ব্যাপক আকারে গণ আন্দোলন শুরু হয়৷ গণতন্ত্রপন্থিদের মতে, এই আইন সেই সব স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে, যা ১৯৯৭ সালে ব্রিটিশ কর্তৃত্ব থেকে মুক্ত হবার সময়ে নিশ্চিত করা হয়৷
২০২০ সালের জুলাই মাসে নির্বাচনের আগে প্রাথমিকভাবে প্রার্থী বাছাইয়ের একটি প্রস্তাবকে ঘিরে বাড়তে থাকে টানাপোড়েন৷ সরকারপক্ষের মতে এই প্রস্তাবের সাহায্যে সরকারকে ‘পঙ্গু' করে দিতে চায় এই আন্দোলন৷
কিন্তু গণতন্ত্রপন্থিরা বলেন যে এটি আসলে শহরের নির্বাচনে সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ের সাধারণ প্রচেষ্টা ছিল মাত্র৷
এই মামলার দিকে তীক্ষ্ণ নজর রয়েছে আন্তর্জাতিক মহলের৷ অভিযোগ ওঠে যে এই মামলার কাজে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের ছোঁয়া রয়েছে৷ তা খতিয়ে দেখতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের কূটনীতিকরা শুনানির সময়ে সেখানে উপস্থিত ছিলেন৷
এই পশ্চিমা প্রতিনিধিদের দাবি, অবিলম্বে সকল অভিযুক্তদের মুক্তি দেওয়া হোক৷