হনুমান জয়ন্তীতে দুইটি অভাবনীয় ঘটনা ঘটলো কলকাতায়। রাস্তায় নামলেন রাজ্যপাল। কোর্টের নির্দেশে মোতায়েন কেন্দ্রীয় বাহিনী।
বিজ্ঞাপন
রাজ্যপাল আনন্দ বোস বৃহস্পতিবার সকালে প্রথমে যান লেকটাউনে হনুমান মন্দিরে। তারপর তিনি যান একবালপুরে। সেখানে ময়ূরভঞ্জ রোডের বাজারে তিনি ঘোরেন। একটি তরমুজের দোকানে দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন দোকানির সঙ্গে। তরমুজের দাম জিজ্ঞাসা করেন।
এরপর ঘিঞ্জি গলি ধরে এগিয়ে চলেন। একটা জায়গায় একটি ব্য়ারিকেডের সামনে তিনি সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন, হাত মেলান। এমনভাবে কোনো রাজ্যপালের পথে নেমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে এভাবে মেলামেশা করার কোনো নজির সাম্প্রতিক অতীতে নেই।
রাজ্যপাল এরপর পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, ''এখানে শান্তি আছে এবং অশান্তি নেই দেখে ভালো লাগলো। বাংলা শান্তিস্তাপনের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে নিদর্শন হবে।''
একবালপুর থেকে তিনি যান পোস্তায়। সেখানে ছাতুর সরবৎ খান। নিজে দাম দেন। সেখানেও কোনো বিশেষ ব্যবস্থা তার জন্য করা হয়নি।
সোমবার রাতে বিক্ষোভকারীরা রিষড়া স্টেশনে পৌঁছায়। স্টেশনের চার নম্বর গেটের কাছে তুমুল উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ফলে ওই লাইনে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। এখনো বহু জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
উত্তরবঙ্গ থেকে ফিরলেন রাজ্যপাল
উত্তরবঙ্গ সফর মাঝপথে বন্ধ করে কলকাতায় ফিরে এসেছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। মঙ্গলবার রাজ্যপাল রিষড়া স্টেশনে যান। কথা বলেন পুলিশের সঙ্গে।
ছবি: Payel Samanta/DW
দিলীপের মিছিলে অশান্তি
হুগলির রিষড়ায় বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের মিছিলে অশান্তির ঘটনায় রবিবার রাত থেকে ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওই কাণ্ডে আটক করা হয়েছে আরও অনেককে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
১৪৪ ধারা
রিষড়া এবং মাহেশ এলাকায় জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। সোমবার সকাল থেকে থমথমে এলাকা। রবিবার অশান্তির পর থেকে বন্ধ সন্ধ্যাবাজার। জিটি রোড খোলা থাকলেও, পার্শ্ববর্তী দোকানগুলি বন্ধ। রাস্তাঘাটে লোকজনের জমায়েত নেই।
ছবি: Subrata Goswami/DW
দিলীপের সাংবাদিক বৈঠক
সাংবাদিক বৈঠকে দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ''রিষড়ায় শোভাযাত্রা বেরিয়েছিল। সবাই গান-বাজনা করে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ শুরু হয় ইটবৃষ্টি। যেখান থেকে ইট আসছিল, পুলিশ তাদের আটকাতে পারেনি।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
চলছে রাজনীতি
ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে পাল্টা বিজেপিকেই দায়ি করেছেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তাঁর কথায়, ''বাংলায় দুর্গাপুজোর সময় বড় বড় শোভাযাত্রা যায়। কোথাও কোনও অসুবিধা হয় না। কিন্তু বিজেপি যখন শোভাযাত্রা করে তখনই অশান্তি হয়।'’
ছবি: Privat
উত্তেজনা হাওড়াতেও
রিষড়ার ঘটনার তিনদিন আগেই, বৃহস্পতিবার বিকেলে উত্তেজনা ছড়ায় হাওড়ার কাজীপাড়ায়। অভিযোগ, এ দিন পুলিশ ও কয়েকটি বহুতল আবাসনকে নিশানা করে দফায় দফায় ইট-পাটকেল ছোঁড়া হয়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পুলিশের রুট মার্চ
পরদিন সকাল থেকেই শিবপুর থানা এলাকায় জিটি রোডের পরিস্থিতি ছিল থমথমে। অধিকাংশ দোকানপাট ছিল বন্ধ। সকাল থেকেই হাওড়া শহর পুলিশের পদস্থ কর্তারা বিশাল বাহিনী, কম্ব্যাট ফোর্স নিয়ে রাস্তায় নামেন।
গত বছরেও এই অঞ্চলে অশান্তি হয়েছিল। তারপরেও পুলিশ সেখানে মিছিলের অনুমতি দিল কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
10 ছবি1 | 10
রিষড়ার অশান্তির পর কোনো প্রতিক্রিয়া না জানানোয় বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী কটাক্ষ করেছিলেন রাজ্যপালকে। এবার হনুমান জয়ন্তীতে শান্তির বার্তা নিয়ে তিনি রাস্তায় নামলেন।
কেন্দ্রীয় বাহিনী
দিন কয়েক আগেই রামনবমীর মিছিল ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল হাওড়া, হুগলিতে। বৃহস্পতিবার হনুমান জয়ন্তী উপলক্ষে শুধু কলকাতাতেই রয়েছে অন্তত পাঁচটি মিছিল। দুইটি মিছিল হাওড়া থেকে এসে বড়বাজার, পোস্তায় শেষ হবে। একটি ভূতনাথ মন্দির ও একটি বন্দর এলাকায় বের হবে।
এই মিছিল নিয়ে প্রশাসন ও আদালতের চিন্তা রয়েছে। হনুমান জয়ন্তীতে শান্তি বজায় রাখার জন্যই আদালত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার নির্দেশ দেয়। তারপর কলকাতা, হাওড়া, ব্য়ারাকপুর ও চন্দননগর কমিশনারেটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
চুঁচুড়া ও কামারহাটিতে সশস্ত্র পুলিশ রুট মার্চ করেছে। যেসব জায়গায় মিছিল যাবে, সেখানে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রসাসনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, মিছিলে কোনো অস্ত্র বা লাঠি নেয়া যাবে না। বাইক মিছিল করা যাবে না। ডিজে বাজানো যাবে না। মিছিলের অনুমতি দেয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি করা হবে।
হনুমান জয়ন্তী পালন করা নিয়ে রাজ্যকে নির্দেশ পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।