বৃষ্টিতে তিস্তা, ঘাঘটসহ বিভিন্ন নদনদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় হঠাৎ বন্যা দেখা দিয়েছে৷ ফলে অনেক ফসলি জমি ডুবে গেছে উত্তরের কয়েকটি জেলায়৷ শস্যক্ষেত ডুবে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষকেরা৷
বিজ্ঞাপন
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, তিস্তার পানি দোয়ানি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড৷ ভেঙে গেছে তিস্তা ব্যারাজের সড়কের ফ্লাড বাইপাস, খুলে দেওয়া হয়েছে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট৷ হঠাৎ বন্যায় গঙ্গাচড়া উপজেলার ছালাপাক, চর চল্লিশা, আলমবিদিতর, লক্ষ্মীটারি, কোলকোন্দ, নোহালী ও গজঘণ্টার নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়ায় অনেক পরিবার এখন পানিবন্দি৷
নদীঘেঁষা চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলের অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে উঁচু জায়গায়৷ লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চরইশরকুল, ইছলি, পূর্ব ইছলি, পশ্চিম ইছলি ও শংকর, বাগেরহাট,কেল্লারহাটসহ বেশকিছু নিচু এলাকায় কৃষিজমি ডুবে গেছে৷ চর চল্লিশার ৬০ বছর বয়সি কৃষক আজমত আলী ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘পানির নিচে থাকলে আলুগুলো নষ্ট হয়ে যাবে৷ কিছুদিন আগেই লাগিয়েছিলাম, এখনই তুলতে হচ্ছে৷ অনেক ক্ষতি হয়ে গেল, জানি না কীভাবে মহাজনের ঋণ শোধ করব৷’’
আরেক কৃষক মনসুর মিঞা বলেন, ‘‘গতবার আলুতে অনেক লোকসান হয়েছে তাই এবার আগাম আলু চাষ করে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছিলাম৷ কিন্তু সব সপ্ন পনিতেই ডুবে গেল৷’’ মাত্র কয়েকদিন আগেই ৪০ শতক জমিতে রোমানা জাতের হাইব্রিড আলুর বীজ লাগিয়েছেন চর ছালাপাকের আলুচাষি হালিম মিয়া৷ জমি থেকে আলুর বীজগুলো তুলতে না পারলে সব পচে যাবে বলে আশঙ্কা তার৷
তিস্তার ধারে তিস্তা বিতর্ক
16:47
এদিকে শুধু বীজ লাগাতেই প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে আরেক চাষি কামাল হোসেনের যা দুদিনের টানা বৃষ্টিতে প্রায় শেষ৷ গতকাল হঠাৎ তিস্তার পানি বাড়ায় লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের বাগেরহাট এলাকার কৃষক আব্দুর রহিম মিয়ার লাগানো সব ফসলই পানিতে তলিয়ে গেছে৷
তবে তিস্তাপাড়ের মানুষজনকে নিরাপদ স্থানে নিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মর্নেয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন৷
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদ্দৌলা প্রিন্স বলেন, ‘‘উজানে ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে, যা তিস্তা পয়েন্টে এ মৌসুমের সর্বোচ্চ পানিপ্রবাহ৷ এজন্য আমরা তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়ে নদীর পানিপ্রবাহ অব্যাহত রেখেছি৷’’
এনএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণে শীর্ষ দশে বাংলাদেশের নদী
সমুদ্রে নদীবাহিত প্লাস্টিক দূষণে নবম স্থানে বাংলাদেশ৷ সম্প্রতি গবেষণায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে৷ গেল এপ্রিল মাসে সায়েন্স অ্যাডভান্সে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, সমুদ্রে নদীবাহিত প্লাস্টিক দূষণে শীর্ষ দশ দেশের নয়টিই এশিয়ার৷
ছবি: AFP via Getty Images
নদী থেকে সমুদ্রে
নেদারল্যান্ডস, জার্মানি ও নিউজিল্যান্ডের সাত গবেষকের করা এই গবেষণা বলছে, সমুদ্রের প্রায় ৮০ ভাগ নদীবাহিত প্লাস্টিক বর্জ্য আসে পৃথিবীর এক হাজারেরও বেশি নদী থেকে৷ এর একটি বড় অংশ আসে এশিয়ার নদীগুলো থেকে৷
ছবি: Imago/Nature Picture Library
ছোট নদীর দায়
২০১৭ সালে নেচার জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা বলেছিল, পৃথিবীর ২০টি বড় নদী, যার অধিকাংশই এশিয়াতে সমুদ্রের ৬৭ ভাগ প্লাস্টিক দূষণের জন্য দায়ী৷ তবে সায়েন্স অ্যাডভান্স জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা বলছে, বড় নদী নয়, বরং ঘনবসতিপূর্ণ নগর এলাকা দিয়ে যেসব ছোট নদী গেছে, সেগুলোই মূলত এই প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ে যায় বড় নদীতে এবং পরে তা সমুদ্রে পড়ে৷
ছবি: Gaston Brito Miserocchi/Getty Images
বছরে সর্বোচ্চ ২৭ লাখ টন
গবেষকদের হিসেবে, নদীগুলো বছরে কমপক্ষে ৮ লাখ টন থেকে সর্বোচ্চ ২৭ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে নিয়ে যায়৷ নেচারের গবেষণায় বলা হয়েছিল, এই প্রাক্কলন সাড়ে এগার লাখ থেকে ২৪ লাখ টনের কিছু বেশি৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
গবেষণায় দেড় হাজারের বেশি নদী
নতুন গবেষণাটিতে মোট ১,৬৫৬টি নদীর তথ্য নিয়ে কাজ করা হয়েছে৷ এখানে নদীর বেসিনগুলোর নানা তথ্য, নদীর ব্যবহার সবকিছুকেই গবেষণার আওতায় আনা হয়েছে৷ যেমন, সমুদ্রতীর থেকে নদীগুলোর দূরত্ব, বৃষ্টিপাতের প্রভাব, বাতাসের গতিবেগ, ভূমির ঢাল ও বিস্তৃতি এবং এগুলো প্লাস্টিক পরিবহণে কেমন প্রভাব ফেলে এসব৷
ছবি: Rui Vieira/empics/picture alliance
এশিয়ার দেশগুলো শীর্ষে
দূষণের মাত্রায় এশিয়ার নদীগুলো এগিয়ে আছে৷ শীর্ষ দশের ব্রাজিল ছাড়া বাকি সবদেশ এশিয়ার৷ শীর্ষ ৫০টি নদীর মধ্যে এশিয়ার আছে ৪৪টি৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/S. M. Rahman
সবার ওপরে ফিলিপাইন্স
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির রাজধানী ম্যানিলার জনবহুল এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া পাসিগ নদী দূষণের তালিকায় সবার ওপরে৷ বছরে প্রায় ৬৯ হাজার টন প্লাস্টিক বহন করে এই নদী৷ দেশটি বছরে মোট তিন লাখ ৬০ হাজার প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে ফেলে৷
ছবি: Getty Images/J. Aznar
৯-এ বাংলাদেশ
বাংলাদেশের অবস্থান ৯৷ বছরে প্রায় ২৫ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে ফেলে দেশটির নদীগুলো৷ বিশেষ করে ভারত ও বাংলাদেশের গঙ্গা-পদ্মা-মেঘনা বেসিন, কর্ণফুলি ও রূপসা নদী থেকে সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য যায় বঙ্গোপসাগরে৷ পদ্মা দিয়ে বছরে প্রায় সাত হাজার টন, কর্ণফুলি দিয়ে প্রায় তিন হাজার টন এবং রূপসা দিয়ে প্রায় এক হাজার ৪০০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে গিয়ে পড়ে৷
ছবি: Munir Uz Zaman/Getty Images/AFP
দ্বিতীয় ভারত, চতুর্থ চীন
ভারতের নদীগুলো বছরে এক লাখ ৩০ হাজার টন বর্জ্য সমুদ্রে নিয়ে যায়৷ আর চীন তৈরি করে প্রায় ৭১ হাজার টন৷
ছবি: picture-alliance/Imaginechina/S. Zhengyi
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিনিধিত্ব
শীর্ষ দশে সবচেয়ে বেশি প্রতিনিধিত্ব দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার৷ ফিলিপাইন্স ছাড়াও এখানে রয়েছে মালয়শিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড৷ শুধু এই দেশগুলোই বছরে প্রায় পাঁচ লাখ ৮০ হাজার টন বর্জ্য ফেলে সমুদ্রে৷
ছবি: AFP/B. Ismoyo
সমাধানসূত্র
আশার কথা হলো, সমুদ্র পরিষ্কার করার জন্য এখন পৃথিবীতে অনেকগুলো সংস্থা কাজ করছে৷ তারা প্রচুর অর্থও সেখানে ব্যয় করছে৷ কিন্তু গবেষকরা বলছেন, শুধু পরিষ্কার করাই সমাধান হতে পারে না৷ যেসব জনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলো দিয়ে এসব নদী বয়ে গেছে, সেসব এলাকায় পানিতে প্লাস্টিক বর্জ্য যেন না ফেলা হয়, তেমন উদ্যোগ নিতে হবে৷