এরপর মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ''এরা কোর্ট কিনে নিয়েছে। আমি সুপ্রিম কোর্টের কথা বলছি না। সেখানে বিচারের আশায় আছি। এরা হাইকোর্ট কিনে নিয়েছে। এরা সিবিআই কিনে নিয়েছে। বিএসএফ কিনে নিয়েছে।''
তারপর মমতা জানিয়েছেন, তিনি বিচারপতিদের সম্পর্কে কিছু বলছেন না। রায় নিয়ে বলছেন।
জনসভায় মমতা বলেছেন, ‘''একটা বিজেপি-র বিচারালয়। বিজেপি সেখানে বিচার করে। রাজনৈতিক বিচার। সেখানে অন্য কেউ আপিল করলে দেবে কিল, বিজেপি আপিল করলে ব্যাস। বিজেপি করলে বেল। এটা বিচারপতির দোষ নয়। কেন্দ্রীয় সরকারের দোষ।''
মমতার বক্তব্য, ''কী করবেন আমায়, সাজা দেবেন? মানবানি করবেন, জেলে পাঠাবেন? আমি তৈরি। মানুষের কথা বলার জন্য যদি শাস্তি দেয়, আমি মাথা পেতে নেব। কিন্তু পরিবার বিপদে পড়লে তার পাশ থেকে সরে দাঁড়াবো না।''
আংশিক জয়, চাকরি পেলে জয় সম্পূর্ণ হবে, জানালেন বিক্ষোভকারীরা
নিয়োগ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে কলকাতার রাস্তায় বিক্ষোভ দেখানো মানুষদের কাছে, এই জয় আংশিক।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
নৈতিক জয়ের দাবি
বিক্ষোভকারী সীমা পান্ডে জানিয়েছেন, ''আজকের রায় আমাদের নৈতিক জয় বলেই মনে হচ্ছে। আমাদের মতো চাকরিপ্রার্থীরাও আশার আলো দেখলো, আমাদের মনে হচ্ছে, বিচার বিভাগ আমাদের ঠিক পথে নিয়ে যাবে । সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে ২০১৪ সালে যে খালি পদ ছিল এবং ২০২৪ সালে একই খালি পদ দেখানো হচ্ছে। আমাদের প্রশ্ন, নতুন স্কুলে শিক্ষকদের পদগুলোর কী হলো?''
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সাময়িক স্বস্তি
চাকরিপ্রার্থী ও বিক্ষোভকারী জয়িতা রায় বোসের মনে হচ্ছে, হাইকোর্টের রায় তাদের সাময়িক স্বস্তি দিলো। জয়িতা বলেছেন, '' আমাদের দীর্ঘ আট বছরের কষ্ট এবং যুদ্ধের পর এই রায়কে সাময়িক স্বস্তি বলা যেতে পারে। এখনো পুরোপুরি স্বস্তি আমরা পাচ্ছি না। যোগ্যরা যতদিন চাকরি না পাচ্ছেন ততদিন পুরো স্বস্তি পাবো না।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ক্যান্সার আক্রান্ত সোমা যা বলেছেন
ক্যান্সার আক্রান্ত সোমা দাসের চাকরি থাকবে। কলকাতা হাইকোর্ট তাদের রায়ে জানিয়েছে, মানবিক কারণে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এরপর আনন্দবাজারকে সোমা জানিয়েছেন, ''জিতেও হারলাম, নাকি হেরেও জিতলাম তা বুঝতে পারছি না।'' সোমা বলেছেন, ''চাকরি হয়তো করব। কিন্তু আমার মতো অনেকের মনে সারা জীবন এটাই থেকে যাবে, ক্যান্সারের জন্যে চাকরিটা থেকে গেল। আমার থেকে অভাগা কেউ নেই। আমার যোগ্যতা যেন দুর্নীতির তলায় হারিয়ে গেল।'
ছবি: Subrata Goswami/DW
সত্যের জয় হয়েছে, বলছেন রাসমণি
রাসমণি পাত্র দীর্ঘদিন ধরে গান্ধী মূর্তির নিচে বসে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। রায়ের পর তার মনে হয়েছে, ''সত্যের জয় হয়েছে। আমাদের আন্দোলনও কিছুটা সফল হয়েছে। তবে পুরোপুরি সফল এখনো হইনি। যখন সব যোগ্য় প্রার্থী চাকরি পাবে, চাকরির নিয়োগপত্র নিয়ে আমরা গান্ধী মূর্তির বিক্ষোভ শেষ করব, সেদিন সত্যিকারের জয় হবে।''
ছবি: Satyajit Shaw/DW
এক হাজার ১৩৫ দিনের লড়াই
অভিষেক সেন জানিয়েছেন, তারা এক হাজার ১৩৫ দিন ধরে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। রোদ-জল-ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে প্রতিবাদ জারি রেখেছেন। অভিষোক জানিয়েছেন, ''যারা দুর্নীতি করে চাকরি পেয়েছে তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হলো, সেদিক থেকে দেখতে গেলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জয় হলো। কিন্তু আমাদের নিয়োগ নিয়ে নির্দেশ এলে বলতে পারতাম, পুরো জয় হয়েছে।''
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বিক্ষোভ চলছে
সোমবারও বিক্ষোভে বসেছিলেন শিক্ষক পদপ্রার্থীরা। তাদের হাতে ছিল পোস্টার। তাতে দাবি জানানো হয়েছে, যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি দিতে হবে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বিকাশরঞ্জন যা বলছেন
আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেছেন, ''এটা ঐতিহাসিক রায়। সমানাধিকার রক্ষা পেল। এই রায় দুর্নীতিবাজদের মুখোশ খুলে দিয়েছে। বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের বোঝা উচিত, দুর্নীতিগ্রস্ত দলকে ক্ষমতায় আনার ফল কী হতে পারে।''
ছবি: Satyajit Shaw/DW
আইনজীবীর বক্তব্য
আইনজীবী সহস্রাংশু ভট্টাচার্য বলেছেন, ''তৃণমূল সরকার আসার পর চাকরি নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। হাইকোর্টের রায়ে তা প্রমাণ হয়ে গেল। ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল করা হলো।''
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সর্বোচ্চ আদালতে যাবেন মমতা
চাকরিহারাদের পাশে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ''এই রায় বেআইনি। আমরা সর্বোচ্চ আদালতে যাব। আশা রাখুন।''
ছবি: Prabhakar Mani Tewari/DW
9 ছবি1 | 9
মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেোন, তিনি এখনো বার কাউন্সিলের সদস্য। তিনিও আইনজীবী। চাইলে আদালতে সওয়াল করতে দাঁড়াতে পারেন।
তবে মমতা এটাও বলেছেন, ‘‘ভুল তো যে কেউ করতে পারেন। সব তো আর আমি করি না। কোনো দপ্তর চাকরি দিলে, সেটা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বিষয়। আমি মাথা গলাই না। কিন্তু এক কথায় ২৬ হাজার চাকরি খেয়ে নিচ্ছে। এটা কী মজার মুলুক?''
ভারতে আদালতের বিরুদ্ধে রাজনীতিকদের সমালোচনা নতুন নয়। তবে লোকসভা ভোটের প্রচারে মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে হাইকোর্টকে নিশানা করেছেন,তাতে রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে।
বিজেপি-র প্রতিক্রিয়া
মুখ্যমন্ত্রী এইভাবে হাইকোর্টকে আক্রমণ করার পর বিজেপি নেতা ও আইনজীবী কৌস্তুভ বাগচী প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানমকে চিঠি লিখে দাবি করেছেন, হাইকোর্ট যেন নিজে থেকে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করে।
বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ''গোটা ঘটনার জন্য মুখ্যমন্ত্রী দায়ী। তিনি কোথায় পালাবেন?''
বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, তারা যোগ্য প্রার্থীদের আইনি সহায়তা দিতে তৈরি।