হরিণরা যেমন দৌড়তে পারে, তেমনি লাফাতেও পারে, কেননা তারা হলো ‘ফ্লাইট অ্যানিমাল' বা পলাতক প্রাণী, পালানোটাই তাদের বাঁচার একমাত্র পথ৷ নমুনা দেখুন এই ভিডিওটিতে৷
বিজ্ঞাপন
রজার বি. ভিডিওটি আপলোড করেন ২০১১ সালের ২০ মার্চ৷ সেই থেকে প্রায় তিন লাখ ত্রিশ হাজার মানুষ ইউটিউবে ভিডিওটি দেখেছেন৷
জায়গাটা খুব সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ক্যানাডার কোনো ছোট শহর৷ কাঠের বেড়ার বাইরে ঢালু ছাদের বাড়িঘরগুলো দেখলে ইউরোপের কথাও মনে হতে পারে; আর বরফ তো ইউরোপেও পড়ে৷ জঙ্গল না হলেও, বনের ধারে বাড়ি৷ সেই বাড়ির ব্যাকইয়ার্ড বা পিছনের আঙিনা, কিন্তু ফুটবল খেলার মাঠের মতো বড় ও প্রায় সেই পরিমাণ ন্যাড়া৷ মাঝখানে একটা বাচ্চাদের খেলার জায়গা, সেখানে স্লিপও আছে৷ চতুর্দ্দিকে প্রায় ছয় ফুট উঁচু কাঠের বেড়া৷
ভিডিওটি যারা আপলোড করেছেন, তারা লিখছেন হরিণটা নাকি বেড়া ডিঙিয়ে আঙিনা, অর্থাৎ ব্যাকইয়ার্ডে ঢুকে পড়েছিল৷ তারপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা গেট খোলা রাখা সত্ত্বেও সে বেরোয়নি বা পালায়নি৷ শেষে সেই হরিণ সুইমিং পুলের বড় বেশি কাছে চলে আসছে দেখে বাড়ির মালিক ও ভিডিওধারী হরিণটাকে গেটের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন৷ তার পরিবর্তে হরিণটি বেড়ার উপর দিয়ে আর একটি লাফ দিয়ে উধাও হয়৷
কোণার কমপোস্ট হিপের ওপরে হুইলব্যারো উল্টো করে ফেলে রাখা আছে৷ সেখান থেকে দৌড় দিয়ে আঙিনার অন্য প্রান্তে পৌঁছে হরিণটা শেষমেশ সেই লাফটা দিয়েছে - যা বন শহরের কাছে কটেনফর্স্টের জঙ্গলের হরিণরাও হামেশাই দিয়ে থাকে, যদি পথে কোনো তারের বেড়া পড়ে! যাকে বলে কিনা এক লাফে পগাড় পার - বেড়ার ওপরে ঝাঁকি দিয়ে দেখা গেল, হরিণটা দৃশ্যত অক্ষত এবং অর্ধেক রাস্তা পার হয়ে গেছে৷
মুশকিল এই যে, হরিণটা যে আতঙ্কিত, তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে৷ এখানে পশু আর মানুষের মধ্যে কোনো আস্থার সম্পর্কে নেই বা গড়ে ওঠেনি৷ বেড়ার ওপর দিয়ে যে লাফটা সে দিল, সেটাও আতঙ্কিত হয়ে লাফ৷ পরিষ্কার বোঝা গেল যে, তার সামনের পা দুটো বেড়ার ওপরদিকটায় ঘষা খেয়েছে, হয়তো পেটের কিছু অংশও - অর্থাৎ হরিণটি ব্যথা পেয়েছে, যদিও টুঁ শব্দও করেনি৷ বলা যেতে পারে, মানুষ আর বন্য পশুর মধ্যে ব্যবধানটাই এখানে স্পষ্ট হয়েছে, তাদের নিকটত্ব বা আত্মীয়তা নয়৷ সেটাই হয়তো এই ভাইরাল ভিডিওর বক্তব্য৷
এসি/এসিবি
চিত্রা হরিণের নিঝুম দ্বীপ
নোয়াখালী জেলার ছোট্ট একটি দ্বীপ নিঝুম দ্বীপ৷ সেখানকার জাতীয় উদ্যানে আছে অসংখ্য চিত্রা হরিণ৷ দেশের অন্য কোনো বনে এত বেশি চিত্রা হরিণ দেখা যায় না৷ নানান পাখিও দেখা যায় এই দ্বীপে৷ ছবিঘরে দেখে নিন অপূর্ব কিছু দৃশ্য৷
ছবি: DW/M. Mamun
চর ওসমান
হাতিয়া উপজেলার দক্ষিণাংশে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে ওঠা ছোট্ট দ্বীপ এটি৷ শোনা যায়, ওসমান নামে এক ব্যক্তি তাঁর মহিষের বাথান নিয়ে এ দ্বীপে বসতি গড়ার পর এটি পরিচিতি পায় ‘চর ওসমান’ নামে৷ পরে নাম হয় নিঝুম দ্বীপ৷ বল্লার চর, কামলার চর, চর ওসমান ও চর মুরি নামের প্রধান চারটি দ্বীপ ও ছোট ছোট কয়েকটি চর নিয়েই এ দ্বীপ৷ উত্তর-দক্ষিণে এ দ্বীপ প্রায় নয় কিলোমিটার লম্বা আর পূর্ব পশ্চিমে প্রায় সাত কিলোমিটার চওড়া৷
ছবি: DW/M. Mamun
শ্বাসমূলীয় বন
নিঝুম দ্বীপে আছে বড়সড় একটি শ্বাসমূলীয় বন৷ ৭০ এর দশকে বন বিভাগ এ দ্বীপে কেওড়া, ওড়া জাতীয় শ্বাসমূলীয় গাছ রোপণ করে৷ সেই গাছপালাই এখন বিশাল মহীরূহে পরিণত হয়েছে৷ ২০০১ সালে নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যানের মর্যাদা পায়৷
ছবি: DW/M. Mamun
চিত্রা হরিণ
১৯৭৪ সালে এ বনে সর্বপ্রথম সুন্দরবন থেকে এনে চার জোড়া চিত্রা হরিণ ছেড়ে দেয়া হয়৷ ওই চারটি হরিণের বংশ বিস্তারের ফলে এ বনে হরিণের সংখ্যা এখন বিশ হাজারেরও বেশি৷ নিঝুম দ্বীপের প্রধান পর্যটন আকর্ষণ চিত্রা হরিণ৷
ছবি: DW/M. Mamun
প্রধান প্রাণী
নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যানের প্রধান প্রাণী চিত্রা হরিণ৷ এ ছাড়াও এ বনে আরো আছে উদ্বিড়াল, মেছো বাঘ, খেকশিয়াল ইত্যাদি৷
ছবি: DW/M. Mamun
খুব কাছ থেকে হরিণ দেখা
নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যানে গাছের আড়ালে দুটি চিত্রা হরিণ৷ দেখতে সুন্দরবনের মতো হলেও তেমন কোনো হিংস্র বন্যপ্রাণী নেই এ বনে৷ তাই নিঝুম দ্বীপে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকরা খুব কাছাকাছি থেকেই চিত্রা হরিণের দল দেখতে পারেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
হরিণের দল
নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যানের পশ্চিম পাশে বিশাল বিশাল খোলা মাঠে পড়ন্ত বিকেলে হরিণের দল৷
ছবি: DW/M. Mamun
নিঝুম দ্বীপে সূর্যাস্ত
মনোরম এ দৃশ্য দেখতে হলে যেতে হবে নিঝুম দ্বীপের নামা বাজারের পশ্চিম পাশে৷
ছবি: DW/M. Mamun
নদী ভাঙন
নদী ভাঙনের কারণে বিলীন হচ্ছে নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যানের উত্তরাংশের জঙ্গল৷ গত তিন বছরে এ জঙ্গলের বড় একটা অংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
চৌধুরী খাল
নিঝুম দ্বীপের পশ্চিম-দক্ষিণ প্রান্তে চৌধুরীর খাল এলাকা৷ নৌকায় চড়ে নামা বাজারের পাশের খাল ধরে যেতে হবে জায়গাটিতে৷ এ খালটি একেবারে জঙ্গলের গহীনে চলে গেছে৷ নৌকায় কিংবা বনের পাশে কোথাও নিজেদের আড়াল করে চুপচাপ বসে থাকলে প্রচুর হরিণ দেখা সম্ভব৷
ছবি: DW/M. Mamun
অপূর্ব জৌড়ালি
নিঝুম দ্বীপে নদীর চরে এক ঝাঁক জৌড়ালি৷ এ দ্বীপে দেখতে পাওয়া নানান পাখির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নিশি বক, কানিবক, গোবক, পানকৌড়ি, ধূসর বক, কাদাখোঁচা, বালিহাঁস, লালপা, নানান জাতের মাছরাঙ্গাসহ বিভিন্ন রকম পরিযায়ী পাখি ইত্যাদি৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিপন্ন দেশি গাঙচষা
নিঝুম দ্বীপের পূর্ব পাশে জেগে ওঠা দমার চরের আকাশে এক ঝাঁক ইন্ডিয়ান স্কিমার বা দেশী গাঙচষা৷ জলচর নানান পাখির নিরাপদ আবাসস্থল এই চর৷ তবে দমার চরের প্রধান আকর্ষণ এই দেশী গাঙচষা৷ এই চরই মহা বিপন্ন এই পাখিটির বাংলাদেশে অন্যতম আবাসস্থল৷
ছবি: DW/M. Mamun
কালো মাথা কাস্তেচরা
নিঝুম দ্বীপের চরে ব্ল্যাক হেডেড আইবিস, বাংলায় পাখিটির নাম ‘কালো মাথা কাস্তেচরা’৷ বিরল এই পাখিটিও নিঝুম দ্বীপের চরে দেখা যায় শীতকালে৷
ছবি: DW/M. Mamun
সরকারি নজরদারির অভাব
জনপ্রিয় এই পর্যটন কেন্দ্রটিতে সরকারি নজরদারি নেই বললেই চলে৷