সিঙ্গাপুরে ঐতিহাসিক ট্রাম্প-কিম শীর্ষ সম্মেলন নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বার বার অবস্থান বদল করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন৷ আপাতত সম্মেলনের প্রস্তুতি জোরকদমে চলছে৷ ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার ‘উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ’ দেখছেন৷
বিজ্ঞাপন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের মধ্যে শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে কিনা, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনো পুরোপুরি কাটছে না৷ ১২ই জুন সিঙ্গাপুরে দুই নেতার ঐতিহাসিক সাক্ষাতের পরিকল্পনা বৃহস্পতিবার বাতিল করে দিয়েছিলেন ট্রাম্প৷ তারপর শনিবার আবার মত বদলে আপাতত রাজি হয়েছেন৷
মার্কিন কর্মকর্তারা এই সম্ভাব্য শীর্ষ বৈঠকের প্রস্তুতি হিসেবে রবিবার দক্ষিণ কোরিয়া থেকে সীমান্ত পেরিয়ে উত্তর কোরিয়ায় প্রবেশ করে আলোচনা চালিয়েছেন৷ ফিলিপাইন্সে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও কোরিয়া বিশেষজ্ঞ সুং কিম এই দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন৷ উত্তর কোরিয়ার উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী চো সন হুই সে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন৷ ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার সূত্র অনুযায়ী, সোমবার ও মঙ্গলবারও আলোচনা চলবে৷ শীর্ষ সম্মেলনের ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি করতে আরও এক দল মার্কিন কর্মকর্তা সিঙ্গাপুরে গেছে৷ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত সুরে দেশ হিসেবে উত্তর কোরিয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনার উল্লেখ করেছেন৷ তাঁর মতে, সে দেশের অর্থনৈতিক ও আর্থিক পরিস্থিতির বিপুল উন্নতি হতে পারে৷ এ বিষয়ে কিম ও তিনি একমত৷
এর মধ্যে শনিবার দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে ইন আচমকা উত্তর কোরিয়ার নেতার সঙ্গে সীমান্তে সাক্ষাৎ করেন৷ সেই আলোচনায়ও কিম ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতে আগ্রহ প্রকাশ করেন৷ এপ্রিল মাসে তাঁদের প্রথম আলোচনায় কিম কোরীয় উপদ্বীপে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের যে অঙ্গীকার করেছিলেন, শনিবারও সেই অবস্থানে অটল ছিলেন তিনি৷ প্রেসিডেন্ট মুন বলেন, পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের প্রশ্নে ওয়াশিংটন ও পিয়ং ইয়ং-এর প্রত্যাশা থাকতে পারে৷ তিনি দুই পক্ষের উদ্দেশ্যে আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য দূর করার আহ্বান জানান৷ তাঁর ধারণা, কিম এখনো অ্যামেরিকার নিরাপত্তা গ্যারান্টির উপর আস্থা রাখতে পারছেন না৷ দক্ষিণ কোরিয়ার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নিরাপত্তার প্রশ্নে উত্তর কোরিয়ার দুশ্চিন্তা দূর করতে দুই কোরিয়া পরস্পরের উপর হামলা এড়াতে এক আনুষ্ঠানিক অঙ্গীকার সম্পর্কে আলোচনা করছে৷
উল্লেখ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি সম্পূর্ণ অকেজো করে দিতে চায়৷ অন্যদিকে পিয়ং ইয়ং দক্ষিণ কোরিয়া থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার এবং দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে মার্কিন পরমাণু অস্ত্র সরানোর বদলে নিজস্ব পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার ত্যাগ করার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করতে প্রস্তুত৷
উত্তর কোরিয়ার উপর চাপ বাড়াতে ট্রাম্প এমন নরম-গরম নীতি প্রয়োগ করে চলেছেন কিনা, তা স্পষ্ট নয়৷ তবে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স উত্তর কোরিয়াকে ‘লিবিয়া মডেল’-এর যে হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প তার ফলে যে বিরক্ত, তা স্পষ্ট হয়ে গেছে৷ হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র সারা হাকাবি সান্ডার্স বলেন, ‘‘এটা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মডেল৷ তিনি যেভাবে চাইছেন, সেভাবেই এই মডেল পরিচালিত হবে৷’’
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, রয়টার্স)
উত্তর কোরিয়া ও কিম জং উনের বিশেষ কিছু জিনিস
উত্তর কোরিয়ায় যেখানে সাধারণ মানুষ নানা ধরণের সমস্যায় জর্জরিত বলে অভিযোগ রয়েছে, সেখানে নেতা কিম জং উনের আরাম-আয়েশ-বিলাসিতার কোনো কমতি নেই৷ দেখে নিন তার কিছু নমুনা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Guttenfelder
অপূর্ব প্রাসাদ
উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ং ইয়ং-এ এই বিশাল প্রাসাদ রয়েছে৷ কুমসুসান প্রাসাদটি কিম ইল সুং এর সময়ে নির্মাণ করা হয়েছে৷ বিশ্বে আর কোন কমিউনিস্ট নেতার এমন বিশাল প্রাসাদ নেই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Guttenfelder
হোটেল
রিউগইয়ং বিশ্বের সবচেয়ে বড় হোটেলগুলোর একটি৷ পিরামিড আকারের ১০৫ তলা এ হোটেলের নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৮৭ সালে৷ সেই সময় দেশে কিম ইল সুং এর শাসন ছিল৷ কিম ইল সুং ছিলেন কিম জং উনের দাদা৷ এখনও হোটেলের নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Yonhap
আকাশে শাসন
উত্তর কোরিয়ার কাছে বিভিন্ন ধরণের এক হাজারটি বিমান আছে, যেগুলোর বেশিরভাগ সোভিয়েত ইউনিয়ন অথবা চীনে তৈরি৷ এর মধ্যে রয়েছে যুদ্ধে ব্যবহার করা যায় এমন হেলিকপ্টার, যুদ্ধ বিমান, পরিবহন বিমান এবং ড্রোন৷ কিম জং উনের কাছে এএএম এবং ট্রিপল এ সিস্টেমের মতো কিছু বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও আছে৷
ছবি: Reuters/Kcna
স্কি রিসোর্ট
কিম জং উনের নির্দেশে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১,৩৬০ মিটার উঁচুতে মাসিকরিয়ং নামে এক জায়গায় একই নামে একটি স্কি রিসোর্ট বানানো হয়েছে৷ এই স্থানটি উত্তর কোরিয়ার সেনাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে৷ এর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে সাড়ে তিন কোটি মার্কিন ডলার৷ পর্যটকদের জন্য এখানে ১২০ কক্ষ বিশিষ্ট হোটেল রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Kyodo/MAXPPP
জং উনের মোবাইল নেটওয়ার্ক
শোনা যায়, উত্তর কোরিয়ায় কেবল কিম জং উন এবং তাঁর কাছের মানুষদের ব্যবহারের জন্য একটি বিশেষ মোবাইল নেটওয়ার্ক রয়েছে৷ কোরীয় লিংক নেটওয়ার্কের প্রযুক্তি পরিচালক আহমাদ আল নোয়ামিনি জানিয়েছে, সাধারণ মানুষ এই মোবাইল পরিষেবার সুবিধা ভোগ করতে পারে না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/KCNA via KNS
ব্যক্তিগত দ্বীপ
দেশের উপকূলীয় এলাকায় একটি গোপন দ্বীপ রয়েছে৷ কিম জং উনের অতিথি হয়ে উত্তর কোরিয়া গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো এক তারকা৷ এই দ্বীপে রাখা হয়েছিল তাঁকে৷ শোনা যায়, এখানে আনন্দ বিনোদনের সবধরনের ব্যবস্থা রয়েছে৷ কিম জং উনের ব্যক্তিগত হেলিকপ্টার অবতরণের জায়গাও রয়েছে সেখানে৷
ছবি: Tourism DPRK
গল্ফ কোর্স
কিম জং উনের উত্তর কোরিয়ায় অসাধারণ কিছু গল্ফ ক্লাব রয়েছে৷ সরকারি কর্মচারীরা গল্ফ ক্লাবগুলোকে সবসময় ঝকঝকে করে রাখে৷ গল্ফ ছাড়া উত্তর কোরিয়ায় ফুটবল, বাস্কেটবল, আইস হকি আর কুস্তি জনপ্রিয় খেলা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Kyodo
সেনা ঘাঁটি
উত্তর কোরিয়ার নৌবাহিনীতে অনেক যুদ্ধ জাহাজ, টহল নৌকা এবং বড় বড় সামরিক জাহাজ রয়েছে৷ নিজেদের সামরিক শক্তিকে শক্তিশালী করা উত্তর কোরিয়ার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য৷ পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক শক্তিশালী দেশের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে দেশটি৷
ছবি: REUTERS/KCNA
বিলাসবহুল গাড়ি
শোনা যায়, ২০১৪ সালে কিম জং উন ১ দশমিক ৬ কোটি মার্কিন ডলার দিয়ে গাড়ি কিনেছিলেন৷ এর মধ্যে মার্সিডিজ বেনৎস, লিমোজিন আর আছে লাক্সারি স্পোর্টস কার৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Jones
পিয়ানো ভীষণ পছন্দ
শোনা যায়, কিম জং উনের কাছে ২০টিরও বেশি পিয়ানো আছে৷ এমন গুজবও রয়েছে যে, তিনি প্রতিদিনই পিয়ানো বাজান, আর যদি সুরের কোনো গণ্ডগোল হয়, সেটাকে তিনি পিয়ানোর দোষ হিসেবে মনে করেন, নিজের নয়৷
ছবি: Reuters/KCNA
সাবমেরিন
কিম জং উনের কাছে সোভিয়েত আমলের কিছু পুরানো সাবমেরিন রয়েছে৷ এছাড়া দেশটির কাছে আরো বেশ কয়েকটি চীনের সাবমেরিন রয়েছে৷ আর কিছু সাবমেরিন উত্তর কোরিয়ার সেনারা নিজেরাই তৈরি করেছে৷