সৌদি আরবের রাজ পরিবারের এক সদস্যের মৃত্যুদণ্ড মঙ্গলবার কার্যকর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ সরকার যে দেশে নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে বদ্ধপরিকর, এই ঘটনা তার প্রমাণ বলে মন্তব্য করেছে মন্ত্রণালয়৷
বিজ্ঞাপন
তবে প্রিন্স তুর্কি বিন সৌদ বিন তুর্কি বিন সৌদ আল-কবিরকে কীভাবে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে তা মন্ত্রণালয় জানায়নি৷ সৌদি আরবে সাধারণত শিরশ্ছেদের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর বলছে, ২০১২ সালে কথিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে৷ সে বছরই প্রিন্সের হাতে খুন হন এক সৌদি নাগরিক৷ নিজেদের মধ্যে ঝগড়ার পর প্রিন্সের গুলিতে নিহত হন তিনি৷
লেবানিজ-অ্যামেরিকান সাংবাদিক ও নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতার শিক্ষক মোহামেদ বাজ্জি সংবাদটি টুইটারে শেয়ার করে লিখেছেন, ‘‘সৌদি রাজ পরিবার দেখাতে চাইছে যে, রাজ পরিবারের সদস্যেরও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷''
সৌদি নাগরিকদের জন্য এটি একটি ‘শক্তিশালী বার্তা' বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক আল ওয়াহাবি৷
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ক্ষেত্রে সৌদি আরব বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ দেশ হলেও রাজ পরিবারের সদস্যদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া একটি বিরল ঘটনা৷ এর আগে ১৯৭৫ সালে চাচাকে হত্যার দায়ে প্রিন্স ফয়সাল বিন মুসাইদ আল সৌদকে মৃত্যদণ্ড দেয়া হয়েছিল৷
সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা দেশের তালিকা
২০১৩ সালে মোট ২২টি দেশে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় বলে জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ ছবিঘরে থাকছে সেসব কথা৷
ছবি: Fotolia/lafota
চীন
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে, চীনে প্রতিবছর কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷ তবে ব্যাপারটিকে যেহেতু চীনে রাষ্ট্রীয় গোপনীয় বিষয় হিসেবে দেখা হয় তাই অ্যামনেস্টির পক্ষে নির্দিষ্ট সংখ্যা জানানো সম্ভব হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইরান
তিনভাবে ইরানে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় – গুলি করে, পাথর ছুড়ে আর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে৷ ২০১৩ সালে এভাবে কমপক্ষে ৩৬৯ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে৷ সামান্য অভিযোগে সাংবাদিক সহ মানবাধিকার কর্মীদের মৃত্যুদণ্ড দিয়ে মাঝেমধ্যেই সমালোচনার মুখে পড়ে দেশটি৷
ছবি: ISNA
ইরাক
সাদ্দাম হুসেনের আমলে ইরাকে বেশি সংখ্যায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা ঘটতো৷ ২০১৩ সালে ১৬৯ জনের বেশি বন্দিকে এই শাস্তি পেতে হয়েছে বলে জানিয়েছে অ্যামনেস্টি৷ এর মধ্যে বেশিরভাগই ছিল সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী৷
ছবি: picture alliance/dpa
সৌদি আরব
২০১৩ সালে ১৮ বছরের কম বয়সি তিনজন সহ কমপক্ষে ৭৯ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে সৌদি আরব৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Abir Abdullah
যুক্তরাষ্ট্র
ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে বিষ ঢুকিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যদণ্ড কার্যকর করা হয়৷ এভাবে ২০১৩ সালে ৩৯ জনকে শাস্তি দেয়া হয়৷ অবশ্য সে বছর কমপক্ষে ৮০ জনের বিরুদ্ধে মৃত্যদণ্ডের রায় দেয়া হয়৷
ছবি: CHANTAL VALERY/AFP/Getty Images
বাংলাদেশ ১৮ নম্বরে
সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা দেশের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে আছে সোমালিয়ার নাম৷ ২০১৩ সালে সেদেশে ৩৪ জনের বেশি বন্দির প্রাণ নেয়া হয়৷ তালিকায় বাংলাদেশের নাম রয়েছে ১৮ নম্বরে৷ অ্যামনেস্টির হিসেবে ঐ বছর বাংলাদেশে দু’জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷
ছবি: Mustafiz Mamun
6 ছবি1 | 6
উল্লেখ্য, সৌদি রাজ পরিবারের সদস্য সংখ্যা কয়েক হাজার৷ তাঁরা প্রত্যেকে সরকারের কাছ থেকে মাসিক ভাতা পেয়ে থাকেন৷ সবচেয়ে ঊর্ধ্বতন প্রিন্সরা রাজনৈতিক ক্ষমতা ও সম্পদের অধিকারী হয়ে থাকেন৷
প্রিন্স কবিরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মাধ্যমে চলতি বছর ১৩৪ জনকে এই দণ্ড দেয়া হলো বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি৷ সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি থেকে এই সংখ্যা বের করেছে সংস্থাটি৷
এদিকে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের হিসেব বলছে, ২০১৫ সালে সৌদি আরবে ১৫৮ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷ ফলে ইরান আর পাকিস্তানের পর সে দেশেই সবচেয়ে বেশি মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়৷ অবশ্য অ্যামনেস্টির তালিকায় চীনের নাম নেই৷ কারণ চীন কখনও তালিকা প্রকাশ করেনা৷
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ভয়ংকর কিছু উপায়
গিলোটিনে মাথা কাটা, হাতির পায়ে পিষ্ট করা- প্রাচীনকালে এ ধরনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পদ্ধতি অনেককে আতঙ্কিত করে৷ কিন্তু এরচেয়েও নৃশংস কিছু পদ্ধতি রয়েছে, যার কথা হয়ত আপনাদের জানা নেই৷ সেগুলো দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: fotolia
শরীরকে দ্বিখণ্ডিত করা
বহু বছর আগে ইংল্যান্ডে এই পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হতো৷ অপরাধী দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে সাজা দেয়ার স্থানে নিয়ে যাওয়া হতো৷ তারপর দুই পা’র মাঝ বরাবর কেটে ফেলা হতো৷
ছবি: picture-alliance/Godong/C. Leblanc
শূলে চড়ানো
রোমান সাম্রাজ্যে এ পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ছিল৷ যীশু খ্রীস্টকেও এভাবেই মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল৷ কাঠের তক্তার সঙ্গে হাত ও পায়ে পেরেক ঠুকে সেই তক্তা দাঁড় করিয়ে দেয়া হতো৷ এভাবে ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ত ব্যক্তিটি৷
ছবি: Reuters/J. Costa
কলম্বিয়ার টাই
কলম্বিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকটি দেশে প্রথমে অপরাধীর মাথা কেটে ফেলা হতো৷ তারপর জিভ টেনে বের করে মাথাটা গাছে বেঁধে রাখা হতো৷
ষাঁড়ের পেটে
সিসিলিতে অ্যাক্রাগাসের শাসনামলে এই ভয়াবহ পদ্ধতির প্রচলন শুরু হয়৷ লোহার ষাঁড় বানানো হতো৷ অপরাধীকে ঐ ষাঁড়ের পেটে ঢুকিয়ে এর নীচে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হতো৷ ষাঁড়ের মুখ দিয়ে বের হতো অপরাধীর আর্তনাদ৷ মনে হতো ষাঁড়টিই চিৎকার করছে৷
ছবি: picture alliance/Blickwinkel/W. G. Allgoewer
সেপুকু
জাপানী যোদ্ধা সামুরাই এই পদ্ধতি ব্যবহার করতেন৷ নিজের হাতেই অপরাধীর অন্ত্র বের করে আনতেন, আর যখন অপরাধী ছটফট করতো, তখন সামুরাইয়ের কোনো সহযোগী তরবারি দিয়ে অপরাধীর শিরচ্ছেদ করে দিতো৷
ছবি: Museum Kunstpalast, Düsseldorf, Graphische Sammlung
লিং চি
চীনে বিংশ শতাব্দিতে এসে এই পদ্ধতি বাতিল করা হয়৷ এ ধরণের মৃত্যুদণ্ডে অপরাধীর প্রতিটি অঙ্গ একে একে ছিন্ন করা হতো৷ আর চেষ্টা করা হতো, যাতে সে দীর্ঘ সময় এ অবস্থায় জীবিত থাকে৷
ছবি: Fotolia/D. Presti
জীবন্ত পুড়িয়ে মারা
১৯৩৭ সালে জাপানের সৈন্যরা বন্দি চীনাদের এই শান্তি দিয়েছিল৷
ছবি: Getty Images/U. Ifansasti
স্প্যানিশ থাবা
প্রাচীন কালে স্পেনে লোহা দিয়ে বিড়ালের থাবার মতো ধারালো হাতিয়ার বানানো হতো৷ আর অপরাধীর চামড়া ঐ হাতিয়ার দিয়ে খুবলে নেয়া হতো৷ চামড়ায় সংক্রমণের কারণে ঐ ব্যক্তির মৃত্যু ছিল অবধারিত৷
ছবি: fotolia
ক্যাথরিন হুইল
অপরাধীকে চাকার সঙ্গে বেঁধে দেয়া হতো৷ আর জল্লাদ ঐ চাকা ঘুরাতে থাকত, পাশাপাশি লাঠি দিয়ে প্রহার করতো৷ ফলে হাড্ডি ভেঙে ঐ ব্যক্তির মৃত্যু হতো৷