পরমাণু চুক্তি নিয়ে অ্যামেরিকা ও ইইউ-র সঙ্গে আলোচনার আগে হরমুজ প্রণালীতে ইরানের সামরিক মহড়া।
বিজ্ঞাপন
হরমুজ প্রণালীতে রোববার ওয়ার গেমস শুরু করলো ইরান। তাদের দাবি, এটা হলো বহিঃশত্রুর সম্ভাব্য আগ্রাসন মোকাবিলা করার বার্ষিক মহড়া। চলতি মাসের শেষে অ্যামেরিক ও ইইউ-র প্রতিনিধিদের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনায় বসছে ইরান। তার আগে এই মহড়া তাৎপর্যপূর্ণ।
এই সামরিক মহড়ার নাম জোলফাঘার-১৪০০। হরমুজ প্রণালীতে এই মহড়া হচ্ছে। অবস্থানগত দিক থেকে এই জায়গাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর একদিকে আছে ওমান উপসাগর, অন্যদিকে পারস্য উপসাগর। এই প্রণালী দিয়েই বিশ্বের ২০ শতাংশ তেল ভারত মহাসাগর হয়ে বিশ্বের অন্যত্র যায়।
ইরানের টিভিকে উদ্ধৃত করে এপি জানিয়েছে, বহিঃশত্রুর সম্ভাব্য আগ্রাসন ঠেকানোর জন্য প্রস্তুত থাকতেই মহড়ার আয়োজন করা হয়েছে।
কীভাবে মহড়া
সেনা, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী এই মহড়ায় অংশ নিয়েছে। ১০ লাখ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে এই মহড়া চলছে। বিভিন্ন ইউনিট দেশে তৈরি ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও ড্রোন ব্যবহার করছে বলে ইরানের সংবাদসংস্থা তাসনিম জানিয়েছে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসির পরিচয়
ইরানের প্রেসিডেন্ট এব্রাহিম রাইসি৷ ছবিঘরে তার পরিচয় তুলে ধরা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/V. Salemi
জন্ম
১৯৬০ সালে ইরানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মাশহাদে জন্মগ্রহণ করেন এব্রাহিম রাইসি৷ শিয়া মুসলমানদের জন্য শহরটি অন্যতম পবিত্র স্থান৷ সেখানেই ইমাম রেজার মাজার শরিফ অবস্থিত৷ ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ঐ মাজার পরিচালনা কমিটির প্রধান ছিলেন রাইসি (ডানে)৷
ছবি: MIZAN
ইসলাম বিশেষজ্ঞ
রাইসি একজন ‘হুজ্জাত আল-ইসলাম’ যার অর্থ ‘ইসলাম বিশেষজ্ঞ’৷ এটি ইরানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মানিত পদ৷
ছবি: raisi.org
পেশাজীবনের শুরু
১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর মাত্র ২০ বছর বয়সে তেহরানের কাছের কারাজ শহরের প্রোসিকিউটর জেনারেল হিসেবে কাজ শুরু করেন রাইসি৷ এরপর তিনি বিচারক হন৷ ২০১৯ সালে তিনি ইরানের প্রধান বিচারপতি হন৷
ছবি: Atta Kenare/AFP/Getty Images
অভিযোগ
১৯৮৮ সালে ইরানের ‘ডেথ কমিশনের’ সদস্য ছিলেন রাইসি৷ ঐ সময় সরকারবিরোধী অন্তত পাঁচ হাজার জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন বলে ২০১৮ সালে প্রকাশিত অ্যামনেস্টির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়৷ এরপর ট্রাম্প প্রশাসন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাইসির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল৷
ছবি: Vahid Salemi/picture alliance/AP
ইরান চুক্তি সম্পর্কে মত
নির্বাচনি প্রচারণার সময় রাইসি বলেছিলেন, তিনি জয় পেলে ২০১৫ সালে পশ্চিমা ছয় শক্তির সঙ্গে স্বাক্ষরিত ইরান চুক্তি মেনে চলবেন- যদি ইরান, যুক্তরাষ্ট্র নয়, সেই চুক্তির শর্ত ঠিক করতে পারে৷ বারাক ওবামার আমলে সই হওয়া ঐ চুক্তি থেকে সরে এসেছিল ট্রাম্প প্রশাসন৷ এখন বাইডেন এসে সেই চুক্তি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে আলোচনা চলছে৷
ছবি: Ebrahim Noroozi/AP/picture alliance
ইসরায়েল, বাকস্বাধীনতা
পর্যবেক্ষকদের ধারনা, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এখনকার চেয়েও বেশি কঠোর হবেন রাইসি৷ বাকস্বাধীনতার ক্ষেত্রও আরো সংকুচিত হতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের৷ কারণ রাইসির সময়ে ইরানে হোয়াটসঅ্যাপের প্রতিদ্বন্দ্বী সিগন্যালের ব্যবহার কয়েকমাস বন্ধ ছিল৷
ছবি: Atta Kenare/Getty Images/AFP
পরবর্তী সুপ্রিম নেতা?
রাইসির মতোই ইরানের বর্তমান সুপ্রিম নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনেইর (বামে) জন্ম মাশহাদ শহরে৷ নির্বাচনি প্রচারণা চলার সময় খামেনেই রাইসিকে ‘বিশ্বস্ত ও অভিজ্ঞ মানুষ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন৷ খামেনেইর বয়স আগামী মাসে ৮২ হবে৷ ফলে তার পরবর্তীতে রাইসি দেশটির সুপ্রিম নেতা হতে পারেন বলে মনে করছেন অনেকে৷
ছবি: leader.ir
7 ছবি1 | 7
ইরানের সেনা বিচ ল্যান্ডিং করছে। শত্রুর টার্গেটের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সেনা কর্মকর্তা হাবিবুল্লাহ জানিয়েছেন, সেনা শুধু নিজেদের রক্ষণাত্মক ক্ষমতাই দেখাচ্ছে না, প্রয়োজনে সীমান্ত পেরিয়ে যে কোনো ধরনের আগ্রাসন বন্ধ করার ক্ষমতাও দেখাচ্ছে।
আলোচনার প্রস্তুতি
এই সামরিক মহড়া এমন একটা সময় হলো, যখন আর কিছুদিনের মধ্যেই ইরান পরমাণু চুক্তি নিয়ে অ্যামেরিকা ও ইইউ-র প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চলেছে। আগামী ২৯ নভেম্বর ভিয়েনায় এই আলোচনা শুরু হবে।