মিডিয়ায় সমকামী পুরুষ, সমকামী নারী, উভকামী এবং হিজড়াদের উপস্থিতি এবং তাদের সঙ্গে সম্প্রক্ত বিষয়াদি পর্যবেক্ষণ করে গ্লাড৷ সংগঠনটির মুখপাত্র উইলসন ক্রুজ বুধবার জানান, মার্কিন সমাজে এসব চরিত্রের গুরুত্ব থাকলেও হলিউডের বড় বাজেটের ছবিতে তাদের দেখা যাচ্ছে না৷ এক্ষেত্রে পরিবর্তন জরুরি৷
গ্লাড এর গবেষণায় হলিউডের নামজাদা বিভিন্ন স্টুডিও থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি বিবেচনায় আনা হয়েছে৷ এগুলোর মধ্যে রয়েছে টোয়েন্টিথ সেঞ্চুরি ফক্স, প্যারামাউন্ট পিকচার্স, সনি কলম্বিয়া, ইউনিভার্সেল পিকচার্স, ওয়াল্ট ডিজনি স্টুডিওস এবং ওয়ার্নার ব্রস স্টুডিও৷
সমকামীদের বিয়ে এবং সন্তান দত্তক নেওয়ার অধিকার নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের৷ ইউরোপের কয়েকটি দেশে এই অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷ তবে পূর্ব ইউরোপের পরিস্থিতি ভিন্ন৷ বিস্তারিত দেখুন এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpaসমকামীদের বিয়ে এবং সন্তান দত্তক নেওয়ার অধিকার দিতে সরকারি পরিকল্পনার সমর্থনে গত রবিবার প্যারিসে হাজির হন লাখো মানুষ৷ কিছুদিন আগে অবশ্য সেখানে সমকামীদের বিয়ের বিপক্ষে লাখো মানুষ সমবেত হয়৷ এই ইস্যু নিয়ে বেশ উত্তপ্ত সেদেশ৷ বিশেষ করে ক্যাথলিক চার্চ এবং ডানপন্থি বিরোধী দল ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদকে এই আইন করা থেকে বিরত রাখতে চাইছে৷
ছবি: Reutersইউরোপের অন্যান্য অঞ্চলের পরিস্থিতি মিশ্র৷ নেদারল্যান্ডস হচ্ছে পৃথিবীর প্রথম দেশ যেখানে সমলিঙ্গের মধ্যে বিয়ে বৈধ ঘোষণা করা হয়৷ ২০০১ সালের এপ্রিল থেকে সেদেশে এই আইন কার্যকর আছে৷
ছবি: AP২০০৩ সালের জুন মাসে নেদারল্যান্ডসের প্রতিবেশী দেশ বেলজিয়ামে সমলিঙ্গের মধ্যে বিবাহ বৈধ করা হয়৷ প্রথম দিকে সেদেশে বিদেশিদের মধ্যে এ ধরনের বিবাহে খানিকটা জটিলতা ছিল৷ কিন্তু ২০০৪ সালের অক্টোবর থেকে সকল দেশের নাগরিকদের এই সুবিধা দেওয়া হয়৷ এক্ষেত্রে যে কোনো একজনকে কমপক্ষে তিন মাস বেলজিয়ামে থাকতে হবে৷ ২০০৬ সাল থেকে সমকামী পুরুষ এবং নারীকে সন্তান দত্তক নেওয়ার সুবিধাও প্রদান করা হয় বেলজিয়ামে৷
ছবি: picture-alliance/dpaখোসে লুইস রোদ্রিগেজ সাপাতেরো-র সমাজতন্ত্রী সরকারের মেয়াদকালে পৃথিবীর তৃতীয় দেশ হিসেবে স্পেন সমকামীদের মধ্যে বিয়ে বৈধ করে৷ ফ্রান্সের মতো সেদেশেও ক্যাথলিকদের শক্ত অবস্থান রয়েছে৷ তা সত্ত্বেও ২০০৫ সালের জুলাই মাসে স্পেনে এ ধরনের বিয়ে বৈধ করা হয়৷ ২০১০ সাল থেকে পর্তুগালও একই পথের পথিক হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpaআইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ইওয়াহানা সিগুরডোটির এবং তাঁর সঙ্গিনী ইওহিনা লিওসডোটির সমকামীদের বিয়ে বৈধ ঘোষণার পর প্রথমেই সেই সুযোগ নিয়েছেন৷ সিগুরডোটির হচ্ছেন পৃথিবীর প্রথম মেয়ে সমকামী রাষ্ট্রপ্রধান৷ ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি৷ এরপর ২০১০ সালে সেদেশে সমকামীদের বিয়ে বৈধ করা হলে সঙ্গিনী লিওসডোটিরকে বিয়ে করেন সিগুরডোটির৷
ছবি: Getty Imagesসমকামীদের অধিকারের বিষয়ে আইনিভাবেই সচেতন স্ক্যান্ডিনেভিয়া৷ সুইডেনে ২০০৯ সালে সমলিঙ্গের মধ্যে বিয়ে বৈধ করা হয়৷ পুরুষ এবং নারী সমকামী যুগল সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ হতে সেদেশে কোনো বাধা নেই৷ নরওয়ে ২০০৮ সালে এ সংক্রান্ত এক বিল অনুমোদন করেছে৷ ২০১২ সালের গ্রীষ্ম থেকে ডেনমার্কেও সমকামীদের বিয়ে বৈধ করা হয়েছে৷ ফিনল্যান্ডও এ ধরনের বিয়েকে বৈধতা প্রদানের পথে রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpaএই ছবিটি গত শতকের ৮০-র দশকের৷ এতে দেখা যাচ্ছে, সমকামীদের অধিকার আদায়ের দাবিতে আন্দোলন করছেন একদল মানুষ৷ এরপর অনেকদিন পেরিয়েছে৷ যুক্তরাজ্যে সমলিঙ্গের পুরুষ বা নারী যুগল সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার অনুমতি রয়েছে৷ ২০০৫ সাল থেকে রয়েছে এই প্রথা৷ তবে চার্চে সমলিঙ্গের নারী বা পুরুষ বিয়ে করতে পারবে কিনা সেটা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷
ছবি: AP২০০১ সাল থেকে সমলিঙ্গের যুগলের রেজিস্ট্রেশন বৈধ করেছে জার্মানি৷ এই প্রক্রিয়ায় জার্মানিতে বিয়ের সুযোগ সুবিধার অনেকটাই পান সমকামীরা৷ কিন্তু যৌথভাবে সন্তান দত্তক নেওয়া কিংবা পূর্ণ আয়কর সুবিধা এখনো পায়না সমকামী দম্পতিরা৷ চলতি বছরের জানুয়ারিতে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, জার্মানির ৬৬ শতাংশ জনসাধারণই সমকামীদের বিয়ের পক্ষে৷
ছবি: picture-alliance/dpaতবে ইউরোপের পর্বাঞ্চলের পরিস্থিতি ভিন্ন৷ সেখানকার সমাজে সমকামী নারী বা পুরুষকে ভালোভাবে গ্রহণ করা হয়না৷ লিথুনিয়া, পোল্যান্ডের মতো লাটভিয়াতেও বিষমকামী দম্পতির মতো সমান অধিকার পায় না সমকামী দম্পতি৷ পূর্ব ইউরোপের অধিকাংশ জনগণই সমকামীদের বিয়ের বিপক্ষে৷
ছবি: Reutersরাশিয়ার সংসদ সম্প্রতি শিশুদের মাঝে ‘সমকামীদের প্রচারণা’ নিষিদ্ধ করেছে৷ আর আগেই অবশ্য সেন্ট পিটার্সবুর্গের (ছবিতে) মতো বিভিন্ন শহরে সমকামিতাকে উৎসাহ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল৷ নতুন এই আইনের ফলে সমকামীদের অধিকার বিষয়ক প্রচারণা রাশিয়ায় অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং আয়োজকদের জরিমানা হবে৷ বলাবাহুল্য, রাশিয়াতে সমকামীদের বিয়ে বৈধ নয়৷
ছবি: Dmitry Lovetsky/AP/dapd সামগ্রিকভাবে হলিউড এবং মার্কিন চলচ্চিত্র তারকারা সমকামীদের অধিকারের দাবিতে সোচ্চার হলেও ছবিতে তার প্রতিফলন নেই৷ ২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ১০১টি বড় বাজেটের ছবির মধ্যে মাত্র চোদ্দটিতে পুরুষ বা নারী সমকামী এবং উভকামীদের চরিত্র ছিল৷ কোনো ছবিতেই হিজড়া চরিত্র দেখানো হয়নি৷ মোটের উপর অধিকাংশ ছবিতে এসব চরিত্র তেমন একটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না৷
গ্লাড এর গবেষণা অনুযায়ী, মাত্র ছয়টি ছবিতে সমকামী চরিত্র ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে৷ সামগ্রিকভাবে এসব চরিত্র ছিল এমন ছবিগুলোর মধ্যে ৫৬ শতাংশ ছিল পুরুষ সমকামী, ৩৩ শতাংশ নারী সমকামী এবং ১১ শতাংশ উভকামী৷
উল্লেখ্য, রাশিয়ায় সম্প্রতি সমকামী বিরোধী একটি আইন চালু হয়েছে৷ গত জুনে সে দেশের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন স্বাক্ষরিত আইন অনুযায়ী, কারো বিরুদ্ধে সমকামিতার অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁকে অর্থদণ্ড এবং পনেরো দিন পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া যাবে৷ এই আইনের বিরুদ্ধে বেশ সোচ্চার হলিউড থেকে শুরু করে ব্রডওয়ে অবধি মার্কিন বিনোদন শিল্প৷ এ জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টিতে তারা তাদের তারকা খ্যাতি আর অর্থ – দুটোই ব্যয় করছে৷
এআই/ডিজি (রয়টার্স)