ম্যাগপাই ইউরোপে অতি চেনা পাখি, ঘাটে-মাঠে-বাগানে, গাছে-গাছে৷ সাদা-কালো দাঁড়কাকের সাইজের এই পাখিগুলোর গয়না চোর বলে দুর্নাম আছে৷ অথচ তারা নাকি চকচকে জিনিস বিশেষ পছন্দ করে না – বলছেন পক্ষিবিশারদরা৷
বিজ্ঞাপন
যে সব বিজ্ঞানীরা জীবজন্তুর আচার-ব্যবহার নিয়ে চর্চা করেন, তারা বলছেন, ম্যাগপাইরা ‘ক্লেপ্টোম্যানিয়াক' তো নয়ই, বরং তারা অচেনা বস্তু দেখলে ভয় পায়৷ পরীক্ষা চলে ব্রিটেনের এক্সেটার ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে, পেষা এবং বুনো হাঁড়চাচাদের নিয়ে৷ বিজ্ঞানীরা চকচকে ও ম্যাটম্যাটে, দু'ধরনের বস্তু রেখে দেখেন, হাঁড়িচাচারা কি বলছে থুড়ি করছে৷ অবশ্য ‘বলছে' বললেও কোনো ভুল হতো না! ম্যাগপাইদের হাঁড়িচাচা নামই হয়েছে তাদের ডাকের কল্যাণে: শুনলে মনে হবে যেন ঝিনুক দিয়ে হাঁড়ি চাঁচাঁ হচ্ছে৷
যাই হোক, যে সব বস্তু রাখা হয়েছিল, সেগুলির মধ্যে ছিল স্ক্রু আর কুণ্ডুলি পাকানো কয়েল: তাদের অর্ধেককে ম্যাটম্যাটে রঙ দিয়ে পেইন্ট করে ম্যাটম্যাটে করে দেওয়া হয়েছিল; বাকিগুলো ছিল নতুন, চকচকে৷ এছাড়া ছিল কিছুটা অ্যালুমিনিয়ামের ফয়েল৷ আর সবকিছুর মাঝে ডাঁই করে রাখা ছিল ম্যাগপাইদের প্রিয় খাদ্য: নানা ধরনের বাদাম৷
৬৪ বার পরীক্ষা করে দেখা গেল, ম্যাগপাইরা মাত্র দু'বার একটা চকচকে জিনিস ঠোঁটে তুলে নিয়েছে৷ দু'বারেই তারা একটি রুপোর আংটি তুলেছে এবং তুলেই আবার ফেলে দিয়েছে৷ বিজ্ঞানীরা এ খবর দিয়েছেন ‘অ্যানিমাল কগনিশন' জার্নালে৷ চকচকে জিনিস দেখে আকৃষ্ট হওয়া তো দূরের কথা. হাঁড়িচাচাদের দৃশ্যত ‘নিওফোবিয়া' বা নতুন জিনিসে বিতৃষ্ণা আছে৷ তারা যে বাদামের ডাঁই থেকে খাচ্ছে, তার ধারেকাছে কোনো চকচকে জিনিস থাকলেই তাদের সন্দেহবাতিক দেখা দেয়৷
হুমকির মুখে যেসব প্রাণী
হুমকির মুখে থাকা কিছু প্রজাতির প্রাণী লাল তালিকাভুক্ত করা হয়েছে৷ এদের মধ্যে আফ্রিকার ওকাপিসহ আরো ২০০ পাখি রয়েছে৷ তবে অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে৷
ছবি: Reuters
ওকাপি’র সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে
জিরাফের মতো দেখতে এই ওকাপি’র বাস কঙ্গোতে৷ আফ্রিকার ঐ অঞ্চলে কত প্রাণীর বাস তার হিসাব রাখে ওয়ার্ল্ড কনজারভেশন ইউনিয়ন (আইইউসিএন)৷ সংস্থাটি সম্প্রতি হুমকির তালিকায় থাকা প্রাণীদের নাম প্রকাশ করেছে৷ সেখানে দেখা যাচ্ছে, কঙ্গোর উত্তর-পূর্বাঞ্চলে থাকা এই ওকাপির সংখ্যা নব্বইয়ের দশকে ছিল ৪,৪০০৷ দশ বছর পর এই সংখ্যা দাঁড়ায় ২,৫০০ তে৷ কঙ্গোর সহিংসতা এবং খনি ব্যবসাকে এ জন্য দায়ী করা হচ্ছে৷
ছবি: cc-by-sa-3.0/Raul654
বিলুপ্তির পথে
আইইউসিএন জানিয়েছে, ওকাপি এখন হুমকির মুখে৷ তাদের তৈরি তালিকার একেবারে তলানিতে আছে ওকাপির নাম৷ অর্থাৎ এরাই সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে রয়েছে৷ এমন অনেক প্রাণী আছে, আজ থেকে ২০০ বছর আগেও যাদের অস্তিত্ব ছিল, কিন্তু এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে, যেমন বালি টাইগার৷ বাঘের প্রায় সব প্রজাতিই আজ হুমকির মুখে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দুইশ প্রজাতির পাখি হুমকির মুখে
নতুন রেড লিস্টে দুইশ প্রজাতির পাখিও রয়েছে৷ এদের মধ্যে অনেক শকুন আছে, যাদের বাস ভারত ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায়৷ আইইউসিএন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছে, চীন ও মালয়েশিয়ার অনেক শকুন এরই মধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে৷ ইথিওপিয়া, জিম্বাবুয়ে এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকা অনেক শকুন এখন হুমকির মুখে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এশিয়ার হাতি দ্রুত কমছে
বিশ্বে এখনও এশিয়ান এলিফেন্টের সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ হাজার৷ কিন্তু এরাও হুমকির মুখে রয়েছে৷ গত তিন প্রজন্ম ধরে এই প্রজাতির হাতির সংখ্যা কমছে৷ আইইউসিএন বলছে, তিন প্রজন্মে হাতির সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে৷ বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, চীন ও ইন্দোনেশিয়ায় এশিয়ান হাতি দেখতে পাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/Horst Galuschka
পাচার ও দাঁত বিক্রির কারণে বিপদ
কেবল এশিয়া নয়, আফ্রিকার হাতিরাও হুমকির মুখে৷ বন উজাড় এবং দাঁতের জন্য শিকারীদের উৎপাতও হাতিদের সংখ্যা কমানোর জন্য দায়ী৷ সেইসাথে অবৈধভাবে শিকার এবং চুরি করে পাচার করাও দিন দিন বাড়ছে৷ হাতি পাচার রোধে এ মাসের ২ থেকে ৪ ডিসেম্বর বতসোয়ানায় ‘আফ্রিকান এলিফেন্ট সম্মেলন’-এর আয়োজন করে আইইউসিএন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিলুপ্তির পথে মাছ
ডলফিনের মত দেখতে এই পরপয়েসদের সচরাচর দেখা যায় ক্যালিফোর্নিয়ায়৷ মাছ ধরার জালে আটকে প্রায়ই মারা যায় এরা৷ কখনো কখনো জেলেরা এদের ধরে নিয়ে যায়৷ ফলে হুমকির মুখে রয়েছে এই প্রজাতিটি৷ বিশ্বে এখন মাত্র ৫০০ থেকে ৬০০ পরপয়েস রয়েছে৷
ছবি: WDC
কিছু প্রাণীর ক্ষেত্রে আশার আলো
কিছু কিছু প্রজাতির ক্ষেত্রে অবশ্য উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যেমন লেদারব্যাক কচ্ছপ৷ অথচ এক দশক আগে এই প্রজাতির কচ্ছপটি ছিল রেড লিস্টে, অর্থাৎ হুমকির মুখে৷ দুই মিটার লম্বা এবং আধা টন ওজনের এই কচ্ছপগুলো আকারে সবচেয়ে বড় হয়৷ এদের হুমকির মুখে পড়ার কারণ সাগরের দূষণ৷
ছবি: gemeinfrei
প্রাণী কল্যাণ সংস্থার অবস্থা
এছাড়া ব্ল্যাকব্রোও অ্যালবাট্রসের সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে৷ নতুন লাল তালিকায় এই প্রজাতির পাখির আশানুরূপ উন্নতি হয়েছে৷ আইইউসিএন এর পরিচালক ইয়ান স্মার্ট জানান, অনেক প্রজাতির উন্নতি হলেও এখনও ২১,০০০ প্রাণী হুমকির মুখে রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শেষবার দেখার সুযোগ: পান্ডা, গন্ডার, লিঙ্কস
হুমকির মুখে থাকা প্রাণীগুলোর মধ্যে অন্যতম জায়ান্ট পান্ডা৷ বিশ্বে এদের সংখ্যা মাত্র ১০০০ থেকে ২০০০৷ আর আছে সুমাত্রার গন্ডার, যাদের মোট সংখ্যা মাত্র ২২০৷ এছাড়া লাইবেরিয়ার লিঙ্কসও আছে এই তালিকায়৷ এদের সংখ্যা মাত্র ৮০ থেকে ১৫০টি৷ ১৯৬৩ সাল থেকে এই রেড লিস্ট প্রকাশ করে আসছে আইইউসিএন৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
এ থেকে কী প্রমাণ হয়? হাঁড়িচাচাদের বিশ্বের সর্বত্র বুদ্ধিমান পাখি বলে ধরা হয়৷ ইউরোপীয় কিংবদন্তিতে তাদের আবার চুরির বাতিক আছে: বারান্দা কি জানলার কাঠে সোনাদানা রাখা থাকলে, ম্যাগপাইরা নাকি তা চুরি করে নিয়ে গিয়ে নিজেদের বাসায় রাখে৷ তাদের এই স্বভাব নিয়ে যেমন রোসিনির অপেরায় গান গাওয়া হয়েছে, তেমন টিনটিনের কমিক বইতেও ম্যাগপাইদের এই চৌর্যবৃত্তিকে কাজে লাগানো হয়েছে৷
কিন্তু এক্সেটারের পরীক্ষা প্রমাণ করছে যে, হাঁড়িচাচারা – এক কথায় – চতুর৷ চকচকে জিনিস দেখে হাঁ করে না থেকে, তারা এই ধরনের অচেনা বস্তু থেকে দূরে থাকে, নিরাপদে থাকে৷ তবে এক্সেটারের হাঁড়িচাচারা যদি এই পন্থায় বিজ্ঞানীদের বোকা বানিয়ে থাকে, তাহলে কিছু বলার নেই!