1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হতাশ তরুণ আশ্রয়প্রার্থীরাই মূল সমস্যা

৮ আগস্ট ২০১৭

হামবুর্গে ছুরি হামলার সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে আহমেদ নামের এক আশ্রয়প্রার্থীকে৷ শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দারা কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করলেও কাজ হয়নি৷ এখন তাঁদের মধ্যে জন্ম নিয়েছে অবিশ্বাস৷

জাফর আব্দুল করিম
জাফর আব্দুল করিমছবি: Jaafar Abdul Karim

যখনই আমি কোনো শরণার্থী শিবিরে যাই বা কেউ আমাকে রাস্তায় চিনতে পারে, সবাই আমাকে ঘিরে ধরে৷ আমি আরবি বলি৷ সেই জন্যই হয়ত আমার কাছে তাঁদের অনেক প্রশ্ন থাকে৷ কেন এখনও শরণার্থী বিষয়ক ফেডারেল অফিস থেকে ডাক পাইনি? কেন আমাকে শুধু এক বছর থাকার অনুমতি দেয়া হয়েছে, তিন বছর কেন নয়? কেন আমার পরিবারকে আমার সাথে এনে রাখতে পারব না? কেন আমি থাকার জায়গা পালটাতে পারব না? কেন আমি চাকরি বা অ্যাপার্টমেন্ট নিতে পারব না? কেন, কেন, কেন?

সম্প্রতি আমি হামবুর্গের এক হোস্টেলে গিয়েছিলাম৷ সেখানেও আমাকে একই ধরনের প্রশ্নবাণে জর্জরিত করা হয়৷ কিন্তু এবার আমার নিজেরই বিশাল এক প্রশ্ন ছিল৷ কে সেই ২৬ বছর  বয়সি  আশ্রয়প্রার্থী, যে সুপার মার্কেটে হামলা চালিয়ে একজন নিরপরাধ পথচারীকে হত্যা করল, গুরুতর আহত করল আরো চারজনকে?

হোস্টেলে ঢুকেই আমার ছাত্রজীবনের কথা মনে পড়ে গেল৷ সারি সারি ১২ বর্গমিটারের রুম, মাঝখানে একটা রান্নাঘর৷

আহমেদ যে বাড়িতে থাকতোছবি: J. Abdul-Karim

আহমেদ ‘খুবই ধার্মিক ছিল, খুব চরমপন্থি ছিল', জানালেন তার পাশের রুমের এক বাসিন্দা৷ কখনও কখনও তার রুমে ঢুকে তাকে গান শুনতে মানা করত আহমেদ৷ ‘এটা পাপ', বলত আহমেদ৷

ছুরি হামলার ঘটনার কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে সে জানালা দিয়ে চিৎকার করে হোস্টেলের অন্য বাসিন্দাদের নামাজ পড়তে আসতে বলত৷ কেউ কেউ বলছেন, তারা আহমেদের রুমে জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর পতাকাও দেখতে পেয়েছেন৷ এক নারী বাসিন্দা বলছিলেন, ‘‘আমরা সবসময়ই জানতাম, সে আইএস-এর সদস্য৷''

এক তরুণ আমাকে বললেন, ‘‘আহমেদের ব্যাপারে আমরা অনেকবার হোস্টেল কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করেছি৷ কিন্তু কেউ আমাদের কথা শোনেনি৷ তারা কখনই আমাদের পাত্তা দেয় না৷ তাদের কাছে আমরা শুধুই কিছু সংখ্যা৷''

হোস্টেল কর্তৃপক্ষ আমার কাছে স্বীকার করেছে, আহমেদের বিষয়ে তাদের আগেই জানানো হয়েছিল৷

আহমেদের পুরনো একজন রুমমেটের সাথে কথা বলছেন জাফর আব্দুল করিমছবি: J. Abdul-Karim

মূল সমস্যা

হোস্টেলের বাসিন্দারা অবশ্য আহমেদকে নিয়ে নিজেদের মধ্যে খুব বেশি আলোচনা করেন না৷ কেউ কেউ নিজেদের মত প্রকাশ করতে ভয় পান৷

হোস্টেলে বেশিরভাগেরই সারাদিন কিছুই করার থাকে না৷ কেউ গান শোনে, কেউ বাজার করে, কেউ কেউ রান্না করে, বাস্কেটবল খেলে৷ কেউ কেউ কাজ করে, তবে তা অবৈধভাবে৷ তবে বেশিরভাগই পরিবারের সাথে ইন্টারনেটে কথা বলে, সারাদিন শুয়ে বসে কাটায়৷

হামবুর্গ হামলাকারী নিয়ে প্রতিবেদন করতে গেলেও হোস্টেলে অবস্থানের প্রতিটি মুহূর্তে আমি সে ইচ্ছা হারাতে থাকি৷ আমার পর্যবেক্ষণ বলছিল, সমস্যাটা সেই হামলাকারী না, মূল সমস্যাটা আরো বড়, অন্য কোনো জায়গায়৷

জাফর আব্দুল করিম

01:07

This browser does not support the video element.

জার্মান নীতির শিকার

অনেক শরণার্থীই ভেবেছিলেন দু'বছরের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে – ভাষা, অ্যাপার্টমেন্ট, কাজ, পরিবার৷ কিন্তু সে চিন্তা অঙ্কুরেই ধ্বংস হয়েছে৷ এখনও চলছে নানা রকমের যাচাই-বাছাই৷ আশ্রয়প্রার্থীদের অনেকে এখনও রেসিডেন্স পারমিটই পাননি৷ জার্মান ভাষা নিয়ে অনেক সমস্যায় পড়ছেন তাঁরা৷ জার্মান ভাষা শিক্ষার কোর্সে তাঁদের মৌলিক কিছু জিনিস শেখানো হয়৷ কিন্তু ভালোভাবে ভাষা আয়ত্ত করতে তাদের জার্মানদের সাথে মিশতে হবে৷ সেটা তাঁরা পারছেন না৷

অ্যাপার্টমেন্ট পাওয়া জার্মানদের জন্যও সহজ বিষয় না৷ কোনো কোনো শহরে অ্যাপার্টমেন্ট পাওয়া লটারি জেতার মতোই ভাগ্যের ব্যাপার৷ যত দিন যায়, নিজের দেশে ফেলে আসা পরিবারকে নিয়ে ভয়ও ততই বাড়তে থাকে৷ ছয় মাস পর কী আছে ভাগ্যে, জানেন না তাঁরা৷

এটা খুবই চিন্তার বিষয় যে, অনেকশরণার্থীই এখন নিজেদের পরিত্যক্ত ভাবেন৷ অনেকেই ভাবেন, তাঁদের কেউ সমর্থন করে না৷ একসময় ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকা আশ্রয়প্রার্থীদের চিত্র আমরা দেখতে পেতাম৷ আমরা ক্ষুব্ধ হতাম৷ এখন আর সে ছবি আমরা দেখি না৷ কিন্তু এখনও শরণার্থী শিবিরে অপেক্ষা করে আছেন অনেকে৷

জাফর আব্দুল করিম/এডিকে

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ