1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হাইডেলবার্গে শেখ হাফিজুর রহমানের কবিতা

১৮ মে ২০১১

১২ই মে হাইডেলবার্গ শহরের অদূরে এক মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান হয়ে গেল বাংলাদেশের কবি শেখ হাফিজুর রহমানকে কেন্দ্র করে৷ উপলক্ষ্য, জার্মান ভাষান্তরে তাঁর কবিতার একটি সংকলন প্রকাশ৷

শেখ হাফিজুর রহমানছবি: dwq

বিশ্ববিদ্যালয় শহর হাইডেলবার্গ'এর অনতিদূরে পাহাড়ি নিসর্গ ঘেরা ছোট্ট জায়গা শ্যোয়েনাউ৷ এখানেই কলকাতার মেয়ে শান্তা বেয়ারের অতিথি নিবাস ফেলৎসারহোফ সেদিন হয়ে উঠেছিল বাঙালি আর জার্মানদের এক সাহিত্যগন্ধী মিলনসন্ধ্যা৷ উপস্থিত সবাই পেলেন কবিকন্ঠে কবিতার আস্বাদ৷

শেখ হাফিজুর রহমানের কবিতায় আছে আবহমান বাংলাদেশের ছবি – আছে দ্রোহ, বিক্ষোভ৷ মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ ঘুরেফিরে এসেছে তাঁর কবিতায়৷ বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিপরিবারে হত্যার ঘটনা তাঁকে ব্যথিত মথিত করেছে৷ আত্মীয়তার সূত্রে তিনি বঙ্গবন্ধুর চাচাতো ভাই৷ রাজনীতি সচেতন এই কবি মৌলবাদ, দারিদ্র্য, বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রকাশ করেছেন তাঁর দ্রোহ৷ তেমনি গ্রাম বাংলার স্নিগ্ধ রূপও দেখি আমরা তাঁর কবিতার শরীরে৷ ‘নোঙরের তরী', ‘মধুমতি', ‘গণপাঁচালি', ‘দ্রোহের পদাবলী' তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ৷ তাঁর কবিতা ‘বিনি সুতোর মালা' অবলম্বনে কলকাতার জয়শ্রী ভট্টাচার্য তৈরি করেছেন চলচ্চিত্র৷ রত্না চৌধুরীর সুরে হৈমন্তী শুক্লা, শ্রীকান্ত আচার্য, সৈকত মিত্র, শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্ঠে তাঁর কবিতা হয়ে উঠেছে গান৷

কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত, বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মসুদ মান্নান এবং শেখ হাফিজুর রহমানছবি: DW

তাঁর কবিতার জার্মান ভাষান্তর প্রকাশ করেছেন ক্রিস্টিয়ান ভাইস ও তাঁর দ্রৌপদী ফ্যারলাগ৷ মূল বাংলা থেকে জার্মানে অনুবাদ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ভাষা বিভাগের অধ্যাপক আশরাফুজ্জামান সরকার৷ বাংলা ও জার্মান - দ্বিভাষিক এই সংকলনের নাম ‘ডেয়ার ত্রাউম' - স্বপ্ন৷

তাঁকে নিয়ে এই কবিতাসন্ধ্যার আয়োজনে আপ্লুত শেখ হাফিজুর রহমান৷ তিনি জানালেন:

‘‘আমি নিজে আজকে খুব পুলকিত বোধ করছি, আনন্দিত বোধ করছি৷ এবং সবচাইতে বড় কথা আমি খুব গৌরব বোধ করছি৷ জার্মানির মাটিতে আমাকে আপনারা সকলে মিলে যে সম্মান দিলেন আমি মনে করি এটা আমার দেশের জন্য একটা বিরাট সম্মান. কারণ বাংলাদেশের একজন কবিকেই আপনারা এ সম্মান দিলেন জার্মানিতে৷ পাশেই হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় - শতযুগের শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের জায়গা৷ আমি খুব আনন্দিত৷''

শেখ হাফিজুর রহমান ও অনুবাদক অধ্যাপক আশরাফুজ্জামান সরকারছবি: DW

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মসুদ মান্নান৷ তিনি বললেন: ‘‘যথোপযুক্ত সময়ে এরকম একটি বই'এর প্রকাশনা হয়েছে৷ যখন আমরা চেষ্টা করছি শুধু জার্মানিতে নয়, সারা বিশ্বে আমাদের যে উন্নত মানের যে কবিতা ও অন্যান্য সাহিত্যকর্ম আছে বাংলা ভাষায় সেগুলোকে পরিচিত করতে৷ এবছর আমরা সারা বিশ্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪০ বছর উদযাপন করছি৷ এবং শেখ হাফিজুর রহমানের এই কবিতাগুলি প্রকাশিত হওয়ায় আমি আশা করি পাঠকরা যেমন উপকৃত হবেন, পাশাপাশি সময়োপযোগী এরকম একটি প্রকাশনা হওয়াতে আমরাও পরিচিত হবো জার্মানদের সাথে৷''

শ্যোয়েনাউ'এর মেয়র মার্কুস সাইটলার এধরনের আয়োজনকে স্থানীয়দের সামনে ভিন দেশের সাহিত্য সংস্কৃতির পরিচয় তুলে ধরারই এক সুযোগ বলে মনে করেন৷ ‘‘আমি মনে করি পরস্পর থেকে বহু দূরে থাকা দুই ভিন্ন সংস্কৃতি আমাদের এই ছোট্ট সুন্দর শ্যোয়েনাউ'তে একত্রিত হল, পরিচিত হল এটা আমাদের জন্য বিশেষ গর্বের বিষয়৷ দেশ আর মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার এই সন্ধ্যাটাকে দারুণ দারুণ লেগেছে আমার৷''

শেখ হাফিজুর রহমানের সঙ্গে আব্দুল্লাহ আল ফারূকছবি: DW

হইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের বাংলা ও অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় ভাষা বিভাগের প্রধান প্রফেসর হান্স হার্ডার বললেন: ‘‘শেখ হাফিজুর রহমানের কবিতায় যে ধরনের উচ্ছ্বাস, উদ্বেগ আমি পেয়েছি সেটা বিশেষ লক্ষ্যণীয় আমি বলব৷ একজন জার্মান শ্রোতা তাঁকে আরো একটা কবিতা আবৃত্তি করতে বলেছিলেন, সেটাও তো একটা চিহ্ন৷ তাতে আমরা বুঝতে পেরেছি যে শ্রোতাদের খুব ভাল লেগেছে৷ আরো শোনার ইচ্ছে জন্মিয়েছিল ওদের মনে৷ খুবই সুন্দর হয়েছে৷

অনুবাদ পড়ে শোনাচ্ছেন ক্রিস্টিয়ান ভাইসছবি: DW

শেখ হাফিজুর রহমানের কবিতার ওপর আলোকপাত করেন বিশিষ্ট কবি, দীর্ঘদিন হাইডেলবার্গবাসী, অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত৷ তাঁর স্বভাবসিদ্ধ বাচনভঙ্গিতে তিনি জানালেন: ‘‘পৃথিবী তো এখন কবিতারই ঋতু যাপন করছে৷ পরশুদিন বার্লিনে রবীন্দ্রনাথের ১৫০তম বছর পালন করে এলাম৷ এখানে তাঁরই একজন উত্তরসূরি কবি - তিনি বাংলাদেশে উদ্বর্তিত এবং তাঁর কবিতার মধ্যে আমাদের সংস্কৃতির ইতিহাস, দুই বাংলার সংস্কৃতির ইতিহাস ও আত্মপরিচয় অনুস্যূত হয়ে আছে৷ ফলে আমার মনে হতে থাকল যে, পৃথিবীতে শেষ পর্যন্ত সব ঋতু ফুরিয়ে গেলেও কবিতার ঋতু ফুরোবেনা৷''

প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ