ইসলামাবাদ হাইকোর্টে দুই সপ্তাহের জামিন পেলেন ইমরান খান। আল কাদির দুর্নীতি মামলায় এই জামিন পেলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবারই সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, ইমরান খানকে বেআইনিভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করার অনুমতিও দেয় সর্বোচ্চ আদালত।
সেইমতো শুক্রবার ইমরান ইসলামাবাদ হাইকোর্টে আবেদন করেন। ইসলামাবাদ হাইকোর্ট তদন্তকারী সংস্থাকে প্রশ্ন করে, ইমরান ৪৮ ঘণ্টা আপনাদের হেফাজতে ছিলেন। আপনারা কি তাকে কোনো জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন? কোনো নথি উদ্ধার করা হয়েছে তার কাছ থেকে?
তদন্তকারী সংস্থা জানায়, তারা সেরকম কিছু করেনি। এরপর আদালত ইমরানকে দুই সপ্তাহের জন্য জামিনের নির্দেশ দেয়।
ইমরানকে হাইকোর্টে আনার কথা ছিল বেলা এগারোটার সময়। কিন্তু তাকে কিছুটা পরে হাইকোর্টে নিয়ে আসা হয়। তারও কিছুক্ষণ পর হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়। জিও টিভি জানাচ্ছে, সেসময় আদালতে ইমরানের পক্ষে স্লোগান ওঠে। তারপর বিচারপতিরা উঠে চলে যান। জুম্মার নামাজের পরই শুনানি শুরু হয়।
জিও টিভির প্রশ্নের জবাবে ইমরান বলেন, তার আশঙ্কা, আজ আবার তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। পাকিস্তানের পাঞ্জাবে ইমরানের বিরুদ্ধে একটি মামলা চলছে। সেই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে বলে ইমরানের আশঙ্কা।
ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করার পর দুইদিন ধরে পেশোয়ারে তাণ্ডব চালিয়েছেন পিটিআই কর্মীরা। বিভিন্ন ভবন, বাস, গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। অবাধে ভাঙচুর চলেছে। ইমরান নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের পর তারা আবার রাস্তায় নেমে বিজয়োৎসব করেছেন।
ছবি: Muhammad Sajjad/AP Photo/picture alliance
ইমরানের ছবি নিয়ে
পাকিস্তানের প্রায় সর্বত্রই একই দৃশ্য দেখা গেছে। ইমরান খানের ছবি-সহ পোস্টার, ব্যানার নিয়ে রাস্তায় নেমে আনন্দে মেতেছেন কর্মীরা।
ছবি: Muhammad Sajjad/AP Photo/picture alliance
অধিকাংশ নেতাই গ্রেপ্তার
সহিংসতায় উসকানি দেয়ার অভিযোগে ইমরানের দলের অধিকাংশ নেতাকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সাবেক যুবকল্যাণ মন্ত্রী উসমান ডর বলেন, সব কর্মী যেন রাস্তায় নেমে আনন্দ প্রকাশ করেন। এভাবেই ইমরানকে সমর্থন করার বার্তা পৌঁছে দেয়া যাবে। তারপর প্রচুর কর্মী রাস্তায় নামেন। উপরের ছবিটি পিটিআই নেতা কুরেশির। তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ছবি: Anjum Naveed/AP Photo/picture alliance
সুপ্রিম কোর্টের বাইরে
কড়া নিরাপত্তা সত্ত্বেও সুপ্রিম কোর্টের বাইরে পৌঁছে গিয়েছিলেন কয়েকজন সমর্থক। প্রধান বিচারপতির নির্দেশের কথা জানার পর তারা উল্লাসে ফেটে পড়েন। একটু দূরে দাঁড়ানো নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের আর কিছু বলেনি।
ছবি: Anjum Naveed/AP Photo/picture alliance
কঠোর নিরাপত্তা
এর আগে সুপ্রিম কোর্টের আশপাশে নিরাপত্তা প্রচুর বাড়ানো হয়। আদালতের অনুমতিতে কোনো ঝুঁকি না নিয়ে বিচারপতিরা যে গেট দিয়ে ঢোকেন, সেখান দিয়েই ইমরানের গাড়ি ঢোকানো হয়।
ছবি: Aamir Qureshi/AFP
মরিয়ম নওয়াজ ক্ষুব্ধ
পাকিস্তান মুসলিম লিগ-এনের নেত্রী মরিয়ম নওয়াজ জানিয়েছেন, তারা এই রায়ে একেবারেই খুশি নন। প্রধান বিচারপতির উচিত ইস্তফা দিয়ে ইমরানের দলে যোগ দেয়া। তার দাবি, যে ব্যক্তি সরকারি কোষাগারের ছয় হাজার কোটি টাকার ক্ষতি করেছে, তাকে দেখে প্রধান বিচারপতি কী করে এত খুশি হন?
ছবি: Arshad Butt/AP/dpa/picture alliance
পাক অর্থনীতিতে আঘাত?
এমনিতেই পাকিস্তানের অর্থনীতির অবস্থা খুবই খারাপ। আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে। এই অবস্থায় দুইদিন ধরে পিটিআই কর্মীরা নির্বিচারে সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তির ক্ষতি করেছেন। প্রচুর ভবন, বাস, গাড়ি ও অন্য সম্পত্তি পুড়িয়ে দিয়েছেন। বিভিন্ন দোকান লুট করা হয়েছে, বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোর তছনছ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এর ফলে অর্থনীতির হাল আরো খারাপ হবে বলে ক্ষমতাসীন জোট অভিযোগ করেছে।
ছবি: Muhammad Sajjad/AP Photo/picture alliance
7 ছবি1 | 7
হাইকোর্টে ইমরান
শুক্রবার স্থানীয় সময় সাড়ে এগারোটা নাগাদ ইমরানকে হাইকোর্টে নিয়ে আসা হয়। প্রথমে রেঞ্জার্স তাকে হাইকোর্টে নিয়ে আসে। তারপর পুলিশ ইমরানকে নিয়ে ভিতরে ঢোকে।
এর আগে ইমরান যখন হাইকোর্টে এসেছেন, তখন হুইল চেয়ার ব্যবহার করেছেন। কিন্তু এদিন তিনি হেঁটেই আদালতে ঢোকেন। টিভি ক্যামেরার দিকে 'ভি' বা 'ভিক্টরি' চিহ্ন দেখান। প্রথমে তাঁকে দুই নম্বর আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেই আদালতকক্ষ ছোট বলে তাঁকে তিন নম্বর কোর্টরুমে নিয়ে যাওয়ার কথা হয়। পরে দুই নম্বর কোর্টরুমেই শুনানি শুরু হয়।
আদালতে এদিন প্রচণ্ড ভিড় ছিল। এখানে দুই স্তরের নিরাপত্তা ছিল। প্রথমে পুলিশ ও পরে রে়ঞ্জার্স পুরো আদালতকক্ষ ঘিরে ছিল। তারা কাউকে আদালতকক্ষে ঢুকতে দিচ্ছিল না। এমনকী সরকারি আইনজীবীকেও আটকে দেয়া হয়।
ইমরানের গ্রেফতার ও পাকিস্তানের চ্যালেঞ্জ
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের গ্রেফতারে দেশজুড়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে তার রাজনৈতিক দল৷ এ অবস্থায় অর্থনৈতিক সংকটে ধুকতে থাকা পরমাণু শক্তিধর দেশটি আরো নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লো৷
ছবি: K.M. Chaudary/AP/dpa/picture alliance
অর্থনৈতিক সংকট
২২ কোটি মানুষের দেশ পাকিস্তানে এখন মূল্যস্ফীতি ৩৬ শতাংশের বেশি৷ খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ৪০ শতাংশ৷ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হার রেকর্ড ২১ শতাংশে পৌঁছেছে৷ কোনো বিনিয়োগ নেই৷ বাড়ছে দারিদ্র্য৷ তার সঙ্গে যুক্ত হলো নতুন এই রাজনৈতিক সংকট৷
ছবি: Akhtar Soomro/REUTERS
আটকে আছে আইএমএফ-এর অর্থ
গত নভেম্বর থেকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ-এর ঋণ ঝুলে আছে৷ বৈদেশিক রিজার্ভ সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারে এসে ঠেকেছে৷ অর্থাৎ এক মাসের পণ্য আমদানির অর্থ আছে তাদের কাছে৷
ছবি: Muhammad Sajjad/AP Photo/picture alliance
নির্বাচন নিয়ে বিরোধ
পাকিস্তানে বিচার বিভাগের সঙ্গে সরকারের সাংবিধানিক বিরোধ স্পষ্ট হচ্ছে৷ রাজনৈতিকভাবে দেশটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ পাঞ্জাবে মে মাসের মধ্যে নির্বাচন দেবার আদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট৷ প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সরকার তা নাকচ করে দিয়েছে৷
ছবি: Asif Hassan/AFP/Getty Images
রাজনৈতিক চাপ
দুর্নীতির অভিযোগে গত বছর প্রধানমন্ত্রিত্ব হারানো ইমরান খান ও তার দল বর্তমান সরকারের ওপর রাজনৈতিক চাপ অব্যাহত রেখেছে৷ গত মার্চ মাসে ইমরানকে গ্রেফতারের জন্য কয়েকবার চেষ্টা চালিয়েও ইমরান সমর্থকদের বাধার মুখে করতে পারেনি৷
ছবি: Khurram Amin/AA/picture alliance
ক্ষমতাশালী সামরিক বাহিনী
পাকিস্তানের সরকারগুলো সাধারণত সেনাসমর্থনে ক্ষমতায় থাকে৷ দেশটির ৭৫ বছরের ইতিহাসে মিলিটারি সরাসরি ক্ষমতায় ছিল ৩০ বছর৷ মঙ্গলবার গ্রেফতার হবার একদিন আগে ইমরান একজন দায়িত্বরত সেনা অফিসারের সমালোচনা করেছিলেন৷
ছবি: Aamir Qureshi/AFP
জঙ্গিবাদের উত্থান
পাকিস্তানে জঙ্গিবাদও একটা বড় সমস্যা৷ সম্প্রতি কয়েকটি আক্রমণের পর সরকার বলছে, তারা জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আবারো অপারেশন শুরু করবে৷ সবশেষ ২০১৪ সালে জঙ্গিবাদ বিরোধী অভিযান চালাতে সরকারের বিপুল অর্থ ব্যয় হয়েছে এবং প্রায় দশ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে৷
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
6 ছবি1 | 6
প্রেসিডেন্ট আলভি-ইমরান কথা
সুপ্রিম কোর্ট ইমরানের গ্রেপ্তারিকে বেআইনি বলার পর রাতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি পুলিশ লাইন্সের গেস্ট হাউসে যান। এখানেই ইমরানকে রাখা হয়েছিল। তিনি ইমরানের সঙ্গে দুই ঘন্টা ধরে কথা বলেন। পরে গিরগিট-বালোচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রীকেও আলোচনায় ডেকে নেন ইমরান।
ইমরান গ্রেপ্তার হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট আলভি কড়াভাষায় প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, যেভাবে ইমরানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা দেখে তিনি রীতিমতো ক্ষুব্ধ।
আল-কাদির ট্রাস্ট মামলা
এই মামলায় অভিযুক্ত হলেন ইমরান খান, তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি এবং তার দলের কিছু নেতা। অভিযোগ হলো, ইমরান যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন পিটিআই সরকার একজন ব্যবসায়ীকে সুবিধা করে দিয়েছিল। এর ফলে সরকারের ক্ষতি হয়েছিল দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি।
এছাড়াও অভিযোগ হলো, আল কাদির বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির জন্য ট্রাস্টকে খুব কম পয়সায় জমি দেয়া হয়েছে।