1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌হঠাৎ গাঁজা নিয়ে ব্যস্ত সরকার

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

সুকুমার রায়ের ‘‌হযবরল’ গল্পের রুমাল থেকে বেড়াল হয়ে যাওয়ার মতো, অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের রহস্য-মৃত্যুর তদন্ত হঠাৎ বদলে গেল, হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কারা কী নেশা করেন, তার অনুসন্ধানে৷

ছবি: picture-alliance/dpa/empics/D. Dyck

ভারতে সরকার এবং বিজেপির বিরোধীরা বলছেন, বিহারে আসন্ন বিধানসভা ভোটে রাজপুত ভোট টানতেই হিন্দি ছবির জনপ্রিয় অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর সিবিআই তদন্ত শুরু করেছে কেন্দ্র৷ সেই তদন্তে, সুশান্তের বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে প্রথমে অভিযোগ আনা হয়েছিল সুশান্তের অ্যাকাউন্ট থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার৷ অর্থনৈতিক অপরাধের তদন্তকারী সংস্থা ইডি সেই অভিযোগের সপক্ষে প্রমাণ জোগাড় করতে না পারায় তদন্তের ভার চলে গেল ভারতের মাদক নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের হাতে৷ তারই জেরে একে একে ডাক পড়লো অভিনেত্রী দীপিকা পাডুকোন, সারা আলি খান, শ্রদ্ধা কাপুরের৷ অভিযোগ, এরা সবাই গাঁজা এবং অন্যান্য মাদকের নেশা নিয়মিত করতেন৷ কিন্তু চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত শিল্পী, কলাকুশলীরা যে গাঁজা, চরস, ইত্যাদি খান, সেটা কি এই প্রথম জানা গেল?‌

‌নেশা করে তাঁরা যে দেশ বিরোধী কিছু করেন, তা তো নয়: অনিরুদ্ধ ধর, চলচ্চিত্র নির্মাতা

This browser does not support the audio element.

চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং চিত্র সমালোচক অনিরুদ্ধ ধর যুক্ত ছিলেন অপর্ণা সেনের ‘‌মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আয়ার’ ছবির সহ-পরিচালক হিসেবে৷ তিনি জানালেন তাঁর একটি অভিজ্ঞতার কথা৷ মুম্বইয়ের দুই বর্ষীয়ান শিল্পী ভীষ্ম সাহানি এবং সুরেখা সিক্‌রি ওই ছবিতে অভিনয় করতে এসেছিলেন৷ উত্তরবঙ্গের আউটডোরে প্রতিদিনের শুটিংয়ের পর তাঁদের দুজনকে গাঁজা খেতে খেতে গল্প করতে দেখা যেতো৷ কিন্তু তার প্রভাব তাঁদের কাজে কখনো পড়েনি৷ ভোরবেলা যত অসময়েই শুটিংয়ে হাজির হওয়ার থাকতো, তাঁরা নির্ভুল ওই সময়েই পৌঁছে যেতেন৷ অর্থাৎ, নেশা করার জন্য তাঁদের পেশাদারিত্বের কোনো ঘাটতি চোখে পড়েনি৷ আরেক বিখ্যাত অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহর কথাও জানিয়েছেন অনিরুদ্ধ ধর, যিনি মজা করে বলতেন, গাঁজা না খেলে ভালো অভিনয় করা যায় না৷
কিন্তু চলচ্চিত্রের জগতে গাঁজা-চরসের পিছনে পড়ে যাওয়ার অন্য কারণও আছে মনে করেন অনিরুদ্ধ৷ তাঁর কথায়, ‘‌‘‌নেশা করে তাঁরা যে মারাত্মক একটা কিছু করেন, দেশ বিরোধী কিছু করেন, তা তো নয়!‌ কিন্তু তা হলে তাঁদের এরকম শাস্তি দেওয়া হচ্ছে কেন?‌আমার মনে হয়, এটার পিছনে একটা উদ্দেশ্য আছে৷ যেমন কিছুদিন আগে দীপিকা পাডুকোন জেএনইউ-তে গিয়েছিলেন৷ তাঁকে একটা শিক্ষা দেওয়ার ব্যাপার ছিল৷ এভাবে, যাঁরাই সরকার বিরোধী কিছু কথা বলছেন, যাঁরাই সরকারবিরোধী মনোভাব পোষণ করছেন, তাঁদেরকে একটা ইঙ্গিত দেওয়া, যে, এইসব করলে তোমাকে খুনখারাপির চার্জে তো ফেলা যাবে না, কিন্তু নার্কোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর মাধ্যমে শিক্ষা দিয়ে দেবো!‌’’

এই প্রয়াস ভীষণভাবে রাজনৈতিক এবং পুরুষতান্ত্রিক: গুলশনারা খাতুন, অভিনেত্রী

This browser does not support the audio element.

সুশান্ত সিংয়ের রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় এখনো পর্যন্ত প্রধানত মহিলাদেরই বেশি জেরার সামনে পড়তে হচ্ছে৷ মাদক নেওয়ার প্রশ্নেও অভিযুক্ত মূলত মহিলারাই৷ রিয়া চক্রবর্তী থেকে দীপিকা পাডুকোন, সবাই অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ করেছেন বলে সমাজ ও সংবাদ মাধ্যমের একাংশ তুলে ধরছে৷ অভিনেত্রী গুলশনারা খাতুন মনে করেন, এর পিছনে পুরুষতন্ত্রের চিরকালীন রাজনীতি কাজ করছে৷ দীপিকাকে ডেকে নার্কোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর জেরার দিন, তাঁর পক্ষে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন গুলশনারা৷ গণ হারে রিপোর্ট করে সেটি তুলে দেওয়া হয়েছে৷ গুলশনারার সোজা কথা, ‘‌‘‌বিজেপি, আরএসএস যে ভারতমাতার রূপটি তুলে ধরে, তা পুরুষতন্ত্র যেভাবে মেয়েদের দেখতে চায়, সেই ছাঁচেই৷ এবং এই ছাঁচেই বিশ্বের প্রতিটি মহিলা পড়বে, এটাই তারা প্রমোট করতে চায়, তারা বিশ্বাস করে এবং এটাই তাদের প্রচার৷ এই ছাঁচের বাইরে যখনই কোনও মেয়ে এই চরিত্রের বাইরে অন্যরকম একটি চরিত্র হয়ে ওঠে, যা তাদের পুরুষতন্ত্রের বিরোধী, বা তাদের তৈরি করে দেওয়া যে সামাজিক রীতিনীতি, তার বিরোধী, তখনই তাকে রাজনৈতিক দিক থেকে এবং রাষ্ট্রনৈতিক দিক থেকে অপমান করার একটা প্রয়াস চলতে থাকে৷ এই প্রয়াস ভীষণভাবে রাজনৈতিক এবং পুরুষতান্ত্রিক৷’’

গতবছর অক্টোবরের ছবিঘরটি দেখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ