হলোকস্টের সাক্ষী
২৭ জানুয়ারি ২০১৩হলোকস্টের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখাটাই ইঙ্গে ডয়েচক্রোনের সারা জীবনের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ যাঁরা নিজে হলোকস্টের বিভীষিকা প্রত্যক্ষ করেছেন, সেই সব কালের সাক্ষীদের মধ্যে প্রথমেই আসে ইঙ্গে ডয়েচক্রোনের নাম৷ বাবা ছিলেন বার্লিনের এক স্কুলশিক্ষক, সামাজিক-গণতন্ত্রী দলের সমর্থক৷ ‘‘১৯৩৩ সাল অবধি আমি ভালো করে বুঝতেই পারিনি যে আমি ইহুদি৷ কেননা আমাদের বাড়িতে ধর্মের বিশেষ চর্চা ছিল না,'' বলেছেন ইঙ্গে৷
১৯৩৩ সালে নাৎসিরা ক্ষমতা দখল করার পর সহপাঠীরা তাঁকে ‘‘নোংরা ইহুদি'' বলে গালি দিতে শুরু করে, তাঁর সংশ্রব পরিত্যাগ করে৷ ‘‘আমরা এক এক টুকরো করে আমাদের অধিকারগুলো হারাতে থাকি৷ প্রথমে আমাদের বাসে-ট্রামে চড়া নিষেধ হয়৷ তারপর সন্ধ্যে আটটার পর আমাদের বাড়ির বাইরে বেরনোই নিষিদ্ধ করা হয়,'' বলছিলেন ইঙ্গে৷ ধীরে ধীরে ওঁদের যা কিছু ছিল, ছেড়ে দিতে হয়৷ বাবার স্কুল থেকে চাকরি যায়৷ অথচ তাঁর বাবা নিজেকে জার্মান বলেই মনে করতেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সৈনিক হিসাবে জার্মানির হয়ে যুদ্ধ করেছিলেন৷
১৯৩৮ সালের ৯ই নভেম্বরের সেই বিভীষিকাময় ‘স্ফটিক রাত্রি'-তে যখন সারা জার্মানিতে ইহুদি প্রার্থনামন্দিরগুলি পুড়তে থাকে, তখন ইঙ্গের বাবা প্রথম উপলব্ধি করেন, এ জার্মানি তাঁর জার্মানি নয়৷ এর কিছু পরেই ইঙ্গের বাবা ইংল্যান্ড যাত্রা করেন, কিন্তু স্ত্রী আর মেয়ের তখন আর জার্মানি থেকে বের হবার উপায় ছিল না৷ সদয় জার্মান প্রতিবেশিরা – অবসরপ্রাপ্ত মহিলা, মিস্ত্রি পর্যায়ের খেটে খাওয়া মানুষ – এঁরাই ইঙ্গে ও তাঁর মাকে লুকিয়ে রেখে তাদের প্রাণ বাঁচিয়েছেন৷ ইঙ্গের চোখে এই সাধারণ মানুষেরা, সাধারণ জার্মানরা ছিলেন সেই অভিশপ্ত সময়ের ‘‘নীরব নায়ক''৷ তাঁদের কথা স্মরণ করেই ইঙ্গে আবার জার্মানিতে ফিরে আসার, এখানে বাস করার উদ্যম পেয়েছেন – বইয়ের পর বই লিখে, বক্তৃতা দিয়ে শুধু একটা কাজই করতে চেয়েছেন: হলোকস্টের স্মৃতিকে চিরকালের সতর্কতাবাণীর মতো তুলে ধরে রাখতে চেয়েছেন৷