বিচারক সালমা মাসুদ চৌধুরী, কাজী রেজাউল হক এবং এ কে এম জহুরুল হকের নাম সুপ্রিম কোর্টের বৃহস্পতিবারে নিয়মিত কার্যতালিকায় রাখা হয়নি বলে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বাংলা ট্রিবিউন জানিয়েছে৷
বাংলা ট্রিবিউনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় এই তিন বিচারককে আপাতত তাদের দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র তাদের জানিয়েছে৷ ফলে বৃহস্পতিবারের কার্যতালিকায় তাদের নাম রাখা হয়নি।
তবে কোন দুর্নীতির অভিযোগে এই বিচারকদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে কেউ কথা বলতে রাজি হননি৷ ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি৷
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘হাইকোর্টের তিন বিচারকের বিরুদ্ধে তদন্তের বিষয়টি শুনেছি। এটা প্রধান বিচারপতি ও রাষ্ট্রপতির বিষয়, তাই আপাতত এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না৷''
জীর্ণ আদালতে দীর্ঘ বিচার
মামলার অনুপাতে বিচারক আর বিচারিক অবকাঠামোর সংকট বাংলাদেশের৷ এ কারণে বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা চরম৷ আদালত অবকাঠামোর জীর্ণ-শীর্ণ পরিস্থিতি দেখে নিন ছবিঘরে৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
বিচারের অপেক্ষা
আদালতের বারান্দায় মানুষের এমন দীর্ঘ সারিই প্রমাণ করে, কতোটা মামলাজট নিয়ে চলছে বাংলাদেশের বিচারিক কার্যক্রম৷ বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের দুই বিভাগে বিচারাধীন মামলা পাঁচ লাখ ৩৭ হাজার ৯৪টি৷ আর নিম্ন আদালতে বিচারাধীন মামলা ৩০ লাখ ৩২ হাজার ৬৫৬টি৷ গত বছর চার লাখ ৪৭ হাজার ৮৫৪টি মামলা দায়েরের বিপরীতে নিষ্পত্তি হয়েছে দুই লাখ ৮৪ হাজার ১৩১টি৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
বিচারক সংকট
বিচারাধীন মামলার তুলনায় বিচারকের অপর্যাপ্ততার একটি চিত্র উঠে এসেছে সুপ্রিম কোর্টের জুডিশিয়াল রিফর্ম কমিটি ও জার্মান উন্নয়ন সংস্থা (জিআইজেড)-এর এক প্রতিবেদনে৷ তাতে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রতি দশ লাখ লোককে মাত্র ১০ জন বিচারক বিচারিক সেবা দিচ্ছেন৷ যুক্তরাষ্ট্রে এই সংখ্যা ১০৭, কানাডায় ৭৫, ব্রিটেনে ৫১, অস্ট্রেলিয়ায় ৪১, ভারতে ১৮ জন৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
ফাইলের স্তুপ
মামলাজটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে নথিপত্রের স্তুপ৷ আর বছরের পর বছর চাপা পড়ে থাকে একেকটি ফাইল৷ আধুনিক ব্যবস্থা না থাকায় সেকেলে পদ্ধতিতে চলছে নথিপত্র সংরক্ষণ৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
জামিনে কারসাজি
মামলাজটের মধ্যে আদালতে জামিন কারসাজির বহু ঘটনা ঘটে৷ আইনজীবীদের পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত এসবের সঙ্গে৷ ২০১৫ সালে বিচারকের জাল স্বাক্ষরে ভুয়া জামিননামা তৈরি করে শতাধিক দাগি আসামিকে আদালত থেকে ছাড়ানোর ঘটনা ঘটেছিল৷ তদন্তে নেমে দুদক জানতে পারে, এরসঙ্গে আদালতের পেশকার, উমেদার ও পিয়ন জড়িত ছিল৷
আদালতপাড়ায় অনেক সময় প্রতারণার ফাঁদ পাতে একদল প্রতারক৷ কখনো আইনজীবী, কখনো সাংবাদিক কিংবা মানবাধিকারকর্মীর ভুয়া পরিচয়ে বিচারপ্রার্থীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয় তারা৷ নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি না হলে মামলার ফাঁদে ফেলাসহ বিভিন্ন হয়রানি করে তারা৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
ঘিঞ্জি পরিবেশ
বেশিরভাগ আদালতে ঘিঞ্জি পরিবেশে কাজ করেন আইনজীবী এবং আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা৷ এমন আলোছায়ার কক্ষে কাজ চলে ঢাকার আদালতে৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
বিচারের আগেই শাস্তি!
কারাগার কিংবা থানা থেকে এসব প্রিজন ভ্যানে আসামি আনা হয় আদালতে৷ সংকীর্ণ এসব প্রিজন ভ্যানে বেশির ভাগ সময়ে গাদাগাদির কারণে বিচার শেষ হওয়ার আগেই যেন শাস্তি পেয়ে যান আসামিরা৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
অন্ধকারে রেকর্ড রুম
অন্ধকার ও ঘুপচি এই কক্ষই ঢাকা মহানগর ও দায়রা জর্জ আদালতের রেকর্ড রুম৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
নোংরা শৌচাগার
আদালত বিশৃঙ্খল অবস্থাই শুধু নয়, সেখানে আসলে নানা রকম প্রতিবন্ধকতার শিকার হন বিচার প্রার্থীরা৷ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভাবে শৌচাগারে এমন বেহাল অবস্থার চিত্র ঢাকা আদালতের৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
নথিপত্রের জায়গা সিঁড়ির তলা
নথিপত্র সংরক্ষণের আধুনিক ব্যবস্থা নেই আদালত কর্তৃপক্ষের৷ এর মধ্যে ভেতরে জায়গা নাই৷ জীর্ণ আদালত ভবনের সিঁড়ির নীচে জায়গা পেয়েছে এসব নথিপত্র৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
11 ছবি1 | 11
গত ১৬ মে নিয়মবহির্ভূতভাবে নিম্ন আদালতের মামলায় হস্তক্ষেপ করে ডিক্রি পাল্টে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল বিচারক সালমা মাসুদ চৌধুরী ও জহুরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চের বিরুদ্ধে৷
ন্যাশনাল ব্যাংকের ঋণ সংক্রান্ত এক রিট মামলায় অবৈধ হস্তক্ষেপ করে ডিক্রি জারির মাধ্যমে হাইকোর্টের ওই বেঞ্চ রায় পাল্টে দেন বলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে অভিযোগ তুলেছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ সংশ্লিষ্ট অর্থ ঋণ আদালতের (নিম্ন আদালত) মামলাটির সব ডিক্রি ও আদেশ বাতিল ঘোষণা করেছিলেন৷
এই অভিযোগের ভিত্তিতেই সালমা মাসুদ চৌধুরী ও জহুরুল হককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে কি না, সে বিষয়ে মন্তব্য করেননি সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। কাজী রেজাউল হকের বিরুদ্ধে কেন এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সে বিষয়েও কিছু বলছে না তারা৷