যে দেশের সংকট ইউরো এলাকা তথা ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে ফেলেছিল, সেই গ্রিস সংবাদ শিরোনাম থেকে কিছুটা সরে গেছে৷ সম্প্রতি এক হরতালের কারণে আবার সবার নজর পড়লো এথেন্সের দিকে৷
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার পালিত হয়েছে ২৪ ঘণ্টার হরতাল৷ বিমান, রেল, মেট্রো রেল, ফেরি চলাচল বন্ধ৷ বন্ধ স্কুল সহ বন্ধ নানা সরকারি পরিষেবা৷ এমনকি হাসপাতাল ও অ্যাম্বুলেন্সও সীমিত আকারে সক্রিয় ছিল৷ বিক্ষুব্ধ শ্রমিক ও কর্মীরা হাজারে-হাজারে পথে নেমেছিলেন সরকারের ব্যয় সংকোচ নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখাতে৷ দেশের দুই বড় শ্রমিক সংগঠন বড় বড় শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করেছে৷ শুধু রাজধানী এথেন্সেই ১৮ থেকে ২০ হাজার মানুষ দুটি সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন৷
এর এক দিন আগে সাংবাদিকদের ধর্মঘটের ফলে সংবাদ-মাধ্যম স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল৷ ফলে বৃহস্পতিবার কোনো সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়নি৷ অবসর ভাতা কমানোর বিরুদ্ধে তাঁরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন৷ বেসরকারি ক্ষেত্রে অনেক সাংবাদিক মাসের পর মাস বিনা বেতনে কাজ করে চলেছেন৷
গ্রিসে অভিবাসীদের চরম দুর্দশা
আর্থিক মন্দার কারণে সামগ্রিকভাবে গ্রিসের অবস্থা অত্যন্ত কাহিল৷ এই কাহিল দশার ভুক্তভোগী হচ্ছেন সেদেশে অবস্থানরত বৈধ, অবৈধ অভিবাসীরা৷ অনেকে বাধ্য হয়ে বেছে নিচ্ছেন ভিক্ষাবৃত্তি, জীবন কাটাচ্ছেন রাস্তায়৷
ছবি: DW/ A. Stahl
ভয় এবং ঘৃণা
‘ভয়ের সভ্যতায় স্বাগতম’ - অভিবাসীদের জন্য গ্রিস ক্রমশ ভয়ের রাজ্যে রূপ নিচ্ছে৷ তাদের নিত্যদিনের জীবন এখন সহিংসতা, বৈষম্য আর দারিদ্র্যের বিস্বাদে ভরা৷
ছবি: DW/ A. Stahl
কিছুই বাকি নেই
কাগজপত্র ছাড়া দুই অভিবাসীকে একটু আগেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ অবৈধ অভিবাসী হিসেবে আটক এই দুই ব্যক্তি তাকিয়ে আছেন নিয়তির দিকে৷ গ্রিসে বসবাসকারী এরকম অসংখ্য অবৈধ ব্যক্তিকে প্রতিদিন গ্রেপ্তার করছে পুলিশ৷ গ্রেপ্তারের পর এদেরকে বাসে করে আটক কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়৷ প্রতিদিন অবৈধ অভিবাসী ভর্তি ১০-১৫টি বাস আটক কেন্দ্রে পৌঁছায়৷
ছবি: DW/ A. Stahl
বাক্সের মধ্যে জীবনযাপন
অর্থনৈতিক মন্দা গ্রিসের বাসিন্দাদের অত্যন্ত শক্তভাবে আঘাত করেছে৷ এর ফলে অনেকে হয়েছেন গৃহহীন, বাস করছেন রাস্তায়৷ ২০০৯ সালের তুলনায় বর্তমানে সেদেশের রাস্তায় বসবাসকারী গৃহহীনের সংখ্যা বেড়েছে ২৫ শতাংশ৷
ছবি: DW/ A. Stahl
ভয়ের মধ্যে বসবাস
আনা টাসাভি একজন সিরীয় শরণার্থী৷ কোন কাগজপত্র ছাড়া অবৈধভাবে এথেন্সে বাস করেন তিনি৷ তিনি দিনের বেশিরভাগ সময় বন্ধুর বাড়িতে তালাবদ্ধ অবস্থায় থাকেন৷ তার মধ্যে সবসময় আতঙ্ক কাজ করে, এই বুঝি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হবেন কিংবা ডানপন্থী গুণ্ডাদের আক্রমণের শিকার হবেন৷ নিজের দেশে ফেরাটাও তার জন্য অনেক বিপজ্জনক৷
ছবি: DW/ A. Stahl
বহিরাগত
একজন অভিবাসী নারী এবং তার শিশু এথেন্সের আটক কেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন৷ অবৈধ হিসেবে আটক হওয়ায় কয়েকমাস কারাভোগ করতে হয়েছে তাদের৷
ছবি: DW/ A. Stahl
বৈশ্বিক অর্থনীতি
গ্রিসে আর্থিক মন্দার কারণে সেদেশের সরকার এবং বিশ্বায়নে তাদের ভূমিকার উপর গভীর অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে৷
ছবি: DW/ A. Stahl
ব্যাপক ভিড়
এথেন্সের পররাষ্ট্র দপ্তরের সামনে প্রতিদিন ভিড় করেন অসংখ্য অভিবাসী৷ উদ্দেশ্য গ্রিসে বসবাসের একটি বৈধ কাগজ বের করার চেষ্টা করা৷ খুব ভোর থেকে গভীর রাত অবধি অপেক্ষা করেন তারা, কিন্তু এদের মধ্য থেকে খুব কম লোকই সেদেশে ছয়মাস বৈধভাবে বসবাসের কাগজ পান৷
ছবি: DW/ A. Stahl
কোন ভবিষ্যত নেই?
‘এমনিতেই এথেন্সে বসবাস অত্যন্ত কঠিন, আর একজন অভিবাসী হিসেবে অসম্ভব৷ আমি এখানে এসেছিলাম একটু ভালো ভবিষ্যতের আশায়, কিন্তু এখানে কোন ভবিষ্যতই নেই’, ডয়চে ভেলেকে বলছিলেন এক অভিবাসী৷ নিজের নাম প্রকাশে আগ্রহী নন তিনি৷
ছবি: DW/ A. Stahl
কঠিন বাস্তবতা
ইউরোপে আগমনের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে গ্রিসে আসেন আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ৷ কিন্তু এরপর তারা এক জটিলতা থেকে অন্য জটিলতার মুখোমুখি হন৷ গ্রিসের বাস্তবতা এখন বড় কঠিন৷
ছবি: DW/ A. Stahl
গ্রিক ট্রাজেডি
এথেন্সের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে এরকম গ্রাফিটির সংখ্যা অনেক৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব গ্রাফিটি গ্রিসের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে স্থানীয়দের মনোভাব ফুটিয়ে তোলে৷
ছবি: DW/ A. Stahl
যাওয়ার কোন জায়গা নেই
গ্রিসে বসবাসরত অভিবাসীরা ক্রমশ কঠিন থেকে কঠিনতর বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছেন৷ তাদের জন্য কোন চাকুরি নেই, ভবিষ্যত অন্ধকার৷ অনেক অভিবাসী শেষমেষ বেছে নেন ভিক্ষাবৃত্তি আর জীবন কাটান রাস্তায়৷
ছবি: DW/ A. Stahl
11 ছবি1 | 11
অথচ দেশে অর্থের ‘অভাব' নেই৷ আন্তর্জাতিক তিন প্রতিষ্ঠান – ইউরোপীয় কমিশন, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ – ২০১০ সাল থেকে দাতা হিসেবে কোটি কোটি ইউরো সাহায্য দিয়ে এসেছে৷ কিন্তু এর শর্ত হিসেবে সরকারকে অনেক ক্ষেত্রে আমূল সংস্কার ও ব্যয় সংকোচ চালাতে হচ্ছে৷ এর কুফল ভোগ করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে৷ করের হার বেড়েছে, বেতন ও পেনশন কমেছে৷ বিপর্যস্ত অর্থনীতি এখনো মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না৷ বেকারত্বের হার প্রায় ২৬ শতাংশ৷ গত প্রায় ৬ বছর ধরে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে৷ ফলে অনেক মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে পড়ছে৷
দেশের এমন পরিস্থিতি কবে দূর হবে, তাও স্পষ্ট নয়৷ সরকার তার সীমিত কিছু সাফল্য ফলাও করে প্রচার করছে৷ কিন্তু দেশের আগামী যাত্রাপথ এখনো স্পষ্ট নয়৷ আগামী বছরের বাজেট নিয়ে আন্তর্জাতিক দাতাদের সঙ্গে আলোচনা এখনো থমকে রয়েছে৷ আন্তর্জাতিক দাতাদের হিসেব অনুযায়ী নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে ২০১৫ সালে গ্রিসকে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি ইউরো কম ব্যয় করতে হবে৷ গ্রিসের সরকার এই লক্ষ্যমাত্রার হিসেব মেনে নিতে প্রস্তুত নয়৷ ঐকমত্য না হলে অনিশ্চয়তা কমার বদলে আরও বেড়ে যেতে পারে৷ পর্যবেক্ষকদের মতে, চলতি বছরে বিষয়টির নিষ্পত্তির সম্ভাবনা কম৷ দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিও বেশ নাজুক৷ বর্তমান জোট সরকারের স্থায়িত্বও প্রশ্নের মুখে৷ ফলে আরও সাহসী পদক্ষেপ নিতে তারা বিলম্ব করছে৷