1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হজযাত্রার হ-য-ব-র-ল

২ আগস্ট ২০১৯

ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি হজ৷ তবে আর্থিক এবং শারীরিকভাবে সামর্থ্যবান ইসলাম অনুসারীদের জন্য হজকে আবশ্যক ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়৷ হজব্রত পালনে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা আরবি জিলহজ মাসে ছুটতে থাকেন পবিত্র নগরী মক্কায়৷

Gläubige auf dem Mount Arafat
ছবি: AFP/Getty Images/A. Al Rubaye

ধর্মীয় মতে আর্থিক সামর্থ্য কিংবা দৈহিক শক্তির কথা বলা হলেও, প্রতিবছরই বয়সের ভারে ন্যূব্জ অনেকেই হজযাত্রী হিসেবে সৌদি আরবে যান৷ আল্লাহর নৈকট্য লাভ আর পরকালের শান্তির আশায় অর্থ কিংবা বার্ধক্য কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায় না৷ ৩১ জুলাই পর্যন্ত ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হিসেবে দেখা যায়, হজব্রত পালনে সৌদি আরব পৌঁছেছেন এক লক্ষ পাঁচ হাজার ৪২৫  হজযাত্রী৷ এদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীর সংখ্যা ছয় হাজার ৯১৬ আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রী ৯৮ হাজান ৫০৯ জন৷ বাংলাদেশ থেকে এ বছর প্রায় এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজযাত্রী হজ পালনে সৌদি আরব যাওয়ার কথা রয়েছে৷

সরকারি ব্যবস্থাপনার চেয়ে প্রতিবারই বেসরকারি ব্যবস্থাপানায় বেশিসংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণ থাকে৷ বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যাঁরা হজে যান, তাঁদের জন্য আছে পাঁচশতাধিক এজেন্সি৷ কিন্তু প্রতিবারই হজ নিয়ে নানা কাণ্ড কারখানার শেষ থাকে না৷ প্রতারণা থেকে হেনস্থা-সব ঝামেলার শিকার হতে হয় হজযাত্রীদের৷ সরকার প্রতিবছরই নানা ব্যবস্থা নিলেও এই সংকটের অবসান হচ্ছে না কিছুতেই৷

গত কয়েকবছরের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, হজযাত্রীরা সময়মতো ভিসা পান না৷ ভিসা যখন পেলেন, দেখা গেলো ফ্লাইটের নেই হদিস৷ নানা ঝক্কি ঝামেলা মাথায় নিয়ে পৌঁছালেন সৌদি আরব৷ পৌঁছানোর পর দেখা গেল প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নেই থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা৷ ধর্মভীরু বাঙালি মুসলমান আল্লাহর সান্নিধ্যলাভে এসে মেনে নেন সব কিছু৷ কিন্তু ফেরার সময়েও তাঁদের ভোগান্তির শেষ নেই৷ এবারও ব্যতিক্রম ঘটেনি৷ ২৯ জুলাইয়ের প্রথম আলো অনলাইন সংস্করণে এক প্রতিবেদেন দেখা যায়, ২০১৭ সাল থেকে হজ প্রস্তুতি নেয়া খাদিজা খানম এবার তিন লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন এজেন্সিকে৷ ‘‘সব প্রস্তুতি সম্পন্ন৷ ২৬ জুলাই ফ্লাইট৷ কিন্তু নির্ধারিত সময়ে বিমানবন্দরে গিয়ে জানতে পারলেন, তাঁর ভিসাই হয়নি৷ তিনি ও তাঁর স্বামী শেখ মহসিন হোসেন ভিসার আশায় দিন গুনছেন৷ এখন তাঁদের বলা হচ্ছে, আরও ৫০ হাজার টাকা করে দিতে হবে৷ খাদিজা খানম ও তাঁর স্বামী মহসিনসহ অন্তত ৫৮ জন ঢাকা ছাড়তে পারেননি৷ তাঁদের যাওয়ার কথা ছিল ২৬ জুলাই৷ তাঁরা সবাই খুলনা ও বাগেরহাট অঞ্চলের৷ এর বাইরে অন্য দুটি এজেন্সির আরও ২০ জনের ভিসাসংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে৷'' এমন গল্পের কোনো অভাব নেই৷

এর ফলে শুধু হজযাত্রীরাই চরম ভোগান্তির শিকার হন না, এক ধরণের চাপা আতঙ্কে থাকতে হয় তাঁদের পরিবার পরিজনদেরও৷ পত্রিকার পাতা খুললে কিংবা টেলিভিশনে চোখ রাখলে, গত কয়েকবছর ধরে এই অভিযোগগুলোই ঘুরে ফিরে আসছে৷ কিন্তু কথার ফুলঝুড়ি থাকলেও নেই দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ৷ এসব অব্যবস্থাপনার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়, হজ অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা এবং অসাধু হজ এজেন্সি জড়িত থাকে বলে বিস্তর অভিযোগ আছে৷

অভিযোগ এলে গতানুগতিক কিছু ব্যবস্থার বাইরে যেন আর কিছুই করার নেই কর্তৃপক্ষের৷ শোকজ, নামমাত্র জরিমানা, অল্প কিছুদিনের জন্য লাইসেন্স স্থগিত করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ধর্ম মন্ত্রণালয়৷ ফলে, পরেরবার আবারও পুরনো চেহারায় ফিরে আসে এজেন্সিগুলো৷ এসব অপরাধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হলে হয়তো পরিস্থিতির উন্নতি হতো৷

তানজীর মেহেদী, ডয়চে ভেলেছবি: Privat

জরিমানার পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে, অভিযুক্ত এজেন্সির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়, জেল-জরিমানা এবং লাইসেন্স স্থায়ীভাবে বাতিলের সিদ্ধান্ত নিলে অসাধু এজেন্সিগুলো ঘুরে ফিরে একই অপরাধ বারবার করার সাহস করতো না৷ সবশেষ এ বছরের ৩১ জুলাই হজযাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে বুধবার ছয়টি হজ এজেন্সিকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে হজ অফিস৷

অব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত এজেন্সিগুলোর নাম ও মালিকের নাম জনসম্মুখে প্রকাশ করে দিতে পারে মন্ত্রণালয়৷ এতে তারা সামাজিকভাবে লজ্জিত হওয়ার পাশাপাশি জনগণ তাদের চিনে রাখতে পারবে৷ ফলে ভবিষ্যতে কেউ হজে যাওয়ার জন্য আর তাদের দ্বারস্থ হবে না৷

হজযাত্রা নিয়ে সরকারের সমালোচনাও কম নয়৷ রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থে খরচ করে রাষ্ট্রীয় হজযাত্রীর সংখ্যাও দিন দিন বেড়েই চলেছে৷ বলা হচ্ছে, সৌদি আরবে হজযাত্রীদের দেখভালের সুবিধার্থে এই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে৷ হজ ব্যবস্থাপনার সার্বিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনা দিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদাসহ সৌদি আরব যাচ্ছেন ১০ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল৷ ৪ আগস্ট এই হজ প্রতিনিধি দলটির ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে৷ সর্বোচ্চ ১৫ দিন এই দলটি সৌদি আরবে অবস্থান করবে৷ রাষ্ট্রীয় অর্থে হজ কতখানি যৌক্তিক-এই প্রশ্নও ঘুরে ফিরে এসেছে৷ এসব কারণে হজ নিয়েও রাজনৈতিক মন্তব্য থেকেও নিজেদের আর দূরে রাখেনি রাজনৈতিক দলগুলোও৷

গত ১৯ জুলাই হজ প্রতিনিধি দলে সদস্য হিসেবে সিইসির অন্তর্ভুক্তি ‘পুরো হাস্যকর ব্যাপার' বলে অভিহিত করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সরকারের কাছ থেকে ব্যাখ্যাও দাবি করেন ফখরুল৷ তিনি বলেন, এটা প্রমাণ করে যে, এই সরকার এবং নির্বাচন কমিশন এই রাষ্ট্রটাকে তারা তাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনে করেন৷ ফখরুল আরো বলেছিলেন, ‘‘উনি (সিইসি) যদি হজ করতে চাইতেন তাহলে বাদশার বিশেষ মেহমান হয়ে যেতে পারতেন৷''

হজযাত্রা নির্বিঘ্ন আর হজের পবিত্রতা রক্ষায় সরকারকেই ভূমিকা রাখতে হবে, সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ